শাহজাদপুর কাপড়হাটে ২ মাসে ২১ দোকানে চুরি! আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা

উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে উপর্যুপরি দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনায় ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সংঘবদ্ধ চোরের দল নিয়মিত বিরতিতে গত দুই মাস ধরে পৌর এলাকার দ্বারিয়াপুর বাজারে অবস্থিত কাপড়ের হাটের ২১টি দোকান, শো-রুম, গোডাউন ও কাপড়ের আড়ত থেকে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের শাড়ি, লুঙ্গি ও মূল্যবান জিনিসপত্র চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান। এদিকে চুরি ঠেকাতে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হলেও তার সুফল পাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। ফলে একের পর এক চুরির ঘটনায় কাপড়ের হাটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে রীতিমতো আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমনকি ঐতিহ্যবাহী এ কাপড়ের হাটের অস্তিত্ব নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

শাহজাদপুর কাপড় হাট তাঁত কাপড় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলমাছ আনছারী ও সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী জানান, গত দুই মাসে সংঘবদ্ধ চোরের দল হাটের মাসুম মিয়া, কালাম হোসেন, বাকি বিল্লাহ, সাইফুল ইসলাম, চাঁদ আলী, আব্দুস ছাত্তার, শাহাদৎ হোসেন, আনিসুল হকের দোকানসহ কমপক্ষে ২১টি দোকান, শোরুম, গোডাউন ও আড়তের তালা ভেঙ্গে প্রায় কোটি টাকার শাড়ি ও লুুঙ্গিসহ অন্যান্য মালামাল চুরি করে নিয়ে গেছে। অন্যদিকে উপজেলা কাপড় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মনছুর রহমান ও তাঁত শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি জুলমত হোসেন জানান, প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ করার পরও গত মঙ্গলবার রাতে হামিদ মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী শাহাদৎ হোসেন, সাইফুল ইসলাম ও আনিছুর রহমানের দোকান থেকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার কাপড় চুরি হয়েছে। লুঙ্গি ব্যবসায়ী রিয়াদুল ইসলাম জানান, গত রোববার রাতে তার দোকান থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকার লুঙ্গি চুরি হয়েছে। অন্যদিকে ফাতেমা মার্কেটের রাষ্ট্রপতি লুঙ্গি ঘরের মালিক সোহরাব হোসেন জানান, গত বুধবার রাতে তার শো-রুমের তালা ভেঙ্গে প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকার লুঙ্গি চুরি করে নিয়ে গেছে চোরের দল। এসব ঘটনায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তারা জানান, চোরের দল কাপড়ের হাটের বিভিন্ন দোকান ও শো-রুমের তালা ভেঙ্গে চুরি করার পর নতুন তালা লাগিয়ে দিয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা জানান, এ হাটে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২শ’ কোটি টাকার তাঁতের কাপড় ও লুঙ্গি পাইকারি ও খুচরা বিক্রি হয়। সূত্রমতে, চুরির ঘটনা অব্যাহত থাকলে এ হাটের দীর্ঘদিনের সুনাম নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি কাপড়ের হাটের অস্তিত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।

এদিকে ঐতিহ্যবাহী এ কাপড়ের হাটে উপর্যুপরি চুরির ঘটনা ঠেকাতে ও চোরের দলের সদস্যদের অবিলম্বে গ্রেফতারের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত সোমবার শাহজাদপুর কাপড়হাট তাঁত কাপড় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলমাছ আনছারী ও সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো. শামসুজ্জোহা জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরপরই এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অপরদিকে থানার অফিসার ইনচার্জ আতাউর রহমান গতকাল শুক্রবার এ প্রতিনিধিকে জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ইতোমধ্যেই পৌর এলাকার দ্বারিয়াপুর মহল্লার ইকবাল হোসেনের ছেলে কাজল হোসেনকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তিনি জানান, সংঘবদ্ধ চোরের দলের অপর সদস্যদের গ্রেফতারে ব্যাপক পুলিশি অভিযোগ শুরু করা হয়েছে।

সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ , ১৫ পৌষ ১৪২৬, ২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

শাহজাদপুর কাপড়হাটে ২ মাসে ২১ দোকানে চুরি! আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা

প্রতিনিধি, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ)

উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে উপর্যুপরি দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনায় ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সংঘবদ্ধ চোরের দল নিয়মিত বিরতিতে গত দুই মাস ধরে পৌর এলাকার দ্বারিয়াপুর বাজারে অবস্থিত কাপড়ের হাটের ২১টি দোকান, শো-রুম, গোডাউন ও কাপড়ের আড়ত থেকে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের শাড়ি, লুঙ্গি ও মূল্যবান জিনিসপত্র চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান। এদিকে চুরি ঠেকাতে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হলেও তার সুফল পাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। ফলে একের পর এক চুরির ঘটনায় কাপড়ের হাটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে রীতিমতো আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমনকি ঐতিহ্যবাহী এ কাপড়ের হাটের অস্তিত্ব নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

শাহজাদপুর কাপড় হাট তাঁত কাপড় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলমাছ আনছারী ও সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী জানান, গত দুই মাসে সংঘবদ্ধ চোরের দল হাটের মাসুম মিয়া, কালাম হোসেন, বাকি বিল্লাহ, সাইফুল ইসলাম, চাঁদ আলী, আব্দুস ছাত্তার, শাহাদৎ হোসেন, আনিসুল হকের দোকানসহ কমপক্ষে ২১টি দোকান, শোরুম, গোডাউন ও আড়তের তালা ভেঙ্গে প্রায় কোটি টাকার শাড়ি ও লুুঙ্গিসহ অন্যান্য মালামাল চুরি করে নিয়ে গেছে। অন্যদিকে উপজেলা কাপড় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মনছুর রহমান ও তাঁত শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি জুলমত হোসেন জানান, প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ করার পরও গত মঙ্গলবার রাতে হামিদ মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী শাহাদৎ হোসেন, সাইফুল ইসলাম ও আনিছুর রহমানের দোকান থেকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার কাপড় চুরি হয়েছে। লুঙ্গি ব্যবসায়ী রিয়াদুল ইসলাম জানান, গত রোববার রাতে তার দোকান থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকার লুঙ্গি চুরি হয়েছে। অন্যদিকে ফাতেমা মার্কেটের রাষ্ট্রপতি লুঙ্গি ঘরের মালিক সোহরাব হোসেন জানান, গত বুধবার রাতে তার শো-রুমের তালা ভেঙ্গে প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকার লুঙ্গি চুরি করে নিয়ে গেছে চোরের দল। এসব ঘটনায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তারা জানান, চোরের দল কাপড়ের হাটের বিভিন্ন দোকান ও শো-রুমের তালা ভেঙ্গে চুরি করার পর নতুন তালা লাগিয়ে দিয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা জানান, এ হাটে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২শ’ কোটি টাকার তাঁতের কাপড় ও লুঙ্গি পাইকারি ও খুচরা বিক্রি হয়। সূত্রমতে, চুরির ঘটনা অব্যাহত থাকলে এ হাটের দীর্ঘদিনের সুনাম নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি কাপড়ের হাটের অস্তিত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।

এদিকে ঐতিহ্যবাহী এ কাপড়ের হাটে উপর্যুপরি চুরির ঘটনা ঠেকাতে ও চোরের দলের সদস্যদের অবিলম্বে গ্রেফতারের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত সোমবার শাহজাদপুর কাপড়হাট তাঁত কাপড় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলমাছ আনছারী ও সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো. শামসুজ্জোহা জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরপরই এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অপরদিকে থানার অফিসার ইনচার্জ আতাউর রহমান গতকাল শুক্রবার এ প্রতিনিধিকে জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ইতোমধ্যেই পৌর এলাকার দ্বারিয়াপুর মহল্লার ইকবাল হোসেনের ছেলে কাজল হোসেনকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তিনি জানান, সংঘবদ্ধ চোরের দলের অপর সদস্যদের গ্রেফতারে ব্যাপক পুলিশি অভিযোগ শুরু করা হয়েছে।