ধানমন্ডির এক বাড়িতে জাল নোটের কারখানা

কয়েক কোটি জাল টাকা ও সরঞ্জামাদি উদ্ধার : গ্রেফতার ২

আবারও জাল টাকা তৈরির কারখানার সন্ধ্যান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এবার মিললো রাজধানীর অভিজাত এলাকায়। গতকাল ধানমন্ডি-৭/ই এর ১০ নম্বরের একটি বাসার তিন তলায় জাল টাকার কারখানার সন্ধন পায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এসময় ওই বাসার একটি কক্ষে থাকা ওয়ারড্রপ ও খাটের নিচ থেকে কয়েক কোটি জাল টাকা, টাকা তৈরির কাগজ, প্রিন্টার, টোনার, কেমিকেল, ডায়াসসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। জব্দ করা জাল টাকাগুলো ৫০০ এবং ১০০০ হাজার টাকার নোট। জাল টাকা তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকায় দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলো- সাইফুল ইসলাম ও শাহ আলম। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে এ অভিযান। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি কাইয়ুমুজ্জামান এসব তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার জাল টাকাসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পশ্চিম ধানমন্ডির সাইফুলের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানে ওই বাসার ওয়ারড্রপ ও খাটের নিচ থেকে এসব জাল টাকা ও টাকা তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। ধানমন্ডির মতো অভিজাত এলাকা তারা নিরাপদ মনে করেছে। ভেবেছিল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব এলাকা টার্গেট করবে না। তাই এখানে বাসা ভাড়া নিয়ে এই ধরনের কার্যক্রম চালাচ্ছিল। কিন্তু আমাদের চোখ ফাঁকি দেয়ার মতো ক্যাপাসিটি তাদের আছে বলে মনে করি না।

যেভাবে তৈরি হতো জাল টাকা

২০১৪ সালে ধানমন্ডিতে দুই রুমের বাসা ভাড়া নেয় সাইফুল ইসলাম। স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে থাকতেন সেখানে। রাত হলেই তৈরি করতেন কোটি কোটি টাকার জাল নোট। ছাড়তেন বাজারেও। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন জাল টাকার কারবারি আসতেন তার বাসায়। দীর্ঘদিন ধানমন্ডিতে থাকায় মহল্লায় সুনামও ছিল বেশ। বাসার নিচের দোকানিদের সঙ্গে সব সময় হাসিমুখে কথা বলতেন, ভালো ব্যবহার করতেন। কিন্তু কখনোই কেউ ভাবেনি এই মানুষটি রাজধানীর অন্যতম জাল টাকা তৈরির কারিগর।

প্রতিবেশীরা যা বললেন

অভিযানের সময় বাসার মালিককে ডাকা হলে তিনি এ চিত্র দেখে হতচকিত হয়ে যান। বলেন-পাশের ফ্ল্যাটে এমন কাণ্ড, কিন্তু এতো দিন ধরে টেরই পেলাম না। সাইফুলের বাসার নিচে একটি হোটেলে কথা হয় রোজিনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরেই তো তাকে চিনি। আমাদের হোটেলে প্রায়ই তিনি নাস্তা করতেন। কোনোদিন তো জাল টাকা তার কাছ থেকে পাইনি। সব সময় হাসি মুখে আমাদের সঙ্গে কথা বলতেন। বিভিন্ন গল্প করতেন। ১০-এর উপঅধিনায়ক মেজর মো. শাহরিয়ার জানান, দীর্ঘদিন ধরে সাইফুল এ ব্যবসা করে আসছে। বিষয়টি তার স্ত্রীও জানতো। তার বাসায় টাকা তৈরির পর বিভিন্ন রেটে কিনে নিয়ে লোক আসতো। তারা আবার মাঠ পর্যায়ে এসব সাপ্লাই করতো। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২০ , ২৭ পৌষ ১৪২৬, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

ধানমন্ডির এক বাড়িতে জাল নোটের কারখানা

কয়েক কোটি জাল টাকা ও সরঞ্জামাদি উদ্ধার : গ্রেফতার ২

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

আবারও জাল টাকা তৈরির কারখানার সন্ধ্যান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এবার মিললো রাজধানীর অভিজাত এলাকায়। গতকাল ধানমন্ডি-৭/ই এর ১০ নম্বরের একটি বাসার তিন তলায় জাল টাকার কারখানার সন্ধন পায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এসময় ওই বাসার একটি কক্ষে থাকা ওয়ারড্রপ ও খাটের নিচ থেকে কয়েক কোটি জাল টাকা, টাকা তৈরির কাগজ, প্রিন্টার, টোনার, কেমিকেল, ডায়াসসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। জব্দ করা জাল টাকাগুলো ৫০০ এবং ১০০০ হাজার টাকার নোট। জাল টাকা তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকায় দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলো- সাইফুল ইসলাম ও শাহ আলম। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে এ অভিযান। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি কাইয়ুমুজ্জামান এসব তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার জাল টাকাসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পশ্চিম ধানমন্ডির সাইফুলের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানে ওই বাসার ওয়ারড্রপ ও খাটের নিচ থেকে এসব জাল টাকা ও টাকা তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। ধানমন্ডির মতো অভিজাত এলাকা তারা নিরাপদ মনে করেছে। ভেবেছিল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব এলাকা টার্গেট করবে না। তাই এখানে বাসা ভাড়া নিয়ে এই ধরনের কার্যক্রম চালাচ্ছিল। কিন্তু আমাদের চোখ ফাঁকি দেয়ার মতো ক্যাপাসিটি তাদের আছে বলে মনে করি না।

যেভাবে তৈরি হতো জাল টাকা

২০১৪ সালে ধানমন্ডিতে দুই রুমের বাসা ভাড়া নেয় সাইফুল ইসলাম। স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে থাকতেন সেখানে। রাত হলেই তৈরি করতেন কোটি কোটি টাকার জাল নোট। ছাড়তেন বাজারেও। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন জাল টাকার কারবারি আসতেন তার বাসায়। দীর্ঘদিন ধানমন্ডিতে থাকায় মহল্লায় সুনামও ছিল বেশ। বাসার নিচের দোকানিদের সঙ্গে সব সময় হাসিমুখে কথা বলতেন, ভালো ব্যবহার করতেন। কিন্তু কখনোই কেউ ভাবেনি এই মানুষটি রাজধানীর অন্যতম জাল টাকা তৈরির কারিগর।

প্রতিবেশীরা যা বললেন

অভিযানের সময় বাসার মালিককে ডাকা হলে তিনি এ চিত্র দেখে হতচকিত হয়ে যান। বলেন-পাশের ফ্ল্যাটে এমন কাণ্ড, কিন্তু এতো দিন ধরে টেরই পেলাম না। সাইফুলের বাসার নিচে একটি হোটেলে কথা হয় রোজিনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরেই তো তাকে চিনি। আমাদের হোটেলে প্রায়ই তিনি নাস্তা করতেন। কোনোদিন তো জাল টাকা তার কাছ থেকে পাইনি। সব সময় হাসি মুখে আমাদের সঙ্গে কথা বলতেন। বিভিন্ন গল্প করতেন। ১০-এর উপঅধিনায়ক মেজর মো. শাহরিয়ার জানান, দীর্ঘদিন ধরে সাইফুল এ ব্যবসা করে আসছে। বিষয়টি তার স্ত্রীও জানতো। তার বাসায় টাকা তৈরির পর বিভিন্ন রেটে কিনে নিয়ে লোক আসতো। তারা আবার মাঠ পর্যায়ে এসব সাপ্লাই করতো। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।