সড়কে সপরিবারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালকের মৃত্যু

মীর আবদুল আলীম

সড়ক নিরাপদ করতে আইন হয়েছে। ভাবা গিয়েছিল সড়ক এবার হয়তো নিরাপদ হবে। সড়ক নিরাপদ হয়নি। আরও অনিরাপদ হয়েছে। অবৈধ ড্রাইভাররা প্রশ্রয় পেয়ে আরও দুঃসাহসী হয়ে উঠেছে। ওরা প্রতিদিন অকাতরে মানুষ বধ করছে। সর্বশেষ শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ডে ফৌজদারহাট বাইপাস সড়কে একই পরিবারের দুই মেয়েসহ বাবা নিহত এবং মা-ছেলে হাসপাতালে মৃত্যুর মুখোমুখি। বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক প্রায়ত সাইফুজ্জামানের পরিবার বান্দরবানে বেড়াতে গিয়ে ঢাকায় ফেরার পথে তাদের প্রাইভেট কারটি দুর্ঘটনায় পড়ে।

এ দেশে কত শত সাইফুজ্জামানের মৃত্যু হচ্ছে। প্রতিদিন সড়কে মূল্যবান প্রাণ যাচ্ছে। রাজীবের হাত যাচ্ছে, কারও পা যাচ্ছে, মাথা যাচ্ছে, মিশুক-মনির, সাইফুর রহমানদের জীবন যাচ্ছে। থামছে না সড়কে মৃত্যুর মিছিল। আমরা বিশেষ দু’একজনের জন্য আহ্ উহ্ করি। প্রতিদিন কত খালিদ, কত হৃদয় পঙ্গু হচ্ছে, জীবন দিচ্ছে তার খোঁজ কি রাখি? আমরা কেন মৃত্যুর মিছিল রোধ করছি না? কেবল আলোচিত ঘটনায় মন্ত্রী, এমপিরা ছুটে যায়, স্বজন কিংবা লাশের পাশে। আমরা মায়া কান্না করি; কি লাভ তাতে?

এদেশে আইন হয় আইনের প্রয়োগ না করার জন্য। দুঃখজনক হলেও সত্য এদেশে আইন নিয়ন্ত্রণ করেন সড়ক পরিবহন নেতারা। আরও কষ্টের কথা হলো এ দেশের সড়ক পরিবহনের শীর্ষ নেতা (শাজাহান খান) সরকারি দলের শীর্ষ পদে ছিলেন, এখন দলে তার আরও প্রমোশন হয়েছে। কিসের ‘পুরস্কার’ কে জানে? সড়ক নিরাপদ করতে নয়া আইন হয়েছে। তা বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার কথা ছিল ১ নভেম্বর ২০১৯ থেকে। শুরুতে তর্জন গর্জন শুনেছি। ভালো লেগেছে। পরে দেখলাম শ্রমিক নেতাদের দেন-দরবারে হঠাৎ থমকে গেছে সরকার ও প্রশাসনের আইন প্রয়োগের কার্যক্রম। সড়কের নিরাপত্তার জন্য আন্দোলনকারী স্কুল কলেজের কিশোর-তরুণরা হেলমেট বাহিনীর মার খেয়ে ঘরে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাও হয়েছে। সেই মামলায় তারা এখনো নাজেহাল হচ্ছে। কিন্তু সড়কে মানুষ বধ এখনো চলছে বেপরোয়াভাবে। এদের বিরুদ্ধে আইনের কোন প্রয়োগ নেই। সড়ক নিয়ে আন্দোলনে নামা নিরাপদ সড়ক চাই’র প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চন উল্টো শাজাহান খানের হুমকির মুখে পড়েন। থমকে গেছে সড়ক আন্দোলনও। তাই রাস্তায় আগের চেয়ে বেপরোয়া চালক; যা হওয়ার তাই হচ্ছে সড়কে। মাঝে মাঝে আইন প্রয়োগের কথা উঠলে; বড় কোন দুর্ঘটনায় সরকারি মহলের হুঙ্কার শুনলে তৃপ্ত হই এই ভেবে যে, এই বুঝি সড়ক নিরাপদ হচ্ছে। নিরাপদ সড়কের জন্য হাজারো হুঙ্কার আন্দোলন, ধর্মঘট, মিছিল, সমাবেশ কতকিছুই না হয়; সড়ক আর নিরাপদ হয় না।

সম্প্রতি উচ্চ আদালত ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে না চলতে নির্দেশনা দিয়েছেন। ফিটনেসবিহীন গাড়ি এখনও সড়কে চলছে। তবে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চললে সড়কে গাড়ির সংখ্যা কমে যায়। এতে জনগণের ভোগান্তির সৃষ্টি হয় উল্লেখ করে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরা বিকল্প ব্যবস্থার বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করছি।’ এটা কিন্তু সরকারের উল্টে পথে হাঁটারই লক্ষণ। সরকার নন-কমিটেড হলে আইনের প্রয়োগ না হলে সড়কে মানুষ তো মরবেই। সম্প্রতি উচ্চ আদালত ফিটনেসবিহীন গাড়িতে জ্বালানি সরবরাহ না করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। জ্বালানি পাম্পগুলোতে সাইনবোর্ডও লাগিয়ে দেয়া হয়েছে- ‘ফিটনেস ছাড়া জ্বালানি সরবরাহ করা হয় না’। সে নির্দেশ এখন অকার্যকর। এ প্রসঙ্গে সড়ক ও পরিবহনমন্ত্রী বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনায় ‘বাস্তবতার নিরিখে’ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তেল দেয়ার বিষয়টি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের। হাইকোর্ট যখন আদেশ দিয়েছেন, পেট্রল পাম্প তো জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের, তারা এ আদেশ মানার প্রক্রিয়ায় কতটুকু এগিয়েছে, তা জানি না বলেছেন মন্ত্রী। হাইকোর্ট যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, আমরা দেখেছি সিদ্ধান্ত দেয়ার আগেও হেলমেট না থাকলে তেল নয়, যে ব্যবস্থা করা হয়েছিল, সেটি কার্যকর হয়েছে। কাজেই ফিটনেসবিহীন গাড়িতে তেল সরবরাহ না করার এ বিষয়টি মনে হয় জনস্বার্থে মেনে নেয়া দরকার এবং মেনে নিলে মানুষ উপকৃত হবে। সেটা কার্যকর হচ্ছে না এখনো। হয়তে হবে না কখনো। এদেশে হাইকোর্টের নির্দেশকেও অমান্য করে ক্ষমতা-প্রভাব যাদের রয়েছে তারা।

এবার নয়া ‘সড়ক আইন ২০১৯’ মনে আশা জাগে বড়; তবে মনে জোর পাইনি। আমাদের কত কিছুর জন্যইতো আইন আছে প্রয়োগ হয় ক’টা? এদেশে কঠোর খাদ্য আইন আছে তবুও প্রায় সব খাবারেই তো বিষ মিশানো থাকে। নারীর প্রতি সহিংসতার আইন আছে এদেশের নারীরা কতটা নিরাপদ। অনিরাপদ হয়ে ধর্ষিত হয়ে, খুন হয়ে যাবার পর নুসরাতের মতো ক’টা ঘটনার বিচার হয় এদেশে। সড়ক আইন ছিলো আগেও এখনও আছে। প্রয়োগ হয় কি? নয়া আইনের প্রয়োগ নিয়েও মনে প্রশ্ন উঁকি ঝুঁকি মারে। তবুও আশা করতে দোস কোথায়? আশায় বাসা বেঁধে নাহয় নিরাপদ সড়কের স্বপ্ন দেখতে দোষ কি তাতে। একেবারে আশা ছেড়ে দেয়া যাবে না। যা ভাবিনি তাতো হচ্ছে দেশে। সড়কে সড়কে ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, স্বপ্নের পদ্মা সেতু সবই তো দেখছি। নতুন করে জানলাম শিশুরা নতুন বছর নতুন বইয়ের সঙ্গে টাকা পাবে। বয়স্ক মানুষ, দরিদ্র মানুষ ভাতা পাচ্ছে। একদিন দেশের সকল বেকার নাগরিকরা হয়তো ভাতার আওতায় আসবে। ফ্রি চিকিৎসা পাবে। এমন স্বপ্ন এখন দেখতে পারি। ভাবি সব কিছুইতো হচ্ছে। কিন্তু খুনে সড়ক কি আদৌ নিরাপদ হবে কখনো? মনে বড় সংশয়। সড়ক ঠিকই নিরাপদ হবে। কিছু কিছু ঘটনায় দেখেছি প্রধানমন্ত্রী নাড়া দিলে সব নড়ে চড়ে ওঠে। তিনি দৃষ্টি দিলে সব সহজে হয়ে যায়। এবারও তিনি সড়ক নিরাপদ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আন্দোলনের ভয়ে হয়তো সেই নির্দেশনা অকার্যকর হয়ে আছে। মনে প্রশ্ন জাগেই, আদৌ কি খুনে সড়ক আমাদের জন্য নিরাপদ হবে? থামবে কি সড়কে মৃত্যুর মিছিল?

সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মরছে তো মরছেই। রোধ হচ্ছে না। এ দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কিন্তু অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। সড়কে আইন মানছে না কেউ। আসলে সড়কে আইন মানতে বাধ্য করা হয় না। তাহলে কিভাবে সড়ক নৈরাজ্য থামবে? এ নিয়ে সরকার সংশ্লিষ্টদের ভাবনা কম। যারা সড়কে আইন মানানোর কাজ করেন তারাই আইন মানেন না। আজকাল আর কেউ ঘর থেকে বের হলে পৈত্রিক প্রাণটা নিয়ে ফের ঘরে ফিরতে পারবেন কিনা সে নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না।

এমন কোনো দিন নেই, যে দিন সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে না। বিগত এরশাদ সরকারের আমলে সড়ক দুর্ঘটনা অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে সরকার দুর্ঘটনা সংঘটনকারী গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে পরে তা রহিত করতে বাধ্য হয় সরকার। এরপর থেকে বিভিন্ন সরকারকে পরিবহন শ্রমিকদের দাবি দাওয়ার কাছে প্রায় জিম্মি থাকতে দেখা যাচ্ছে। এভাবে দুর্ঘটনা সংঘটনকারী চালকদের শাস্তি না হওয়া, ট্রাফিক আইন লংঘন, লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালক কর্তৃক গাড়ি চালানো, আনফিট গাড়ি রাস্তায় চালানো, সড়ক যোগাযোগে অব্যবস্থাপনা অব্যাহতই রয়েছে সব ধরনের আইনকানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে। দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত চালকদের বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে আসার ঘটনা এ দেশে বিরল। দেখা গেছে, প্রায় সব দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই চালকরা পার পেয়ে গেছে। কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি তাদের বিরুদ্ধে।

এদেশে সড়ক দুর্ঘটনা স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক নয়, তা হচ্ছে মানবসৃষ্ট কারণে। এই হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতরা পরোক্ষভাবে হত্যারই শিকার। কিন্তু হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার কাক্সিক্ষত উদ্যোগ নেই। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা না কমে জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলেছে। সরকারি হিসাবে গত ১০ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা গেছে ৩৪ হাজার ৯১৮ জন। প্রতি বছর মারা যায় ৩ হাজার ৪৯১ জন। থানায় মামলা হয়েছে এমন দুর্ঘটনার হিসাব নিয়ে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে দায়িত্বশীলদের তরফ থেকে। বেসরকারি হিসাবে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে ২০ হাজার ৩৪ জন। প্রতিদিন গড়ে মারা যাচ্ছে প্রায় ৫৫ জন। সরকারি তথ্য ও বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত তথ্যের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান থাকার কারণ হলো, দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের ৬৭ ধরনের প্রশ্নের উত্তর সংগ্রহ করে প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। এ ঝামেলার কারণে অনেক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর বিষয়টি যথাযথভাবে রেকর্ডভুক্ত হয় না। পুলিশের দেয়া তথ্যানুযায়ী ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ২ হাজার ১৪০ জন। মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে ১ হাজার ১৮৬ এবং সামান্য আহত হয়েছে ১৫৭ জন। অন্য একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৭২ হাজার ৭৪৮টি। মারা গেছে ৫২ হাজার ৬৮৪ জন। আহত ও পঙ্গু হয়েছে আরও কয়েক হাজার মানুষ। ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এশিয়া, ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ার ১৫টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার নেপালে, দ্বিতীয় বাংলাদেশে। সবচেয়ে কম হার যুক্তরাজ্যে। এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি ১০ হাজার নিবন্ধিত যানবাহনের দুর্ঘটনায় নেপালে মারা যায় ৬৩ জন এবং বাংলাদেশে ৬০ জন। যুক্তরাজ্যে এ হার মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ।

সড়ক দুর্ঘটনাজনিত ক্ষয়ক্ষতির সাম্প্রতিক এক গবেষণা তথ্যে দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় ফি বছর ৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পদহানি হয়। এই হার দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৯৫ শতাংশের সমান। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির হার উন্নত দেশগুলোর তুলনায় শতকরা ৫০ ভাগ বেশি। অন্য এক গবেষণা জরিপ থেকে জানা যায়, ৪৮ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্যে দায়ী যাত্রীবাহী বাস, ৩৭ শতাংশ দায়ী ট্রাক। দেশে সন্ত্রাস দমনে যদি বিশেষ বাহিনী গঠন করা যায়, তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এ জাতীয় বাহিনী গঠন করা হচ্ছে না কেন? জানমাল রক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আইন না মানাই হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম মূল কারণ। সবাইকে আইন মানতে বাধ্য করতে হবে। দুর্ঘটনার অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ২. গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার, ৩. অতিরিক্ত যাত্রী এবং পণ্য পরিবহন, ৪. ট্রাফিক আইন না মানা, ৫. সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বে অবহেলা, ৬. চালকদের বেপরোয়া মনোভাব, অদক্ষতা ও অসতর্কতা এবং ৭. অরক্ষিত রেললাইন। কথা হলো, যে কোনো মৃত্যুই দুঃখজনক। মৃত্যু যদি অকাল ও আকস্মিক হয় তবে তা মেনে নেয়া আরও কঠিন। প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে একের পর এক অকাল মৃত্যু আমাদের শুধু প্রত্যক্ষই করতে হচ্ছে না এই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক বিভীষিকাময় ও অরাজক পরিস্থিতিও মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সবার প্রচেষ্টায় এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির নিরসন করতেই হবে। এভাবে চলতে পারে না। এভাবে মানুষের জীবনপ্রদীপ নিভে যেতে পারে না। পঙ্গুত্বের মতো দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিয়ে মানুষ জীবন কাটাতে পারে না। কারণগুলো যেহেতু চিহ্নিত সেহেতু সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দুরূহ হবে কেন?

কিন্তু আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় দেশে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এসব রুখতে হবে? যে কোনো মৃত্যুই দুঃখজনক। সে মৃত্যু যদি অকাল ও আকস্মিক হয়, তবে তা মেনে নেয়া আরও কঠিন। প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে একের পর এক অকাল মৃত্যু আমাদের শুধু প্রত্যক্ষই করতে হচ্ছে না, এ দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক বিভীষিকাময় ও অরাজক পরিস্থিতিও মোকাবিলা করতে হচ্ছে, যা আমাদের কারও কাছেই কাম্য নয়। আমরা সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পরিবহন মালিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে সমন্বিত আন্তরিক, সচেতন, দৃঢ় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা আশা করি।

[লেখক : সাংবাদিক, গবেষক ও কলামিস্ট]

newsstoremir@gmail.com

সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ , ১৫ পৌষ ১৪২৬, ২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

প্রশ্রয় পেয়ে সড়কে ওরা আরও বেপরোয়া

সড়কে সপরিবারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালকের মৃত্যু

মীর আবদুল আলীম

সড়ক নিরাপদ করতে আইন হয়েছে। ভাবা গিয়েছিল সড়ক এবার হয়তো নিরাপদ হবে। সড়ক নিরাপদ হয়নি। আরও অনিরাপদ হয়েছে। অবৈধ ড্রাইভাররা প্রশ্রয় পেয়ে আরও দুঃসাহসী হয়ে উঠেছে। ওরা প্রতিদিন অকাতরে মানুষ বধ করছে। সর্বশেষ শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ডে ফৌজদারহাট বাইপাস সড়কে একই পরিবারের দুই মেয়েসহ বাবা নিহত এবং মা-ছেলে হাসপাতালে মৃত্যুর মুখোমুখি। বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক প্রায়ত সাইফুজ্জামানের পরিবার বান্দরবানে বেড়াতে গিয়ে ঢাকায় ফেরার পথে তাদের প্রাইভেট কারটি দুর্ঘটনায় পড়ে।

এ দেশে কত শত সাইফুজ্জামানের মৃত্যু হচ্ছে। প্রতিদিন সড়কে মূল্যবান প্রাণ যাচ্ছে। রাজীবের হাত যাচ্ছে, কারও পা যাচ্ছে, মাথা যাচ্ছে, মিশুক-মনির, সাইফুর রহমানদের জীবন যাচ্ছে। থামছে না সড়কে মৃত্যুর মিছিল। আমরা বিশেষ দু’একজনের জন্য আহ্ উহ্ করি। প্রতিদিন কত খালিদ, কত হৃদয় পঙ্গু হচ্ছে, জীবন দিচ্ছে তার খোঁজ কি রাখি? আমরা কেন মৃত্যুর মিছিল রোধ করছি না? কেবল আলোচিত ঘটনায় মন্ত্রী, এমপিরা ছুটে যায়, স্বজন কিংবা লাশের পাশে। আমরা মায়া কান্না করি; কি লাভ তাতে?

এদেশে আইন হয় আইনের প্রয়োগ না করার জন্য। দুঃখজনক হলেও সত্য এদেশে আইন নিয়ন্ত্রণ করেন সড়ক পরিবহন নেতারা। আরও কষ্টের কথা হলো এ দেশের সড়ক পরিবহনের শীর্ষ নেতা (শাজাহান খান) সরকারি দলের শীর্ষ পদে ছিলেন, এখন দলে তার আরও প্রমোশন হয়েছে। কিসের ‘পুরস্কার’ কে জানে? সড়ক নিরাপদ করতে নয়া আইন হয়েছে। তা বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার কথা ছিল ১ নভেম্বর ২০১৯ থেকে। শুরুতে তর্জন গর্জন শুনেছি। ভালো লেগেছে। পরে দেখলাম শ্রমিক নেতাদের দেন-দরবারে হঠাৎ থমকে গেছে সরকার ও প্রশাসনের আইন প্রয়োগের কার্যক্রম। সড়কের নিরাপত্তার জন্য আন্দোলনকারী স্কুল কলেজের কিশোর-তরুণরা হেলমেট বাহিনীর মার খেয়ে ঘরে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাও হয়েছে। সেই মামলায় তারা এখনো নাজেহাল হচ্ছে। কিন্তু সড়কে মানুষ বধ এখনো চলছে বেপরোয়াভাবে। এদের বিরুদ্ধে আইনের কোন প্রয়োগ নেই। সড়ক নিয়ে আন্দোলনে নামা নিরাপদ সড়ক চাই’র প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চন উল্টো শাজাহান খানের হুমকির মুখে পড়েন। থমকে গেছে সড়ক আন্দোলনও। তাই রাস্তায় আগের চেয়ে বেপরোয়া চালক; যা হওয়ার তাই হচ্ছে সড়কে। মাঝে মাঝে আইন প্রয়োগের কথা উঠলে; বড় কোন দুর্ঘটনায় সরকারি মহলের হুঙ্কার শুনলে তৃপ্ত হই এই ভেবে যে, এই বুঝি সড়ক নিরাপদ হচ্ছে। নিরাপদ সড়কের জন্য হাজারো হুঙ্কার আন্দোলন, ধর্মঘট, মিছিল, সমাবেশ কতকিছুই না হয়; সড়ক আর নিরাপদ হয় না।

সম্প্রতি উচ্চ আদালত ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে না চলতে নির্দেশনা দিয়েছেন। ফিটনেসবিহীন গাড়ি এখনও সড়কে চলছে। তবে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চললে সড়কে গাড়ির সংখ্যা কমে যায়। এতে জনগণের ভোগান্তির সৃষ্টি হয় উল্লেখ করে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরা বিকল্প ব্যবস্থার বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করছি।’ এটা কিন্তু সরকারের উল্টে পথে হাঁটারই লক্ষণ। সরকার নন-কমিটেড হলে আইনের প্রয়োগ না হলে সড়কে মানুষ তো মরবেই। সম্প্রতি উচ্চ আদালত ফিটনেসবিহীন গাড়িতে জ্বালানি সরবরাহ না করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। জ্বালানি পাম্পগুলোতে সাইনবোর্ডও লাগিয়ে দেয়া হয়েছে- ‘ফিটনেস ছাড়া জ্বালানি সরবরাহ করা হয় না’। সে নির্দেশ এখন অকার্যকর। এ প্রসঙ্গে সড়ক ও পরিবহনমন্ত্রী বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনায় ‘বাস্তবতার নিরিখে’ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তেল দেয়ার বিষয়টি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের। হাইকোর্ট যখন আদেশ দিয়েছেন, পেট্রল পাম্প তো জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের, তারা এ আদেশ মানার প্রক্রিয়ায় কতটুকু এগিয়েছে, তা জানি না বলেছেন মন্ত্রী। হাইকোর্ট যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, আমরা দেখেছি সিদ্ধান্ত দেয়ার আগেও হেলমেট না থাকলে তেল নয়, যে ব্যবস্থা করা হয়েছিল, সেটি কার্যকর হয়েছে। কাজেই ফিটনেসবিহীন গাড়িতে তেল সরবরাহ না করার এ বিষয়টি মনে হয় জনস্বার্থে মেনে নেয়া দরকার এবং মেনে নিলে মানুষ উপকৃত হবে। সেটা কার্যকর হচ্ছে না এখনো। হয়তে হবে না কখনো। এদেশে হাইকোর্টের নির্দেশকেও অমান্য করে ক্ষমতা-প্রভাব যাদের রয়েছে তারা।

এবার নয়া ‘সড়ক আইন ২০১৯’ মনে আশা জাগে বড়; তবে মনে জোর পাইনি। আমাদের কত কিছুর জন্যইতো আইন আছে প্রয়োগ হয় ক’টা? এদেশে কঠোর খাদ্য আইন আছে তবুও প্রায় সব খাবারেই তো বিষ মিশানো থাকে। নারীর প্রতি সহিংসতার আইন আছে এদেশের নারীরা কতটা নিরাপদ। অনিরাপদ হয়ে ধর্ষিত হয়ে, খুন হয়ে যাবার পর নুসরাতের মতো ক’টা ঘটনার বিচার হয় এদেশে। সড়ক আইন ছিলো আগেও এখনও আছে। প্রয়োগ হয় কি? নয়া আইনের প্রয়োগ নিয়েও মনে প্রশ্ন উঁকি ঝুঁকি মারে। তবুও আশা করতে দোস কোথায়? আশায় বাসা বেঁধে নাহয় নিরাপদ সড়কের স্বপ্ন দেখতে দোষ কি তাতে। একেবারে আশা ছেড়ে দেয়া যাবে না। যা ভাবিনি তাতো হচ্ছে দেশে। সড়কে সড়কে ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, স্বপ্নের পদ্মা সেতু সবই তো দেখছি। নতুন করে জানলাম শিশুরা নতুন বছর নতুন বইয়ের সঙ্গে টাকা পাবে। বয়স্ক মানুষ, দরিদ্র মানুষ ভাতা পাচ্ছে। একদিন দেশের সকল বেকার নাগরিকরা হয়তো ভাতার আওতায় আসবে। ফ্রি চিকিৎসা পাবে। এমন স্বপ্ন এখন দেখতে পারি। ভাবি সব কিছুইতো হচ্ছে। কিন্তু খুনে সড়ক কি আদৌ নিরাপদ হবে কখনো? মনে বড় সংশয়। সড়ক ঠিকই নিরাপদ হবে। কিছু কিছু ঘটনায় দেখেছি প্রধানমন্ত্রী নাড়া দিলে সব নড়ে চড়ে ওঠে। তিনি দৃষ্টি দিলে সব সহজে হয়ে যায়। এবারও তিনি সড়ক নিরাপদ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আন্দোলনের ভয়ে হয়তো সেই নির্দেশনা অকার্যকর হয়ে আছে। মনে প্রশ্ন জাগেই, আদৌ কি খুনে সড়ক আমাদের জন্য নিরাপদ হবে? থামবে কি সড়কে মৃত্যুর মিছিল?

সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মরছে তো মরছেই। রোধ হচ্ছে না। এ দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কিন্তু অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। সড়কে আইন মানছে না কেউ। আসলে সড়কে আইন মানতে বাধ্য করা হয় না। তাহলে কিভাবে সড়ক নৈরাজ্য থামবে? এ নিয়ে সরকার সংশ্লিষ্টদের ভাবনা কম। যারা সড়কে আইন মানানোর কাজ করেন তারাই আইন মানেন না। আজকাল আর কেউ ঘর থেকে বের হলে পৈত্রিক প্রাণটা নিয়ে ফের ঘরে ফিরতে পারবেন কিনা সে নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না।

এমন কোনো দিন নেই, যে দিন সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে না। বিগত এরশাদ সরকারের আমলে সড়ক দুর্ঘটনা অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে সরকার দুর্ঘটনা সংঘটনকারী গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে পরে তা রহিত করতে বাধ্য হয় সরকার। এরপর থেকে বিভিন্ন সরকারকে পরিবহন শ্রমিকদের দাবি দাওয়ার কাছে প্রায় জিম্মি থাকতে দেখা যাচ্ছে। এভাবে দুর্ঘটনা সংঘটনকারী চালকদের শাস্তি না হওয়া, ট্রাফিক আইন লংঘন, লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালক কর্তৃক গাড়ি চালানো, আনফিট গাড়ি রাস্তায় চালানো, সড়ক যোগাযোগে অব্যবস্থাপনা অব্যাহতই রয়েছে সব ধরনের আইনকানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে। দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত চালকদের বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে আসার ঘটনা এ দেশে বিরল। দেখা গেছে, প্রায় সব দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই চালকরা পার পেয়ে গেছে। কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি তাদের বিরুদ্ধে।

এদেশে সড়ক দুর্ঘটনা স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক নয়, তা হচ্ছে মানবসৃষ্ট কারণে। এই হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতরা পরোক্ষভাবে হত্যারই শিকার। কিন্তু হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার কাক্সিক্ষত উদ্যোগ নেই। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা না কমে জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলেছে। সরকারি হিসাবে গত ১০ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা গেছে ৩৪ হাজার ৯১৮ জন। প্রতি বছর মারা যায় ৩ হাজার ৪৯১ জন। থানায় মামলা হয়েছে এমন দুর্ঘটনার হিসাব নিয়ে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে দায়িত্বশীলদের তরফ থেকে। বেসরকারি হিসাবে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে ২০ হাজার ৩৪ জন। প্রতিদিন গড়ে মারা যাচ্ছে প্রায় ৫৫ জন। সরকারি তথ্য ও বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত তথ্যের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান থাকার কারণ হলো, দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের ৬৭ ধরনের প্রশ্নের উত্তর সংগ্রহ করে প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। এ ঝামেলার কারণে অনেক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর বিষয়টি যথাযথভাবে রেকর্ডভুক্ত হয় না। পুলিশের দেয়া তথ্যানুযায়ী ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ২ হাজার ১৪০ জন। মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে ১ হাজার ১৮৬ এবং সামান্য আহত হয়েছে ১৫৭ জন। অন্য একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৭২ হাজার ৭৪৮টি। মারা গেছে ৫২ হাজার ৬৮৪ জন। আহত ও পঙ্গু হয়েছে আরও কয়েক হাজার মানুষ। ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এশিয়া, ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ার ১৫টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার নেপালে, দ্বিতীয় বাংলাদেশে। সবচেয়ে কম হার যুক্তরাজ্যে। এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি ১০ হাজার নিবন্ধিত যানবাহনের দুর্ঘটনায় নেপালে মারা যায় ৬৩ জন এবং বাংলাদেশে ৬০ জন। যুক্তরাজ্যে এ হার মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ।

সড়ক দুর্ঘটনাজনিত ক্ষয়ক্ষতির সাম্প্রতিক এক গবেষণা তথ্যে দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় ফি বছর ৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পদহানি হয়। এই হার দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৯৫ শতাংশের সমান। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির হার উন্নত দেশগুলোর তুলনায় শতকরা ৫০ ভাগ বেশি। অন্য এক গবেষণা জরিপ থেকে জানা যায়, ৪৮ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্যে দায়ী যাত্রীবাহী বাস, ৩৭ শতাংশ দায়ী ট্রাক। দেশে সন্ত্রাস দমনে যদি বিশেষ বাহিনী গঠন করা যায়, তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এ জাতীয় বাহিনী গঠন করা হচ্ছে না কেন? জানমাল রক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আইন না মানাই হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম মূল কারণ। সবাইকে আইন মানতে বাধ্য করতে হবে। দুর্ঘটনার অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ২. গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার, ৩. অতিরিক্ত যাত্রী এবং পণ্য পরিবহন, ৪. ট্রাফিক আইন না মানা, ৫. সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বে অবহেলা, ৬. চালকদের বেপরোয়া মনোভাব, অদক্ষতা ও অসতর্কতা এবং ৭. অরক্ষিত রেললাইন। কথা হলো, যে কোনো মৃত্যুই দুঃখজনক। মৃত্যু যদি অকাল ও আকস্মিক হয় তবে তা মেনে নেয়া আরও কঠিন। প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে একের পর এক অকাল মৃত্যু আমাদের শুধু প্রত্যক্ষই করতে হচ্ছে না এই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক বিভীষিকাময় ও অরাজক পরিস্থিতিও মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সবার প্রচেষ্টায় এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির নিরসন করতেই হবে। এভাবে চলতে পারে না। এভাবে মানুষের জীবনপ্রদীপ নিভে যেতে পারে না। পঙ্গুত্বের মতো দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিয়ে মানুষ জীবন কাটাতে পারে না। কারণগুলো যেহেতু চিহ্নিত সেহেতু সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দুরূহ হবে কেন?

কিন্তু আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় দেশে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এসব রুখতে হবে? যে কোনো মৃত্যুই দুঃখজনক। সে মৃত্যু যদি অকাল ও আকস্মিক হয়, তবে তা মেনে নেয়া আরও কঠিন। প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে একের পর এক অকাল মৃত্যু আমাদের শুধু প্রত্যক্ষই করতে হচ্ছে না, এ দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক বিভীষিকাময় ও অরাজক পরিস্থিতিও মোকাবিলা করতে হচ্ছে, যা আমাদের কারও কাছেই কাম্য নয়। আমরা সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পরিবহন মালিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে সমন্বিত আন্তরিক, সচেতন, দৃঢ় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা আশা করি।

[লেখক : সাংবাদিক, গবেষক ও কলামিস্ট]

newsstoremir@gmail.com