নবজাতকের চিকিৎসা সরঞ্জামাদির কক্ষ তালাবদ্ধ
প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহের কারনে সমুদ্র উপকূলীয় পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় শিশুদের শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে কলাপাড়া ৫০ শয্যা হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে ডাক্তাররা। গত এক সপ্তাহ ধরে শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া ও নিউমানিয়ায়। নবজাতক থেকে শুরু করে একবছর বয়সী এ শিশুদের চিকিৎসার জন্য রয়েছে মাত্র ১০টি বেড। এ কারণে প্রচণ্ড শীতের মধ্যে শিশুদের নিয়ে হাসপাতালের বাড়ান্দায় ও ফ্লোরে রাত কাটাতে হচ্ছে অভিভাবকদের। চরাঞ্চলের নিম্ন আয়ের পরিবারের লোকজন অর্থিক দৈন্যতায় শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি করালেও হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসার কোন ওষুধ সরবরাহ নেই। এ কারনে প্রতিদিন অন্তত পাঁচশ থেকে দেড় হাজার টাকার ওষুধ বাহির থেকে কিনতে হচ্ছে অভিভাবকদের। এতে আর্থিক দৈন্যতায় অনেক অভিভাবক ওষুধ কিনতে না পারায় তাদের চিকিৎসা চলছে শুধু স্যালাইন ও হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা খাবার খেয়ে। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ওষুধ সরবরাহ না থাকার কথা স্বীকার করে বলেছেন আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সবধরণের ওষুধ সরবরাহ করা হবে।
১২টি ইউনিয়ন, দুইটি পৌরসভা ও দুটি প্রশাসনিক থানা নিয়ে গঠিত কলাপাড়া উপজেলার প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষ চিকিৎসা সেবায় নির্ভরশীল কলাপাড়া উপজেলা হাসপাতালে উপর। এছাড়া কলাপাড়ার সীমান্তবর্তী রাঙ্গাবালী, তালতলী ও আমতলী উপজেলার মানুষও জরুরি চিকিৎসার জন্য কলাপাড়া হাসপাতালে ভিড় করে। এ হাসপাতালে গত মাসে নতুন ১০ জন ডাক্তার যোগদানের পর ডাক্তার সংকট না থাকলেও নতুন সংকট ওষুধ। কেননা এ প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্তদের সব ধরণের ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাহির থেকে। এছাড়া বেড সংকটের কারণে অধিকাংশ শিশুকে হাসপাতালের বারান্দায় ও শিশু ওয়ার্ডের ফ্লোরে রাত কাটাতে হচ্ছে। এতে তারা আরও বেশি আক্রান্ত হলেও চিকিৎসকদের বক্তব্য বেড সংকট। কলাপাড়া হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৪৩ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। এবং গত একমাসে হাসপাতালে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করেছে ৬৪ জন গর্ভবর্তী মা। ইনডোরের এ পরিসংখ্যানের ১০০ গুণ বেশি চিকিৎসা নিয়েছে আউটডোরে। এতে বেড সংকট ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ না থাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
কলাপাড়া হাসপাতালে নবজাতকের জরুরি চিকিৎসার জন্য ইউনিসেফ থেকে স্পেশাল কেয়ার নিউবর্ন ইউনিট (এস সি এ এন ইউ) প্রকল্পের আওতায় কলাপাড়া হাসপাতালে একটি ইউরিট চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাবাদি প্রদান করা হয়েছে গত বছরের ৫ ডিসেম্বর। কিন্তু এক মাসেও এ স্পেশাল কেয়ার নিউবর্ন ইউনিটটি চালু করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ কারনে হাসপাতালে প্রতিদিন স্বাভাবিক ও সিজারিয়ান পদ্ধতিতে শিশুর জন্ম হলেও জরুরি চিকিৎসার জন্য শিশু ও মাকে নিয়ে এ প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে যেতে হচ্ছে পটুয়াখালী কিংবা বরিশাল হাসপাতালে। এতে তারা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। অথচ হাসপাতালের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায় এ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি। রোগীর স্বজনরা জানান, হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয় চিকিৎসার জন্য। অথচ এখানে শীতের মধ্যে শিশুকে নিয়ে রাত কাটাতে হয় ফ্লোরে অথবা বাড়ান্দায়। হাসপাতালে ভর্তি অধিকাংশ শিশু নিউমোনিয়া ও শ্বাসজনিত রোগে আক্রান্ত। কিন্তু সদ্যজাত শিশুর চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ও আধুনিক বেডসহ চিকিৎসা উপকরণের কক্ষ তালাবদ্ধ। যন্ত্রপাতি এখনও খোলাও হয়নি।
বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২০ , ২৫ পৌষ ১৪২৬, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১
নবজাতকের চিকিৎসা সরঞ্জামাদির কক্ষ তালাবদ্ধ
মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহের কারনে সমুদ্র উপকূলীয় পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় শিশুদের শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে কলাপাড়া ৫০ শয্যা হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে ডাক্তাররা। গত এক সপ্তাহ ধরে শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া ও নিউমানিয়ায়। নবজাতক থেকে শুরু করে একবছর বয়সী এ শিশুদের চিকিৎসার জন্য রয়েছে মাত্র ১০টি বেড। এ কারণে প্রচণ্ড শীতের মধ্যে শিশুদের নিয়ে হাসপাতালের বাড়ান্দায় ও ফ্লোরে রাত কাটাতে হচ্ছে অভিভাবকদের। চরাঞ্চলের নিম্ন আয়ের পরিবারের লোকজন অর্থিক দৈন্যতায় শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি করালেও হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসার কোন ওষুধ সরবরাহ নেই। এ কারনে প্রতিদিন অন্তত পাঁচশ থেকে দেড় হাজার টাকার ওষুধ বাহির থেকে কিনতে হচ্ছে অভিভাবকদের। এতে আর্থিক দৈন্যতায় অনেক অভিভাবক ওষুধ কিনতে না পারায় তাদের চিকিৎসা চলছে শুধু স্যালাইন ও হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা খাবার খেয়ে। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ওষুধ সরবরাহ না থাকার কথা স্বীকার করে বলেছেন আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সবধরণের ওষুধ সরবরাহ করা হবে।
১২টি ইউনিয়ন, দুইটি পৌরসভা ও দুটি প্রশাসনিক থানা নিয়ে গঠিত কলাপাড়া উপজেলার প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষ চিকিৎসা সেবায় নির্ভরশীল কলাপাড়া উপজেলা হাসপাতালে উপর। এছাড়া কলাপাড়ার সীমান্তবর্তী রাঙ্গাবালী, তালতলী ও আমতলী উপজেলার মানুষও জরুরি চিকিৎসার জন্য কলাপাড়া হাসপাতালে ভিড় করে। এ হাসপাতালে গত মাসে নতুন ১০ জন ডাক্তার যোগদানের পর ডাক্তার সংকট না থাকলেও নতুন সংকট ওষুধ। কেননা এ প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্তদের সব ধরণের ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাহির থেকে। এছাড়া বেড সংকটের কারণে অধিকাংশ শিশুকে হাসপাতালের বারান্দায় ও শিশু ওয়ার্ডের ফ্লোরে রাত কাটাতে হচ্ছে। এতে তারা আরও বেশি আক্রান্ত হলেও চিকিৎসকদের বক্তব্য বেড সংকট। কলাপাড়া হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৪৩ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। এবং গত একমাসে হাসপাতালে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করেছে ৬৪ জন গর্ভবর্তী মা। ইনডোরের এ পরিসংখ্যানের ১০০ গুণ বেশি চিকিৎসা নিয়েছে আউটডোরে। এতে বেড সংকট ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ না থাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
কলাপাড়া হাসপাতালে নবজাতকের জরুরি চিকিৎসার জন্য ইউনিসেফ থেকে স্পেশাল কেয়ার নিউবর্ন ইউনিট (এস সি এ এন ইউ) প্রকল্পের আওতায় কলাপাড়া হাসপাতালে একটি ইউরিট চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাবাদি প্রদান করা হয়েছে গত বছরের ৫ ডিসেম্বর। কিন্তু এক মাসেও এ স্পেশাল কেয়ার নিউবর্ন ইউনিটটি চালু করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ কারনে হাসপাতালে প্রতিদিন স্বাভাবিক ও সিজারিয়ান পদ্ধতিতে শিশুর জন্ম হলেও জরুরি চিকিৎসার জন্য শিশু ও মাকে নিয়ে এ প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে যেতে হচ্ছে পটুয়াখালী কিংবা বরিশাল হাসপাতালে। এতে তারা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। অথচ হাসপাতালের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায় এ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি। রোগীর স্বজনরা জানান, হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয় চিকিৎসার জন্য। অথচ এখানে শীতের মধ্যে শিশুকে নিয়ে রাত কাটাতে হয় ফ্লোরে অথবা বাড়ান্দায়। হাসপাতালে ভর্তি অধিকাংশ শিশু নিউমোনিয়া ও শ্বাসজনিত রোগে আক্রান্ত। কিন্তু সদ্যজাত শিশুর চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ও আধুনিক বেডসহ চিকিৎসা উপকরণের কক্ষ তালাবদ্ধ। যন্ত্রপাতি এখনও খোলাও হয়নি।