পলিথিন ও প্লাস্টিক প্রকৃতির জন্য মারাত্মক হুমকি। তবে এবার পরিত্যক্ত সেই পলিথিনকে কাজে লাগিয়েছেন খুলনার ইজিবাইক চালক সোহাগ হাওলাদার। বিশেষ প্রক্রিয়ায় পলিথিন গলিয়ে তা থেকে তৈরি করছেন জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিটুমিন ও ফটোকপি মেশিনের কালি।
বয়সে তরুণ সোহাগ হাওলাদারের বাড়ি খুলনা নগরীর টুটপাড়া জোড়াকল বাজার। স্থানীয় ইউসেফ কারিগরি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া। এরপর অভাবের কারণে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে নেমেছেন জীবনযুদ্ধে।
জীবিকার তাগিদে কখনও লেদ মেশিনের মিস্ত্রি, কখনও রিকশা-ইজিবাইক চালক। তবে এবার এ তরুণ তার প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করেছেন প্লাস্টিক গলিয়ে জ্বালানি তেল তৈরির প্রযুক্তি।
সোহাগ জানান, একদিন গ্যারেজের কাজ শেষে বাসায় দুপুরের খাবার খাচ্ছি। এ সময় টিভিতে দেখি, একজন পলিথিন দিয়ে তেল উৎপাদন করেছে। আমি প্রতিবেদনটা ভালভাবে দেখি। এর আট মাস পর আমিও চেষ্টা করে সফল হই।
প্রথমে আমি এ একটি টিনের ব্যারেল, ছোট দুই কন্টেনার, চার ফুট স্টিলের সরু পাইপ ও কয়েক হাত প্লাস্টিকের পাইপ কিনে কাজ শুরু করি। প্রথমে কিছু সমস্যা দেখা দিলেও তা শুধরে নিয়ে এখন আমি সফল।
সোহাগ বলেন, পরিত্যক্ত পলিথিন টিনের ড্রামে ভরে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় তাপ দেই। এরপর ড্রাম থেকে নির্গত গ্যাস এবং জলীয় বাস্প পাইপ দিয়ে এসে প্লাস্টিকের ড্রামের মধ্যে রাখা পানিতে শীতল হয়ে ছোট কন্টেনারে জমা হয়। আর বাকি জ্বালানি গ্যাস স্টিলের পাইপ দিয়ে বেরিয়ে আসে।
১০ কেজি পলিথিন বর্জ্য দিয়ে ৬ লিটার পেট্রোল, ২ লিটার ডিজেল, ১ কেজি বিটুমিন, কেজি কালি এবং ১ কেজি জ্বালানি গ্যাস উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি।
এ পেট্রোল দিয়ে মোটরসাইকেল চালাচ্ছি, কোন সমস্যা হয়নি। পরিবেশের ক্ষতিকর এসব বর্জ্য কাজে লাগাতে পারলে, শুধু দেশ নয় সারা পৃথিবী উপকৃত হবে। কমবে জ্বালানি তেলের দাম। মেশিনটি তৈরিতে তার খরচ পড়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, আমাদের এত অর্থ সম্পদ নেই যে এটাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রূপ দেব। সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেলে বাণিজ্যিকভাবে জ্বালানি তেল উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
সোহাগের নতুন এই প্রযুক্তি দেখতে ভিড় করছেন এলাকার সব বয়সী নারী-পুরুষ।
দক্ষিণ টুটপাড়া এলাকার বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ী মো. জাহিদ হোসেন উজ্জ্বল জানান, পলিথিন পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে। সেই পলিথিন পুড়িয়ে জ্বালানি তেল উৎপাদন হচ্ছে। এতে করে একদিকে যেমন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে পরিবেশ, অন্যদিকে উৎপাদিত হচ্ছে বাড়তি জ্বালানি। তার প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বাণিজ্যিকভাবে এর উৎপাদন শুরু করা যেতে পারে। এ জন্য সরকারি পৃষ্টপোষকতা প্রয়োজন।
স্থানীয় বাসিন্দা নাসরিন সুলতানা জানান, পলিথিন থেকে যে জ্বালানি তেল তৈরি করা যায়, সেটা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না। ছোট বেলা থেকে সোহাগ এখানে বড় হয়েছে। সে মেধাবী কিন্তু অভাবের কারণে পড়ালেখা করতে পারেনি। আর সে এখন এমন এক জিনিস তৈরি করল, যা সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। তবে সরকারি সহযোগিতা পেলে সে হয়ত দেশের উন্নয়নে কাজ করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, নষ্ট পলিথিন এবং প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য হুমকি। যা মাটিতে থাকলেও মাটির গুণাগুণ নষ্ট করে। আবার আগুনে পোড়ালে পরিবেশের ক্ষতিকর অতিরিক্ত কার্বন তৈরি করে। নষ্ট করে পরিবেশের ভারসাম্য। সেই পলিথিন বর্জ্য এবং প্লাস্টিক এখন সম্পদে পরিণত করছে স্বল্পশিক্ষিত সোহাগ। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজমল আহমেদ তপন জানান, পলিথিন বর্জ্য ও প্লাস্টিক দিয়ে সোহাগ হাওলাদারের জ্বালানি তেল ও গ্যাস তৈরির বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে, এ পদ্ধতি আসলে পরিবেশ বান্ধব কি-না, বা প্রক্রিয়াটি কতটুকু বাস্তবায়নযোগ্য তা আরও ভাল করে দেখতে হবে বলে জানান তিনি।
বুধবার, ০১ জানুয়ারী ২০২০ , ১৮ পৌষ ১৪২৬, ৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১
শুভ্র শচীন, খুলনা
পলিথিন ও প্লাস্টিক প্রকৃতির জন্য মারাত্মক হুমকি। তবে এবার পরিত্যক্ত সেই পলিথিনকে কাজে লাগিয়েছেন খুলনার ইজিবাইক চালক সোহাগ হাওলাদার। বিশেষ প্রক্রিয়ায় পলিথিন গলিয়ে তা থেকে তৈরি করছেন জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিটুমিন ও ফটোকপি মেশিনের কালি।
বয়সে তরুণ সোহাগ হাওলাদারের বাড়ি খুলনা নগরীর টুটপাড়া জোড়াকল বাজার। স্থানীয় ইউসেফ কারিগরি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া। এরপর অভাবের কারণে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে নেমেছেন জীবনযুদ্ধে।
জীবিকার তাগিদে কখনও লেদ মেশিনের মিস্ত্রি, কখনও রিকশা-ইজিবাইক চালক। তবে এবার এ তরুণ তার প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করেছেন প্লাস্টিক গলিয়ে জ্বালানি তেল তৈরির প্রযুক্তি।
সোহাগ জানান, একদিন গ্যারেজের কাজ শেষে বাসায় দুপুরের খাবার খাচ্ছি। এ সময় টিভিতে দেখি, একজন পলিথিন দিয়ে তেল উৎপাদন করেছে। আমি প্রতিবেদনটা ভালভাবে দেখি। এর আট মাস পর আমিও চেষ্টা করে সফল হই।
প্রথমে আমি এ একটি টিনের ব্যারেল, ছোট দুই কন্টেনার, চার ফুট স্টিলের সরু পাইপ ও কয়েক হাত প্লাস্টিকের পাইপ কিনে কাজ শুরু করি। প্রথমে কিছু সমস্যা দেখা দিলেও তা শুধরে নিয়ে এখন আমি সফল।
সোহাগ বলেন, পরিত্যক্ত পলিথিন টিনের ড্রামে ভরে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় তাপ দেই। এরপর ড্রাম থেকে নির্গত গ্যাস এবং জলীয় বাস্প পাইপ দিয়ে এসে প্লাস্টিকের ড্রামের মধ্যে রাখা পানিতে শীতল হয়ে ছোট কন্টেনারে জমা হয়। আর বাকি জ্বালানি গ্যাস স্টিলের পাইপ দিয়ে বেরিয়ে আসে।
১০ কেজি পলিথিন বর্জ্য দিয়ে ৬ লিটার পেট্রোল, ২ লিটার ডিজেল, ১ কেজি বিটুমিন, কেজি কালি এবং ১ কেজি জ্বালানি গ্যাস উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি।
এ পেট্রোল দিয়ে মোটরসাইকেল চালাচ্ছি, কোন সমস্যা হয়নি। পরিবেশের ক্ষতিকর এসব বর্জ্য কাজে লাগাতে পারলে, শুধু দেশ নয় সারা পৃথিবী উপকৃত হবে। কমবে জ্বালানি তেলের দাম। মেশিনটি তৈরিতে তার খরচ পড়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, আমাদের এত অর্থ সম্পদ নেই যে এটাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রূপ দেব। সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেলে বাণিজ্যিকভাবে জ্বালানি তেল উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
সোহাগের নতুন এই প্রযুক্তি দেখতে ভিড় করছেন এলাকার সব বয়সী নারী-পুরুষ।
দক্ষিণ টুটপাড়া এলাকার বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ী মো. জাহিদ হোসেন উজ্জ্বল জানান, পলিথিন পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে। সেই পলিথিন পুড়িয়ে জ্বালানি তেল উৎপাদন হচ্ছে। এতে করে একদিকে যেমন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে পরিবেশ, অন্যদিকে উৎপাদিত হচ্ছে বাড়তি জ্বালানি। তার প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বাণিজ্যিকভাবে এর উৎপাদন শুরু করা যেতে পারে। এ জন্য সরকারি পৃষ্টপোষকতা প্রয়োজন।
স্থানীয় বাসিন্দা নাসরিন সুলতানা জানান, পলিথিন থেকে যে জ্বালানি তেল তৈরি করা যায়, সেটা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না। ছোট বেলা থেকে সোহাগ এখানে বড় হয়েছে। সে মেধাবী কিন্তু অভাবের কারণে পড়ালেখা করতে পারেনি। আর সে এখন এমন এক জিনিস তৈরি করল, যা সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। তবে সরকারি সহযোগিতা পেলে সে হয়ত দেশের উন্নয়নে কাজ করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, নষ্ট পলিথিন এবং প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য হুমকি। যা মাটিতে থাকলেও মাটির গুণাগুণ নষ্ট করে। আবার আগুনে পোড়ালে পরিবেশের ক্ষতিকর অতিরিক্ত কার্বন তৈরি করে। নষ্ট করে পরিবেশের ভারসাম্য। সেই পলিথিন বর্জ্য এবং প্লাস্টিক এখন সম্পদে পরিণত করছে স্বল্পশিক্ষিত সোহাগ। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজমল আহমেদ তপন জানান, পলিথিন বর্জ্য ও প্লাস্টিক দিয়ে সোহাগ হাওলাদারের জ্বালানি তেল ও গ্যাস তৈরির বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে, এ পদ্ধতি আসলে পরিবেশ বান্ধব কি-না, বা প্রক্রিয়াটি কতটুকু বাস্তবায়নযোগ্য তা আরও ভাল করে দেখতে হবে বলে জানান তিনি।