ক্রয় বরাদ্দ না বাড়ালে কৃষক আবারও সংকটে পড়বে

সামসুজ্জামান

সরকার দেশের সব গুদামে আমন ধান খরিদ শুরু করেছেন। এ মৌসুমে ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ টাকা প্রতি কেজি। মিলারদের কাছ থেকে চাল খরিদ করা হবে প্রতি কেজি ৩৬ টাকা আতপ চাল ৬৫ টাকা হিসাবে। সরকারি ভাবে খরিদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৮ লাখ টন। এবার ‘কৃষক অ্যাপে’ আবেদনের ভিত্তিতে লটারির মাধ্যমে এ সংগ্রহ অভিযান পরিচালিত হবে। মধ্যস্বত্বভোগীরা যাতে এই ক্রয় অভিযানে কৃষকদের কাছ থেকে স্বল্পমূল্যে ধান ক্রয় করে গুদামে দিতে না পারে মূলত এ কারণেই এ ব্যবস্থার প্রচলন শুরু করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এ প্রক্রিয়া একটি যুগোপযোগী এবং যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এখন অপেক্ষায় থাকতে হবে মামুলি প্রথার বদলে চালুকৃত এ নতুন পদ্ধতির দিকে। কতখানি কার্যকর হবে।

আমি কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলাপ করে জেনেছি তাদের মনোভাব। তাদের অধিকাংশই সরকারের এ পদ্ধতির বিপক্ষে কথা বলেছে। তাদের ভাষায় একজন কৃষক গুদামে ধান বিক্রি করে কেন ঝামেলায় যাবে। আমরা তো কিছু কম মূল্য দিলেও সঙ্গে সঙ্গে টাকা দিয়ে দেই। তাদের মতে সরকার কৃষক অ্যাপের মাধ্যমে লটারি করে ধান-চাউল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি কয়েকজন কৃষক তাদের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করে বলেন, সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কিন্তু তাদের আশঙ্কা মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা এ উদ্যোগকে বানচাল করার চেষ্টা করবে। সরকার যদি কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তা হলেই কৃষকদের মুখে হাসি ফুটবে; কৃষক তার কাক্সিক্ষত সফলতা পাবে উপযুক্ত মূল্য পেয়ে।

কৃষকদের আশঙ্কা কাটছে না। ইরি মৌসুমে মণপ্রতি ৩০০-৩৫০ টাকা লোকসানে ধান বিক্রির কারণে। অবস্থা এমন অসহনীয় পর্যায়ে গিয়েছিল যে নিজের হাতে লাগানো পাকা ধানের ক্ষেতে আগুন দিয়েছিল নিজ হাতে। অনেক বিশেষজ্ঞ এ ঘটনা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং কিছু বিশেষজ্ঞ অতিরিক্ত ফলনকে দায়ী করে বলেছিলেন কৃষি অধিদফতরের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দেড়গুণ বেশি ফলন হওয়ায় নাকি বাজারের এই অবস্থা হয়েছিল। তারা একবারও মধ্যস্বত্বভোগীদের গুদাম কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশের কথা ভুলেও বলেননি। তাদের ভাবখানা এমন ছিল যে, কৃষক অধিক ধানের ফলন বৃদ্ধি করে মহা অপরাধ করেছে। স্বাধীনতার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। তিনি এমনও বলেছিলেন যে মৃত রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে কোন লাভ হবেনা। পুরো শ্রমই বৃথা যাবে। গত ১০ বছরের মধ্যে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে আজ রফতানিকারক দেশের তালিকায় নাম উঠাতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের দেশের কৃষকেরা অর্ধাহারে-অনাহারে থেকেও মাথার ঘাম পায়ে ফেলার কারণে আজ দেশ এ পর্যায়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকে তাকালেই আমরা বুঝতে পারব দেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করতে হলে কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। ইন্দিরা গান্ধী সরকারের আমলে ভারতে সপ্তাহে এক দিন সব হোটেল বন্ধ থাকত। এতেই ভারতের মতো এতবড় দেশে এক মাসের খাদ্যের সাশ্রয় হয়ে যেত। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে আমাদের দেশে সপ্তাহে একদিনও হোটেল বন্ধ রাখতে হয়নি। এর সবটুকু কৃতিত্বই আমাদের কৃষকদের। নতুন নতুন হাইব্রিড জাতের অধিক ফলনশীল ধান উৎপাদনের জন্যেই এটা সম্ভব হয়েছে।

আমাদের কৃষকদের আশা বা দাবি বেশি নয়। বছরের খোরাকি ধান আর উদ্বৃত্ত ধানের সরকারি মূল্য পেলেই তারা খুশি। ফুরফুরে মেজাজে সন্ধ্যার পর গ্রামের চায়ের দোকানে আড্ডা আর টেলিভিশন দেখে সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটিয়ে দেয় তারা। সরকার নির্ধারিত মূল্যও থাকে সামঞ্জস্যপূর্ণ। চলতি আমন মৌসুমে সরকার প্রতি মণ ধান ১০৪০ টাকা মণ দরে কেনার ঘোষণা দিয়েছেন। কৃষক এ দামে গুদামে ধান দিতে পারলে প্রতি মণে কমপক্ষে ৩০০ টাকা লাভ থাকবে। কিন্তু প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে দুটি জায়গায়। একটি মধ্যস্বত্বভোগী অন্যটি সব কৃষক গুদামে ধান দিতে পারছে না। লটারির মাধ্যমে যে ক’জন টিকবে তাদের কাছ থেকেই শুধু ধান খরিদ করা হবে। একটি উপজেলার চিত্র তুলে ধরলে সারা দেশের অবস্থা আঁচ করা সহজ হবে। যশোরের কেশবপুর এলাকায় এ বছর ২৩ হাজার কৃষক আমন ধানের চাষ করেছেন ৯২৪০ হেক্টর জমিতে। এখানে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ৪১ হাজার ৫৮০ টন। গত বছর এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৭০০ হেক্টর। উফশী জাতের কারণে এবার গত বছরের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু এ বছর এখানে মাত্র ১ হাজার ১২ জন কৃষকের কাছ থেকে ১ হাজার ১২ টন ধান খরিদ করা হবে। তাহলে বাকি কৃষকদের বাধ্য হয়েই মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীদের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া আর পথ থাকবে না। ব্যবসায়ীরা অপেক্ষাকৃত কমদামে ধান কিনে গুদামজাত করবে সরকারি খরিদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সাল পর্যন্ত। এরপর ঝোপ বুঝে কোপ মারবে তারা। হঠাৎ করে বাজার দাম বেড়ে যাবে হু হু করে। এই সিন্ডিকেটকে যে কোন ভাবে পরাস্ত করতে হবে সরকারকে। পাশাপাশি ক্রয় বরাদ্দের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। না হলে প্রবাদবাক্য ‘যে লাউ, সে কদুই’ থেকে যাবে। বর্তমানে এখানকার বাজারে প্রতি মণ আমন ৬০০/৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখন ধান উঠার মুখে এ অবস্থা হলে পুরোপুরি ধান ওঠা শুরু করলে দাম আরও কমিয়ে দেবে ব্যবসায়ীরা।

বর্তমান সারা দেশে একযোগে চাউলের দাম কেজি প্রতি ৬-৭ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্যে উদ্বৃত্ত, রফতানিকারক দেশ হয়েও আমাদের তা মেনে নিতে হচ্ছে পেটের তাগিদে। কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে নির্লিপ্ত ভূমিকা নিলে হয়তো আমাদের পরিশ্রমী কৃষকরা অন্য কোন চাষে মনোযোগী হয়ে পড়বে। এ ভাবেই সরকারের নির্লিপ্ততার কারণে পাট, তুলা চাষে কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। আমাদেরকে একটি কথা ভাবতে হবে কৃষি প্রধান এই দেশে কৃষক না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না। এ ক্ষেত্রে এসি ঘরে বসা বিশেষজ্ঞদের বচন কৃষকের কোন কাজে আসবে না বরং দেশ আরও একধাপ পিছিয়ে যাবে। ফলে কৃষককে বাঁচিয়ে রাখতে যত কঠোর হোক না কেন সেই পথেই হাঁটতে হবে সরকারকে।

[লেখক : কলামিস্ট]

সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ , ১৫ পৌষ ১৪২৬, ২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

ক্রয় বরাদ্দ না বাড়ালে কৃষক আবারও সংকটে পড়বে

সামসুজ্জামান

image

সরকার দেশের সব গুদামে আমন ধান খরিদ শুরু করেছেন। এ মৌসুমে ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ টাকা প্রতি কেজি। মিলারদের কাছ থেকে চাল খরিদ করা হবে প্রতি কেজি ৩৬ টাকা আতপ চাল ৬৫ টাকা হিসাবে। সরকারি ভাবে খরিদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৮ লাখ টন। এবার ‘কৃষক অ্যাপে’ আবেদনের ভিত্তিতে লটারির মাধ্যমে এ সংগ্রহ অভিযান পরিচালিত হবে। মধ্যস্বত্বভোগীরা যাতে এই ক্রয় অভিযানে কৃষকদের কাছ থেকে স্বল্পমূল্যে ধান ক্রয় করে গুদামে দিতে না পারে মূলত এ কারণেই এ ব্যবস্থার প্রচলন শুরু করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এ প্রক্রিয়া একটি যুগোপযোগী এবং যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এখন অপেক্ষায় থাকতে হবে মামুলি প্রথার বদলে চালুকৃত এ নতুন পদ্ধতির দিকে। কতখানি কার্যকর হবে।

আমি কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলাপ করে জেনেছি তাদের মনোভাব। তাদের অধিকাংশই সরকারের এ পদ্ধতির বিপক্ষে কথা বলেছে। তাদের ভাষায় একজন কৃষক গুদামে ধান বিক্রি করে কেন ঝামেলায় যাবে। আমরা তো কিছু কম মূল্য দিলেও সঙ্গে সঙ্গে টাকা দিয়ে দেই। তাদের মতে সরকার কৃষক অ্যাপের মাধ্যমে লটারি করে ধান-চাউল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি কয়েকজন কৃষক তাদের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করে বলেন, সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কিন্তু তাদের আশঙ্কা মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা এ উদ্যোগকে বানচাল করার চেষ্টা করবে। সরকার যদি কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তা হলেই কৃষকদের মুখে হাসি ফুটবে; কৃষক তার কাক্সিক্ষত সফলতা পাবে উপযুক্ত মূল্য পেয়ে।

কৃষকদের আশঙ্কা কাটছে না। ইরি মৌসুমে মণপ্রতি ৩০০-৩৫০ টাকা লোকসানে ধান বিক্রির কারণে। অবস্থা এমন অসহনীয় পর্যায়ে গিয়েছিল যে নিজের হাতে লাগানো পাকা ধানের ক্ষেতে আগুন দিয়েছিল নিজ হাতে। অনেক বিশেষজ্ঞ এ ঘটনা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং কিছু বিশেষজ্ঞ অতিরিক্ত ফলনকে দায়ী করে বলেছিলেন কৃষি অধিদফতরের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দেড়গুণ বেশি ফলন হওয়ায় নাকি বাজারের এই অবস্থা হয়েছিল। তারা একবারও মধ্যস্বত্বভোগীদের গুদাম কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশের কথা ভুলেও বলেননি। তাদের ভাবখানা এমন ছিল যে, কৃষক অধিক ধানের ফলন বৃদ্ধি করে মহা অপরাধ করেছে। স্বাধীনতার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। তিনি এমনও বলেছিলেন যে মৃত রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে কোন লাভ হবেনা। পুরো শ্রমই বৃথা যাবে। গত ১০ বছরের মধ্যে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে আজ রফতানিকারক দেশের তালিকায় নাম উঠাতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের দেশের কৃষকেরা অর্ধাহারে-অনাহারে থেকেও মাথার ঘাম পায়ে ফেলার কারণে আজ দেশ এ পর্যায়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকে তাকালেই আমরা বুঝতে পারব দেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করতে হলে কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। ইন্দিরা গান্ধী সরকারের আমলে ভারতে সপ্তাহে এক দিন সব হোটেল বন্ধ থাকত। এতেই ভারতের মতো এতবড় দেশে এক মাসের খাদ্যের সাশ্রয় হয়ে যেত। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে আমাদের দেশে সপ্তাহে একদিনও হোটেল বন্ধ রাখতে হয়নি। এর সবটুকু কৃতিত্বই আমাদের কৃষকদের। নতুন নতুন হাইব্রিড জাতের অধিক ফলনশীল ধান উৎপাদনের জন্যেই এটা সম্ভব হয়েছে।

আমাদের কৃষকদের আশা বা দাবি বেশি নয়। বছরের খোরাকি ধান আর উদ্বৃত্ত ধানের সরকারি মূল্য পেলেই তারা খুশি। ফুরফুরে মেজাজে সন্ধ্যার পর গ্রামের চায়ের দোকানে আড্ডা আর টেলিভিশন দেখে সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটিয়ে দেয় তারা। সরকার নির্ধারিত মূল্যও থাকে সামঞ্জস্যপূর্ণ। চলতি আমন মৌসুমে সরকার প্রতি মণ ধান ১০৪০ টাকা মণ দরে কেনার ঘোষণা দিয়েছেন। কৃষক এ দামে গুদামে ধান দিতে পারলে প্রতি মণে কমপক্ষে ৩০০ টাকা লাভ থাকবে। কিন্তু প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে দুটি জায়গায়। একটি মধ্যস্বত্বভোগী অন্যটি সব কৃষক গুদামে ধান দিতে পারছে না। লটারির মাধ্যমে যে ক’জন টিকবে তাদের কাছ থেকেই শুধু ধান খরিদ করা হবে। একটি উপজেলার চিত্র তুলে ধরলে সারা দেশের অবস্থা আঁচ করা সহজ হবে। যশোরের কেশবপুর এলাকায় এ বছর ২৩ হাজার কৃষক আমন ধানের চাষ করেছেন ৯২৪০ হেক্টর জমিতে। এখানে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ৪১ হাজার ৫৮০ টন। গত বছর এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৭০০ হেক্টর। উফশী জাতের কারণে এবার গত বছরের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু এ বছর এখানে মাত্র ১ হাজার ১২ জন কৃষকের কাছ থেকে ১ হাজার ১২ টন ধান খরিদ করা হবে। তাহলে বাকি কৃষকদের বাধ্য হয়েই মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীদের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া আর পথ থাকবে না। ব্যবসায়ীরা অপেক্ষাকৃত কমদামে ধান কিনে গুদামজাত করবে সরকারি খরিদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সাল পর্যন্ত। এরপর ঝোপ বুঝে কোপ মারবে তারা। হঠাৎ করে বাজার দাম বেড়ে যাবে হু হু করে। এই সিন্ডিকেটকে যে কোন ভাবে পরাস্ত করতে হবে সরকারকে। পাশাপাশি ক্রয় বরাদ্দের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। না হলে প্রবাদবাক্য ‘যে লাউ, সে কদুই’ থেকে যাবে। বর্তমানে এখানকার বাজারে প্রতি মণ আমন ৬০০/৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখন ধান উঠার মুখে এ অবস্থা হলে পুরোপুরি ধান ওঠা শুরু করলে দাম আরও কমিয়ে দেবে ব্যবসায়ীরা।

বর্তমান সারা দেশে একযোগে চাউলের দাম কেজি প্রতি ৬-৭ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্যে উদ্বৃত্ত, রফতানিকারক দেশ হয়েও আমাদের তা মেনে নিতে হচ্ছে পেটের তাগিদে। কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে নির্লিপ্ত ভূমিকা নিলে হয়তো আমাদের পরিশ্রমী কৃষকরা অন্য কোন চাষে মনোযোগী হয়ে পড়বে। এ ভাবেই সরকারের নির্লিপ্ততার কারণে পাট, তুলা চাষে কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। আমাদেরকে একটি কথা ভাবতে হবে কৃষি প্রধান এই দেশে কৃষক না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না। এ ক্ষেত্রে এসি ঘরে বসা বিশেষজ্ঞদের বচন কৃষকের কোন কাজে আসবে না বরং দেশ আরও একধাপ পিছিয়ে যাবে। ফলে কৃষককে বাঁচিয়ে রাখতে যত কঠোর হোক না কেন সেই পথেই হাঁটতে হবে সরকারকে।

[লেখক : কলামিস্ট]