মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে

ট্রাম্পের যুদ্ধের ক্ষমতা খর্বে বিল পাস

ডোনাল্ড ট্রাম্পের একক সিদ্ধান্তে যুদ্ধ করার ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা। গতকাল দেশটির কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ভোটা ভোটির মাধ্যমে এই বিষয়ে একটি বিলটি পাস হলে ট্রাম্পের ক্ষমতা খর্ব হয়ে যায়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে আক্রমণের জন্য ইরান আরও কয়েক হাজার ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত রেখেছিল বলে জানিয়েছে ইরান। পাশাপাশি ইরানের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রেকে আরও হামলার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। এছাড়াও আর দুই-এক বছরের মধ্যেই ইরানর পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারে জানিয়ে এই বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফ্রান্স।

ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন নিজের ইচ্ছামতো যুদ্ধ ঘোষণা করতে না পারেন সেজন্য কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তবাটি পাশ করা হয়েছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন বিরোধী ডেমোক্র্যাট দলের সদস্যরা। প্রস্তাবের পক্ষে পড়ে ২২৪ জন এবং বিপক্ষে পড়ে ১৯৪ জন ভোট দেন।

এ বিষয়ে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান ইলিয়ট অ্যাঞ্জেল বলেন, প্রেসিডেন্টকে প্রথমে যুদ্ধের অনুমতি নিতে হবে, কুমন্ত্রণা থেকে হামলা করার পরে এসে তিনি হামলার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে তার বৈধতা চাইবেন -তা হতে পারে না।

অন্যদিকে রিপাবলিকান দলের মাইক ম্যাককল বলেছেন, আমাদের ডেমোক্র্যাট দলের বন্ধুরা এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমেরিকাকে বিভক্ত করে ফেললেন। এই প্রস্তাব প্রেসিডেন্টের হাত-পা বেঁধে ফেলবে।

অন্যদিকে প্রাথমিক যুদ্ধ প্রস্তুতি হিসেবে ইরান পাঁচ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত রেখেছিল বলে জানিয়েছেন ইরানের এলিট ফোর্স ইসলামী রেভ্যুলশনারি গার্ড বাহিনীর (আরআরজিসি) অ্যারোস্পেস ফোর্সের প্রধান আমির আলী হাজিযাদেহ।

ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম প্রেস টিভিকে দেয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা ইরাকে অবস্থিত দুটি মার্কিন ঘাঁটিতে ১৩টি ক্ষেপণাস্ত্র মেরেছি, তবে আমরা প্রথম কয়েক ঘণ্টায় কয়েকশ’ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। আমরা ভেবেছিলাম উভয়পক্ষ সংযম না দেখালে যুদ্ধ সীমিত পর্যায়ে তিন দিন থেকে এক সপ্তাহ সংঘর্ষ চলবে। এ জন্য আমরা কয়েক হাজার ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত রেখেছিলাম।

ইরানের হামলায় আমেরিকার আইন আল আসাদ ঘাঁটি কমান্ড সেন্টার ধ্বংস হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ১৫ মিনিট পর আমরা ইলেকট্রনিক যুদ্ধ পরিচালনা করি এবং এর ফলে আমেরিকার ড্রোন ও বিমানগুলো কয়েক মুহূর্তের জন্য নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। আর এ ঘটনায় মার্কিন সেনাদের মনোবল ভেঙে যায় এবং হতবিহ্বল হয়ে পড়ে।

হাজিযাদেহ বলেন, মার্কিন বাহিনী সতর্ক ছিল, তারা হামলার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন ছিল। এ কারণে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আগ পর্যন্ত আমেরিকার ১২টি বিমান ও ড্রোন সব সময় ইরাকের আকাশে নানা তৎপরতা চালাচ্ছিল। তারা আমাদের চপেটাঘাতের অপেক্ষায় ছিল। থাপ্পড় খাওয়ার পর তারা কিছুটা শান্ত হয়েছে।

গত বুধবার রাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে ইরানের রাষ্ট্রদূত মজিদ তখত রাভঞ্চি নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন বলে বিবিসি জানিয়েছে। তবে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র আর কোন সামরিক পদক্ষেপ বা আগ্রাসন চালালে তার কঠোর জবাব দেয়া হবে বলে সতর্কবার্তাও দিয়েছেন তিনি। চিঠিতে রাভঞ্চি উল্লেখ করেন, ইরাকে অবস্থিত একটি মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইরান। ওই ঘাঁটি থেকেই শহীদ (কাসেম) সোলাইমানির ওপর কাপুরুষোচিত সশস্ত্র হামলা চালানো হয়েছিল।

অভিযানটি সুনির্দিষ্ট ছিল এবং সামরিক লক্ষ্যবস্তুতেই হামলা চালানো হয়েছে যাতে বেসামরিক মানুষের সম্পদ ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, চিঠিতে যোগ করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত। জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ইরান তাদের আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করেছে বলেও জানান জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত।

গতকাল ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-ইভস লে দ্রিয়ান জার্মানির রেডিও আরটিএলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ২০১৫ সালে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে হওয়া পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলে ইরান মাত্র এক থেকে দুই বছরের মধ্যেই ইরান পরমাণু অস্ত্রের মালিকানা অর্জন করতে পারবে।

সম্প্রতি কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলেমানি হত্যার প্রতিক্রিয়ায় ২০১৫ সালে হওয়া ওই পরমাণু চুক্তি থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয় ইরান। ইরানের পরমাণু কার্যক্রম ও সক্ষমতা সীমিত রাখতে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন ও রাশিয়ার তাদের সঙ্গে ওই চুক্তি করে। কিন্তু পরবর্তীতে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি একপাক্ষিকভাবে চুক্তিটি থেকে বেরিয়ে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুধু তাই নয়, এরপরপরই ইরানের ওপর একের পর এক কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিতে থাকে ওয়াশিংটিন। আর তাই নতুন পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান বৈরিতাকে উসকে দেয়। এরপর যুক্তি দেখিয়ে কয়েক ধাপে পরমাণু চুক্তির কিছু অংশ থেকে সরে যায় তেহরান। কিন্তু সম্প্রতি সোলেমানি হত্যার জেরে চুক্তিটি থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি জানিয়েছে তারা।

এ প্রসঙ্গেই উদ্বেগ প্রকাশ করে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যদি ইরান ওই পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে খুব কম সময়ের মধ্যেই, দুই থেকে এক বছরের মধ্যেই তারা পরমাণু অস্ত্রের সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। এটা কোন প্রত্যাশিত সুরাহা হতে পারে না। এ ব্যাপারে শুক্রবার জরুরি এক বৈঠকে বসতে চলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র-ইরানকে মুখোমুখি অবস্থান থেকে সরিয়ে আনার ব্যাপারে কী করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হবে। চলমান উত্তেজনায় দু’পক্ষের যে কেউ অনাকাক্সিক্ষত কিছু করে ফেললে পুরো মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে। তেমন পরিস্থিতিতে ইরানও পারমাণবিক সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে পিছপা হবে না।

গত নভেম্বরে জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক নিশ্চিত করে, চুক্তির কিছু অংশ থেকে সরে গিয়ে এরই মাঝে ইরান নিজেদের ভূগর্ভস্থ কেন্দ্র ফোরদোতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ শুরু করেছে। দিন দিন দেশটি নিজের পারমাণবিক সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানান।

শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২০ , ২৭ পৌষ ১৪২৬, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে

ট্রাম্পের যুদ্ধের ক্ষমতা খর্বে বিল পাস

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

ডোনাল্ড ট্রাম্পের একক সিদ্ধান্তে যুদ্ধ করার ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা। গতকাল দেশটির কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ভোটা ভোটির মাধ্যমে এই বিষয়ে একটি বিলটি পাস হলে ট্রাম্পের ক্ষমতা খর্ব হয়ে যায়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে আক্রমণের জন্য ইরান আরও কয়েক হাজার ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত রেখেছিল বলে জানিয়েছে ইরান। পাশাপাশি ইরানের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রেকে আরও হামলার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। এছাড়াও আর দুই-এক বছরের মধ্যেই ইরানর পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারে জানিয়ে এই বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফ্রান্স।

ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন নিজের ইচ্ছামতো যুদ্ধ ঘোষণা করতে না পারেন সেজন্য কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তবাটি পাশ করা হয়েছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন বিরোধী ডেমোক্র্যাট দলের সদস্যরা। প্রস্তাবের পক্ষে পড়ে ২২৪ জন এবং বিপক্ষে পড়ে ১৯৪ জন ভোট দেন।

এ বিষয়ে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান ইলিয়ট অ্যাঞ্জেল বলেন, প্রেসিডেন্টকে প্রথমে যুদ্ধের অনুমতি নিতে হবে, কুমন্ত্রণা থেকে হামলা করার পরে এসে তিনি হামলার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে তার বৈধতা চাইবেন -তা হতে পারে না।

অন্যদিকে রিপাবলিকান দলের মাইক ম্যাককল বলেছেন, আমাদের ডেমোক্র্যাট দলের বন্ধুরা এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমেরিকাকে বিভক্ত করে ফেললেন। এই প্রস্তাব প্রেসিডেন্টের হাত-পা বেঁধে ফেলবে।

অন্যদিকে প্রাথমিক যুদ্ধ প্রস্তুতি হিসেবে ইরান পাঁচ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত রেখেছিল বলে জানিয়েছেন ইরানের এলিট ফোর্স ইসলামী রেভ্যুলশনারি গার্ড বাহিনীর (আরআরজিসি) অ্যারোস্পেস ফোর্সের প্রধান আমির আলী হাজিযাদেহ।

ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম প্রেস টিভিকে দেয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা ইরাকে অবস্থিত দুটি মার্কিন ঘাঁটিতে ১৩টি ক্ষেপণাস্ত্র মেরেছি, তবে আমরা প্রথম কয়েক ঘণ্টায় কয়েকশ’ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। আমরা ভেবেছিলাম উভয়পক্ষ সংযম না দেখালে যুদ্ধ সীমিত পর্যায়ে তিন দিন থেকে এক সপ্তাহ সংঘর্ষ চলবে। এ জন্য আমরা কয়েক হাজার ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত রেখেছিলাম।

ইরানের হামলায় আমেরিকার আইন আল আসাদ ঘাঁটি কমান্ড সেন্টার ধ্বংস হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ১৫ মিনিট পর আমরা ইলেকট্রনিক যুদ্ধ পরিচালনা করি এবং এর ফলে আমেরিকার ড্রোন ও বিমানগুলো কয়েক মুহূর্তের জন্য নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। আর এ ঘটনায় মার্কিন সেনাদের মনোবল ভেঙে যায় এবং হতবিহ্বল হয়ে পড়ে।

হাজিযাদেহ বলেন, মার্কিন বাহিনী সতর্ক ছিল, তারা হামলার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন ছিল। এ কারণে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আগ পর্যন্ত আমেরিকার ১২টি বিমান ও ড্রোন সব সময় ইরাকের আকাশে নানা তৎপরতা চালাচ্ছিল। তারা আমাদের চপেটাঘাতের অপেক্ষায় ছিল। থাপ্পড় খাওয়ার পর তারা কিছুটা শান্ত হয়েছে।

গত বুধবার রাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে ইরানের রাষ্ট্রদূত মজিদ তখত রাভঞ্চি নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন বলে বিবিসি জানিয়েছে। তবে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র আর কোন সামরিক পদক্ষেপ বা আগ্রাসন চালালে তার কঠোর জবাব দেয়া হবে বলে সতর্কবার্তাও দিয়েছেন তিনি। চিঠিতে রাভঞ্চি উল্লেখ করেন, ইরাকে অবস্থিত একটি মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইরান। ওই ঘাঁটি থেকেই শহীদ (কাসেম) সোলাইমানির ওপর কাপুরুষোচিত সশস্ত্র হামলা চালানো হয়েছিল।

অভিযানটি সুনির্দিষ্ট ছিল এবং সামরিক লক্ষ্যবস্তুতেই হামলা চালানো হয়েছে যাতে বেসামরিক মানুষের সম্পদ ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, চিঠিতে যোগ করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত। জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ইরান তাদের আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করেছে বলেও জানান জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত।

গতকাল ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-ইভস লে দ্রিয়ান জার্মানির রেডিও আরটিএলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ২০১৫ সালে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে হওয়া পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলে ইরান মাত্র এক থেকে দুই বছরের মধ্যেই ইরান পরমাণু অস্ত্রের মালিকানা অর্জন করতে পারবে।

সম্প্রতি কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলেমানি হত্যার প্রতিক্রিয়ায় ২০১৫ সালে হওয়া ওই পরমাণু চুক্তি থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয় ইরান। ইরানের পরমাণু কার্যক্রম ও সক্ষমতা সীমিত রাখতে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন ও রাশিয়ার তাদের সঙ্গে ওই চুক্তি করে। কিন্তু পরবর্তীতে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি একপাক্ষিকভাবে চুক্তিটি থেকে বেরিয়ে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুধু তাই নয়, এরপরপরই ইরানের ওপর একের পর এক কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিতে থাকে ওয়াশিংটিন। আর তাই নতুন পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান বৈরিতাকে উসকে দেয়। এরপর যুক্তি দেখিয়ে কয়েক ধাপে পরমাণু চুক্তির কিছু অংশ থেকে সরে যায় তেহরান। কিন্তু সম্প্রতি সোলেমানি হত্যার জেরে চুক্তিটি থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি জানিয়েছে তারা।

এ প্রসঙ্গেই উদ্বেগ প্রকাশ করে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যদি ইরান ওই পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে খুব কম সময়ের মধ্যেই, দুই থেকে এক বছরের মধ্যেই তারা পরমাণু অস্ত্রের সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। এটা কোন প্রত্যাশিত সুরাহা হতে পারে না। এ ব্যাপারে শুক্রবার জরুরি এক বৈঠকে বসতে চলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র-ইরানকে মুখোমুখি অবস্থান থেকে সরিয়ে আনার ব্যাপারে কী করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হবে। চলমান উত্তেজনায় দু’পক্ষের যে কেউ অনাকাক্সিক্ষত কিছু করে ফেললে পুরো মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে। তেমন পরিস্থিতিতে ইরানও পারমাণবিক সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে পিছপা হবে না।

গত নভেম্বরে জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক নিশ্চিত করে, চুক্তির কিছু অংশ থেকে সরে গিয়ে এরই মাঝে ইরান নিজেদের ভূগর্ভস্থ কেন্দ্র ফোরদোতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ শুরু করেছে। দিন দিন দেশটি নিজের পারমাণবিক সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানান।