দেশে এইডস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে সচেতনতা জরুরি

জাকির আজাদ

বর্তমান সভ্যতার এক অমোচনীয় কলঙ্কের নাম এইডস। মরণব্যাধি এই রোগের এখনও পুরোদস্তর কোনো প্রতিষেধক অবিষ্কৃত না হলেও প্রতিকারের ব্যাপক উপদেশ প্রচারিত হচ্ছে মানুষের মধ্যে। গত চার বছরে দেশে এইচআইভি শনাক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে দ্বিগুণ। স্বাস্থ্য বা সেবা কেন্দ্রগুলোর সংখ্যা বাড়লেও বিপরীতে বৃদ্ধি পাচ্ছে মৃত্যুসংখ্যা। বিদেশ ফেরত কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কড়াকড়ি আরোপ না থাকায় আক্রান্তরা বহুমাত্রায় আক্রান্ত করছে পরিবার-পরিজনদের। সর্বোপরি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীসহ সর্বসাধারণে মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমেই এইচআইভি সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে সমস্যা সমাধানে কয়েকটি মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে কাজ করছে। গত এক বছরে ৪০০ জনের রক্ত পরীক্ষা করে ৮৪ জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, তাদের ৮০ শতাংশই বিদেশ ফেরত বিভিন্নস্তরের কর্মী। তাই চিকিৎসকরা প্রতিটি বিদেশ ফেরত কর্মীকে এইচআইভি পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক বলে গুরুত্বারোপ করেন।

১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম এইচআইভিতে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে ১০, ২০, ১০০ বা ২০০ জন করে নতুন রোগী প্রতিবছর শনাক্ত হয়েছে। ২০১৮ সালে নতুন রোগী বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছিলো ৮৬৯ জনে। এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম এক রোগী মারা যায় ২০০০ সালে। ২০১৮ সালে একই রোগে মৃতের সংখ্যা ১৪৮ জন।

জাতিসংঘের এইচআইভি-এইডস বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউএনএইডসের গত বছরের প্রাক্কলনে জানায়, বাংলাদেশে এইচআইভিতে আক্রান্তদের অনুমিত সংখ্যা ১৩০০০। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পরীক্ষার মাধ্যমে ৬ হাজার ৪৫৫ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। শনাক্ত বর্হিভূত থাকা মানুষ চিকিৎসাও নিচ্ছে না। অন্যদিকে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে চলছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় এইডস-এসটিডি কর্মসূচির জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ধারাবাহিকভাবে এইচআইভিতে আক্রান্ত নতুন রোগী এবং মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। পূর্বে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর মধ্যে নতুন রোগী বেশি পাওয়া যেতো। কিন্তু চলতি বছর সাধারণ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। দেশে এইচআইভি সংক্রমণের হার কম, মাত্র ০.০১ শতাংশ। সংক্রমণের হার কম হলেও ঘনবসতি, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন এবং অসচেতনার কারণে এইচআইভির ঝুঁকি বিদ্যমান। পাশাপাশি পাশের দেশ ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় এইচআইভি সংক্রমণের হার অনেক বেশি হওয়ায় বাংলাদেশ বুঁকির মধ্যে আছে।

বর্তমানে সারাদেশে ১২টি কেন্দ্রে সেবা প্রদান করা হলেও পরিপূর্ণ চিকিৎসার জন্য সবাইকে আবার রাজধানী ঢাকাতে আসতে হয়। তবে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের সেবায় সন্তুষ্ট নয় রোগীরা। সরকারি তথ্যমতে, দীর্ঘ ২৮ বছরে শনাক্ত হয়েছে আক্রান্তের অর্ধেক জনগোষ্ঠী। যৌনকর্মী, শিরায় মাদক গ্রহণকারীসহ লুকিয়ে থাকা আক্রান্তদের দ্রুত খুঁজে বের করতে না পারলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, রোগ শনাক্ত হওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসা দেয়া জরুরি তবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।

পৃথিবীতে এইডসের জীবাণু বহনকারী লোকের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ধারণা করা হচ্ছে পৃথিবীর চার কোটির বেশি মানুষ এইডসের জীবাণু বহন করে চলছে। এইডস বিষয়ক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে- বিশে্বে প্রায় ৪ কোটি ৩০ লাখ লোক এইচআইভি ধারণ করছে তাদের দেহে। চলতি বছরে পৃথিবীতে মোট ৩০ লাখ লোক এইডস রোগের জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেছে। তাদের মধ্যে শিশু ছিলো ৫ লক্ষাধিক। প্রতিবেদনে পরিলক্ষিত হয়, আফ্রিকা ও সাব-সাহারা দেশসমূহে এখনও এইডসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি। বিশে্বের এইচআইভি বহনকারী মানুষের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশই বসবাস করে সাব-সাহারা দেশগুলোতে। রাষ্ট্রসংঘের এইডস বিষয়ক কমিটি বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশেষ উদ্বিগ্ন। তারা জানান যে, এর মধ্যেই মধ্য পূর্ব এশিয়ার এইডস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতের তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক ও মহারাষ্ট্রে এইচআইভি সংক্রমণের হার স্থিতিশীল থাকলেও অন্য কয়েকটি রাজ্যে সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত লোকের সংখ্যা ভয়ঙ্করভাবে বেড়েই চলেছে। ভারতের নিম্নআয়ের জনবসতির্পূণ প্রদেশ উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের মতো ঘনবসতির্পূণ রাজ্যে গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার এখনও কম। ভারতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিবাহিত মহিলা তাদের স্বামীদের দ্বারা এইচআইভিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। স্বামীদের অবাধ পতিতালয়ে গমন করার কারণে যৌনকর্মীদের মাধ্যমে তারা প্রাণঘাতী এইডস রোগের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। পকিস্তানের করাচি শহরে এইডস পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তাছাড়া পূর্ব এশিয়ার থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার যৌনকর্মী এবং তাদের খদ্দেরের মাঝে এইচআইভি সংক্রমণের হার হ্রাস পেয়েছে। একইভাবে উগান্ডার যুবসমাজ, স্পেন ও ব্রাজিলের মাদকসেবী এবং পশ্চিম ইউরোপের সমকামী পুরুষদের এইচআইভি সংক্রমণ কমেছে।

এইচআইভি আক্রান্তদের চিকিৎসায় বিশ্বেব্যাপী আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের ধনী দেশগুলোর জনগণই নয় অন্যান্য অঞ্চলের মানুষও প্রাণঘাতী রোগের ওষুধ ও চিকিৎসা পাচ্ছে। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, চিলি ও কিউবায় এখন শতকরা ৭০ ভাগেরও বেশি এইচআইভি বহরকারী চিকিৎসার আওতায় এসেছে। তবে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশের লোকদের জন্য পরিস্থিতি এখনও ভয়ংকর। বর্তমানে প্রতি দশজনের একজন আফ্রিকান এবং সাতজনের একজন এশীয় এইডসের ওষুধ পাচ্ছে। তবে এইডসের মতো ভয়ানক, মরণব্যাধি রোগটির মহামারী আটকাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কর্মকা- খুবই অপ্রতুল। অনেককেই শুধু অঙ্গীকারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তারা অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলেন, পৃথিবীর অনেক মানুষ প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশের মতো নাজুক অর্থনীতি ও অস্থির রাজনীতির দেশের জনগণের ভবিষ্যৎ আরো ভয়ানক। দিন দিন বেশিসংখ্যক মানুষ এইডসের জীবাণু বহন করছে এবং ঝুঁকিপ্রবণ মানুষের সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। একই সঙ্গে যদি সংক্রমণ রোধের ব্যাপক ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া না হয়, তবে অনেকেই এ প্রাণঘাতী রোগে মৃত্যুবরণ করবে।

[লেখক : শিশু সাহিত্যিক-সাংবাদিক]

বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২০ , ২৬ পৌষ ১৪২৬, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

দেশে এইডস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে সচেতনতা জরুরি

জাকির আজাদ

বর্তমান সভ্যতার এক অমোচনীয় কলঙ্কের নাম এইডস। মরণব্যাধি এই রোগের এখনও পুরোদস্তর কোনো প্রতিষেধক অবিষ্কৃত না হলেও প্রতিকারের ব্যাপক উপদেশ প্রচারিত হচ্ছে মানুষের মধ্যে। গত চার বছরে দেশে এইচআইভি শনাক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে দ্বিগুণ। স্বাস্থ্য বা সেবা কেন্দ্রগুলোর সংখ্যা বাড়লেও বিপরীতে বৃদ্ধি পাচ্ছে মৃত্যুসংখ্যা। বিদেশ ফেরত কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কড়াকড়ি আরোপ না থাকায় আক্রান্তরা বহুমাত্রায় আক্রান্ত করছে পরিবার-পরিজনদের। সর্বোপরি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীসহ সর্বসাধারণে মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমেই এইচআইভি সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে সমস্যা সমাধানে কয়েকটি মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে কাজ করছে। গত এক বছরে ৪০০ জনের রক্ত পরীক্ষা করে ৮৪ জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, তাদের ৮০ শতাংশই বিদেশ ফেরত বিভিন্নস্তরের কর্মী। তাই চিকিৎসকরা প্রতিটি বিদেশ ফেরত কর্মীকে এইচআইভি পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক বলে গুরুত্বারোপ করেন।

১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম এইচআইভিতে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে ১০, ২০, ১০০ বা ২০০ জন করে নতুন রোগী প্রতিবছর শনাক্ত হয়েছে। ২০১৮ সালে নতুন রোগী বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছিলো ৮৬৯ জনে। এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম এক রোগী মারা যায় ২০০০ সালে। ২০১৮ সালে একই রোগে মৃতের সংখ্যা ১৪৮ জন।

জাতিসংঘের এইচআইভি-এইডস বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউএনএইডসের গত বছরের প্রাক্কলনে জানায়, বাংলাদেশে এইচআইভিতে আক্রান্তদের অনুমিত সংখ্যা ১৩০০০। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পরীক্ষার মাধ্যমে ৬ হাজার ৪৫৫ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। শনাক্ত বর্হিভূত থাকা মানুষ চিকিৎসাও নিচ্ছে না। অন্যদিকে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে চলছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় এইডস-এসটিডি কর্মসূচির জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ধারাবাহিকভাবে এইচআইভিতে আক্রান্ত নতুন রোগী এবং মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। পূর্বে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর মধ্যে নতুন রোগী বেশি পাওয়া যেতো। কিন্তু চলতি বছর সাধারণ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। দেশে এইচআইভি সংক্রমণের হার কম, মাত্র ০.০১ শতাংশ। সংক্রমণের হার কম হলেও ঘনবসতি, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন এবং অসচেতনার কারণে এইচআইভির ঝুঁকি বিদ্যমান। পাশাপাশি পাশের দেশ ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় এইচআইভি সংক্রমণের হার অনেক বেশি হওয়ায় বাংলাদেশ বুঁকির মধ্যে আছে।

বর্তমানে সারাদেশে ১২টি কেন্দ্রে সেবা প্রদান করা হলেও পরিপূর্ণ চিকিৎসার জন্য সবাইকে আবার রাজধানী ঢাকাতে আসতে হয়। তবে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের সেবায় সন্তুষ্ট নয় রোগীরা। সরকারি তথ্যমতে, দীর্ঘ ২৮ বছরে শনাক্ত হয়েছে আক্রান্তের অর্ধেক জনগোষ্ঠী। যৌনকর্মী, শিরায় মাদক গ্রহণকারীসহ লুকিয়ে থাকা আক্রান্তদের দ্রুত খুঁজে বের করতে না পারলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, রোগ শনাক্ত হওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসা দেয়া জরুরি তবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।

পৃথিবীতে এইডসের জীবাণু বহনকারী লোকের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ধারণা করা হচ্ছে পৃথিবীর চার কোটির বেশি মানুষ এইডসের জীবাণু বহন করে চলছে। এইডস বিষয়ক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে- বিশে্বে প্রায় ৪ কোটি ৩০ লাখ লোক এইচআইভি ধারণ করছে তাদের দেহে। চলতি বছরে পৃথিবীতে মোট ৩০ লাখ লোক এইডস রোগের জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেছে। তাদের মধ্যে শিশু ছিলো ৫ লক্ষাধিক। প্রতিবেদনে পরিলক্ষিত হয়, আফ্রিকা ও সাব-সাহারা দেশসমূহে এখনও এইডসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি। বিশে্বের এইচআইভি বহনকারী মানুষের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশই বসবাস করে সাব-সাহারা দেশগুলোতে। রাষ্ট্রসংঘের এইডস বিষয়ক কমিটি বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশেষ উদ্বিগ্ন। তারা জানান যে, এর মধ্যেই মধ্য পূর্ব এশিয়ার এইডস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতের তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক ও মহারাষ্ট্রে এইচআইভি সংক্রমণের হার স্থিতিশীল থাকলেও অন্য কয়েকটি রাজ্যে সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত লোকের সংখ্যা ভয়ঙ্করভাবে বেড়েই চলেছে। ভারতের নিম্নআয়ের জনবসতির্পূণ প্রদেশ উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের মতো ঘনবসতির্পূণ রাজ্যে গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার এখনও কম। ভারতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিবাহিত মহিলা তাদের স্বামীদের দ্বারা এইচআইভিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। স্বামীদের অবাধ পতিতালয়ে গমন করার কারণে যৌনকর্মীদের মাধ্যমে তারা প্রাণঘাতী এইডস রোগের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। পকিস্তানের করাচি শহরে এইডস পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তাছাড়া পূর্ব এশিয়ার থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার যৌনকর্মী এবং তাদের খদ্দেরের মাঝে এইচআইভি সংক্রমণের হার হ্রাস পেয়েছে। একইভাবে উগান্ডার যুবসমাজ, স্পেন ও ব্রাজিলের মাদকসেবী এবং পশ্চিম ইউরোপের সমকামী পুরুষদের এইচআইভি সংক্রমণ কমেছে।

এইচআইভি আক্রান্তদের চিকিৎসায় বিশ্বেব্যাপী আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের ধনী দেশগুলোর জনগণই নয় অন্যান্য অঞ্চলের মানুষও প্রাণঘাতী রোগের ওষুধ ও চিকিৎসা পাচ্ছে। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, চিলি ও কিউবায় এখন শতকরা ৭০ ভাগেরও বেশি এইচআইভি বহরকারী চিকিৎসার আওতায় এসেছে। তবে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশের লোকদের জন্য পরিস্থিতি এখনও ভয়ংকর। বর্তমানে প্রতি দশজনের একজন আফ্রিকান এবং সাতজনের একজন এশীয় এইডসের ওষুধ পাচ্ছে। তবে এইডসের মতো ভয়ানক, মরণব্যাধি রোগটির মহামারী আটকাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কর্মকা- খুবই অপ্রতুল। অনেককেই শুধু অঙ্গীকারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তারা অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলেন, পৃথিবীর অনেক মানুষ প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশের মতো নাজুক অর্থনীতি ও অস্থির রাজনীতির দেশের জনগণের ভবিষ্যৎ আরো ভয়ানক। দিন দিন বেশিসংখ্যক মানুষ এইডসের জীবাণু বহন করছে এবং ঝুঁকিপ্রবণ মানুষের সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। একই সঙ্গে যদি সংক্রমণ রোধের ব্যাপক ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া না হয়, তবে অনেকেই এ প্রাণঘাতী রোগে মৃত্যুবরণ করবে।

[লেখক : শিশু সাহিত্যিক-সাংবাদিক]