কন্যা সাহসিকা

বাল্যবিয়ে ভেঙে সাহসী সুবর্ণা অনেকের প্রেরণা

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের এক অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুবর্ণা আক্তার (১৪) নিজের বাল্যবিয়ে ভেঙ্গে দিয়ে এখন সকলের কাছে দৃষ্টান্ত। তার এ সাহসিকতার জন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে অনন্য মানবাধিকার কর্মী হিসেবে পদক দিয়ে সম্মাননা জানানো হয় তাকে। দরিদ্র বাবা-মা ১৮ বছরের আগে সুবর্ণাকে বিয়ে দেবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন। সুবর্ণার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। বৃত্তির ব্যবস্থা করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্ত। তার বিদ্যালয় সকল প্রকার ফি মওকুফ করে দিয়েছে।

হোসেনপুরের উত্তর কুরিমারা গ্রামের গ্যারেজ শ্রমিক লালন মিয়ার তিন মেয়ে এক ছেলের মধ্যে সুবর্ণা দ্বিতীয়। সুবর্ণার বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। সুবর্ণা আশুতিয়া সামাদিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ৮ম শ্রেণিতে পড়ছে। তার ছোট বোন আর ছোট ভাই খুবই ছোট; এখনও স্কুলে যায় না। সুবর্ণা জানায়, গত কোরবানির ঈদের আগে সে বাড়িতে শুয়েছিল। এমন সময় সুবর্ণা শুনতে পায়, মা-বাবা খালাত ভইয়ের সঙ্গে সুবর্ণার বিয়ের কথা বলছেন। সুবর্ণা বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। একে তো বিয়ের বয়সই হয়নি। তাছাড়া সুবর্ণার প্রবল ইচ্ছা পড়াশোনা করবে। সর্বনাশা বাল্যবিয়ে থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সে বাড়ি থেকে পালায়। রাতে গিয়ে ওঠে এলাকার নারী নির্যাতন বিরোধী কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত ‘পপি’ নামে সংগঠনের এক আপা মাঠকর্মী শান্তি বেগমের বাড়িতে। তার বাড়ি সুবর্ণাদের বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে। শান্তি বেগমকে সুবর্ণা সব খুলে বলে এবং নিজেকে রক্ষা করতে ঢাকায় পাড়ি জমাবে বলেও জানায়। শান্তি বেগম বুঝতে পারলেন, মেয়েটি এক বিপদ থেকে আরেক বিপদের দিকে পা বাড়াচ্ছে। তিনি সুবর্ণাকে দিয়ে একটি লিখিত আবেদ লিখিয়ে রাতেই হোসেনপুরের বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমল কুমার ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। নির্বাহী কর্মকর্তা রাতেই উপজেলা চেয়ারম্যান মো. সোহেল ও স্থানীয় সাহেদল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ মাহবুবুল হককে নিয়ে মেয়েটির বাবা-মায়ের সঙ্গে তাদের বাড়িতে গিয়ে কথা বললেন। সেখানে সুবর্ণার খালাকে ডেকে নিয়ে তার সঙ্গেও কথা বলেন। তখন বাবা-মা এবং খালা অঙ্গীকার করলেন, ১৮ বছরের আগে সুবর্ণার বিয়ের কথা মুখেও আনবেন না। নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্ণার পড়াশোনার সুবিধার্থে বৃত্তির ব্যবস্থা করে দিলেন। আর স্থানীয় সাহেদল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মাহবুবুল হক সুবর্ণার পড়াশোনর যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। অন্যদিকে সুবর্ণার মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষও তার সমস্ত রকম ফি মওকুফের ঘোষণা দিয়েছেন। গত ১০ ডিসেম্বর ছিল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। সেদিন ‘পপি’ নামের সংগঠনটি মানবাধিকার রক্ষায় প্রশংসনীয় ভূমিকার জন্য চারজন ব্যক্তিকে সম্মাননা প্রদান করেছে। এর মধ্যে সুবর্ণাও ছিল।

রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২০ , ২৮ পৌষ ১৪২৬, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

কন্যা সাহসিকা

বাল্যবিয়ে ভেঙে সাহসী সুবর্ণা অনেকের প্রেরণা

জেলা বার্তা পরিবেশক, কিশোরগঞ্জ

image

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের এক অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুবর্ণা আক্তার (১৪) নিজের বাল্যবিয়ে ভেঙ্গে দিয়ে এখন সকলের কাছে দৃষ্টান্ত। তার এ সাহসিকতার জন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে অনন্য মানবাধিকার কর্মী হিসেবে পদক দিয়ে সম্মাননা জানানো হয় তাকে। দরিদ্র বাবা-মা ১৮ বছরের আগে সুবর্ণাকে বিয়ে দেবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন। সুবর্ণার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। বৃত্তির ব্যবস্থা করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্ত। তার বিদ্যালয় সকল প্রকার ফি মওকুফ করে দিয়েছে।

হোসেনপুরের উত্তর কুরিমারা গ্রামের গ্যারেজ শ্রমিক লালন মিয়ার তিন মেয়ে এক ছেলের মধ্যে সুবর্ণা দ্বিতীয়। সুবর্ণার বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। সুবর্ণা আশুতিয়া সামাদিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ৮ম শ্রেণিতে পড়ছে। তার ছোট বোন আর ছোট ভাই খুবই ছোট; এখনও স্কুলে যায় না। সুবর্ণা জানায়, গত কোরবানির ঈদের আগে সে বাড়িতে শুয়েছিল। এমন সময় সুবর্ণা শুনতে পায়, মা-বাবা খালাত ভইয়ের সঙ্গে সুবর্ণার বিয়ের কথা বলছেন। সুবর্ণা বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। একে তো বিয়ের বয়সই হয়নি। তাছাড়া সুবর্ণার প্রবল ইচ্ছা পড়াশোনা করবে। সর্বনাশা বাল্যবিয়ে থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সে বাড়ি থেকে পালায়। রাতে গিয়ে ওঠে এলাকার নারী নির্যাতন বিরোধী কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত ‘পপি’ নামে সংগঠনের এক আপা মাঠকর্মী শান্তি বেগমের বাড়িতে। তার বাড়ি সুবর্ণাদের বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে। শান্তি বেগমকে সুবর্ণা সব খুলে বলে এবং নিজেকে রক্ষা করতে ঢাকায় পাড়ি জমাবে বলেও জানায়। শান্তি বেগম বুঝতে পারলেন, মেয়েটি এক বিপদ থেকে আরেক বিপদের দিকে পা বাড়াচ্ছে। তিনি সুবর্ণাকে দিয়ে একটি লিখিত আবেদ লিখিয়ে রাতেই হোসেনপুরের বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমল কুমার ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। নির্বাহী কর্মকর্তা রাতেই উপজেলা চেয়ারম্যান মো. সোহেল ও স্থানীয় সাহেদল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ মাহবুবুল হককে নিয়ে মেয়েটির বাবা-মায়ের সঙ্গে তাদের বাড়িতে গিয়ে কথা বললেন। সেখানে সুবর্ণার খালাকে ডেকে নিয়ে তার সঙ্গেও কথা বলেন। তখন বাবা-মা এবং খালা অঙ্গীকার করলেন, ১৮ বছরের আগে সুবর্ণার বিয়ের কথা মুখেও আনবেন না। নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্ণার পড়াশোনার সুবিধার্থে বৃত্তির ব্যবস্থা করে দিলেন। আর স্থানীয় সাহেদল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মাহবুবুল হক সুবর্ণার পড়াশোনর যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। অন্যদিকে সুবর্ণার মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষও তার সমস্ত রকম ফি মওকুফের ঘোষণা দিয়েছেন। গত ১০ ডিসেম্বর ছিল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। সেদিন ‘পপি’ নামের সংগঠনটি মানবাধিকার রক্ষায় প্রশংসনীয় ভূমিকার জন্য চারজন ব্যক্তিকে সম্মাননা প্রদান করেছে। এর মধ্যে সুবর্ণাও ছিল।