কাজের চেয়ে প্রকল্প বাড়ানোর দিকে ঝোঁক কর্মকর্তাদের!

গতবারের চেয়ে দুই শতাধিক পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) বাড়িয়েও এখন পর্যন্ত হাওররক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করা যায়নি। গত সোমবার পর্যন্ত গৃহিত প্রকল্পে কাজ শুরু বাকি রয়ে গেছে। কাজে পিছিয়ে থেকে আরও শতাধিক প্রকল্প বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। প্রকল্প বেশি বাড়ানোয় সরকারি বরাদ্দ নয়ছয়ের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন সুধীজন। উপজেলা থেকে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে আছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারি প্রকৌশলী। হাওর সম্পর্কে ধারণা নেই এমন বেসরকারি একটি জরিপ ফার্ম বাঁধের প্রিওয়ার্ক করেছে। বর্তমান প্রকল্পে ১৫ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরুর কথা থাকলেও এখনো দুই তৃতীয়াংশ প্রকল্পে হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করা যায়নি। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বাঁধের কাজ শেষ করার কথা।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ৫৭২টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। এবার পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে ৬৭ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা প্রাথমিক বরাদ্দ দিয়েছে। এ পর্যন্ত ৭৭৮ টি প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, হাওরে প্রায় দেড় হাজার কি.মি. বেরিবাধ রয়েছে। এর মধ্যে প্রতি বছর ৭০০-৮০০ কি.মি. বাধ নির্মাণ, সংস্কার ও মেরামত করা হয়। ল্যা- সার্ভে ফার্ম নামের বেসরকারি জরিপ কোম্পানি এবার প্রাক্ষলণ করেছে ৯০ কোটি টাকারও বেশি। অনেক জায়গায় ফসলরক্ষা বাঁধ অক্ষত থাকার পরও অতিরিক্ত প্রাক্তলণের মাধ্যমে অধিক প্রকল্প গ্রহণে সরকারি বরাদ্দ লোপাটের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন হাওর আন্দোলনের নেতারা।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, সোমবার পর্যন্ত জেলায় ৭৭৮ টি পিআইসি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে ৩৪৩টি প্রকল্পে। আরও প্রায় ১০০টি পিআইসি বাড়ানোর তোরজোড় শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। কৃষকদের অভিযোগ কাজের চেয়ে এবার সংশ্লিষ্টদের প্রকল্প বাড়ানোর দিকেই নজর বেশি। যার ফলে কাজে বিলম্ব হচ্ছে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরুর কথা থাকলেও এখনও দুই তৃতিয়াংশ প্রকল্পে হাররক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করা যায়নি। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বাঁধের কাজ শেষ করার কথা।

অন্যদিকে হাওরের ফসলরক্ষা বাধ অক্ষত থাকার পরও অধিক প্রকল্প গ্রহণ করায় দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। হাওর আন্দোলনের নেতারা অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী স্থানীয় একটি সুবিদাবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে মিশে প্রকল্প বাড়িয়ে দিচ্ছেন। প্রকল্প বাড়ানোর দিকে দৃষ্টি থাকায় কাজে বিলম্ব হচ্ছে এমন অভিযোগ আছে। কৃষকদের পক্ষের একাধিক সংগঠন ইতোমধ্যে অধিক প্রাক্ষলণ গ্রহণ ও অনুমোদনে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে কর্মসূচি পালন করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলির দাবিতে স্মারকলিািপও প্রদান করা হয়েছে। গত সপ্তাহে দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব মুহম্মদ দিলোয়ার বখত সচ্ছতার জন্য হাওরের সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবপোর্টালে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও প্রকল্পগুলো পোর্টালে দেয়া হয়নি। এটা নিয়েও লুকোচুরি চলছে।

হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের কমিটির সভাপতি প্রফেসর চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, এ বছর কাজের চেয়ে প্রকল্প বাড়ানোর দিকেই নজর বেশি। তাই গত বছরের চেয়ে এ পর্যন্ত দুই শতাধিক প্রকল্প বাড়ানো হয়েছে। গৃহিত প্রকল্পের অর্ধেক প্রকল্পেও কাজ শুরু করা যায়নি। তিনি বলেন, গত বছর বড় কোন দুর্যোগ হয়নি। তাই বাধগুলো বেশিরভাগই অক্ষত রয়েছে। কিন্ত এ বছর কোন যুক্তিতে প্রকল্প বাড়ানো হলো এটা বড় প্রশ্ন। দুর্নীতির জন্যই এটা করা হয়েছে।

কৃষক নেতা কমরেড অমরচান দাস বলেন, হাওররক্ষা বাধে বরাবরই দুর্নীতির বড় সুযোগ থাকে। প্রাক্ষলন ও বাস্তবায়নে বড় অনিয়ম হয়। এবছর কোন কারণ ছাড়াই প্রকল্প ও বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে মূলত দুর্নীতির জন্যই। তাছাড়া নীতিমালা অনুসারে এমপিদের বাঁধের কাজে নিষ্কীয় করা হলেও তাদের লোকজনই প্রকল্পে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, পানি বিলম্বে নামার কারণে প্রিওয়ার্ক করতে সমস্যা হয়েছে। এ কারণে কাজেও বিলম্ব হচ্ছে। গতবারের চেয়ে এবার প্রকল্প বেশি গ্রহণ করা হয়েছে এবং আরও ৬০-৭০টি প্রকল্প বাড়ানো হবে। তবে প্রাক্কলণে কোন অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ নেই বলে জানান তিনি। কারণ প্রতিটি প্রকল্পের পেছনে ট্রাস্কফোর্স করছে বলে জানান তিনি।

আরও খবর
অর্থাভাবে বন্ধ হতে পারে বিলের পানি নিষ্কাশন
ইউপি চেয়ারম্যানের মামলায় আরেক চেয়ারম্যান জেলে
নোয়াখালীতে কারেন্ট জাল ধ্বংস অর্থদণ্ড
কসবায় নিখোঁজ যুবকের মরদেহ উদ্ধার
চট্টগ্রামে ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার ১
পাবনায় হোসিয়ারী শ্রমিককে হত্যা
মির্জাপুরে ১১ জুয়ারি গ্রেফতার
নোয়াখালীতে অস্ত্রসহ ২ জলদস্যু আটক
প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে সর. জলাশয় থেকে মাছ লুট
মিছিল মিটিংয়ে সরগরম দুপচাঁচিয়ার জনপদ
শেরপুরে নিখোঁজ যুবকের দেহ উদ্ধার স্ত্রী আটক
কলাপাড়ায় প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের ভ্যাকসিনে মারা গেছে খামারির ৬শ’ হাঁস
দোহার সড়কে স্কুল ছাত্র হত
মরদেহের খোঁজে পুকুরে পানি সেচ দিচ্ছে পুলিশ
লক্ষ্মীপুরে এক বছরে ৪১ ধর্ষণ!

শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২০ , ২৭ পৌষ ১৪২৬, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

সুনামগঞ্জে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ

কাজের চেয়ে প্রকল্প বাড়ানোর দিকে ঝোঁক কর্মকর্তাদের!

লতিফুর রহমান রাজু, সুনামগঞ্জ

গতবারের চেয়ে দুই শতাধিক পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) বাড়িয়েও এখন পর্যন্ত হাওররক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করা যায়নি। গত সোমবার পর্যন্ত গৃহিত প্রকল্পে কাজ শুরু বাকি রয়ে গেছে। কাজে পিছিয়ে থেকে আরও শতাধিক প্রকল্প বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। প্রকল্প বেশি বাড়ানোয় সরকারি বরাদ্দ নয়ছয়ের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন সুধীজন। উপজেলা থেকে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে আছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারি প্রকৌশলী। হাওর সম্পর্কে ধারণা নেই এমন বেসরকারি একটি জরিপ ফার্ম বাঁধের প্রিওয়ার্ক করেছে। বর্তমান প্রকল্পে ১৫ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরুর কথা থাকলেও এখনো দুই তৃতীয়াংশ প্রকল্পে হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করা যায়নি। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বাঁধের কাজ শেষ করার কথা।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ৫৭২টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। এবার পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে ৬৭ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা প্রাথমিক বরাদ্দ দিয়েছে। এ পর্যন্ত ৭৭৮ টি প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, হাওরে প্রায় দেড় হাজার কি.মি. বেরিবাধ রয়েছে। এর মধ্যে প্রতি বছর ৭০০-৮০০ কি.মি. বাধ নির্মাণ, সংস্কার ও মেরামত করা হয়। ল্যা- সার্ভে ফার্ম নামের বেসরকারি জরিপ কোম্পানি এবার প্রাক্ষলণ করেছে ৯০ কোটি টাকারও বেশি। অনেক জায়গায় ফসলরক্ষা বাঁধ অক্ষত থাকার পরও অতিরিক্ত প্রাক্তলণের মাধ্যমে অধিক প্রকল্প গ্রহণে সরকারি বরাদ্দ লোপাটের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন হাওর আন্দোলনের নেতারা।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, সোমবার পর্যন্ত জেলায় ৭৭৮ টি পিআইসি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে ৩৪৩টি প্রকল্পে। আরও প্রায় ১০০টি পিআইসি বাড়ানোর তোরজোড় শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। কৃষকদের অভিযোগ কাজের চেয়ে এবার সংশ্লিষ্টদের প্রকল্প বাড়ানোর দিকেই নজর বেশি। যার ফলে কাজে বিলম্ব হচ্ছে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরুর কথা থাকলেও এখনও দুই তৃতিয়াংশ প্রকল্পে হাররক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করা যায়নি। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বাঁধের কাজ শেষ করার কথা।

অন্যদিকে হাওরের ফসলরক্ষা বাধ অক্ষত থাকার পরও অধিক প্রকল্প গ্রহণ করায় দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। হাওর আন্দোলনের নেতারা অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী স্থানীয় একটি সুবিদাবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে মিশে প্রকল্প বাড়িয়ে দিচ্ছেন। প্রকল্প বাড়ানোর দিকে দৃষ্টি থাকায় কাজে বিলম্ব হচ্ছে এমন অভিযোগ আছে। কৃষকদের পক্ষের একাধিক সংগঠন ইতোমধ্যে অধিক প্রাক্ষলণ গ্রহণ ও অনুমোদনে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে কর্মসূচি পালন করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলির দাবিতে স্মারকলিািপও প্রদান করা হয়েছে। গত সপ্তাহে দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব মুহম্মদ দিলোয়ার বখত সচ্ছতার জন্য হাওরের সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবপোর্টালে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও প্রকল্পগুলো পোর্টালে দেয়া হয়নি। এটা নিয়েও লুকোচুরি চলছে।

হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের কমিটির সভাপতি প্রফেসর চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, এ বছর কাজের চেয়ে প্রকল্প বাড়ানোর দিকেই নজর বেশি। তাই গত বছরের চেয়ে এ পর্যন্ত দুই শতাধিক প্রকল্প বাড়ানো হয়েছে। গৃহিত প্রকল্পের অর্ধেক প্রকল্পেও কাজ শুরু করা যায়নি। তিনি বলেন, গত বছর বড় কোন দুর্যোগ হয়নি। তাই বাধগুলো বেশিরভাগই অক্ষত রয়েছে। কিন্ত এ বছর কোন যুক্তিতে প্রকল্প বাড়ানো হলো এটা বড় প্রশ্ন। দুর্নীতির জন্যই এটা করা হয়েছে।

কৃষক নেতা কমরেড অমরচান দাস বলেন, হাওররক্ষা বাধে বরাবরই দুর্নীতির বড় সুযোগ থাকে। প্রাক্ষলন ও বাস্তবায়নে বড় অনিয়ম হয়। এবছর কোন কারণ ছাড়াই প্রকল্প ও বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে মূলত দুর্নীতির জন্যই। তাছাড়া নীতিমালা অনুসারে এমপিদের বাঁধের কাজে নিষ্কীয় করা হলেও তাদের লোকজনই প্রকল্পে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, পানি বিলম্বে নামার কারণে প্রিওয়ার্ক করতে সমস্যা হয়েছে। এ কারণে কাজেও বিলম্ব হচ্ছে। গতবারের চেয়ে এবার প্রকল্প বেশি গ্রহণ করা হয়েছে এবং আরও ৬০-৭০টি প্রকল্প বাড়ানো হবে। তবে প্রাক্কলণে কোন অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ নেই বলে জানান তিনি। কারণ প্রতিটি প্রকল্পের পেছনে ট্রাস্কফোর্স করছে বলে জানান তিনি।