কৈশোর ও স্বাস্থ্য বয়োসন্ধিজনিত সমস্যা : বিষণ্নতা

ডা. মিনতি অধিকারী

কিশোর কিশোরীদের মধ্যে প্রতি ৮ জনে একজন বিষণ্নতায় ভোগে।

বিষণ্নতা কি:

বিষণ্নতা মানে মন খারাপ হওয়া বা মাঝে মাঝে নিজেকে নিঃসঙ্গ বোধ হওয়া নয়; মানসিক কষ্টবোধ বা সাময়িক দুঃখবোধ ও বিষণ্নতা নয়। এগুলো টিন এজারদের জন্য অতি স্বাভাবিক ব্যাপার। সময়ে সব চলে যায়। কিন্তু যখন এই দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা নিঃসঙ্গতা সপ্তাহ, মাস, কিংবা তারও বেশি সময় স্থায়ী হয় ; তা হলে আপনার সন্তানের মধ্যে বিষণ্নতা জন্ম নিয়েছে।

বিষণ্নতা থেকে দুঃখবোধ দেখা দেয়, নিরুৎসাহ হয়ে পড়ে, নিজ কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। নানাবিধ প্রতিকুলতা ও পারিপার্শিক চাপের কারনেই বিষণ্নতা দেথা দিতে পারে। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বিষণ্নতা বেশি দেখা দেয় কারন

স্বাভাবিক বয়োবৃদ্ধিজনিত শারীরিক পরিবর্তন এবং তার ফলে মানসিক চাপ।

Sex hormones এর প্রভাব

পিতামাতার সঙ্গে কনফ্লিক্ট

বন্ধু বা নিকট আত্মীয়ের মৃত্যু।

বন্ধু-বিচ্ছেদ

বিদ্যালয়ে অকৃতকার্যতা

যে সমস্ত কিশোরকিশেরী বেশি বিষণ্নতায় ভোগে

যাদের আত্মবিশ্বাস কম

যারা নিজেদের সম্বন্ধে ভীষণ

critical জীবনের নেতিবাচক দিকগুলোকে যারা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ।

ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা দ্বিগুণ হারে বিষণ্নতায় ভোগে।

যাদের বংশগতি আছে বিষণ্নতাবোধের

নিম্নলিখিত ঘটনা বা পরিস্থিতি কিশোর-কিশেরীদের বিষণ্নতার কারণ হতে পারে :

বিদ্যালয়ে Bullying বা অপদস্ত হওয়া

শারীরিক নির্যাতন, বা যৌন নির্যাতন

সামাজিক দক্ষতার অভাব

লেখাপড়ায় অসমর্থ (Learning disabilities) অদক্ষতা

দীর্ঘকাল অসুস্থতা

পিতা-মাতার অযত্ন-অবহেলা, পিতা-মাতার সঙ্গে দ্বন্দ্ব

বাবা-মার মৃত্যু, বিচ্ছেদ

বন্ধু-বিচ্ছেদ

দুশ্চিন্তা, হতাশা, ক্ষুধামন্দা, ADHD কিশোরকিশেরীদের বিষণ্নতা তার জীবন, চিন্তাধারা, পাশের মানুষজন সব কিছু সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার জন্ম নেয়। তারা ভাবতেও পারে না যে ইতিবাচকভাবে কোনো সমস্যার সমাধান করা যায়।

বিষণ্নতার ধরন:

গভীর বিষণ্নতাবোধ (মেজর ডিপ্রেকু)- গভীর বিষণ্নতাবোধে আক্রান্ত কিশোর কিশোরীদের

সব সময় দুঃখবোধ থাকে,

সে নিজেকে অপদার্থভাবে ও অপরাধবোধে ভোগে,

কোনো কিছুতেই সুখ ও আনন্দ বোধ করে না,

শিশুর দৈনন্দিন কাজ কর্ম, লেখা পড়া ব্যাহত হয়,

সে ঠিক ভাবে খেতে ও ঘুমুতে পারে না।

প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি দিন তার এই বিষণ্নতা বিরাজ করে।

অগভীর বিষণ্নতাবোধ (ডিজথমিয়া) -

দুঃখবোধ খুব গভীর নয় তবে দীর্ঘস্থায়ী। এক বছর কিংবা তার অধিক সময় ধরে এর ব্যাপকতা,

কিশোর-কিশোরী মনে করে দিনে দিনে সে এক অন্ধকার অতলে ডুবে যাচ্ছে,

তাদের আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকে, সর্বদা নৈরাশ্যে ভোগে,

অনিদ্রা হয়, খাবার সমস্যা দেখা দেয়,

সব সময় তারা হীনমন্যতায় ভোগে; জীবন সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে।

১% থেকে ৩% কিশোর-কিশোরী অগভীর বিষণ্নতাবোধে ভোগে।

দ্বৈত আচরণ (বাইপোলার ডিজঅর্ডার) -

কিশোর-কিশোরী মাঝে মাঝে দুঃখবোধ ও নৈরাশ্যে ভোগে আবার মাঝে মাঝে বিরক্ত ও উন্মত্ত হয়ে ধ্বংসাত্মক আচরণে লিপ্ত হয়,

পড়াশোনা বা অন্য কোনো কাজে মনোযোগ দিতে পারে না,

দুশ্চিন্তায় ভোগে, সব কাজে বিরক্তি প্রকাশ করে এবং তাদের আচরণ বিষণ্নতা ও ক্ষিপ্ততা এ দুয়ের মাঝে বিচরণ করে।

১% থেকে ২% কিশোর-কিশোরী বাইপোলার ডিজঅর্ডার দেখা দেয়।

বিষণ্নতার কারণ :

মস্তিস্কে রাসায়নিক পদার্থের (নিউরো ট্রন্সমিটার) ঘাটতির ফলে কিশোর/কিশোরী ভালো থাকার ক্ষমতা লোপ পায়।

এটা একটি বংশগত ব্যাধি, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিষণ্নতা থাকলে কিশোর/কিশোরী ও আক্রান্ত হতে পারে।

কিছু দুঃখজনক ঘটনা যেমন প্রিয়জনের মৃত্যু, বাবা মায়ের ডিভোর্স, বিতাড়িত হয়ে স্থানান্তরিত হওয়া, বন্ধুবিচ্ছেদ প্রভৃতি কারণে কিশোর/কিশোরী বিষণ্নতায় ভোগে।

পারিবারিক সামাজিক কারণে মানসিক চাপে পড়ে কিশোর কিশোরীরা বিষণ্নতায় ভোগে।

দীর্ঘস্থায়ী ব্যাধি মনে বিষণ্নতার জন্ম দেয়।

কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বিষণ্নতা দেখা দিতে পারে।

কি করে বুঝবে বিষণ্নতায় ভুগছ:

বিষণ্নতায় ভুগলে কথা ও আচরণে সর্বদা নৈরাশ্য ও হতাশা প্রকাশ পায়। কিশোর/কিশোরী মনে করে এ জীবন মূল্যহীন। তারা আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করে যে, তারা মোটেই ভালো নয়; এ জীবনে তাদের দ্বারা কিছু হবার নয়। তাদের জগৎ অন্যদের জগতের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক জগৎ এবং তারা অসহায়; এ জগৎ থেকে উত্তরণের পথ তাদের জানা নেই। যদি দু’প্তাহের অধিক সময় ধরে নিন্মলিখিত উপসর্গ গুলো বিদ্যমান থাকে তবে বুঝতে হবে সে গভীর বিষণ্নতায় ভুগছে:

কোনো কারণ ব্যতীত সব সময় বিমর্ষ থাকে বা সে মনে করে যে এক অন্ধকার অতলে সে নিমজ্জিত, যেখান থেকে উত্তরণের কোনো উপায় নাই।

নিজেকে অতি দুর্বল মনে করে; এতটাই দুর্বল যে একটা সাধারণ কাজ ও সে করতে চায় না।

সে আনন্দ উপভোগ করতে পারে না, একটি আনন্দঘণ পরিবেশ ও তার কাছে নিরানন্দ মনে হয়।

পরিবারের সদস্য কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে, গল্প করতে তার মন চায় না।

সব সময় সন্তানকে বিরক্ত, রাগান্বিত ও চিন্তিত মনে হয়।

পড়াশোনা বা নিত্যকর্মে সে মনোযোগ দিতে পারে না।

খাবার প্রতি আগ্রহ তার কমে যায়, অথবা খুব বেড়ে যায়। ফলে সে হঠাৎ করে শুকিয়ে যায় কিংবা খুব মোটা হয়ে যায়।

তার অনিদ্রা দেখা দেয়, রাতে ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে ওঠে।

নিজেকে সে অপদার্থ ভাবে ও সব সময় অপরাধবোধে ভোগে।

কোনো অসুখ নেই, কিন্তু সব সময় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা অনুভব করে।

ভবিষ্যতে কি হবে সে নিয়ে তার কোন উৎকণ্ঠা নেই, তার জীবন নিয়ে সে নিলিপ্ত।

প্রায়ই সে মৃত্যু এবং আত্মহত্যার কথা ভাবে।

সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে সবসময়

যদি অন্তত এক বছর সময় ধরে তার মধ্যে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলোর দুটি বা তার অধিক বিদ্যমান থাকে তবে বুঝতে হবে সে ডিজথমিয়ায বা অগভীর বিষণ্নতায় ভুগছে:

সব ব্যাপারে নিরাশ ও হতাশ

আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদাবোধের তীব্র অভাব

সে খুব বেশি ঘুমায় অথবা মোটেই ঘুমাতে পারে না

সব সময় অত্যন্ত দুর্বল বোধ করে

সব কাজে মনোযোগের অভাব

খুব বেশি খায় অথবা একেবারেই খেতে পারে না।

বিষণ্নতায় আক্রান্ত কিশোর/কিশোরীদের মাদকাসক্তর প্রবণতা খুব বেশি থাকে।

বিষণ্নতায় আক্রান্ত সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার করণীয়:

অনেক সময় পিতা মাতা সন্তানের বিষণ্নভাব দেখেও তা আমলে নেন না, মনে করেন-এ কিছু না, এমনটা হতেই পারে, সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিংবা এড়িয়ে চলেন, কারণ তারা মনে করেন সন্তানের বিষণ্নতার জন্য তারা ই দায়ী। কিন্তু তা করা অর্থাৎ সন্তানকে এড়িয়ে চলা ঠিক নয়। সন্তানের সমস্যাকে মূল্য দিন, সে কিভাবে ভালো থাকবে তার চেষ্টা করুন; চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনার অপরাধবোধে ভোগার কারণ নেই, আপনি দায়ী নন, যদিও আপনার কিছু আচরণ শিশুকে আহত করে থাকে তবু ও না। কারো দোষে সে বিষণ্নতায় ভুগছে না। সন্তানকে আশ্বস্ত করুন; সকল অবস্থায় আপনি তার পাশেই আছেন, তাকে যে কোনো সাহায্য করার জন্য। বার বার এ কথাগুলো বলে তাকে নিশ্চিন্ত থাকতে বলুন। কারণ সে ভাবছে কেউ তার কথা ভাবে না, কেউ তাকে ভালোবাসে না। মনে রাখবেন, যে কিশোর/কিশোরী বিষণ্নতায় ভোগে সে জগৎটাকে সব সময় একটি কালো চশমার ভিতর দিয়ে দেখে। তারা অনেক সময় কারো সাহায্য প্রত্যাশা করে না, কারণ তারা যে বিষণ্নতায় ভুগছে তা তারা বুঝতে পারে না। আপনি সন্তানকে বলতে পারেন যে, তার মধ্যে কিছু পরিবর্তন আপনি লক্ষ্য করছেন এবং একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে সে উপকৃত হবে। আশার কথা এই যে, উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে বিষণ্নতা ৮০% ক্ষেত্রেই ভালো হয়ে যায়। কিন্তু চিকিৎসা না করালে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে কিংবা ওষুধ দ্বারা সন্তানের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দূর করতে পারেন। এছাড়া পরিবারের সদস্য এবং শিক্ষকবৃন্দ ও তাকে নানা ভাবে সাহায্য করতে পারেন।

বাবা মা অনেক সময় ভেবে থাকেন- তারাই হয়ত তাদের সন্তানকে সুখী করতে পারেননি। তারা হয়ত এমন কিছু করেছেন যার ফলে সন্তান বিষণ্নতায় ভুগছে। এই ভেবে তারা নিজেরাই হতাশায় ভুগতে থাকে। কিন্তু বিষয়টি মোটেই সত্য নয়। আপনার মধ্যে এরূপ হতাশার জন্ম নিলে আপনি মনোরোগবিশেষজ্ঞের শরণ নিন।

আপনি আর যেভাবে সন্তানকে সাহায্য করতে পারেন:

সন্তান চিকিৎসক নির্দেশিত ওষুধসমূহ ঠিকভাবে খায় কিনা তা লক্ষ্য রাখুন।

প্রতিদিন সুষম ওপুষ্টিকর খাবার সন্তানকে খেতে দিন। এতে আপনার শিশুর মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যাবে।

সন্তানকে ক্রিয়াশীল রাখুন; তার বিষণ্নতা কেটে যাবে। সাইকেল চালানো শেখান, সাঁতার কাটতে নিয়ে যান।

সন্তানের কাছে তার মনের দুঃখ শুনতে চান; বলুন আপনি তাকে সব রকম সাহায্য করতে প্রস্তুত আছেন। যদিও সন্তান আপনার কথায় বিশ্বাস করতে চাইবে না তবুও বারবার আপনি তাকে আশ্বাস বাণী শোনান। ধীরে ধীরে সে আপনার উপর আস্থা ফিরে পাবে।

সন্তানকে তার আলস্যের জন্য অযথা ধমকাবেন না। মনে রাখবেন এটা তার আলস্য নয়; তার ইচ্ছা শক্তি ই নষ্ট হয়ে গেছে।

সন্তানের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণ নিন। সন্তান যদি তার প্রিয় জিনিসগুলো অন্যকে বিলিয়ে দেয়, আত্মহত্যার কথা বলে কিংবা তার প্রস্তুতি নেয়, তবে তা আত্মহত্যার প্রবণতা।

আত্মহত্যার লক্ষণ :

মাঝে মাঝে স্মৃতিশক্তি লোপ

অবসাদ

বিমর্ষ, অস্থির, irritable নিজেকে মূল্যহীন ভাবে, হতাশ, দুঃখিত, আত্মধিক্কারে ভোগে

যে কাজে আগে প্রভূত আনন্দ পেত এখন সে কাজে আনন্দ বা উৎসাহ কিছুই পায় না।

গব সময় আত্মহত্যা, মৃত্যুর কথা ভাবে ও বলে

ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে, বা বেশি ঘুমানো বা দিবানিদ্রা।

Acting-out behaviors -কোনো কিছু পরোয়া না করা; যুদ্ধংদেহি মনোভাব; যেমন কারফিউর সময়ও ঘরে না ফেরা।

Criminal behavior যেমন দোকানে গেলে চুরি করা

দায়ীত্বজ্ঞানহীন আচরণ।

বিদ্যালয়ে খারাপ ফলাফল, গ্রেড ড্রপিং

পরিবার ও বন্ধুবান্ধব থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া, একা একা থাকা

ড্রাগ বা মাদকে আসক্তি

যদি এগুলো দু সপ্তাহের অধিক বলবৎ থাকে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে টিনএজারদের মধ্যে মুড আপ-ডাউন একটি স্বাভাবিক ব্যাপার, কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন পরে তা আপনা-আপনি ঠিক হয়ে যায়। তাই তারা বিষণ্নতায় ভুগছে কিনা বোঝা মশুকিল।

চিকিৎসা :

চিকিৎসকের মাধ্যমে সাপোর্টিভ কেয়ার

টক-থেরাপি :

কি করে নেতিবাচক চিন্তাধারা দূর করা যায়, বিষণ্নতার সম্ভাব্য কারণসমূহ বা কি করলে বিষণ্নতা আরও বেড়ে যেতে পারে, তা জানিয়ে দেয়, সমস্যাদূরকরণের শক্তি বাড়িয়ে দেয়।

পরিবার এবং বিদ্যালয় কীভাবে সাপোর্ট দিতে পারে তা জানিয়ে দেয়। বিষণ্নতার কারণ যদি পারিবারিক কনফ্লিক্ট হয় তবে তা দূর করতে সাহায্য করে।

সাপোর্টগ্রপে যোগদান যারা তোমারই মতো বিষণ্নতায় ভুগছে।

বিষণ্নতা দূরীকরণ ওষুধ সেবন

তুমি কি করতে পারো :

যথাসময়ে ওষুধ সেবন

বিষণ্নতা আরও বেশি গভীর হলে তা অনুধাবন করে সত্তর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া

বেশি করে শারীরিক পরিশ্রম করা ও যে কাজ এনজয় কর তা বেশি বেশি করে করা।

ড্রাগ বা মাদককে এড়িয়ে চলা

যখন বিষণ্নতার সঙ্গে নিজে যুদ্ধ করছ তখন তোমাকে ভালোবাসে এমন কারো সঙ্গে তা শেয়ার কর।

পরিণাম : বিষণ্নতা সাধারণত ওষুধে দূর হয়। ঠিক সময়ে ঠিক চিকিৎসা নিতে পারলে পরবর্তী বিষণ্নতা হতে রক্ষা করতে পারে।

বিষণ্নতা পরবর্তী সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন :

ড্রাগ বা মাদক বা তামাক অধসক্তি

পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি

পড়াশোনায় অবনতি

দুশ্চিন্তাগ্রস্ততা

আত্মহত্যার প্রবণতা Violence and reckless behavior

চিকিৎসকের শরণ নিন যদি :

ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন হয়

সব কিছু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয়

নিজেকে আহত করে

আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়।

নিজের সবকিছু অন্যকে বিলিয়ে দেয়

বিষণ্নতা ভালো হচ্ছে না বরং দিন দিন বেড়েই চলছে Nervousness, irritability, moodiness, বা অনিদ্রা য দিন দিন বেড়েই চলছে

প্রতিরোধ : বেশিরভাগ কিশোর কিশোরী কোন এক সময়ে বিষণ্নতায় ভোগে। এ সময়ে সাপোর্ট এবং ভালো মানিয়ে নেবার শক্তি দ্বারা এ দুঃখবোধ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নয়ত এ দুঃখবোধ থেকেই জন্ম নেয় গভীর বিষণ্নতা। আপনার সন্তানের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলুন, বিষণ্নতা প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পরবে। দুঃখবোধ কেটে যাবে। সন্তান বিষণ্নতায় ভুগলে এলকোহল, বন্দুক ও ওষুধ তার নাগালের বাইরে রাখুন। আত্মহত্যার হুমকি বা এটেম্পটকে অবহেলা করবেন না।

তোমার করণীয় : পর্যাপ্ত ঘুমাও

স্বাস্থ্যসম্মত সুসম খাবার খাও; মাছ (ওমেগা ৩ সমৃদ্ধ টুনা মাছ), সবজি, ফল বেশি করে খাবে।

নিয়মিত শরীর চর্চা কর

মদ, মারিজুয়ানা বা অন্যান্য মাদক পরিহার কর

যে কাজ তোমাকে আনন্দ দেয় সে কাজটি কর যদিও তাতে তুমি আগে থেকে অভ্যস্ত নও

পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে বেশি বেশি সময় কাটাও

মেডিটেশন কর।

রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২০ , ২২ পৌষ ১৪২৬, ৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

কৈশোর ও স্বাস্থ্য বয়োসন্ধিজনিত সমস্যা : বিষণ্নতা

ডা. মিনতি অধিকারী

কিশোর কিশোরীদের মধ্যে প্রতি ৮ জনে একজন বিষণ্নতায় ভোগে।

বিষণ্নতা কি:

বিষণ্নতা মানে মন খারাপ হওয়া বা মাঝে মাঝে নিজেকে নিঃসঙ্গ বোধ হওয়া নয়; মানসিক কষ্টবোধ বা সাময়িক দুঃখবোধ ও বিষণ্নতা নয়। এগুলো টিন এজারদের জন্য অতি স্বাভাবিক ব্যাপার। সময়ে সব চলে যায়। কিন্তু যখন এই দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা নিঃসঙ্গতা সপ্তাহ, মাস, কিংবা তারও বেশি সময় স্থায়ী হয় ; তা হলে আপনার সন্তানের মধ্যে বিষণ্নতা জন্ম নিয়েছে।

বিষণ্নতা থেকে দুঃখবোধ দেখা দেয়, নিরুৎসাহ হয়ে পড়ে, নিজ কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। নানাবিধ প্রতিকুলতা ও পারিপার্শিক চাপের কারনেই বিষণ্নতা দেথা দিতে পারে। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বিষণ্নতা বেশি দেখা দেয় কারন

স্বাভাবিক বয়োবৃদ্ধিজনিত শারীরিক পরিবর্তন এবং তার ফলে মানসিক চাপ।

Sex hormones এর প্রভাব

পিতামাতার সঙ্গে কনফ্লিক্ট

বন্ধু বা নিকট আত্মীয়ের মৃত্যু।

বন্ধু-বিচ্ছেদ

বিদ্যালয়ে অকৃতকার্যতা

যে সমস্ত কিশোরকিশেরী বেশি বিষণ্নতায় ভোগে

যাদের আত্মবিশ্বাস কম

যারা নিজেদের সম্বন্ধে ভীষণ

critical জীবনের নেতিবাচক দিকগুলোকে যারা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ।

ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা দ্বিগুণ হারে বিষণ্নতায় ভোগে।

যাদের বংশগতি আছে বিষণ্নতাবোধের

নিম্নলিখিত ঘটনা বা পরিস্থিতি কিশোর-কিশেরীদের বিষণ্নতার কারণ হতে পারে :

বিদ্যালয়ে Bullying বা অপদস্ত হওয়া

শারীরিক নির্যাতন, বা যৌন নির্যাতন

সামাজিক দক্ষতার অভাব

লেখাপড়ায় অসমর্থ (Learning disabilities) অদক্ষতা

দীর্ঘকাল অসুস্থতা

পিতা-মাতার অযত্ন-অবহেলা, পিতা-মাতার সঙ্গে দ্বন্দ্ব

বাবা-মার মৃত্যু, বিচ্ছেদ

বন্ধু-বিচ্ছেদ

দুশ্চিন্তা, হতাশা, ক্ষুধামন্দা, ADHD কিশোরকিশেরীদের বিষণ্নতা তার জীবন, চিন্তাধারা, পাশের মানুষজন সব কিছু সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার জন্ম নেয়। তারা ভাবতেও পারে না যে ইতিবাচকভাবে কোনো সমস্যার সমাধান করা যায়।

বিষণ্নতার ধরন:

গভীর বিষণ্নতাবোধ (মেজর ডিপ্রেকু)- গভীর বিষণ্নতাবোধে আক্রান্ত কিশোর কিশোরীদের

সব সময় দুঃখবোধ থাকে,

সে নিজেকে অপদার্থভাবে ও অপরাধবোধে ভোগে,

কোনো কিছুতেই সুখ ও আনন্দ বোধ করে না,

শিশুর দৈনন্দিন কাজ কর্ম, লেখা পড়া ব্যাহত হয়,

সে ঠিক ভাবে খেতে ও ঘুমুতে পারে না।

প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি দিন তার এই বিষণ্নতা বিরাজ করে।

অগভীর বিষণ্নতাবোধ (ডিজথমিয়া) -

দুঃখবোধ খুব গভীর নয় তবে দীর্ঘস্থায়ী। এক বছর কিংবা তার অধিক সময় ধরে এর ব্যাপকতা,

কিশোর-কিশোরী মনে করে দিনে দিনে সে এক অন্ধকার অতলে ডুবে যাচ্ছে,

তাদের আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকে, সর্বদা নৈরাশ্যে ভোগে,

অনিদ্রা হয়, খাবার সমস্যা দেখা দেয়,

সব সময় তারা হীনমন্যতায় ভোগে; জীবন সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে।

১% থেকে ৩% কিশোর-কিশোরী অগভীর বিষণ্নতাবোধে ভোগে।

দ্বৈত আচরণ (বাইপোলার ডিজঅর্ডার) -

কিশোর-কিশোরী মাঝে মাঝে দুঃখবোধ ও নৈরাশ্যে ভোগে আবার মাঝে মাঝে বিরক্ত ও উন্মত্ত হয়ে ধ্বংসাত্মক আচরণে লিপ্ত হয়,

পড়াশোনা বা অন্য কোনো কাজে মনোযোগ দিতে পারে না,

দুশ্চিন্তায় ভোগে, সব কাজে বিরক্তি প্রকাশ করে এবং তাদের আচরণ বিষণ্নতা ও ক্ষিপ্ততা এ দুয়ের মাঝে বিচরণ করে।

১% থেকে ২% কিশোর-কিশোরী বাইপোলার ডিজঅর্ডার দেখা দেয়।

বিষণ্নতার কারণ :

মস্তিস্কে রাসায়নিক পদার্থের (নিউরো ট্রন্সমিটার) ঘাটতির ফলে কিশোর/কিশোরী ভালো থাকার ক্ষমতা লোপ পায়।

এটা একটি বংশগত ব্যাধি, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিষণ্নতা থাকলে কিশোর/কিশোরী ও আক্রান্ত হতে পারে।

কিছু দুঃখজনক ঘটনা যেমন প্রিয়জনের মৃত্যু, বাবা মায়ের ডিভোর্স, বিতাড়িত হয়ে স্থানান্তরিত হওয়া, বন্ধুবিচ্ছেদ প্রভৃতি কারণে কিশোর/কিশোরী বিষণ্নতায় ভোগে।

পারিবারিক সামাজিক কারণে মানসিক চাপে পড়ে কিশোর কিশোরীরা বিষণ্নতায় ভোগে।

দীর্ঘস্থায়ী ব্যাধি মনে বিষণ্নতার জন্ম দেয়।

কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বিষণ্নতা দেখা দিতে পারে।

কি করে বুঝবে বিষণ্নতায় ভুগছ:

বিষণ্নতায় ভুগলে কথা ও আচরণে সর্বদা নৈরাশ্য ও হতাশা প্রকাশ পায়। কিশোর/কিশোরী মনে করে এ জীবন মূল্যহীন। তারা আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করে যে, তারা মোটেই ভালো নয়; এ জীবনে তাদের দ্বারা কিছু হবার নয়। তাদের জগৎ অন্যদের জগতের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক জগৎ এবং তারা অসহায়; এ জগৎ থেকে উত্তরণের পথ তাদের জানা নেই। যদি দু’প্তাহের অধিক সময় ধরে নিন্মলিখিত উপসর্গ গুলো বিদ্যমান থাকে তবে বুঝতে হবে সে গভীর বিষণ্নতায় ভুগছে:

কোনো কারণ ব্যতীত সব সময় বিমর্ষ থাকে বা সে মনে করে যে এক অন্ধকার অতলে সে নিমজ্জিত, যেখান থেকে উত্তরণের কোনো উপায় নাই।

নিজেকে অতি দুর্বল মনে করে; এতটাই দুর্বল যে একটা সাধারণ কাজ ও সে করতে চায় না।

সে আনন্দ উপভোগ করতে পারে না, একটি আনন্দঘণ পরিবেশ ও তার কাছে নিরানন্দ মনে হয়।

পরিবারের সদস্য কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে, গল্প করতে তার মন চায় না।

সব সময় সন্তানকে বিরক্ত, রাগান্বিত ও চিন্তিত মনে হয়।

পড়াশোনা বা নিত্যকর্মে সে মনোযোগ দিতে পারে না।

খাবার প্রতি আগ্রহ তার কমে যায়, অথবা খুব বেড়ে যায়। ফলে সে হঠাৎ করে শুকিয়ে যায় কিংবা খুব মোটা হয়ে যায়।

তার অনিদ্রা দেখা দেয়, রাতে ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে ওঠে।

নিজেকে সে অপদার্থ ভাবে ও সব সময় অপরাধবোধে ভোগে।

কোনো অসুখ নেই, কিন্তু সব সময় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা অনুভব করে।

ভবিষ্যতে কি হবে সে নিয়ে তার কোন উৎকণ্ঠা নেই, তার জীবন নিয়ে সে নিলিপ্ত।

প্রায়ই সে মৃত্যু এবং আত্মহত্যার কথা ভাবে।

সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে সবসময়

যদি অন্তত এক বছর সময় ধরে তার মধ্যে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলোর দুটি বা তার অধিক বিদ্যমান থাকে তবে বুঝতে হবে সে ডিজথমিয়ায বা অগভীর বিষণ্নতায় ভুগছে:

সব ব্যাপারে নিরাশ ও হতাশ

আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদাবোধের তীব্র অভাব

সে খুব বেশি ঘুমায় অথবা মোটেই ঘুমাতে পারে না

সব সময় অত্যন্ত দুর্বল বোধ করে

সব কাজে মনোযোগের অভাব

খুব বেশি খায় অথবা একেবারেই খেতে পারে না।

বিষণ্নতায় আক্রান্ত কিশোর/কিশোরীদের মাদকাসক্তর প্রবণতা খুব বেশি থাকে।

বিষণ্নতায় আক্রান্ত সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার করণীয়:

অনেক সময় পিতা মাতা সন্তানের বিষণ্নভাব দেখেও তা আমলে নেন না, মনে করেন-এ কিছু না, এমনটা হতেই পারে, সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিংবা এড়িয়ে চলেন, কারণ তারা মনে করেন সন্তানের বিষণ্নতার জন্য তারা ই দায়ী। কিন্তু তা করা অর্থাৎ সন্তানকে এড়িয়ে চলা ঠিক নয়। সন্তানের সমস্যাকে মূল্য দিন, সে কিভাবে ভালো থাকবে তার চেষ্টা করুন; চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনার অপরাধবোধে ভোগার কারণ নেই, আপনি দায়ী নন, যদিও আপনার কিছু আচরণ শিশুকে আহত করে থাকে তবু ও না। কারো দোষে সে বিষণ্নতায় ভুগছে না। সন্তানকে আশ্বস্ত করুন; সকল অবস্থায় আপনি তার পাশেই আছেন, তাকে যে কোনো সাহায্য করার জন্য। বার বার এ কথাগুলো বলে তাকে নিশ্চিন্ত থাকতে বলুন। কারণ সে ভাবছে কেউ তার কথা ভাবে না, কেউ তাকে ভালোবাসে না। মনে রাখবেন, যে কিশোর/কিশোরী বিষণ্নতায় ভোগে সে জগৎটাকে সব সময় একটি কালো চশমার ভিতর দিয়ে দেখে। তারা অনেক সময় কারো সাহায্য প্রত্যাশা করে না, কারণ তারা যে বিষণ্নতায় ভুগছে তা তারা বুঝতে পারে না। আপনি সন্তানকে বলতে পারেন যে, তার মধ্যে কিছু পরিবর্তন আপনি লক্ষ্য করছেন এবং একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে সে উপকৃত হবে। আশার কথা এই যে, উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে বিষণ্নতা ৮০% ক্ষেত্রেই ভালো হয়ে যায়। কিন্তু চিকিৎসা না করালে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে কিংবা ওষুধ দ্বারা সন্তানের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দূর করতে পারেন। এছাড়া পরিবারের সদস্য এবং শিক্ষকবৃন্দ ও তাকে নানা ভাবে সাহায্য করতে পারেন।

বাবা মা অনেক সময় ভেবে থাকেন- তারাই হয়ত তাদের সন্তানকে সুখী করতে পারেননি। তারা হয়ত এমন কিছু করেছেন যার ফলে সন্তান বিষণ্নতায় ভুগছে। এই ভেবে তারা নিজেরাই হতাশায় ভুগতে থাকে। কিন্তু বিষয়টি মোটেই সত্য নয়। আপনার মধ্যে এরূপ হতাশার জন্ম নিলে আপনি মনোরোগবিশেষজ্ঞের শরণ নিন।

আপনি আর যেভাবে সন্তানকে সাহায্য করতে পারেন:

সন্তান চিকিৎসক নির্দেশিত ওষুধসমূহ ঠিকভাবে খায় কিনা তা লক্ষ্য রাখুন।

প্রতিদিন সুষম ওপুষ্টিকর খাবার সন্তানকে খেতে দিন। এতে আপনার শিশুর মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যাবে।

সন্তানকে ক্রিয়াশীল রাখুন; তার বিষণ্নতা কেটে যাবে। সাইকেল চালানো শেখান, সাঁতার কাটতে নিয়ে যান।

সন্তানের কাছে তার মনের দুঃখ শুনতে চান; বলুন আপনি তাকে সব রকম সাহায্য করতে প্রস্তুত আছেন। যদিও সন্তান আপনার কথায় বিশ্বাস করতে চাইবে না তবুও বারবার আপনি তাকে আশ্বাস বাণী শোনান। ধীরে ধীরে সে আপনার উপর আস্থা ফিরে পাবে।

সন্তানকে তার আলস্যের জন্য অযথা ধমকাবেন না। মনে রাখবেন এটা তার আলস্য নয়; তার ইচ্ছা শক্তি ই নষ্ট হয়ে গেছে।

সন্তানের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণ নিন। সন্তান যদি তার প্রিয় জিনিসগুলো অন্যকে বিলিয়ে দেয়, আত্মহত্যার কথা বলে কিংবা তার প্রস্তুতি নেয়, তবে তা আত্মহত্যার প্রবণতা।

আত্মহত্যার লক্ষণ :

মাঝে মাঝে স্মৃতিশক্তি লোপ

অবসাদ

বিমর্ষ, অস্থির, irritable নিজেকে মূল্যহীন ভাবে, হতাশ, দুঃখিত, আত্মধিক্কারে ভোগে

যে কাজে আগে প্রভূত আনন্দ পেত এখন সে কাজে আনন্দ বা উৎসাহ কিছুই পায় না।

গব সময় আত্মহত্যা, মৃত্যুর কথা ভাবে ও বলে

ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে, বা বেশি ঘুমানো বা দিবানিদ্রা।

Acting-out behaviors -কোনো কিছু পরোয়া না করা; যুদ্ধংদেহি মনোভাব; যেমন কারফিউর সময়ও ঘরে না ফেরা।

Criminal behavior যেমন দোকানে গেলে চুরি করা

দায়ীত্বজ্ঞানহীন আচরণ।

বিদ্যালয়ে খারাপ ফলাফল, গ্রেড ড্রপিং

পরিবার ও বন্ধুবান্ধব থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া, একা একা থাকা

ড্রাগ বা মাদকে আসক্তি

যদি এগুলো দু সপ্তাহের অধিক বলবৎ থাকে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে টিনএজারদের মধ্যে মুড আপ-ডাউন একটি স্বাভাবিক ব্যাপার, কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন পরে তা আপনা-আপনি ঠিক হয়ে যায়। তাই তারা বিষণ্নতায় ভুগছে কিনা বোঝা মশুকিল।

চিকিৎসা :

চিকিৎসকের মাধ্যমে সাপোর্টিভ কেয়ার

টক-থেরাপি :

কি করে নেতিবাচক চিন্তাধারা দূর করা যায়, বিষণ্নতার সম্ভাব্য কারণসমূহ বা কি করলে বিষণ্নতা আরও বেড়ে যেতে পারে, তা জানিয়ে দেয়, সমস্যাদূরকরণের শক্তি বাড়িয়ে দেয়।

পরিবার এবং বিদ্যালয় কীভাবে সাপোর্ট দিতে পারে তা জানিয়ে দেয়। বিষণ্নতার কারণ যদি পারিবারিক কনফ্লিক্ট হয় তবে তা দূর করতে সাহায্য করে।

সাপোর্টগ্রপে যোগদান যারা তোমারই মতো বিষণ্নতায় ভুগছে।

বিষণ্নতা দূরীকরণ ওষুধ সেবন

তুমি কি করতে পারো :

যথাসময়ে ওষুধ সেবন

বিষণ্নতা আরও বেশি গভীর হলে তা অনুধাবন করে সত্তর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া

বেশি করে শারীরিক পরিশ্রম করা ও যে কাজ এনজয় কর তা বেশি বেশি করে করা।

ড্রাগ বা মাদককে এড়িয়ে চলা

যখন বিষণ্নতার সঙ্গে নিজে যুদ্ধ করছ তখন তোমাকে ভালোবাসে এমন কারো সঙ্গে তা শেয়ার কর।

পরিণাম : বিষণ্নতা সাধারণত ওষুধে দূর হয়। ঠিক সময়ে ঠিক চিকিৎসা নিতে পারলে পরবর্তী বিষণ্নতা হতে রক্ষা করতে পারে।

বিষণ্নতা পরবর্তী সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন :

ড্রাগ বা মাদক বা তামাক অধসক্তি

পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি

পড়াশোনায় অবনতি

দুশ্চিন্তাগ্রস্ততা

আত্মহত্যার প্রবণতা Violence and reckless behavior

চিকিৎসকের শরণ নিন যদি :

ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন হয়

সব কিছু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয়

নিজেকে আহত করে

আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়।

নিজের সবকিছু অন্যকে বিলিয়ে দেয়

বিষণ্নতা ভালো হচ্ছে না বরং দিন দিন বেড়েই চলছে Nervousness, irritability, moodiness, বা অনিদ্রা য দিন দিন বেড়েই চলছে

প্রতিরোধ : বেশিরভাগ কিশোর কিশোরী কোন এক সময়ে বিষণ্নতায় ভোগে। এ সময়ে সাপোর্ট এবং ভালো মানিয়ে নেবার শক্তি দ্বারা এ দুঃখবোধ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নয়ত এ দুঃখবোধ থেকেই জন্ম নেয় গভীর বিষণ্নতা। আপনার সন্তানের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলুন, বিষণ্নতা প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পরবে। দুঃখবোধ কেটে যাবে। সন্তান বিষণ্নতায় ভুগলে এলকোহল, বন্দুক ও ওষুধ তার নাগালের বাইরে রাখুন। আত্মহত্যার হুমকি বা এটেম্পটকে অবহেলা করবেন না।

তোমার করণীয় : পর্যাপ্ত ঘুমাও

স্বাস্থ্যসম্মত সুসম খাবার খাও; মাছ (ওমেগা ৩ সমৃদ্ধ টুনা মাছ), সবজি, ফল বেশি করে খাবে।

নিয়মিত শরীর চর্চা কর

মদ, মারিজুয়ানা বা অন্যান্য মাদক পরিহার কর

যে কাজ তোমাকে আনন্দ দেয় সে কাজটি কর যদিও তাতে তুমি আগে থেকে অভ্যস্ত নও

পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে বেশি বেশি সময় কাটাও

মেডিটেশন কর।