যমুনা শুকিয়ে নালা : জীবিকা সংকটে মানবেতর জীবনে মাঝি-জেলে

সিরাজগঞ্জে যমুনা নদী এখন শুকিয়ে মাঝে মাঝে চর পড়েছে । আবার কোথাও কোথাও বন্যার উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পলি জমে এখন নালায় পরিণত হয়েছে। ফলে জেলার যমুনা চর এলাকার হাজার হাজার নৌ-শ্রমিক এবং জেলেরা বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন।

জেলার কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালি, শাহজাদপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদী এখন কোন কোন জায়গায় মরা খালে পরিণত হয়েছে। এর বুকজুড়ে জেগে উঠেছে হাজার হাজার একর আবাদি জমি। জমির মালিকরা জেগে ওঠা চরে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করছেন। উৎপাদিত হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফসল। এতে করে কৃষকদের মুখের হাসি ফুটেছে। কিন্তু ভরা নদীতে যেসব নৌ-শ্রমিক নৌকা চালিয়ে এবং জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত সেই নৌ-শ্রমিক ও জেলেরা বেকার হয়ে পড়েছেন। তারা এখন স্ত্রী, পুত্র পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নদীতে পানি না থাকায় নৌ-শ্রমিক এবং জেলেরা তাদের উপকরণ নৌকা এবং জাল বিক্রি করে দিয়ে ভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই পেশায় নিয়োজিত হাজারও শ্রমিকের রোজগার বন্ধ হওয়ায় দাদন ব্যবসায়ী এবং এনজিও’র কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বাড়িতে খোরাকি দিয়ে শহরে পাড়ি জমাচ্ছেন রোজগারের জন্য । শহরে এসে অনেকে রিকশা, ভ্যান, টেম্পু, সিএনজি, বাস-ট্রাক হেলপার, গার্মেন্টেস শ্রমিক, রাজমিস্ত্রির কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। জেলার কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়ার পরিমল, শুভগাছার বিমল ও বিকাশ কুমার, সিরাজগঞ্জ সদরের বেলুটিয়া, পাইকপাড়া, ও ঘোনাপাড়া চরের কুদ্দুস, ওয়াহাব, সেতাবআলী জানান, যমুনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় চর পরায় এখন আর জাল ফেলে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে আমরা এ পেশা ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছি। কাজিপুরের মেঘাই নৌ-ঘাটের নৌ-শ্রমিক আল-আমিন, বাদশা, সাইফুল ইসলাম, আজিবার, বাবলু, বেলাল, নাটুয়ারপাড়া নৌ-ঘাটের সেলিম, জামাল, হাসেম ও নজরুল ইসলাম জানায়, আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগে প্রায় সারা বছরই নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন শুষ্ক মৌসুর শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই যমুনা নদী বিভিন্ন এলাকায় শুকিয়ে নালায় পরিণত হয়েছে। নৌকা চালানোর মতো কোন জায়গা নেই। তাই নৌকা বিক্রি করে দিয়ে বিভিন্ন পেশায় কাজ করে সংসার পরিচালনা করছি।

কাজিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান সিরাজী জানান, যমুনা নদীর নাব্যতা হ্র্রাস পাওয়ায় কাজিপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের কমপক্ষে এক হাজার নৌ-শ্রমিক এবং জেলে আজ বেকার হয়ে পড়েছে। ওই সব নৌ-শ্রমিক ও এবং জেলেরা বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে দিয়ে অতিকষ্টে জীবনযাপন করছেন। যমুনা নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনলে হয়ত ওই সব শ্রমিক পুনরায় তাদের পেশায় জড়িয়ে পড়তে পারবে। এ জন্য নদী খনন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২০ , ২৬ পৌষ ১৪২৬, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

যমুনা শুকিয়ে নালা : জীবিকা সংকটে মানবেতর জীবনে মাঝি-জেলে

আব্দুল কুদ্দুস, সিরাজগঞ্জ

image

সিরাজগঞ্জ : শুকিয়ে যাওয়ায় যমুনা নদীর পাড়ে নোঙর করে রাখা জেলে নৌকা-সংবাদ

সিরাজগঞ্জে যমুনা নদী এখন শুকিয়ে মাঝে মাঝে চর পড়েছে । আবার কোথাও কোথাও বন্যার উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পলি জমে এখন নালায় পরিণত হয়েছে। ফলে জেলার যমুনা চর এলাকার হাজার হাজার নৌ-শ্রমিক এবং জেলেরা বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন।

জেলার কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালি, শাহজাদপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদী এখন কোন কোন জায়গায় মরা খালে পরিণত হয়েছে। এর বুকজুড়ে জেগে উঠেছে হাজার হাজার একর আবাদি জমি। জমির মালিকরা জেগে ওঠা চরে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করছেন। উৎপাদিত হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফসল। এতে করে কৃষকদের মুখের হাসি ফুটেছে। কিন্তু ভরা নদীতে যেসব নৌ-শ্রমিক নৌকা চালিয়ে এবং জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত সেই নৌ-শ্রমিক ও জেলেরা বেকার হয়ে পড়েছেন। তারা এখন স্ত্রী, পুত্র পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নদীতে পানি না থাকায় নৌ-শ্রমিক এবং জেলেরা তাদের উপকরণ নৌকা এবং জাল বিক্রি করে দিয়ে ভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই পেশায় নিয়োজিত হাজারও শ্রমিকের রোজগার বন্ধ হওয়ায় দাদন ব্যবসায়ী এবং এনজিও’র কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বাড়িতে খোরাকি দিয়ে শহরে পাড়ি জমাচ্ছেন রোজগারের জন্য । শহরে এসে অনেকে রিকশা, ভ্যান, টেম্পু, সিএনজি, বাস-ট্রাক হেলপার, গার্মেন্টেস শ্রমিক, রাজমিস্ত্রির কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। জেলার কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়ার পরিমল, শুভগাছার বিমল ও বিকাশ কুমার, সিরাজগঞ্জ সদরের বেলুটিয়া, পাইকপাড়া, ও ঘোনাপাড়া চরের কুদ্দুস, ওয়াহাব, সেতাবআলী জানান, যমুনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় চর পরায় এখন আর জাল ফেলে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে আমরা এ পেশা ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছি। কাজিপুরের মেঘাই নৌ-ঘাটের নৌ-শ্রমিক আল-আমিন, বাদশা, সাইফুল ইসলাম, আজিবার, বাবলু, বেলাল, নাটুয়ারপাড়া নৌ-ঘাটের সেলিম, জামাল, হাসেম ও নজরুল ইসলাম জানায়, আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগে প্রায় সারা বছরই নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন শুষ্ক মৌসুর শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই যমুনা নদী বিভিন্ন এলাকায় শুকিয়ে নালায় পরিণত হয়েছে। নৌকা চালানোর মতো কোন জায়গা নেই। তাই নৌকা বিক্রি করে দিয়ে বিভিন্ন পেশায় কাজ করে সংসার পরিচালনা করছি।

কাজিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান সিরাজী জানান, যমুনা নদীর নাব্যতা হ্র্রাস পাওয়ায় কাজিপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের কমপক্ষে এক হাজার নৌ-শ্রমিক এবং জেলে আজ বেকার হয়ে পড়েছে। ওই সব নৌ-শ্রমিক ও এবং জেলেরা বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে দিয়ে অতিকষ্টে জীবনযাপন করছেন। যমুনা নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনলে হয়ত ওই সব শ্রমিক পুনরায় তাদের পেশায় জড়িয়ে পড়তে পারবে। এ জন্য নদী খনন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।