অধিকাংশ ইটভাটায় কয়লা নয় পুড়ে কাঠ! পরিবেশ, স্বাস্থ্য হুমকিতে

নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ঠাকুরগাঁওয়ের বেশিরভাগ ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে পুড়ানো হচ্ছে কাঠ খড়ি। এ অবস্থায় রাস্তার আশপাশসহ বনাঞ্চলের গাছ কর্তনে সুযোগ নিচ্ছে এক শ্রেণীর লোকজন। আর কর্তন করা গাছ স্বল্প দামে ইটভাটা মালিকদের কাছে সহজেই বিক্রি করতে পারায় ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ। জেলার ইটভাটাগুলোতে কয়লার পরিবর্তে ভাটা মালিকরা খড়ি জ্বালালেও তা না দেখার ভান করছেন প্রশাসন। প্রশাসনিক তৎপরতা না থাকায় ভাটা মালিকরা এ জেলায় প্রতিবছরেই গড়ে তুলছে নতুন নতুন ইটভাটা।

উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। এ জেলার আয়তন অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেক কম। কিন্তু জেলার পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না কোন নিয়ম। ছোট্ট এ জেলায় কয়েক বছরের মাথায় প্রায় ১শ ইটভাটা গড়ে উঠেছে। আর গড়ে উঠা বেশিরভাগ ইটভাটা মালিকরা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে ইট তৈরি ও বিক্রি বাণিজ্য।

সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সদর উপজেলার গড়েয়া, রুহিয়া, জগন্নাথপুর, আকচা, মোহাম্মদপুর, রহিমানপুর, ভুল্লি, বেগুনবাড়িসহ প্রায় সব ইউনিয়নেই কয়লার পরিবর্তে অধিকাংশ ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে গাছের খড়ি। এছাড়া পরিবেশ অনুযায়ী তৈরি করা হয়নি চিমনী। নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এসব ভাটায় তৈরিকৃত ইট ভাটা মালিকরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম নিচ্ছেন গ্রাহকদের কাছে। ফলে একদিকে পরিবেশ নষ্টেও পাশাপাশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরাও। এছাড়া কৃষককে ভুল বুঝিয়ে কৃষি জমিতেও গড়েছে ইট ভাটা। এর ফলে কৃষি জমি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ভাটা মালিকরা কৃষককে ভুল বুঝিয়ে অল্প টাকায় কেটে নিচ্ছে উর্বর মাটি। এ কারনে ওই জমিতে পরবর্তীতে ফসল উৎপাদন হচ্ছে তুলানামূলকভাবে অনেক কম। অন্যদিকে ভাটা মালিকরা নিয়ম না মেনে ইটভাটা স্থাপন করেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে কিংবা আবাসিক এলাকায়। আর এসব এলাকার শিশুসহ সববয়সী মানুষ ক্ষতির শিকার হলেও কোনভাবেই প্রতিকার মিলছে না তাদের। উপায় না পেয়ে ইটভাটার পাশেই জীবনযাপনসহ পরিচালনা করতে হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম।

পরিবেশ অধিদফতরের তৎপরতায় সারাদেশে কিছু কিছু জেলায় ভ্রাম্যমাণ অভিযান চলমান থাকলেও এ জেলা তা ভিন্ন চিত্র। ইটভাটা মালিকরা প্রায় ১ মাস ধরে ইট তৈরি ও বিক্রি কার্যক্রম পরিচালনা করলেও তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় প্রায় ১শ ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে কিছু কিছু ইটভাটা মালিকের পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জানান, ইটভাটার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। আমরা লক্ষ্য করেছি জেলা সদরে প্রায় ৫০টি ইটভাটা রয়েছে। এতে করে পরিবেশের ক্ষতি তো স্বাভাবিক। কৃষি জমির বেশি ক্ষতি হচ্ছে। ইটভাটার বিষয়ে জেলা প্রশাসন দেখবেন। তারা চাইলে পরিবেশ রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে পারেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম জানান, অন্যান্য জেলার মতো এ জেলাতেও অভিযান ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।

শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২০ , ২০ পৌষ ১৪২৬, ৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

অধিকাংশ ইটভাটায় কয়লা নয় পুড়ে কাঠ! পরিবেশ, স্বাস্থ্য হুমকিতে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, ঠাকুরগাঁও

image

ঠাকুরগাঁও : ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠখড়ি -সংবাদ

নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ঠাকুরগাঁওয়ের বেশিরভাগ ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে পুড়ানো হচ্ছে কাঠ খড়ি। এ অবস্থায় রাস্তার আশপাশসহ বনাঞ্চলের গাছ কর্তনে সুযোগ নিচ্ছে এক শ্রেণীর লোকজন। আর কর্তন করা গাছ স্বল্প দামে ইটভাটা মালিকদের কাছে সহজেই বিক্রি করতে পারায় ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ। জেলার ইটভাটাগুলোতে কয়লার পরিবর্তে ভাটা মালিকরা খড়ি জ্বালালেও তা না দেখার ভান করছেন প্রশাসন। প্রশাসনিক তৎপরতা না থাকায় ভাটা মালিকরা এ জেলায় প্রতিবছরেই গড়ে তুলছে নতুন নতুন ইটভাটা।

উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। এ জেলার আয়তন অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেক কম। কিন্তু জেলার পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না কোন নিয়ম। ছোট্ট এ জেলায় কয়েক বছরের মাথায় প্রায় ১শ ইটভাটা গড়ে উঠেছে। আর গড়ে উঠা বেশিরভাগ ইটভাটা মালিকরা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে ইট তৈরি ও বিক্রি বাণিজ্য।

সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সদর উপজেলার গড়েয়া, রুহিয়া, জগন্নাথপুর, আকচা, মোহাম্মদপুর, রহিমানপুর, ভুল্লি, বেগুনবাড়িসহ প্রায় সব ইউনিয়নেই কয়লার পরিবর্তে অধিকাংশ ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে গাছের খড়ি। এছাড়া পরিবেশ অনুযায়ী তৈরি করা হয়নি চিমনী। নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এসব ভাটায় তৈরিকৃত ইট ভাটা মালিকরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম নিচ্ছেন গ্রাহকদের কাছে। ফলে একদিকে পরিবেশ নষ্টেও পাশাপাশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরাও। এছাড়া কৃষককে ভুল বুঝিয়ে কৃষি জমিতেও গড়েছে ইট ভাটা। এর ফলে কৃষি জমি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ভাটা মালিকরা কৃষককে ভুল বুঝিয়ে অল্প টাকায় কেটে নিচ্ছে উর্বর মাটি। এ কারনে ওই জমিতে পরবর্তীতে ফসল উৎপাদন হচ্ছে তুলানামূলকভাবে অনেক কম। অন্যদিকে ভাটা মালিকরা নিয়ম না মেনে ইটভাটা স্থাপন করেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে কিংবা আবাসিক এলাকায়। আর এসব এলাকার শিশুসহ সববয়সী মানুষ ক্ষতির শিকার হলেও কোনভাবেই প্রতিকার মিলছে না তাদের। উপায় না পেয়ে ইটভাটার পাশেই জীবনযাপনসহ পরিচালনা করতে হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম।

পরিবেশ অধিদফতরের তৎপরতায় সারাদেশে কিছু কিছু জেলায় ভ্রাম্যমাণ অভিযান চলমান থাকলেও এ জেলা তা ভিন্ন চিত্র। ইটভাটা মালিকরা প্রায় ১ মাস ধরে ইট তৈরি ও বিক্রি কার্যক্রম পরিচালনা করলেও তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় প্রায় ১শ ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে কিছু কিছু ইটভাটা মালিকের পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জানান, ইটভাটার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। আমরা লক্ষ্য করেছি জেলা সদরে প্রায় ৫০টি ইটভাটা রয়েছে। এতে করে পরিবেশের ক্ষতি তো স্বাভাবিক। কৃষি জমির বেশি ক্ষতি হচ্ছে। ইটভাটার বিষয়ে জেলা প্রশাসন দেখবেন। তারা চাইলে পরিবেশ রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে পারেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম জানান, অন্যান্য জেলার মতো এ জেলাতেও অভিযান ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।