পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি এই নীতি বাক্যটি রাকিফ উল ইসলামের জীবনের সঙ্গে উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়। সংগ্রামশীল মানুষের প্রতিচ্ছবি হিসেবে রাকিফ উল ইসলামের জীবন গাঁথা কাহিনী বলা যায়।
মীরসরাই উপজেলার ১২নং খৈয়াছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম পোলমোগরা গ্রামের অহিদুল ইসলামের ছোট ছেলে কাতার প্রবাসী রাকিফ উল ইসলাম ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে মৌচাষ আগ্রহী হয়ে নিজ উদ্যোগে বাড়ির আঙিনা ও বাড়ির ছাদে ৩০ হাজার টাকা খরচ দিয়ে ১৩টি বক্স নিয়ে মৌচাষ শুরু করেন। অতি অল্প সময়ে সফলতার মুখ দেখায় পরবর্তীতে সুদূর কাতারে গিয়ে ব্যবসার পাশাপাশি মৌচাষ শুরু করেন। এতে তিনি ব্যবসায়িকভাবে মৌচাষে যথেষ্ট সফলতা অর্জন করেন। সে কাতারের পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় কর্মী নিয়োগ করে মৌচাষ শুরু করেন। ছোট ছোট বাক্সের মধ্যে করে বাণিজ্যিকভাবে মৌচাষ করছেন। বছরে মধু থেকে আয় আসে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রায়।
রাকিফ উল ইসলাম জানান, তিনি বিগত ২০০৯ সালে তার মাথায় আসে মৌমাছি চাষ করে মধু আহরণ করার। সে সুবাদে প্রথমে তৈরি করেন ১৩টি মৌ-মাছিদের থাকার আবাস (বাক্স)। রানী মৌমাছি সংগ্রহ করার অভিজ্ঞতা তার ছিল না। তিনি তার বড় ভাই মরহুম তৌফিক ভাইয়ের সহযোগিতায় রাণী মৌমাছি সংগ্রহের কলা কৌশল শিখেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করেন রাণী মৌমাছি। এরপর তার মৌমাছি পালন ও মধু সংগ্রহ করতে কোন অসুবিধায় পড়তে হয়নি।
এখন প্রায় শতাধিক মৌমাছি পালনের বাক্স তৈরি আছে। মাসিক শ্রমিকভেদে ৩ থেকে ১৩ হাজার টাকা বেতনে ১৮ জন শ্রমিক রেখেছেন। রবিশষ্য মৌসুমে বিশেষ করে সরিষা ও ফাগুন মাসে আমের মুকুল থেকে বেশি মধু সংগৃহীত হয়। সেজন্য তিনি যে অঞ্চলে ফুল ও ফসল বেশি হয় সে সকল জায়গায় মৌমাছির বাক্সগুলো নিয়ে গিয়ে স্থাপন করেন। এতে মধুর পরিমাণও বেড়ে যায়। অপরদিকে ফসলের পরাগায়ন ও ভাল হয়। পরাগায়ন ভাল হলে কৃষকদের ফসলের উৎপাদন বেশি হয়।
বছরে তার উৎপাদিত মধুর পরিমাণ প্রায় ১ টন। প্রতি বাক্স থেকে মাসে ২ বার মধু সংগ্রহ হয়। প্রতি বারে ২ থেকে ৩ কেজি মধু পাওয়া যায়। পাইকারি বাজারে তিনি প্রতি কেজি মধু ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় করে থাকেন। মৌমাছি পালন ও মধু সংগ্রহ করে তিনি এখন স্বাবলম্বী। মধু বিক্রি থেকে রাকিফ উল এর সমস্ত খরচ বাদে বাৎসরিক আয় এখন সাড়ে ৫ লক্ষাধিক টাকা।
রাকিফ উল দুঃখ করে বলেন, এখন কৃষকরা তাদের জমিতে পরিবেশ বিরোধী ভয়াবহ অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করায় মৌমাছির দল ফুলের রেণু সংগ্রহ করতে গিয়ে বিষের কারণে মরে যায়। এজন্য দিন দিন মৌমাছির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এতে পরিবেশসহ প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিপর্যয় ঘটছে। শীতকালে মধু উৎপাদন কিছুটা হ্রাস পায়। এ সময় শীতের তীব্রতায় ও অনেক মৌমাছি মারা যায়। মানব কুল একটু সচেতন হলে সংগৃহীত মধু থেকে জটিল রোগ বালাইনাশক ওষুধসহ উপাদেয় এবং পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাবার যোগানের ব্যবস্থা আরও বেশি করা যেত। প্রচণ্ড শীত হলে বাক্সগুলো নিরাপদে রাখতে হয়। এখন তার মধু উৎপাদন দিন দিন কমতে শুরু করেছে।
এরপরও তার মধু উৎপাদন দেখে এলাকার অনেক আগ্রহী যুবক ও সৌখিন ব্যক্তি তার কাছ থেকে মধু চাষের বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে থাকেন বলে তিনি তার মধু চাষের বিষয়গুলো নিশ্চিত করেন।
রাকিফ উল মনে করেন ভবিষ্যতে তিনি তার এলাকায় বড় আকারে মৌচাষের খামার গড়ে তুলবেন এবং এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন।
সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ , ১৫ পৌষ ১৪২৬, ২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১
রণজিত ধর, মীরসরাই (চট্টগ্রাম)
পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি এই নীতি বাক্যটি রাকিফ উল ইসলামের জীবনের সঙ্গে উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়। সংগ্রামশীল মানুষের প্রতিচ্ছবি হিসেবে রাকিফ উল ইসলামের জীবন গাঁথা কাহিনী বলা যায়।
মীরসরাই উপজেলার ১২নং খৈয়াছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম পোলমোগরা গ্রামের অহিদুল ইসলামের ছোট ছেলে কাতার প্রবাসী রাকিফ উল ইসলাম ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে মৌচাষ আগ্রহী হয়ে নিজ উদ্যোগে বাড়ির আঙিনা ও বাড়ির ছাদে ৩০ হাজার টাকা খরচ দিয়ে ১৩টি বক্স নিয়ে মৌচাষ শুরু করেন। অতি অল্প সময়ে সফলতার মুখ দেখায় পরবর্তীতে সুদূর কাতারে গিয়ে ব্যবসার পাশাপাশি মৌচাষ শুরু করেন। এতে তিনি ব্যবসায়িকভাবে মৌচাষে যথেষ্ট সফলতা অর্জন করেন। সে কাতারের পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় কর্মী নিয়োগ করে মৌচাষ শুরু করেন। ছোট ছোট বাক্সের মধ্যে করে বাণিজ্যিকভাবে মৌচাষ করছেন। বছরে মধু থেকে আয় আসে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রায়।
রাকিফ উল ইসলাম জানান, তিনি বিগত ২০০৯ সালে তার মাথায় আসে মৌমাছি চাষ করে মধু আহরণ করার। সে সুবাদে প্রথমে তৈরি করেন ১৩টি মৌ-মাছিদের থাকার আবাস (বাক্স)। রানী মৌমাছি সংগ্রহ করার অভিজ্ঞতা তার ছিল না। তিনি তার বড় ভাই মরহুম তৌফিক ভাইয়ের সহযোগিতায় রাণী মৌমাছি সংগ্রহের কলা কৌশল শিখেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করেন রাণী মৌমাছি। এরপর তার মৌমাছি পালন ও মধু সংগ্রহ করতে কোন অসুবিধায় পড়তে হয়নি।
এখন প্রায় শতাধিক মৌমাছি পালনের বাক্স তৈরি আছে। মাসিক শ্রমিকভেদে ৩ থেকে ১৩ হাজার টাকা বেতনে ১৮ জন শ্রমিক রেখেছেন। রবিশষ্য মৌসুমে বিশেষ করে সরিষা ও ফাগুন মাসে আমের মুকুল থেকে বেশি মধু সংগৃহীত হয়। সেজন্য তিনি যে অঞ্চলে ফুল ও ফসল বেশি হয় সে সকল জায়গায় মৌমাছির বাক্সগুলো নিয়ে গিয়ে স্থাপন করেন। এতে মধুর পরিমাণও বেড়ে যায়। অপরদিকে ফসলের পরাগায়ন ও ভাল হয়। পরাগায়ন ভাল হলে কৃষকদের ফসলের উৎপাদন বেশি হয়।
বছরে তার উৎপাদিত মধুর পরিমাণ প্রায় ১ টন। প্রতি বাক্স থেকে মাসে ২ বার মধু সংগ্রহ হয়। প্রতি বারে ২ থেকে ৩ কেজি মধু পাওয়া যায়। পাইকারি বাজারে তিনি প্রতি কেজি মধু ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় করে থাকেন। মৌমাছি পালন ও মধু সংগ্রহ করে তিনি এখন স্বাবলম্বী। মধু বিক্রি থেকে রাকিফ উল এর সমস্ত খরচ বাদে বাৎসরিক আয় এখন সাড়ে ৫ লক্ষাধিক টাকা।
রাকিফ উল দুঃখ করে বলেন, এখন কৃষকরা তাদের জমিতে পরিবেশ বিরোধী ভয়াবহ অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করায় মৌমাছির দল ফুলের রেণু সংগ্রহ করতে গিয়ে বিষের কারণে মরে যায়। এজন্য দিন দিন মৌমাছির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এতে পরিবেশসহ প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিপর্যয় ঘটছে। শীতকালে মধু উৎপাদন কিছুটা হ্রাস পায়। এ সময় শীতের তীব্রতায় ও অনেক মৌমাছি মারা যায়। মানব কুল একটু সচেতন হলে সংগৃহীত মধু থেকে জটিল রোগ বালাইনাশক ওষুধসহ উপাদেয় এবং পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাবার যোগানের ব্যবস্থা আরও বেশি করা যেত। প্রচণ্ড শীত হলে বাক্সগুলো নিরাপদে রাখতে হয়। এখন তার মধু উৎপাদন দিন দিন কমতে শুরু করেছে।
এরপরও তার মধু উৎপাদন দেখে এলাকার অনেক আগ্রহী যুবক ও সৌখিন ব্যক্তি তার কাছ থেকে মধু চাষের বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে থাকেন বলে তিনি তার মধু চাষের বিষয়গুলো নিশ্চিত করেন।
রাকিফ উল মনে করেন ভবিষ্যতে তিনি তার এলাকায় বড় আকারে মৌচাষের খামার গড়ে তুলবেন এবং এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন।