আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ বাড়ছে : কমছে খরচ-শ্রম

রংপুর তারাগঞ্জ উপজেলার ফসলের মাঠ এখন রবি ফসল আবাদের ধুম পড়েছে। মাঠে সরিষা, ভুট্টা, গম, সূর্যমুখী ও শাকসবজিতে ভরপুর। সেই সঙ্গে বোরো চাষের জন্য বীজতলা তৈরিতে কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। চলতি রবি মৌসুমে তারাগঞ্জ উপজেলায় ৭ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে বোরোধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি অফিসের নির্দেশনা ও পরামর্শে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে ঘুরে ঘুরে নির্বিঘেœ বোরো ধান চাষে বিভিন্ন প্রযুক্তি যেমন বোরো ধানের উচ্চ ফলনশীল জাতের চাষ, বীজ শোধন, আদর্শ বীজতলা, তীব্র শৈত্যপ্রবাহে বোরো বীজতলার যতœ ইত্যাদি গ্রহণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন। কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বোরো ধান চাষে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমাতে, কর্তনোত্তার অপচয় রোধ, শ্রমিকের কায়িক শ্রম লাঘব, শ্রমিকের অভাব পূরণ ও ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে ফসল উৎপাদনে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার বোরো ধানের সমকালীন চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণের নির্দেশনা দিয়েছে। সমকালীন চাষাবাদ পদ্ধতিতে যন্ত্র ব্যবহার করে একই সময়ে,একই জাতের ফসলের একসাথে চারা রোপন, আন্ত:পরিচর্যা ও কর্তন করা হয়। এ পদ্ধতিতে সঠিক সময়ে অল্প দিনের চারা রোপন করা সম্ভব। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের জন্য ট্রেতে উৎপাদিত চারা রোগ বালাই মুক্ত, সম ঘনত্বের সবল সতেজ চারা উৎপাদিত হয় ও পলিথিন সিট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় ফলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহেও চারা সুস্থ থাকে। এ যন্ত্রের মাধ্যমে ধানের চারা সারিতে রোপণ করা যায় ফলে গাছ পর্যাপ্ত আলো বাতাস পায়, সমভাবে খাদ্য গ্রহণ করে, কুশির সংখ্যা বৃদ্ধি হয় ফলে ধানের ফলন বৃদ্ধি পায় ও বীজতলা ও ধান ক্ষেতে আন্তঃপরিচর্যা(সেচ, নিড়ানী, স্প্রে) করতে সুবিধা হয়। এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করতে কৃষকের যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় ও পরিশ্রম করা হয় সে তুলনায় কৃষক বাজারমূল্য পায় না। যার ফলে কৃষক ধান উৎপাদন করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাধারণত দেখা যায় যে, প্রচলিত পদ্ধতিতে চারা রোপণে ৩০% শ্রম বীজতলার চারা উঠানো ও রোপণ কাজে ব্যয় হয়। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে ঘণ্টায় ৫০-৬০ শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোপণ করা যায় এবং সময় সাশ্রয় হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে এক বিঘা(৩৩ শতক) চারা রোপণে শ্রমিক খরচ বাবদ ২০০০ টাকা খরচ হয়। অপরদিকে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে চারা রোপণ করলে বিঘা প্রতি মাত্র ৩০০ টাকা খরচ হয়। এছাড়া, বোরোধানের সমকালীন চাষাবাদ পদ্ধতিতে কম্বাইন হার্ভেস্টার যন্ত্রের সাহায্যে ধান কর্তন ও মাড়াই-ঝাড়াই ও বস্তাবন্দী করা হয় ফলে ধানের উৎপাদন খরচ কম হয়। কম্বাইন হার্ভেস্টার যন্ত্রের সাহায্যে ধান কর্তন ও মাড়াই করলে এক বিঘা জমির মোট ৪০০ টাকা খরচ হয়। অপরদিকে প্রচলিত পদ্ধতিতে ধান কর্তন ও মাড়াই বাবদ শ্রমিক খরচ হয় স্থানভেদে ২৫০০-৩০০০ টাকা। উপজেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গেছে, বিভাগীয় নির্দেশনা অনুযায়ী বোরোধানের উৎপাদন খরচ কমাতে তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের জগদীশপুর গ্রামে বোরো ধান চাষে চারা রোপণ থেকে শুরু করে ধান কর্তন পর্যন্ত যন্ত্র ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করতে ৪০ জন কৃষকের ২০ একর জমিতে বোরো ধানের সমকালীন চাষাবাদের জন্য কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় নিবিড় তত্ত্বাবধানে ও ৪০ জন কৃষকসহ স্থানীয় জনগণ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গত ১০শে ডিসেম্বর ৫৮*২৮*২.৫ সেমি সাইজের ২১০০টি প্লাস্টিক ট্রেতে ২ সেমি জৈব সার মিশ্রিত মাটি ভরাট করে কাঠ দিয়ে ভালভাবে সমতল করে প্রতিটি ট্রেতে ১২০-১৫০ গ্রাম অঙ্কুরিত বীজ বপনকরে ০.৫ সেমি মাটি দিয়ে বীজ ঢেকে দেয়া হয়।

শৈত্যপ্রবাহের হাত থেকে রক্ষা করতে ঢেকে দেয়া হয়েছে স্বচ্ছ সাদা পলিথিন। বোরো ধানের আধুনিক জাত হিসেবে জিংক সমৃদ্ধ ধান ব্রিধান ৭৪ এর ভিত্তি বীজ ব্যবহার করা হয়েছে। কৃষকরা নিজেরাই নিয়মিত বীজতলার পরিচর্যা করছে। বীজতলার দু’পার্শ্বে পানি নিস্কাশনের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে সেচ। গতকাল ০৮ জানুয়ারি রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে ২০ একর জমিতে ধানের চারা রোপণ করা হয়। তারাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অশোক কুমার রায় বলেন, বোরো ধানের সমকালীন চাষাবাদ প্রযুক্তিটি কৃষকের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেছে এবং প্রযুক্তিটি সম্প্রসারণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। এ প্রযুক্তিতে বোরোধান চাষ করা হলে কৃষকের ধান চাষের উৎপাদন খরচ ও সময় দুই সাশ্রয় হবে এবং ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে কৃষকও লাভবান হবে।

image

তারাগঞ্জ (রংপুর) : তারাগঞ্জে আধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি বোরো বীজতলায় কাজ করছেন কৃষক-সংবাদ

আরও খবর
যমুনা শুকিয়ে নালা : জীবিকা সংকটে মানবেতর জীবনে মাঝি-জেলে
মির্জাপুরে কবর খুঁড়ে ২২টি কঙ্কাল চুরি
ধর্ষণের প্রতিবাদে জেলায় জেলায় সমাবেশ

শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২০ , ২৬ পৌষ ১৪২৬, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ বাড়ছে : কমছে খরচ-শ্রম

প্রতিনিধি, তারাগঞ্জ (রংপুর)

image

তারাগঞ্জ (রংপুর) : তারাগঞ্জে আধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি বোরো বীজতলায় কাজ করছেন কৃষক-সংবাদ

রংপুর তারাগঞ্জ উপজেলার ফসলের মাঠ এখন রবি ফসল আবাদের ধুম পড়েছে। মাঠে সরিষা, ভুট্টা, গম, সূর্যমুখী ও শাকসবজিতে ভরপুর। সেই সঙ্গে বোরো চাষের জন্য বীজতলা তৈরিতে কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। চলতি রবি মৌসুমে তারাগঞ্জ উপজেলায় ৭ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে বোরোধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি অফিসের নির্দেশনা ও পরামর্শে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে ঘুরে ঘুরে নির্বিঘেœ বোরো ধান চাষে বিভিন্ন প্রযুক্তি যেমন বোরো ধানের উচ্চ ফলনশীল জাতের চাষ, বীজ শোধন, আদর্শ বীজতলা, তীব্র শৈত্যপ্রবাহে বোরো বীজতলার যতœ ইত্যাদি গ্রহণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন। কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বোরো ধান চাষে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমাতে, কর্তনোত্তার অপচয় রোধ, শ্রমিকের কায়িক শ্রম লাঘব, শ্রমিকের অভাব পূরণ ও ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে ফসল উৎপাদনে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার বোরো ধানের সমকালীন চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণের নির্দেশনা দিয়েছে। সমকালীন চাষাবাদ পদ্ধতিতে যন্ত্র ব্যবহার করে একই সময়ে,একই জাতের ফসলের একসাথে চারা রোপন, আন্ত:পরিচর্যা ও কর্তন করা হয়। এ পদ্ধতিতে সঠিক সময়ে অল্প দিনের চারা রোপন করা সম্ভব। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের জন্য ট্রেতে উৎপাদিত চারা রোগ বালাই মুক্ত, সম ঘনত্বের সবল সতেজ চারা উৎপাদিত হয় ও পলিথিন সিট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় ফলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহেও চারা সুস্থ থাকে। এ যন্ত্রের মাধ্যমে ধানের চারা সারিতে রোপণ করা যায় ফলে গাছ পর্যাপ্ত আলো বাতাস পায়, সমভাবে খাদ্য গ্রহণ করে, কুশির সংখ্যা বৃদ্ধি হয় ফলে ধানের ফলন বৃদ্ধি পায় ও বীজতলা ও ধান ক্ষেতে আন্তঃপরিচর্যা(সেচ, নিড়ানী, স্প্রে) করতে সুবিধা হয়। এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করতে কৃষকের যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় ও পরিশ্রম করা হয় সে তুলনায় কৃষক বাজারমূল্য পায় না। যার ফলে কৃষক ধান উৎপাদন করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাধারণত দেখা যায় যে, প্রচলিত পদ্ধতিতে চারা রোপণে ৩০% শ্রম বীজতলার চারা উঠানো ও রোপণ কাজে ব্যয় হয়। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে ঘণ্টায় ৫০-৬০ শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোপণ করা যায় এবং সময় সাশ্রয় হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে এক বিঘা(৩৩ শতক) চারা রোপণে শ্রমিক খরচ বাবদ ২০০০ টাকা খরচ হয়। অপরদিকে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে চারা রোপণ করলে বিঘা প্রতি মাত্র ৩০০ টাকা খরচ হয়। এছাড়া, বোরোধানের সমকালীন চাষাবাদ পদ্ধতিতে কম্বাইন হার্ভেস্টার যন্ত্রের সাহায্যে ধান কর্তন ও মাড়াই-ঝাড়াই ও বস্তাবন্দী করা হয় ফলে ধানের উৎপাদন খরচ কম হয়। কম্বাইন হার্ভেস্টার যন্ত্রের সাহায্যে ধান কর্তন ও মাড়াই করলে এক বিঘা জমির মোট ৪০০ টাকা খরচ হয়। অপরদিকে প্রচলিত পদ্ধতিতে ধান কর্তন ও মাড়াই বাবদ শ্রমিক খরচ হয় স্থানভেদে ২৫০০-৩০০০ টাকা। উপজেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গেছে, বিভাগীয় নির্দেশনা অনুযায়ী বোরোধানের উৎপাদন খরচ কমাতে তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের জগদীশপুর গ্রামে বোরো ধান চাষে চারা রোপণ থেকে শুরু করে ধান কর্তন পর্যন্ত যন্ত্র ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করতে ৪০ জন কৃষকের ২০ একর জমিতে বোরো ধানের সমকালীন চাষাবাদের জন্য কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় নিবিড় তত্ত্বাবধানে ও ৪০ জন কৃষকসহ স্থানীয় জনগণ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গত ১০শে ডিসেম্বর ৫৮*২৮*২.৫ সেমি সাইজের ২১০০টি প্লাস্টিক ট্রেতে ২ সেমি জৈব সার মিশ্রিত মাটি ভরাট করে কাঠ দিয়ে ভালভাবে সমতল করে প্রতিটি ট্রেতে ১২০-১৫০ গ্রাম অঙ্কুরিত বীজ বপনকরে ০.৫ সেমি মাটি দিয়ে বীজ ঢেকে দেয়া হয়।

শৈত্যপ্রবাহের হাত থেকে রক্ষা করতে ঢেকে দেয়া হয়েছে স্বচ্ছ সাদা পলিথিন। বোরো ধানের আধুনিক জাত হিসেবে জিংক সমৃদ্ধ ধান ব্রিধান ৭৪ এর ভিত্তি বীজ ব্যবহার করা হয়েছে। কৃষকরা নিজেরাই নিয়মিত বীজতলার পরিচর্যা করছে। বীজতলার দু’পার্শ্বে পানি নিস্কাশনের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে সেচ। গতকাল ০৮ জানুয়ারি রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে ২০ একর জমিতে ধানের চারা রোপণ করা হয়। তারাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অশোক কুমার রায় বলেন, বোরো ধানের সমকালীন চাষাবাদ প্রযুক্তিটি কৃষকের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেছে এবং প্রযুক্তিটি সম্প্রসারণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। এ প্রযুক্তিতে বোরোধান চাষ করা হলে কৃষকের ধান চাষের উৎপাদন খরচ ও সময় দুই সাশ্রয় হবে এবং ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে কৃষকও লাভবান হবে।