১০ জানুয়ারি মহান স্বাধীনতার পূর্ণতা প্রাপ্তির দিন

ডা. এসএ মালেক

যে মহান নেতা ২৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রাম এবং ৯ মাসের স্বশস্ত্র যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করলেন; দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাকে ২২ দিন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি অবস্থায় থাকতে হয়। ২৫ মার্চের কালরাতে হানাদার বাহিনী কর্তৃক নিজ গৃহে আক্রান্ত হওয়ার পর পরই ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেই তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সঙ্গে সঙ্গে হানাদার বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে বন্দি রাখে। যুদ্ধকালীন ৯ মাসেই তিনি পাকিস্তানের করারগারে বন্দি ছিলেন। তারই নামে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল। দেশদ্রোহিতার কারণে পাকিস্তান সরকার তাকে বিচার করে ফাঁসির আদেশ প্রদান করে। জেলখানার পাশেই তার কবর খুঁড়ে রাখা হয়। কিন্তু হানাদার বাহিনী ফাঁসির রায় কার্যকর করার সাহস পায়নি। যতোই দিন যাচ্ছিল ততই হানাদার বাহিনী ক্রমাগত পরাজয় বরণ করছিল। যুদ্ধের শেষ প্রান্তে এসে তাদের পরাজয় যখন সুনিশ্চিত, তখন তারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করলেও বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির রায় কার্যকর করার সাহস পায়নি। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী ও স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের আন্দোলনের কারণে তারা বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির রায় কার্যকর করতে সক্ষম হয়নি। এ কারণেই বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীন দেশে ফিরে আসা সম্ভব হয়েছিল। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৫৮’র সামরিক আইন জারি, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৪’র মৌলিক গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ৬৬’র ঐতিহাসিক ৬ দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান এবং ৭০’র সাধারণ নির্বাচন এ সব আন্দোলনে পুরোভাগেই ছিলেন তিনি। বিশেষ করে ৬৫ দফা ভিত্তিক আন্দোলন ও ৭০’র নির্বাচন তাকে পূর্ব বাংলার একমাত্র নেতা হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। তারই নামে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সম্মুখ সমরে শত্রুর ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। তাই সশস্ত্র সংগ্রামের পর ১৬ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হলো কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের প্রাণপুরুষ জাতির পিতা পাকিস্তানের কারাগারে আবদ্ধ রইলেন। তখন ওই মহান বিজয়ের পরেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা জনগণের কাছে পরিপূর্ণতা লাভ করেনি। বাংলার জনগণও বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানের কারাগার থেকে তার মুক্তির দাবি জানায়। এমনকি মুক্তি না দিলে পাকিস্তান সীমান্তে গিয়ে যুদ্ধ করে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। যার কারণে বাংলাদেশ স্বাধীন হলো অথচ মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শত্রুর কাছে আবদ্ধ হলেন।

এ অবস্থা স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণ মেনে নিতে পারেননি। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী তিনি ৮ জানুয়ারি ১৯৭২ মুক্তি পেয়ে ১০ জানুয়ারি সদ্য স্বাধীন দেশে বীরের বেশে ফিরে এসে জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। সেদিন তার ভাষণ ছিল প্রতিটি বাঙালির জন্য হৃদয়স্পর্শী ও দিক নির্দেশনামূলক। কেউ কি কখনও চিন্তা করেছিল তারা বঙ্গবন্ধুকে কখনও ফিরে পাবে। পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ জানিয়েছিরেন এ বলে যে কোনভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সংযোগ করার। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ভুট্টোকে আস্সালামু আলাইকুম বলে দিয়ে জানিয়ে দিলেন পাকিস্তানিরা তাদের মতোই থাকুক। আর স্বাধীন বাংলাদেশ নিজস্ব পথেই অগ্রসর হবে। আপসের কোন সুযোগ নেই। তাই ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশ স্বাধীনতার পূর্ণতা প্রাপ্তির দিন। স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় ২২ দিন বাংলার মানুষ আবেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন অতিবাহিত করছিল, তার অবসান ঘটে। ফিরে আসলেন এমন এক বাংলায় যা সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত, খাদ্য নেই, বাসস্থান নেই, জমিতে ফসল নেই, গোলায় ধান নেই, পুকুরে মাছ নেই, হালের বলদ নেই, হাটবাজার পুড়ে ছাড়খার, পাটগুদাম ভষ্মীভূত, ব্র্রিজ, কালভার্ট, ভগ্নপ্রাপ্ত, যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিপর্যস্থ, এমনকি এলসি খোলার মতো বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকে ছিল না। ১ কেটি শরণার্থী দেশে ফেরত এসেছে। অভ্যন্তরীণভাবে দেড় কোটি মানুষ বাস্তচ্যুত। সে এক ভয়াবহ অবস্থা। মাত্র তিন বছরে এ মহান নেতার দূরদর্শিতায় প্রায় সবকিছু ঠিক হয়ে গেল। উৎপাদনে ফিরে আসলো কলকার খানায়। স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মসজিদ, মন্দির সব আবার চালু হলো। স্বীকৃতি পেল স্বাধীন দেশ হিসেবে বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশ। মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেল ইসলামী উম্মাহর কাছে। পাকিস্তানের একটা প্রদেশ পূর্ব বাংলা তিনি একটা স্বাধীন দেশের অবকাঠামো তৈরি করলেন। তথাকথিত পূর্ব বাংলার রাজধানী সতিকার অর্থে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানীতে রূপান্তর হলো। বঙ্গবন্ধু বললেন, বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবেন। শুরু হলো মহাকর্মজজ্ঞ। কোন জায়গা ফাঁকা নেই। শুরু হলো উৎপাদন। বর্তমান সংসদ ভবনের মাঠেও প্রায় ১২ শত মণ ইরি ধান উৎপাদন হলো। আজকে রমনা লেকের পাশে যে বড় বড় গাছ দেখা যায় সবই বঙ্গবন্ধু লাগিয়েছেন। ভয়াবহ এক শূন্যতাকে পূরণ করে যেভাবে এক সুদূরপ্রসারী অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিলেন, তা বিশ্বের অন্য কোন যুদ্ধাহত দেশ করেছে কি না সন্দেহ। বঙ্গবন্ধু বললেন ৩ বছর কেউ যেন আমার কাছে কিছু না চায়। তাই তো ৩ বছরের মাথায় তিনি জনগণের প্রাপ্য দিতে শুরু করেন। বিশেষ করে তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের ঘোষণার মাধ্যমে শোষিত বঞ্চিত মানুষের চিরদিনের জন্য শোষণ মুক্ত করার। তিনি চেয়েছিলেন উপনেবেশিক শাসনের অবসান। বাংলার মানুষ পেট ভরে খেতে পাক, দারিদ্রের অবসান ঘটুক। একটা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে উঠুক, এটাই ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন।

ঠিক যখন তিনি এ কর্মসূচির ঘোষণা দিলেন, তখন স্বাধীনতার শত্রুরা নির্মমভাবে তাকেসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যা করল। এদেশের পুনর্গঠনে যখন তার প্রয়োজন ছিল, সবচেয়ে বেশি তখন প্রতিবিপ্লবের মাধ্যমে তাকে ও তার সরকারকে অপসারণ করা হলো। সেই থেকে চলছে বাংলাদেশ বিপরীত ধারা। মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ অতল গর্ভে তলিয়ে দেওয়া হলে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হয়ে দেশে ফিরে এসে পিতার আদর্শকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে আন্দোলন ও সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন। ১৯৯৬ সালে সাধারণ নির্বাচনে জনগণের আস্থা ও ভালোবাসায় নির্বাচনে জয়ী হয়ে দেশ শাসনের সুযোগ পান।

৭ বছর আবার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বাইরে রাখা হয়। ২০০৮ সালে সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো দেশ শাসন করার সুযোগ পেয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তার মহান পিতার প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ণতা লাভ করে। আর জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে আমাদের সেই স্বাধীনতা ক্রমাগত সুসংহত হচ্ছে। সার্বভৌমত্ব সুনিশ্চিত হচ্ছে। আমরা মধ্যবিত্ত আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি।

২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হবো। পিতা ও কন্যার প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে সাদৃশ্য রয়েছে। একজনের প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে দেশের ভিত্তিপ্রস্তর শক্তিশালী হয়েছে আর অপর জনের মাধ্যমে দেশ এক উন্নত দেশে পরিণত হচ্ছে।

শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২০ , ২৬ পৌষ ১৪২৬, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

১০ জানুয়ারি মহান স্বাধীনতার পূর্ণতা প্রাপ্তির দিন

ডা. এসএ মালেক

যে মহান নেতা ২৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রাম এবং ৯ মাসের স্বশস্ত্র যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করলেন; দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাকে ২২ দিন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি অবস্থায় থাকতে হয়। ২৫ মার্চের কালরাতে হানাদার বাহিনী কর্তৃক নিজ গৃহে আক্রান্ত হওয়ার পর পরই ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেই তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সঙ্গে সঙ্গে হানাদার বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে বন্দি রাখে। যুদ্ধকালীন ৯ মাসেই তিনি পাকিস্তানের করারগারে বন্দি ছিলেন। তারই নামে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল। দেশদ্রোহিতার কারণে পাকিস্তান সরকার তাকে বিচার করে ফাঁসির আদেশ প্রদান করে। জেলখানার পাশেই তার কবর খুঁড়ে রাখা হয়। কিন্তু হানাদার বাহিনী ফাঁসির রায় কার্যকর করার সাহস পায়নি। যতোই দিন যাচ্ছিল ততই হানাদার বাহিনী ক্রমাগত পরাজয় বরণ করছিল। যুদ্ধের শেষ প্রান্তে এসে তাদের পরাজয় যখন সুনিশ্চিত, তখন তারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করলেও বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির রায় কার্যকর করার সাহস পায়নি। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী ও স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের আন্দোলনের কারণে তারা বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির রায় কার্যকর করতে সক্ষম হয়নি। এ কারণেই বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীন দেশে ফিরে আসা সম্ভব হয়েছিল। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৫৮’র সামরিক আইন জারি, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৪’র মৌলিক গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ৬৬’র ঐতিহাসিক ৬ দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান এবং ৭০’র সাধারণ নির্বাচন এ সব আন্দোলনে পুরোভাগেই ছিলেন তিনি। বিশেষ করে ৬৫ দফা ভিত্তিক আন্দোলন ও ৭০’র নির্বাচন তাকে পূর্ব বাংলার একমাত্র নেতা হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। তারই নামে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সম্মুখ সমরে শত্রুর ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। তাই সশস্ত্র সংগ্রামের পর ১৬ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হলো কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের প্রাণপুরুষ জাতির পিতা পাকিস্তানের কারাগারে আবদ্ধ রইলেন। তখন ওই মহান বিজয়ের পরেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা জনগণের কাছে পরিপূর্ণতা লাভ করেনি। বাংলার জনগণও বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানের কারাগার থেকে তার মুক্তির দাবি জানায়। এমনকি মুক্তি না দিলে পাকিস্তান সীমান্তে গিয়ে যুদ্ধ করে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। যার কারণে বাংলাদেশ স্বাধীন হলো অথচ মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শত্রুর কাছে আবদ্ধ হলেন।

এ অবস্থা স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণ মেনে নিতে পারেননি। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী তিনি ৮ জানুয়ারি ১৯৭২ মুক্তি পেয়ে ১০ জানুয়ারি সদ্য স্বাধীন দেশে বীরের বেশে ফিরে এসে জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। সেদিন তার ভাষণ ছিল প্রতিটি বাঙালির জন্য হৃদয়স্পর্শী ও দিক নির্দেশনামূলক। কেউ কি কখনও চিন্তা করেছিল তারা বঙ্গবন্ধুকে কখনও ফিরে পাবে। পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ জানিয়েছিরেন এ বলে যে কোনভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সংযোগ করার। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ভুট্টোকে আস্সালামু আলাইকুম বলে দিয়ে জানিয়ে দিলেন পাকিস্তানিরা তাদের মতোই থাকুক। আর স্বাধীন বাংলাদেশ নিজস্ব পথেই অগ্রসর হবে। আপসের কোন সুযোগ নেই। তাই ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশ স্বাধীনতার পূর্ণতা প্রাপ্তির দিন। স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় ২২ দিন বাংলার মানুষ আবেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন অতিবাহিত করছিল, তার অবসান ঘটে। ফিরে আসলেন এমন এক বাংলায় যা সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত, খাদ্য নেই, বাসস্থান নেই, জমিতে ফসল নেই, গোলায় ধান নেই, পুকুরে মাছ নেই, হালের বলদ নেই, হাটবাজার পুড়ে ছাড়খার, পাটগুদাম ভষ্মীভূত, ব্র্রিজ, কালভার্ট, ভগ্নপ্রাপ্ত, যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিপর্যস্থ, এমনকি এলসি খোলার মতো বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকে ছিল না। ১ কেটি শরণার্থী দেশে ফেরত এসেছে। অভ্যন্তরীণভাবে দেড় কোটি মানুষ বাস্তচ্যুত। সে এক ভয়াবহ অবস্থা। মাত্র তিন বছরে এ মহান নেতার দূরদর্শিতায় প্রায় সবকিছু ঠিক হয়ে গেল। উৎপাদনে ফিরে আসলো কলকার খানায়। স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মসজিদ, মন্দির সব আবার চালু হলো। স্বীকৃতি পেল স্বাধীন দেশ হিসেবে বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশ। মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেল ইসলামী উম্মাহর কাছে। পাকিস্তানের একটা প্রদেশ পূর্ব বাংলা তিনি একটা স্বাধীন দেশের অবকাঠামো তৈরি করলেন। তথাকথিত পূর্ব বাংলার রাজধানী সতিকার অর্থে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানীতে রূপান্তর হলো। বঙ্গবন্ধু বললেন, বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবেন। শুরু হলো মহাকর্মজজ্ঞ। কোন জায়গা ফাঁকা নেই। শুরু হলো উৎপাদন। বর্তমান সংসদ ভবনের মাঠেও প্রায় ১২ শত মণ ইরি ধান উৎপাদন হলো। আজকে রমনা লেকের পাশে যে বড় বড় গাছ দেখা যায় সবই বঙ্গবন্ধু লাগিয়েছেন। ভয়াবহ এক শূন্যতাকে পূরণ করে যেভাবে এক সুদূরপ্রসারী অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিলেন, তা বিশ্বের অন্য কোন যুদ্ধাহত দেশ করেছে কি না সন্দেহ। বঙ্গবন্ধু বললেন ৩ বছর কেউ যেন আমার কাছে কিছু না চায়। তাই তো ৩ বছরের মাথায় তিনি জনগণের প্রাপ্য দিতে শুরু করেন। বিশেষ করে তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের ঘোষণার মাধ্যমে শোষিত বঞ্চিত মানুষের চিরদিনের জন্য শোষণ মুক্ত করার। তিনি চেয়েছিলেন উপনেবেশিক শাসনের অবসান। বাংলার মানুষ পেট ভরে খেতে পাক, দারিদ্রের অবসান ঘটুক। একটা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে উঠুক, এটাই ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন।

ঠিক যখন তিনি এ কর্মসূচির ঘোষণা দিলেন, তখন স্বাধীনতার শত্রুরা নির্মমভাবে তাকেসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যা করল। এদেশের পুনর্গঠনে যখন তার প্রয়োজন ছিল, সবচেয়ে বেশি তখন প্রতিবিপ্লবের মাধ্যমে তাকে ও তার সরকারকে অপসারণ করা হলো। সেই থেকে চলছে বাংলাদেশ বিপরীত ধারা। মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ অতল গর্ভে তলিয়ে দেওয়া হলে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হয়ে দেশে ফিরে এসে পিতার আদর্শকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে আন্দোলন ও সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন। ১৯৯৬ সালে সাধারণ নির্বাচনে জনগণের আস্থা ও ভালোবাসায় নির্বাচনে জয়ী হয়ে দেশ শাসনের সুযোগ পান।

৭ বছর আবার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বাইরে রাখা হয়। ২০০৮ সালে সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো দেশ শাসন করার সুযোগ পেয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তার মহান পিতার প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ণতা লাভ করে। আর জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে আমাদের সেই স্বাধীনতা ক্রমাগত সুসংহত হচ্ছে। সার্বভৌমত্ব সুনিশ্চিত হচ্ছে। আমরা মধ্যবিত্ত আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি।

২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হবো। পিতা ও কন্যার প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে সাদৃশ্য রয়েছে। একজনের প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে দেশের ভিত্তিপ্রস্তর শক্তিশালী হয়েছে আর অপর জনের মাধ্যমে দেশ এক উন্নত দেশে পরিণত হচ্ছে।