ঢাকা-উত্তর ও দক্ষিণ

জমে উঠেছে সিটি নির্বাচন

মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না : সিইসি

জমে উঠেছে ঢাকা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লড়াই। দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে দুই (উত্তর ও দক্ষিণ) সিটিতে নৌকা আর ধানের শীষের চার প্রতিদ্বন্দ্বী এবং তাদের কর্মী-সমর্থকরা রাজধানীর অলিগলি চষে বেড়াচ্ছেন ভোটের প্রচারণায়। এক যুগেরও বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি সিটি ভোট নিয়ে এবার একটু বেশিই উজ্জীবিত। দলটির মহাসচিব থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা এবার ধানের শীষের প্রচারণায় নামলেও সিটি নির্বাচনের আচরণবিধির কারণে সে সুযোগ পাচ্ছেন না মন্ত্রী, এমপির (সংসদ সদস্য) দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সূত্র বলছে, দলের সাংগঠনিক শক্তি পুনরুদ্ধারে এবার জয়ের বিকল্প নেই। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও ছেড়ে দেয়ার পাত্র নয়। দুই দলের শীর্ষ নেতারাই নিজ নিজ জয় নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। এই প্রেক্ষাপটে সিটি ভোটে নৌকা-ধানের শীষের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে; রাজনীতি সচেতন মানুষের পাশপাশি সাধারণ ভোটারদেরও এমনটাই ধারণা। এদিকে দুই সিটিতে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরদের প্রচারণাও জমে উঠেছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা সিটিতে ধানের শীষের প্রচারণায় নামলেও সমস্যায় পড়েছে আওয়ামী লীগ। সিটি করপোরেশন নির্বাচনী অচরণবিধি অনুযায়ী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ সরকারি সুবিধাভোগীদের ভোটের প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা নৌকার প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকায় তারও ভোট চাওয়ার সুযোগ নেই। এ নিয়ে আক্ষেপ করে শুক্রবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব প্রচারণা করতে পারবেন, আমি পারব না- এ কেমন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড? বিএনপির মওদুদ আহমদ, খন্দকার মোশাররফ প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন, কিন্তু আওয়ামী লীগের আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ সংসদ সদস্য হওয়ার কারণে তারা প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। সেটা কি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হল? আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে জানতে চাই।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, মন্ত্রিত্ব ও সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করে দলের প্রচারণায় অংশ নিন। আসুন- আপনি নৌকার জন্য করেন, আমি ধানের শীষের জন্য করি। লেট আস ফেইস দ্য চ্যালেঞ্জ। দেখা যাক জনগণ কার দিকে থাকে।

দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ এমপি গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে এমপিরা প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে পারবেন না, তবে তারা ঘরোয়া বৈঠক করতে পারবেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা এর পরপরই সাংবাদিকদের বলেন, সিটি নির্বাচন সংক্রান্ত কোন কাজে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য কিংবা সরকারি সুবিধাভোগীরা অংশ নিতে পারবেন না। সিটি নির্বাচনে সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের দুই সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু এবং তোফায়েল আহমেদের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আইন অনুযায়ী, ঘরোয়া হোক আর বাইরে হোক, নির্বাচন-সংক্রান্ত কোন কাজে এমপিরা অংশ নিতে পারবেন না। তারা সমন্বয়কের দায়িত্বও পালন করতে পারবেন না।

এদিকে সিটি নির্বাচনের আচরণবিধি পরিবর্তনের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের প্রচারণায় অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়ার দাবি তুলেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দল। গতকাল জোটের এক বিশেষ সভা শেষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেন, এই আইন বাতিল করার ব্যাপারে বিবেচনা করা উচিত। স্থানীয় নির্বাচন হলেও এটাকে অরাজনৈতিক নির্বাচন বলার সুযোগ নেই। স্বাধীনতাবিরোধী ও জঙ্গিবাদী শক্তি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, আমরা ঘরে বসে থাকতে পারি না।

কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির নেতারা ‘টপ টু বটম’ নির্বাচনি প্রচারে নামতে পারবেন, আমরা পারবো না, এটা দুঃখজনক। আমরা মনে করি, সংসদে এই আইনটি পরিবর্তন করা দরকার। তিনি বলেন, এই নির্বাচন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনে নৌকার বিজয়ের জন্য আমাদের মানুষের বাড়ি বাড়ি, ঘরে ঘরে যেতে হবে, ভোট চাইতে হবে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সূত্র বলছে, তাবিথ আউয়াল এবং প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন দু’জনই দলের শক্তিশালী প্রার্থী। দু’জনই প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তিসম্পন্ন, শিক্ষিত, ভদ্র। মনোনয়নের শুরুতে দলের কেন্দ্রীয় একটি অংশের অনাস্থা থাকলেও এখন সবাই ঐক্যবদ্ধ। নগর, থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছেও এই দুই প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা আকাশচুম্বী।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় অন্য নেতারাও দলের দুই মেয়র প্রার্থীর পক্ষে জোর প্রচারণা শুরু করেছেন। বিএপির একাধিখ নগর নেতার মতে, বিগত সময়ের চেয়ে বিএনপি এবার অনেক বেশি সংগঠিত। ঐক্যবদ্ধ এ প্রয়াস ভোটের মাঠে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন তারা।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সূত্র বলছে, নগর আওয়ামী লীগের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, বিএনপির প্রার্থী, জনমত; সার্বিক বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেই আতিকুল ইসলাম এবং ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসকে নৌকার প্রার্থী করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের কাছে দু’জনেরই গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ক্ষমতাসীনদের আশা নগরবাসীও তাদের প্রার্থীদের ওপর আস্থা রাখবেন।

এদিকে নির্বাচনী আচরণবিধির কারণে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতারা প্রচারণায় নামতে পারছেন না। নগর আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র বলছে, দক্ষিণের বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন পুনরায় মনোনয়ন না পাওয়ায় তার অনুসারী কর্মী-সমর্থকরা ক্ষুব্ধ। যার প্রভাব ভোটের মাঠে কিছুটা হলেও পড়বে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে ভোট হবে আগামী ৩০ জানুয়ারি। প্রার্থীদের হাতে প্রচারণার সময় আছে ২১ দিন। এবারই প্রথম সিটিতে পুরোপুরি ভোটগ্রহণ করা হবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোন অভিযোগ না থাকলেও শঙ্কিত বিএনপি। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, ইভিএমে ভোটের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি পুরোপুরি নির্বাচনের কমিশনের (ইসি) নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আর বর্তমান কমিশন ক্ষমতাসীনদের পুতুল। তাই ইভিএমে ভোটের ফল পরিবর্তনের আশঙ্কা রয়েছে। তাই ইভিএমের পরিবর্তে ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণের দাবি তুলেছেন বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। গুরুতর এসব অভিযোগের পরেও ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত থাকার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। কারণ হিসেবে বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, সিটি নির্বাচন ‘ইসি’র জন্য ‘টেস্ট কেস’। এ নির্বাচনের মাধ্যমেই ইসির গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ হবে। এই কমিশনের অধীনে পরবর্তিতে বিএনপি আর কোন নির্বাচনে যাবে কিনা, তা নির্ধারণ করা হবে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, সরকার একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধ পরিকর। এ জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন এবং তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করা হবে। জয়-পরাজয় যাই হোক মেনে নেয়া হবে।

রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২০ , ২৮ পৌষ ১৪২৬, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

ঢাকা-উত্তর ও দক্ষিণ

জমে উঠেছে সিটি নির্বাচন

মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না : সিইসি

ফয়েজ আহমেদ তুষার |

image

জমে উঠেছে ঢাকা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লড়াই। দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে দুই (উত্তর ও দক্ষিণ) সিটিতে নৌকা আর ধানের শীষের চার প্রতিদ্বন্দ্বী এবং তাদের কর্মী-সমর্থকরা রাজধানীর অলিগলি চষে বেড়াচ্ছেন ভোটের প্রচারণায়। এক যুগেরও বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি সিটি ভোট নিয়ে এবার একটু বেশিই উজ্জীবিত। দলটির মহাসচিব থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা এবার ধানের শীষের প্রচারণায় নামলেও সিটি নির্বাচনের আচরণবিধির কারণে সে সুযোগ পাচ্ছেন না মন্ত্রী, এমপির (সংসদ সদস্য) দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সূত্র বলছে, দলের সাংগঠনিক শক্তি পুনরুদ্ধারে এবার জয়ের বিকল্প নেই। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও ছেড়ে দেয়ার পাত্র নয়। দুই দলের শীর্ষ নেতারাই নিজ নিজ জয় নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। এই প্রেক্ষাপটে সিটি ভোটে নৌকা-ধানের শীষের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে; রাজনীতি সচেতন মানুষের পাশপাশি সাধারণ ভোটারদেরও এমনটাই ধারণা। এদিকে দুই সিটিতে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরদের প্রচারণাও জমে উঠেছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা সিটিতে ধানের শীষের প্রচারণায় নামলেও সমস্যায় পড়েছে আওয়ামী লীগ। সিটি করপোরেশন নির্বাচনী অচরণবিধি অনুযায়ী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ সরকারি সুবিধাভোগীদের ভোটের প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা নৌকার প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকায় তারও ভোট চাওয়ার সুযোগ নেই। এ নিয়ে আক্ষেপ করে শুক্রবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব প্রচারণা করতে পারবেন, আমি পারব না- এ কেমন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড? বিএনপির মওদুদ আহমদ, খন্দকার মোশাররফ প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন, কিন্তু আওয়ামী লীগের আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ সংসদ সদস্য হওয়ার কারণে তারা প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। সেটা কি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হল? আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে জানতে চাই।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, মন্ত্রিত্ব ও সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করে দলের প্রচারণায় অংশ নিন। আসুন- আপনি নৌকার জন্য করেন, আমি ধানের শীষের জন্য করি। লেট আস ফেইস দ্য চ্যালেঞ্জ। দেখা যাক জনগণ কার দিকে থাকে।

দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ এমপি গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে এমপিরা প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে পারবেন না, তবে তারা ঘরোয়া বৈঠক করতে পারবেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা এর পরপরই সাংবাদিকদের বলেন, সিটি নির্বাচন সংক্রান্ত কোন কাজে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য কিংবা সরকারি সুবিধাভোগীরা অংশ নিতে পারবেন না। সিটি নির্বাচনে সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের দুই সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু এবং তোফায়েল আহমেদের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আইন অনুযায়ী, ঘরোয়া হোক আর বাইরে হোক, নির্বাচন-সংক্রান্ত কোন কাজে এমপিরা অংশ নিতে পারবেন না। তারা সমন্বয়কের দায়িত্বও পালন করতে পারবেন না।

এদিকে সিটি নির্বাচনের আচরণবিধি পরিবর্তনের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের প্রচারণায় অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়ার দাবি তুলেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দল। গতকাল জোটের এক বিশেষ সভা শেষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেন, এই আইন বাতিল করার ব্যাপারে বিবেচনা করা উচিত। স্থানীয় নির্বাচন হলেও এটাকে অরাজনৈতিক নির্বাচন বলার সুযোগ নেই। স্বাধীনতাবিরোধী ও জঙ্গিবাদী শক্তি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, আমরা ঘরে বসে থাকতে পারি না।

কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির নেতারা ‘টপ টু বটম’ নির্বাচনি প্রচারে নামতে পারবেন, আমরা পারবো না, এটা দুঃখজনক। আমরা মনে করি, সংসদে এই আইনটি পরিবর্তন করা দরকার। তিনি বলেন, এই নির্বাচন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনে নৌকার বিজয়ের জন্য আমাদের মানুষের বাড়ি বাড়ি, ঘরে ঘরে যেতে হবে, ভোট চাইতে হবে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সূত্র বলছে, তাবিথ আউয়াল এবং প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন দু’জনই দলের শক্তিশালী প্রার্থী। দু’জনই প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তিসম্পন্ন, শিক্ষিত, ভদ্র। মনোনয়নের শুরুতে দলের কেন্দ্রীয় একটি অংশের অনাস্থা থাকলেও এখন সবাই ঐক্যবদ্ধ। নগর, থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছেও এই দুই প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা আকাশচুম্বী।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় অন্য নেতারাও দলের দুই মেয়র প্রার্থীর পক্ষে জোর প্রচারণা শুরু করেছেন। বিএপির একাধিখ নগর নেতার মতে, বিগত সময়ের চেয়ে বিএনপি এবার অনেক বেশি সংগঠিত। ঐক্যবদ্ধ এ প্রয়াস ভোটের মাঠে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন তারা।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সূত্র বলছে, নগর আওয়ামী লীগের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, বিএনপির প্রার্থী, জনমত; সার্বিক বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেই আতিকুল ইসলাম এবং ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসকে নৌকার প্রার্থী করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের কাছে দু’জনেরই গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ক্ষমতাসীনদের আশা নগরবাসীও তাদের প্রার্থীদের ওপর আস্থা রাখবেন।

এদিকে নির্বাচনী আচরণবিধির কারণে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতারা প্রচারণায় নামতে পারছেন না। নগর আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র বলছে, দক্ষিণের বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন পুনরায় মনোনয়ন না পাওয়ায় তার অনুসারী কর্মী-সমর্থকরা ক্ষুব্ধ। যার প্রভাব ভোটের মাঠে কিছুটা হলেও পড়বে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে ভোট হবে আগামী ৩০ জানুয়ারি। প্রার্থীদের হাতে প্রচারণার সময় আছে ২১ দিন। এবারই প্রথম সিটিতে পুরোপুরি ভোটগ্রহণ করা হবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোন অভিযোগ না থাকলেও শঙ্কিত বিএনপি। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, ইভিএমে ভোটের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি পুরোপুরি নির্বাচনের কমিশনের (ইসি) নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আর বর্তমান কমিশন ক্ষমতাসীনদের পুতুল। তাই ইভিএমে ভোটের ফল পরিবর্তনের আশঙ্কা রয়েছে। তাই ইভিএমের পরিবর্তে ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণের দাবি তুলেছেন বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। গুরুতর এসব অভিযোগের পরেও ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত থাকার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। কারণ হিসেবে বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, সিটি নির্বাচন ‘ইসি’র জন্য ‘টেস্ট কেস’। এ নির্বাচনের মাধ্যমেই ইসির গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ হবে। এই কমিশনের অধীনে পরবর্তিতে বিএনপি আর কোন নির্বাচনে যাবে কিনা, তা নির্ধারণ করা হবে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, সরকার একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধ পরিকর। এ জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন এবং তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করা হবে। জয়-পরাজয় যাই হোক মেনে নেয়া হবে।