চট্টগ্রামের পটিয়ায় শ্রীমাই খাল ও ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কারণে খালের বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়েছে। বালি উত্তোলনের ঘটনায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে খালের বেড়িবাঁধ ভেঙে পাহাড়ি ঢলে উপজেলার হাইদগাও, কচুয়াই, ভাটিখাইন, ছনহরা ইউনিয়নের হাজার হাজার পরিবারের গৃহহীন, কোটি কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়ে হয়ে পড়ে। অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের সঙ্গে উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ, একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক চক্র জড়িত রয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
উপজেলার শ্রীমাই খাল থেকে অবৈধভাবে প্রতিদিন দিনে রাতে প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ ট্রাক বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের প্রতিবাদে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসলেও উপজেলা প্রশাসন রহস্যজনক কারণে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বালু উত্তোলনের ঘটনায় চারপাশে পরিবেশ মারাত্বক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয় কৃষকেরা জানায়। কৃষকের ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের প্রতিবাদে এলাকার কৃষক শ্রমিক সবাই প্রতিবাদ জানিয়ে আসলেও প্রশাসন নিরব দর্শরকর ভূমিকা পালন করছেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পটিয়া উপজেলার চারটি পয়েন্টে সরকারিভাবে ইজারা দেয়া হয়।
২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল শ্রীমাই-২ বালুমহল সাতকানিয়া উপজেলার রফিকুল ইসলামের মালিকানাধিন মের্সাস হোসেন মোহাং ইব্রাহীম ও খরনা বালুমহাল চন্দনাইশ উপজেলার আবুল হাশেমের মালিকানাধীন মের্সাস আবুল হাশেমকে, পটিয়া উপজেলার ছনহার এলাকার শাহদাত হোসেনের মালিকানাধিন মের্সাস শাহদাত এন্টারপ্রাইজকে গত ৩০ জুন চানখালী খালের বালুমহালের ইজারার টাকা জমা করার নির্দেশ দেন। শ্রীমাই-২ ইজারাদার মের্সাস হোসেন মোহাং ইব্রাহীম পেলেও সমঝোতার মাধ্যমে গত ২১ এপ্রিল বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগেরসহ সভাপতি মনছুর আলম পাপপির মালিকানাধিন আমরিন এন্ড ব্রাদার্স উপজেলার হাইদগাও বালুমহাল ও বাহুলী বালুমহালের ইজারার নেন। এ সংক্রান্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) চট্টগ্রাম মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত কার্যদেশও প্রদান করেন।
কাগজে কলমে ইজারাদার আরমিন অ্যান্ড ব্রাদার্স হলেও পটিয়ার স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী চক্রকে দিয়ে ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে তারা। শ্রীমাই খালের দুটি পয়েন্ট ২১ লাখ টাকা দিয়ে ইজারা নিলেও ৩০ লাখ টাকা দিয়ে স্থানীয় কিছু দলীয় লোকজন কিনে নিয়ে কোটি কোটি টাকার বালুর ব্যবসা করে যাচ্ছেন।
অভিযোগ উঠেছে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের সিনিয়রসহ সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী প্রকাশ বালু শাহজাহান ও তার ভাই পটিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর আলম। তারা দুই ভাই মিলে অবৈধভাবে বালি তুলে লাখ লাখ টাকার ব্যবসা করছেন। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে শাহজাহান আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে আলমগীর আলম বালু উত্তোলনের ব্যবসা পরিচলনা করেন।
শ্রীমাই খাল থেকে বালি উত্তোলন না করার জন্য স্থানীয় এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ শামশুল হক চৌধুরী প্রশাসনকে নির্দেশ দিলেও এই নির্দেশ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। টাকার বিনিময়ে একটি ধান্ধাবাজ চক্র অবৈধভাবে বালু তোলে বিক্রি করে কোটি টাকা ভাগিয়ে নিচ্ছে বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশের নেতা কর্মীদের অভিযোগ। স্কেভেটরে শুধু মাত্র খালের উপর এবং নিদিষ্ঠ পয়েন্ট থেকে বালু তোলার নির্দেশ থাকলেও এলাকার শতশত মানুষের ফসলি জমি নষ্ঠ করে জোরপূবর্ক অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২০ , ২৫ পৌষ ১৪২৬, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১
নজরুল ইসলাম, পটিয়া (চট্টগ্রাম)
চট্টগ্রামের পটিয়ায় শ্রীমাই খাল ও ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কারণে খালের বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়েছে। বালি উত্তোলনের ঘটনায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে খালের বেড়িবাঁধ ভেঙে পাহাড়ি ঢলে উপজেলার হাইদগাও, কচুয়াই, ভাটিখাইন, ছনহরা ইউনিয়নের হাজার হাজার পরিবারের গৃহহীন, কোটি কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়ে হয়ে পড়ে। অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের সঙ্গে উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ, একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক চক্র জড়িত রয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
উপজেলার শ্রীমাই খাল থেকে অবৈধভাবে প্রতিদিন দিনে রাতে প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ ট্রাক বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের প্রতিবাদে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসলেও উপজেলা প্রশাসন রহস্যজনক কারণে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বালু উত্তোলনের ঘটনায় চারপাশে পরিবেশ মারাত্বক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয় কৃষকেরা জানায়। কৃষকের ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের প্রতিবাদে এলাকার কৃষক শ্রমিক সবাই প্রতিবাদ জানিয়ে আসলেও প্রশাসন নিরব দর্শরকর ভূমিকা পালন করছেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পটিয়া উপজেলার চারটি পয়েন্টে সরকারিভাবে ইজারা দেয়া হয়।
২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল শ্রীমাই-২ বালুমহল সাতকানিয়া উপজেলার রফিকুল ইসলামের মালিকানাধিন মের্সাস হোসেন মোহাং ইব্রাহীম ও খরনা বালুমহাল চন্দনাইশ উপজেলার আবুল হাশেমের মালিকানাধীন মের্সাস আবুল হাশেমকে, পটিয়া উপজেলার ছনহার এলাকার শাহদাত হোসেনের মালিকানাধিন মের্সাস শাহদাত এন্টারপ্রাইজকে গত ৩০ জুন চানখালী খালের বালুমহালের ইজারার টাকা জমা করার নির্দেশ দেন। শ্রীমাই-২ ইজারাদার মের্সাস হোসেন মোহাং ইব্রাহীম পেলেও সমঝোতার মাধ্যমে গত ২১ এপ্রিল বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগেরসহ সভাপতি মনছুর আলম পাপপির মালিকানাধিন আমরিন এন্ড ব্রাদার্স উপজেলার হাইদগাও বালুমহাল ও বাহুলী বালুমহালের ইজারার নেন। এ সংক্রান্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) চট্টগ্রাম মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত কার্যদেশও প্রদান করেন।
কাগজে কলমে ইজারাদার আরমিন অ্যান্ড ব্রাদার্স হলেও পটিয়ার স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী চক্রকে দিয়ে ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে তারা। শ্রীমাই খালের দুটি পয়েন্ট ২১ লাখ টাকা দিয়ে ইজারা নিলেও ৩০ লাখ টাকা দিয়ে স্থানীয় কিছু দলীয় লোকজন কিনে নিয়ে কোটি কোটি টাকার বালুর ব্যবসা করে যাচ্ছেন।
অভিযোগ উঠেছে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের সিনিয়রসহ সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী প্রকাশ বালু শাহজাহান ও তার ভাই পটিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর আলম। তারা দুই ভাই মিলে অবৈধভাবে বালি তুলে লাখ লাখ টাকার ব্যবসা করছেন। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে শাহজাহান আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে আলমগীর আলম বালু উত্তোলনের ব্যবসা পরিচলনা করেন।
শ্রীমাই খাল থেকে বালি উত্তোলন না করার জন্য স্থানীয় এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ শামশুল হক চৌধুরী প্রশাসনকে নির্দেশ দিলেও এই নির্দেশ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। টাকার বিনিময়ে একটি ধান্ধাবাজ চক্র অবৈধভাবে বালু তোলে বিক্রি করে কোটি টাকা ভাগিয়ে নিচ্ছে বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশের নেতা কর্মীদের অভিযোগ। স্কেভেটরে শুধু মাত্র খালের উপর এবং নিদিষ্ঠ পয়েন্ট থেকে বালু তোলার নির্দেশ থাকলেও এলাকার শতশত মানুষের ফসলি জমি নষ্ঠ করে জোরপূবর্ক অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।