আজ ‘মনোহরদীর হাতিরদিয়া দিবস’

আজ ২৯ শে ডিসেম্বর ‘হাতিরদিয়া দিবস’। ১৯৬৮ সনের এ দিনে নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার হাতিরদিয়া হাট হরতাল পালনকালে পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন সিদ্দিক মাষ্টার, হাছান আলী, মিয়াচান, চেরাগ আলী এবং আহত হয়েছিলেন ১৯৬৯-এর গণঅভুত্থানের মহানায়ক, ২০ জানুয়ারীতে প্রথম শহীদ আসাদুজ্জামান আসাদসহ আরো অনেকে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ আগরতলা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারের জন্য তৎকালীন পাক সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘৬৮ সালের ৬ ডিসেম্বর পল্টনের জনসভায় মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ৭ ডিসেম্বর ঢাকা শহরে যানবাহন হরতাল এবং ৮ ডিসেম্বর সারাদেশে হরতাল পালনের ঘোষণা করলে তা স্বতঃস্ফুর্ত হরতালে পরিণত হয় এবং সারা দেশের হাট-বাজারেই হরতাল ও ঘেরাও আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। অবশ্য মওলাানা ভাসানী ঢাকায় ৭ ডিসেম্বর হরতাল পালন শেষে ২৯ ডিসেম্বর সারাদেশে হাট-বাজার হরতাল পালনের ঘোষণা দিলে তৎকালীন নারায়নগঞ্জ মহকুমার শিবপুরের অনতিদূরে বর্তমান মনোহরদী উপজেলার বৃহত্তম গরুর হাট হাতিরদিয়া বাজারে হরতাল সফল করার দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল তৎকালীন কমিউনিষ্ট পূর্ববাংলা সমন্বয় কমিটির সক্রিয় কর্মী ও ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান আসাদের উপর। তারই নেতৃত্বে এলাকার অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ঐদিন হাতিরদিয়া বাজারে হরতাল পালনকালে পুলিশের সঙ্গে পিকেটারদের কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। এক পর্যায়ে পিকেটারদের সঙ্গে পুলিশের মুখোমুখি সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ তৎকালীন ছাত্রনেতা তোফাজ্জল হোসেন, বদরুজ্জামান সেন্টু ও মাইকম্যান শাহ্জাহানকে গ্রেফতার করে। পুলিশ ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামানকে গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়ে রাইফেল দিয়ে মাথায় আঘাত করলে সে মারাত্মকভাবে আহত হয়। এদিকে জনতার উত্তেজনা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। উত্তেজিত জনতা গ্রেফতারকৃতদের মুক্ত করার জন্যে পুলিশকে ধাওয়া করলে ভীতসন্ত্রস্ত পুলিশ গ্রেফতারকৃতদের নিয়ে বাজারেরই একটি টিনের ঘরে অবস্থান নেয়। জনতার রোষ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে এবং উত্তেজিত জনতা পুলিশের আশ্রয়স্থল ঘিরে ফেলে। অবস্থার আরো অবনতি হতে পারে ভেবে পুলিশ ঘরের জানালা দিয়ে জনতার উপর বেপরোয়া গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই সিদ্দিক মাষ্টার, হাছান আলী, মিয়াচান ও চেরাগ আলী নিহত হয় এবং আহত হয় অনেকে। এদিকে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান সাইকেল চড়ে ঢাকায় এসে পত্রিকার অফিসগুলোতে হাতিরদিয়ার ঘটনার সংবাদ দেন। পরদিন পত্রিকাসমূহে উক্ত ঘটনার সংবাদ প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও ঘেরাও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি হাতিরদিয়া বাজারের হরতাল ও ঘটনাস্থলের চার শহীদের সংবাদ ‘আকাশবাণী’ বেতারসহ অন্যান্য আন্তজার্তিক বেতার কেন্দ্র থেকেও সম্প্রচারিত হলে তৎকালীন স্বৈরাচার আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। হাতিরদিয়ার ঘটনা আন্দোলনের যে বহ্নিশিক্ষা ছড়িয়ে দিয়েছিল তারই ধারাবাহিকতায় আজকের বাংলাদেশ। চার শহীদের স্মরণে ঘটনাস্থলে একটি শহীদ মিনার নির্মিত হলেও ঘটনার এতবছর পরও চরম অযতœ অবহেলায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে শহীদ মিনারটি। শহীদের রক্তের বিনিময়েই আমার পেয়েছি আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। সেই থেকে প্রতি বছর ২৯ ডিসেম্বর জনগণ এ দিনটিকে পালন করে আসছে ‘হাতিরদিয়া দিবস’ হিসেবে।

রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ , ১৪ পৌষ ১৪২৬, ১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

আজ ‘মনোহরদীর হাতিরদিয়া দিবস’

সংবাদ ন্যাশনাল ডেস্ক

আজ ২৯ শে ডিসেম্বর ‘হাতিরদিয়া দিবস’। ১৯৬৮ সনের এ দিনে নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার হাতিরদিয়া হাট হরতাল পালনকালে পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন সিদ্দিক মাষ্টার, হাছান আলী, মিয়াচান, চেরাগ আলী এবং আহত হয়েছিলেন ১৯৬৯-এর গণঅভুত্থানের মহানায়ক, ২০ জানুয়ারীতে প্রথম শহীদ আসাদুজ্জামান আসাদসহ আরো অনেকে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ আগরতলা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারের জন্য তৎকালীন পাক সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘৬৮ সালের ৬ ডিসেম্বর পল্টনের জনসভায় মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ৭ ডিসেম্বর ঢাকা শহরে যানবাহন হরতাল এবং ৮ ডিসেম্বর সারাদেশে হরতাল পালনের ঘোষণা করলে তা স্বতঃস্ফুর্ত হরতালে পরিণত হয় এবং সারা দেশের হাট-বাজারেই হরতাল ও ঘেরাও আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। অবশ্য মওলাানা ভাসানী ঢাকায় ৭ ডিসেম্বর হরতাল পালন শেষে ২৯ ডিসেম্বর সারাদেশে হাট-বাজার হরতাল পালনের ঘোষণা দিলে তৎকালীন নারায়নগঞ্জ মহকুমার শিবপুরের অনতিদূরে বর্তমান মনোহরদী উপজেলার বৃহত্তম গরুর হাট হাতিরদিয়া বাজারে হরতাল সফল করার দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল তৎকালীন কমিউনিষ্ট পূর্ববাংলা সমন্বয় কমিটির সক্রিয় কর্মী ও ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান আসাদের উপর। তারই নেতৃত্বে এলাকার অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ঐদিন হাতিরদিয়া বাজারে হরতাল পালনকালে পুলিশের সঙ্গে পিকেটারদের কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। এক পর্যায়ে পিকেটারদের সঙ্গে পুলিশের মুখোমুখি সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ তৎকালীন ছাত্রনেতা তোফাজ্জল হোসেন, বদরুজ্জামান সেন্টু ও মাইকম্যান শাহ্জাহানকে গ্রেফতার করে। পুলিশ ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামানকে গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়ে রাইফেল দিয়ে মাথায় আঘাত করলে সে মারাত্মকভাবে আহত হয়। এদিকে জনতার উত্তেজনা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। উত্তেজিত জনতা গ্রেফতারকৃতদের মুক্ত করার জন্যে পুলিশকে ধাওয়া করলে ভীতসন্ত্রস্ত পুলিশ গ্রেফতারকৃতদের নিয়ে বাজারেরই একটি টিনের ঘরে অবস্থান নেয়। জনতার রোষ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে এবং উত্তেজিত জনতা পুলিশের আশ্রয়স্থল ঘিরে ফেলে। অবস্থার আরো অবনতি হতে পারে ভেবে পুলিশ ঘরের জানালা দিয়ে জনতার উপর বেপরোয়া গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই সিদ্দিক মাষ্টার, হাছান আলী, মিয়াচান ও চেরাগ আলী নিহত হয় এবং আহত হয় অনেকে। এদিকে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান সাইকেল চড়ে ঢাকায় এসে পত্রিকার অফিসগুলোতে হাতিরদিয়ার ঘটনার সংবাদ দেন। পরদিন পত্রিকাসমূহে উক্ত ঘটনার সংবাদ প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও ঘেরাও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি হাতিরদিয়া বাজারের হরতাল ও ঘটনাস্থলের চার শহীদের সংবাদ ‘আকাশবাণী’ বেতারসহ অন্যান্য আন্তজার্তিক বেতার কেন্দ্র থেকেও সম্প্রচারিত হলে তৎকালীন স্বৈরাচার আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। হাতিরদিয়ার ঘটনা আন্দোলনের যে বহ্নিশিক্ষা ছড়িয়ে দিয়েছিল তারই ধারাবাহিকতায় আজকের বাংলাদেশ। চার শহীদের স্মরণে ঘটনাস্থলে একটি শহীদ মিনার নির্মিত হলেও ঘটনার এতবছর পরও চরম অযতœ অবহেলায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে শহীদ মিনারটি। শহীদের রক্তের বিনিময়েই আমার পেয়েছি আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। সেই থেকে প্রতি বছর ২৯ ডিসেম্বর জনগণ এ দিনটিকে পালন করে আসছে ‘হাতিরদিয়া দিবস’ হিসেবে।