প্রসঙ্গ : রোহিঙ্গা মুসলিম

মো. হামিদুল হক

বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে এক বড় সমস্যায় পড়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্রে করে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) এ গত ১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার শুরু হয় আন্তর্জাতিক মামলা। নেদারল্যান্ডের হেগে আন্তর্জাতিক আদালতে এ মামলায় লড়াই করে গাম্বিয়া ও মায়ানমার। গাম্বিয়াকে সহায়তা দেয় বাংলাদেশ, কানাডা ও নেদারল্যান্ডস।

নেদারল্যান্ডের হেগে পিস প্যালেসে গত ১০ ডিসেম্বর রোহিঙ্গা হত্যার পক্ষে বক্তব্য দেয় গাম্বিয়া। আর গণহত্যার বিপক্ষে সুচি’র নেতৃত্বে বক্তব্য দেয় মায়ানমার। ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে এই শুনানি। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলাটি দায়ের করে। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মুল করতে রাখাইনে গণহত্যা, গণধর্ষণসহ মায়ানমারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয় এ মামলায়।

দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে মায়ানমারের পক্ষে সাফাই তুলে ধরেন মায়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি। মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে আনার সমালোচনা করেন তিনি। মায়ানমারের নেত্রী সুচি বলেন, মায়ানমারের রক্ষী বাহিনীর সদস্যরা যদি গণহত্যা চালিয়ে থাকে তাহলে মায়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী সামরিক বিচার ব্যবস্থায় তাদের বিচার করা হবে। মায়ানমারের সামরিক আইন অত্যন্ত কঠোর এবং আন্তর্জাতিক মানের। তিনি বলেন, ঘটনাটি মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে বিবেচনা করা উচিত। তিনি বলেছেন রাখাইনে অনেকে বাস্তচ্যুত হয়েছেন, সম্পদ হারিয়েছেন এ অভিযোগ প্রমাণিত হলে তা কোনভাবেই ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনসনের আওতায় পড়ে না।

মায়ানমার নেত্রী তার সাফাই বক্তব্যে আরও অনেক তথ্য দিয়েছিলেন তবে তার সবকটিই ছিল অন্য প্রসঙ্গে। তবে তিনি সর্বশেষে বলেন রাখাইনে যা হয়েছে তা আরাকান বুড্ডিস্ট আর্মি ও রক্ষী বাহিনীর মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ। তিনি বলেন, সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে অনেককে বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে। তিনি বলেন, এখনও সেখানে সংঘর্ষ চলমান।

এরপরে মায়ানমারের বিস্তারিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রফেসর উইলিয়াম সিবার্সা। তিনি আদালতে গাম্বিয়ার অভিযোগের বিভিন্ন অংশ উপস্থাপন করে। গণহত্যা চালানোর অভিযোগ খ-নের চেস্টা করেন। তিনি একপর্যায়ে ওই তদন্ত প্রতিবেদনকে আদালতে উপেক্ষা করা উচিত বলে দাবি করেন।

প্রফেসর উইলিয়াম সিবার্সার পর আইনজীবী ক্রিস্টেফার স্টকার বলেন, গাম্বিয়া নামমাত্র আবেদনকারী হলেও আবেদন করেছে ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে। মামলার অর্থায়ন করছে ওআইসি। শেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন আইনজীবী ফোবে ওকোয়া। তিনি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুলোর বিষয়ে তদন্ত নেয়া ব্যবস্থাগুলোর বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থার মাধ্যমে জবাবদিহি নিশ্চিত করার উদ্যোগকে সমর্থন দেই।

অন্যদিকে জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, মায়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের লক্ষ্য করে অভিযান চালায় দেশটির সেনাবহিনী। ওই অভিযানে রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা, ধর্ষণ ও তাদের সম্পদ লুটপাটের অভিযোগ ওঠে। অভিযানের মূলে ১১ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত-সংলগ্ন বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। সে সময় মায়ানমারের সেনা সদস্য, পুলিশ ও বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা রোহিঙ্গাদের নিধনে সরাসরি অংশ নেয়। এছাড়া ওআইসিও মায়ানমারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সমর্থন করেছে।

মায়ানমার সেনাহিনীর বিরুদ্ধে সে দেশের সরকার কি ব্যবস্থা নিয়েছেন তা আমাদের জেনে কোন লাভ নেই। যদি গৃহীত পদক্ষেপের ফলে এমনটা উপকারই হতো তা হলে শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গা মুসলমান সে দেশে ফিরে যাচ্ছে না কেন?

মায়ানমার নেত্রী সুচি বলেছেন, মায়ানমারের সামরিক বাহিনী অত্যন্ত কঠোর এবং বিচারব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানের। এ ধরনের বক্তব্য হাস্যকর। কেননা রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর কি যে হামলা-নির্যাতন চালানো হয়েছে তা প্রত্যক্ষদর্শীরা আন্তর্জাতিক আদালতে সুচি ও তার আইনজীবীদের দেয়া উদ্ভট বক্তব্যেই প্রমাণ করেছে।

বিষয়টি হলো রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্মূল করার জন্য ‘জাতিগত দাঙ্গা’ হোক আর দ্য আরাকান বুড্ডিস্ট আর্মি ও রক্ষী বাহিনীর মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ হোক-আমাদের প্রশ্ন হলো-যেহেতু সরকার করুনা করে সেদেশের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে আশ্রয় দিয়েছে, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা রোহিঙ্গাদের অভাব-অনটন এবং নির্যাতন-অত্যাচারের বিষয়ে এগিয়ে এসেছেন তখন মায়ানমার সরকারের উচিত যে দাঙ্গায়ই হোক রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দ্রুত ব্যবস্থা করা এবং মায়ানমারে যারা গণধর্ষণ, নির্যাতন, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, নির্মমভাবে অত্যাচার করেছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা তথা মৃত্যুদ- পর্যন্ত কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

কিন্তু সম্প্রতি মায়ানমারে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইচহিরো মারুইয়ামা রাখাইনে কোন গণহত্যা হয়নি বলে যে মন্তব্য করেছেন তা দুঃজনক। এ ধরনের মন্তব্য করা তার উচিত হয়নি। প্রসঙ্গ হলো রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর অত্যাচার হয়েছে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ায় তারা দেশত্যাগে বাধ্য হয়ে অন্য দেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে তাই তাদের পুনরায় দেশে নিশ্চয়তা প্রদানের সঙ্গে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই সমস্যার সমাধান। কে করেছে হামলা আর কে করেনি এটা তো আমাদের সরকারের দেখে লাভ নেই। মোট কথা একটা দুর্যোগের সময় সরকার তাদের আশ্রয় দিয়েছিল। তখন দুর্যোগ না কাটলেও সেদেশের সরকারকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের পূর্ণ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াটা অত্যাবশ্যক এবং আমরা সেটিই চাই।

কেননা এ দেশে রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় দিয়ে নানাবিধ সমস্যায় পড়েছে সরকার। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সমস্যা এর মধ্যে অন্যতম। মায়ানমার সরকারের উচিত হবে যেহেতু সেদেশে সব তথ্য-উপাত্ত রয়েছে অতএব তাদের বিষয়ে সেই তথ্য-উপাত্তর ওপর ভিত্তি করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট যে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে সেটা ২০১৯ সালের শেষ প্রান্তে এসেও শেষ হবে না এটা কি কোন দিন হতে পারে, বা গ্রহণযোগ্য? আমরা তা মেনে নিবই বা কেন? আমাদের দেশ একটি ছোট দেশ। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সমস্যা কাটিয়ে উঠতেই হিমশিম খেতে হয়। তারপর রোহিঙ্গা মুসলমানদের মতো একটি সমস্যা এত দীর্ঘ সময় ধরে নিজ কাঁধে নিয়ে বিশ্ব দরবারে ঘুরে বেড়াবো কেন?

বিশ্ববাসীরও উচিত হবে এ সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসা। কেননা দু’য়েক মাসের বিষয় নয়, আজ প্রায় সোয়া দুই বছর হতে চলল এ সমস্যার। কিন্তু এর কূল-কিনারা শেষ করতে কেউ এগিয়ে এলো না। সবাই বিবৃতি, পরিদর্শনের মধ্যেই সীমিত থাকেন।

[লেখক : সাংবাদিক ও দিনাজপুর কলামিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক]

মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২০ , ২৪ পৌষ ১৪২৬, ১০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

প্রসঙ্গ : রোহিঙ্গা মুসলিম

মো. হামিদুল হক

বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে এক বড় সমস্যায় পড়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্রে করে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) এ গত ১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার শুরু হয় আন্তর্জাতিক মামলা। নেদারল্যান্ডের হেগে আন্তর্জাতিক আদালতে এ মামলায় লড়াই করে গাম্বিয়া ও মায়ানমার। গাম্বিয়াকে সহায়তা দেয় বাংলাদেশ, কানাডা ও নেদারল্যান্ডস।

নেদারল্যান্ডের হেগে পিস প্যালেসে গত ১০ ডিসেম্বর রোহিঙ্গা হত্যার পক্ষে বক্তব্য দেয় গাম্বিয়া। আর গণহত্যার বিপক্ষে সুচি’র নেতৃত্বে বক্তব্য দেয় মায়ানমার। ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে এই শুনানি। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলাটি দায়ের করে। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মুল করতে রাখাইনে গণহত্যা, গণধর্ষণসহ মায়ানমারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয় এ মামলায়।

দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে মায়ানমারের পক্ষে সাফাই তুলে ধরেন মায়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি। মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে আনার সমালোচনা করেন তিনি। মায়ানমারের নেত্রী সুচি বলেন, মায়ানমারের রক্ষী বাহিনীর সদস্যরা যদি গণহত্যা চালিয়ে থাকে তাহলে মায়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী সামরিক বিচার ব্যবস্থায় তাদের বিচার করা হবে। মায়ানমারের সামরিক আইন অত্যন্ত কঠোর এবং আন্তর্জাতিক মানের। তিনি বলেন, ঘটনাটি মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে বিবেচনা করা উচিত। তিনি বলেছেন রাখাইনে অনেকে বাস্তচ্যুত হয়েছেন, সম্পদ হারিয়েছেন এ অভিযোগ প্রমাণিত হলে তা কোনভাবেই ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনসনের আওতায় পড়ে না।

মায়ানমার নেত্রী তার সাফাই বক্তব্যে আরও অনেক তথ্য দিয়েছিলেন তবে তার সবকটিই ছিল অন্য প্রসঙ্গে। তবে তিনি সর্বশেষে বলেন রাখাইনে যা হয়েছে তা আরাকান বুড্ডিস্ট আর্মি ও রক্ষী বাহিনীর মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ। তিনি বলেন, সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে অনেককে বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে। তিনি বলেন, এখনও সেখানে সংঘর্ষ চলমান।

এরপরে মায়ানমারের বিস্তারিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রফেসর উইলিয়াম সিবার্সা। তিনি আদালতে গাম্বিয়ার অভিযোগের বিভিন্ন অংশ উপস্থাপন করে। গণহত্যা চালানোর অভিযোগ খ-নের চেস্টা করেন। তিনি একপর্যায়ে ওই তদন্ত প্রতিবেদনকে আদালতে উপেক্ষা করা উচিত বলে দাবি করেন।

প্রফেসর উইলিয়াম সিবার্সার পর আইনজীবী ক্রিস্টেফার স্টকার বলেন, গাম্বিয়া নামমাত্র আবেদনকারী হলেও আবেদন করেছে ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে। মামলার অর্থায়ন করছে ওআইসি। শেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন আইনজীবী ফোবে ওকোয়া। তিনি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুলোর বিষয়ে তদন্ত নেয়া ব্যবস্থাগুলোর বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থার মাধ্যমে জবাবদিহি নিশ্চিত করার উদ্যোগকে সমর্থন দেই।

অন্যদিকে জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, মায়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের লক্ষ্য করে অভিযান চালায় দেশটির সেনাবহিনী। ওই অভিযানে রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা, ধর্ষণ ও তাদের সম্পদ লুটপাটের অভিযোগ ওঠে। অভিযানের মূলে ১১ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত-সংলগ্ন বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। সে সময় মায়ানমারের সেনা সদস্য, পুলিশ ও বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা রোহিঙ্গাদের নিধনে সরাসরি অংশ নেয়। এছাড়া ওআইসিও মায়ানমারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সমর্থন করেছে।

মায়ানমার সেনাহিনীর বিরুদ্ধে সে দেশের সরকার কি ব্যবস্থা নিয়েছেন তা আমাদের জেনে কোন লাভ নেই। যদি গৃহীত পদক্ষেপের ফলে এমনটা উপকারই হতো তা হলে শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গা মুসলমান সে দেশে ফিরে যাচ্ছে না কেন?

মায়ানমার নেত্রী সুচি বলেছেন, মায়ানমারের সামরিক বাহিনী অত্যন্ত কঠোর এবং বিচারব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানের। এ ধরনের বক্তব্য হাস্যকর। কেননা রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর কি যে হামলা-নির্যাতন চালানো হয়েছে তা প্রত্যক্ষদর্শীরা আন্তর্জাতিক আদালতে সুচি ও তার আইনজীবীদের দেয়া উদ্ভট বক্তব্যেই প্রমাণ করেছে।

বিষয়টি হলো রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্মূল করার জন্য ‘জাতিগত দাঙ্গা’ হোক আর দ্য আরাকান বুড্ডিস্ট আর্মি ও রক্ষী বাহিনীর মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ হোক-আমাদের প্রশ্ন হলো-যেহেতু সরকার করুনা করে সেদেশের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে আশ্রয় দিয়েছে, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা রোহিঙ্গাদের অভাব-অনটন এবং নির্যাতন-অত্যাচারের বিষয়ে এগিয়ে এসেছেন তখন মায়ানমার সরকারের উচিত যে দাঙ্গায়ই হোক রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দ্রুত ব্যবস্থা করা এবং মায়ানমারে যারা গণধর্ষণ, নির্যাতন, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, নির্মমভাবে অত্যাচার করেছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা তথা মৃত্যুদ- পর্যন্ত কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

কিন্তু সম্প্রতি মায়ানমারে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইচহিরো মারুইয়ামা রাখাইনে কোন গণহত্যা হয়নি বলে যে মন্তব্য করেছেন তা দুঃজনক। এ ধরনের মন্তব্য করা তার উচিত হয়নি। প্রসঙ্গ হলো রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর অত্যাচার হয়েছে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ায় তারা দেশত্যাগে বাধ্য হয়ে অন্য দেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে তাই তাদের পুনরায় দেশে নিশ্চয়তা প্রদানের সঙ্গে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই সমস্যার সমাধান। কে করেছে হামলা আর কে করেনি এটা তো আমাদের সরকারের দেখে লাভ নেই। মোট কথা একটা দুর্যোগের সময় সরকার তাদের আশ্রয় দিয়েছিল। তখন দুর্যোগ না কাটলেও সেদেশের সরকারকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের পূর্ণ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াটা অত্যাবশ্যক এবং আমরা সেটিই চাই।

কেননা এ দেশে রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় দিয়ে নানাবিধ সমস্যায় পড়েছে সরকার। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সমস্যা এর মধ্যে অন্যতম। মায়ানমার সরকারের উচিত হবে যেহেতু সেদেশে সব তথ্য-উপাত্ত রয়েছে অতএব তাদের বিষয়ে সেই তথ্য-উপাত্তর ওপর ভিত্তি করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট যে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে সেটা ২০১৯ সালের শেষ প্রান্তে এসেও শেষ হবে না এটা কি কোন দিন হতে পারে, বা গ্রহণযোগ্য? আমরা তা মেনে নিবই বা কেন? আমাদের দেশ একটি ছোট দেশ। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সমস্যা কাটিয়ে উঠতেই হিমশিম খেতে হয়। তারপর রোহিঙ্গা মুসলমানদের মতো একটি সমস্যা এত দীর্ঘ সময় ধরে নিজ কাঁধে নিয়ে বিশ্ব দরবারে ঘুরে বেড়াবো কেন?

বিশ্ববাসীরও উচিত হবে এ সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসা। কেননা দু’য়েক মাসের বিষয় নয়, আজ প্রায় সোয়া দুই বছর হতে চলল এ সমস্যার। কিন্তু এর কূল-কিনারা শেষ করতে কেউ এগিয়ে এলো না। সবাই বিবৃতি, পরিদর্শনের মধ্যেই সীমিত থাকেন।

[লেখক : সাংবাদিক ও দিনাজপুর কলামিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক]