শুরু হলো ক্ষণগণনা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা (কাউন্টডাউন) শুরু হয়েছে। গতকাল বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে জমকালো অনুষ্ঠানে ক্ষণগণনা উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে মুজিববর্ষের লোগো উন্মোচন করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর অপর কন্যা শেখ রেহান এবং বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এ সময় উপস্থিত ছিলেন। জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও সদস্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর হাতে মুজিববর্ষের লোগো তুলে দেন।

তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে ৪৮ বছর আগে জাতির জনকের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঘটনাপ্রবাহের প্রতীকী মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে গতকাল বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়েসহ তাদের পরিবারের সদস্য, মন্ত্রিসভার সদস্য, দুই হাজারের বেশি আমন্ত্রিত অতিথি এবং দশ হাজারের বেশি নিবন্ধিত দর্শক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

মূল অনুষ্ঠানের শুরুতে পুরাতন বিমানবন্দরে অবতরণ করে সি-১৩০জে মডেলের একটি উড়োজাহাজ। পাকিস্তানের কারগার থেকে মুক্তি পাওয়ার দুই দিন পর লন্ডন হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বিকেলে ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ারফোর্সের এ রকম একটি উড়োজাহাজে করেই তেজগাঁওয়ের বিমানবন্দরে পৌঁছান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিমানটি ধীরে ধীরে অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে এসে থামে। এ সময় বাজানো হয় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠের সেই গান- ‘বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে তোমার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায়’। মঞ্চের কাছে আসার পর বিমানটির দরজা খোলা হলে ২১ বার তোপধ্বনি দেয়া হয়। পাতাকা হাতে ১৫০ জন তখন সেখানে লাল গালিচার পাশে বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। তাদের জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান আর লেজার লাইটের মাধ্যমে বিমানের দরজার ফুটিয়ে তোলা হয় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। পুষ্পবৃষ্টির মধ্যে সেই আলোকবর্তিকা ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসে লাল গালিচার মাথায় ছোট্ট মঞ্চে এসে থেমে যাবে। এরপর গার্ড অব অনার দেয় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল।

বঙ্গবন্ধু যে আলোকবর্তিকা হয়ে সেদিন দেশে ফিরেছিলেন, তারই প্রতীকী উপস্থাপনা ছিল এ আয়োজন। বঙ্গবন্ধুর প্রতীকী অবতরণ দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ব্যতিক্রমী এই আয়োজন দেখে তাদের দু’জনের মধ্যে আবেগঘন মুহূর্তের সৃষ্টি হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দেয়ার পর মুজিববর্ষের লোগো উন্মোচন ও ক্ষণগণনার উদ্বোধন করেন ল্যাটপটের বোতাম চেপে। দেশের ১২ সিটি করপোরেশনে ২৮টি স্পটে, ৫৩ জেলায় ও দুটি উপজেলা মিলিয়ে মোট ৮৩টি জায়গায় বসানো কাউন্টডাউন ক্লকও সঙ্গে সঙ্গে চালু হয়ে যায়। এই ক্ষণগণনা শেষে আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে সূচনা হবে মুজিববর্ষের বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের; বছরজুড়ে চলবে সেই আয়োজন। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও নানা আয়োজন থাকবে।

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এবং দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এবং বিকল্প ধারার সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীও ছিলেন।

আমন্ত্রিত অতিথি ও নিবন্ধিতদের জন্য দুপুরের পর থেকেই উন্মুক্ত করে দেয়া হয় অনুষ্ঠানস্থলের নির্ধারিত প্রবেশ পথগুলো। সবাইকে নিরাপত্তা তল্লাশির মধ্য দিয়ে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। মন্ত্রিসভার সদস্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ দুপুর ২টা থেকেই অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে শুরু করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অনুষ্ঠানস্থলে এসে মঞ্চে বসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাক-হানাদার বাহিনী বর্বর-পৈশাচিক গণহত্যায় মেতে লাখো বাঙালির রক্তের ওপর দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী করে। প্রায় সাড়ে ৯ মাস বন্দী থাকার পর করাচির কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে দেশে ফেরেন জাতির পিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন বিকেলে তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ থেকে বঙ্গবন্ধু নামার পর পূর্ণতা পেয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এক উৎসবমুখর পরিবেশে লাখো মানুষ বরণ করে নিয়েছিল তাদের প্রিয় নেতাকে। এরপর তাকে মিছিল করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ঐতিহাসিক স্থানে সেই সময়টিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার রূপকারের জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা শুরু হলো।

২০১৯ সালের ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের যৌথ সভায় ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত সরকার মুজিববর্ষ উদ্?যাপনের সিদ্ধান্ত হয়। জন্মশতবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠানটি হবে এ বছরের ১৭ মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে, সেদিন বঙ্গবন্ধুর জন্মগ্রহণের শতবর্ষ পূর্ণ হবে।

ওই অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ কয়েকজন বিশ্বনেতা উপস্থিত থাকবেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ওই অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তি ও কর্মজীবন নিয়ে হলোগ্রাফিক উপস্থাপনা ও থিম সং পরিবেশিত হবে। ১৭ মার্চ মূল অনুষ্ঠানের পর থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আতশবাজি।

৭৭ মিশনে ২৬১ অনুষ্ঠান : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর পাশাপাশি দেশে সারা বছর যেসব অনুষ্ঠান হবে, তাতে বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন ভাষায় বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত ভাষণ প্রকাশ ও প্রচার, বঙ্গবন্ধুর বিদেশ সফরের ওপর প্রামাণ্যচিত্র তৈরি এবং সমুদ্র বিজয়ের ওপর একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের ৭৭টি দূতাবাসে ২৬১টি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বছরজুড়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান সম্মতি জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভুটানের রাজা জিগমে খেশার ন্যামগেল ওয়াংচুক, সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজ জায়েদ আল নাহিয়ান, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, ভারতের কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ প্রমুখ।

শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২০ , ২৭ পৌষ ১৪২৬, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

শুরু হলো ক্ষণগণনা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা (কাউন্টডাউন) শুরু হয়েছে। গতকাল বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে জমকালো অনুষ্ঠানে ক্ষণগণনা উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে মুজিববর্ষের লোগো উন্মোচন করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর অপর কন্যা শেখ রেহান এবং বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এ সময় উপস্থিত ছিলেন। জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও সদস্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর হাতে মুজিববর্ষের লোগো তুলে দেন।

তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে ৪৮ বছর আগে জাতির জনকের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঘটনাপ্রবাহের প্রতীকী মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে গতকাল বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়েসহ তাদের পরিবারের সদস্য, মন্ত্রিসভার সদস্য, দুই হাজারের বেশি আমন্ত্রিত অতিথি এবং দশ হাজারের বেশি নিবন্ধিত দর্শক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

মূল অনুষ্ঠানের শুরুতে পুরাতন বিমানবন্দরে অবতরণ করে সি-১৩০জে মডেলের একটি উড়োজাহাজ। পাকিস্তানের কারগার থেকে মুক্তি পাওয়ার দুই দিন পর লন্ডন হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বিকেলে ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ারফোর্সের এ রকম একটি উড়োজাহাজে করেই তেজগাঁওয়ের বিমানবন্দরে পৌঁছান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিমানটি ধীরে ধীরে অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে এসে থামে। এ সময় বাজানো হয় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠের সেই গান- ‘বঙ্গবন্ধু ফিরে এলে তোমার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায়’। মঞ্চের কাছে আসার পর বিমানটির দরজা খোলা হলে ২১ বার তোপধ্বনি দেয়া হয়। পাতাকা হাতে ১৫০ জন তখন সেখানে লাল গালিচার পাশে বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। তাদের জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান আর লেজার লাইটের মাধ্যমে বিমানের দরজার ফুটিয়ে তোলা হয় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। পুষ্পবৃষ্টির মধ্যে সেই আলোকবর্তিকা ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসে লাল গালিচার মাথায় ছোট্ট মঞ্চে এসে থেমে যাবে। এরপর গার্ড অব অনার দেয় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল।

বঙ্গবন্ধু যে আলোকবর্তিকা হয়ে সেদিন দেশে ফিরেছিলেন, তারই প্রতীকী উপস্থাপনা ছিল এ আয়োজন। বঙ্গবন্ধুর প্রতীকী অবতরণ দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ব্যতিক্রমী এই আয়োজন দেখে তাদের দু’জনের মধ্যে আবেগঘন মুহূর্তের সৃষ্টি হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দেয়ার পর মুজিববর্ষের লোগো উন্মোচন ও ক্ষণগণনার উদ্বোধন করেন ল্যাটপটের বোতাম চেপে। দেশের ১২ সিটি করপোরেশনে ২৮টি স্পটে, ৫৩ জেলায় ও দুটি উপজেলা মিলিয়ে মোট ৮৩টি জায়গায় বসানো কাউন্টডাউন ক্লকও সঙ্গে সঙ্গে চালু হয়ে যায়। এই ক্ষণগণনা শেষে আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে সূচনা হবে মুজিববর্ষের বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের; বছরজুড়ে চলবে সেই আয়োজন। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও নানা আয়োজন থাকবে।

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এবং দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এবং বিকল্প ধারার সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীও ছিলেন।

আমন্ত্রিত অতিথি ও নিবন্ধিতদের জন্য দুপুরের পর থেকেই উন্মুক্ত করে দেয়া হয় অনুষ্ঠানস্থলের নির্ধারিত প্রবেশ পথগুলো। সবাইকে নিরাপত্তা তল্লাশির মধ্য দিয়ে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। মন্ত্রিসভার সদস্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ দুপুর ২টা থেকেই অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে শুরু করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অনুষ্ঠানস্থলে এসে মঞ্চে বসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাক-হানাদার বাহিনী বর্বর-পৈশাচিক গণহত্যায় মেতে লাখো বাঙালির রক্তের ওপর দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী করে। প্রায় সাড়ে ৯ মাস বন্দী থাকার পর করাচির কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে দেশে ফেরেন জাতির পিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন বিকেলে তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ থেকে বঙ্গবন্ধু নামার পর পূর্ণতা পেয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এক উৎসবমুখর পরিবেশে লাখো মানুষ বরণ করে নিয়েছিল তাদের প্রিয় নেতাকে। এরপর তাকে মিছিল করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ঐতিহাসিক স্থানে সেই সময়টিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার রূপকারের জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা শুরু হলো।

২০১৯ সালের ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের যৌথ সভায় ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত সরকার মুজিববর্ষ উদ্?যাপনের সিদ্ধান্ত হয়। জন্মশতবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠানটি হবে এ বছরের ১৭ মার্চ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে, সেদিন বঙ্গবন্ধুর জন্মগ্রহণের শতবর্ষ পূর্ণ হবে।

ওই অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ কয়েকজন বিশ্বনেতা উপস্থিত থাকবেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ওই অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তি ও কর্মজীবন নিয়ে হলোগ্রাফিক উপস্থাপনা ও থিম সং পরিবেশিত হবে। ১৭ মার্চ মূল অনুষ্ঠানের পর থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আতশবাজি।

৭৭ মিশনে ২৬১ অনুষ্ঠান : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর পাশাপাশি দেশে সারা বছর যেসব অনুষ্ঠান হবে, তাতে বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন ভাষায় বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত ভাষণ প্রকাশ ও প্রচার, বঙ্গবন্ধুর বিদেশ সফরের ওপর প্রামাণ্যচিত্র তৈরি এবং সমুদ্র বিজয়ের ওপর একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের ৭৭টি দূতাবাসে ২৬১টি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বছরজুড়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান সম্মতি জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভুটানের রাজা জিগমে খেশার ন্যামগেল ওয়াংচুক, সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজ জায়েদ আল নাহিয়ান, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, ভারতের কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ প্রমুখ।