এগার দিনে ৬ শিশু কিশোরী ও তরুণী ধর্র্ষণ

ঢাকা মেডিকেল ওসিসিতে ভর্তি

চলতি বছর শুরুর পর থেকে একের পর এক গণধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত গত ১১ দিনে শুধু রাজধানীতেই ধর্ষণের শিকার হয়ে ৬ শিশু, কিশোরী ও তরুণী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সর্বশেষ ১২ বছরের এক কিশোরীকে গণধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোরের বিরুদ্ধে গত শুক্রবার গভীর রাতে রাজধানীর ভাটারা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া রামপুরায় ২ তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে মুশফিকুল আলম (৩৮) নামে এক বাবুর্চিকে এবং কামরাঙ্গীরচরে বান্ধবীর সহযোগিতায় কিশোরীকে গণধর্ষণের ঘটনায় পলাতক আসামি রতনকে সাভার এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। ধর্ষণের শিকার হয় কিশোরী ও তরুণীদের ঢামেক হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে।

ভাটারায় ধর্ষণের শিকার কিশোরীর বড় বোন জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে একটি ছেলে বাসার সামনে থেকে ওই কিশোরীকে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। পরে তার হাত পা বেঁধে জোরপূর্বক ১৫/১৬ বছরের ৪ কিশোর মিলে ধর্ষণ করে। শুক্রবার ভোরে ভাটারা ফাঁসেরটেক এলাকার রাস্তায় তাকে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে ঢামেকের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়। ভাটারা থানার এসআই মো. জুয়েল জানান, এ ঘটনায় স্থানীয় হালিমের ছেলে ও অজ্ঞাতনামা ৩ জনসহ মোট ৪ কিশোরের বিরুদ্ধে শুক্রবার রাতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে।

রামপুরা থানার এসআই আক্তারুজ্জামান মুন্সি জানান, রামপুরায় দুই তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে মুশফিকুল আলম নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই ২ তরুণী রামপুরা আবদুল্লাহবাগ এলাকার একটি ম্যাসে থাকেন। তাদের একজন নিরাপত্তাকর্মী ও আরেকজন একটি দোকানে চাকরি করেন। তাদের ম্যাচে রান্না করতো মুশফিকুল। সেই সুবাদে গত ১ জানুয়ারি এক তরুণীকে ও ৯ জানুয়ারি আরেক তরুণীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে সে। এ ঘটনায় ওই দুই তরুণী বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে থানায় মামলা করলে মুশফিকুলকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করেছে। গতকাল ভোরে ওই দুই তরুণীকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানান এসআই।

এদিকে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কামরাঙ্গীরচরে বান্ধবীর সহায়তায় কিশোরীকে গণধর্ষণের ঘটনায় রতন নামে এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গতকাল সকালে ঢাকার সাভার থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে এ ঘটনায় সহায়তাকারী বান্ধবী স্বপ্নাসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

র‌্যাবের লালবাগ ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মো. আনিসুজ্জামান জানান, প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় বন্ধুদের নিয়ে রতন ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে। ওই কিশোরী এখন ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাকে পরীক্ষা করে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে বলে ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

গত ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত রাজধানীতে ৬ জন ধর্ষণের শিকার হয়ে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন। এদের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব রসূলপুরে এক কিশোরী, একইদিন রাতে ভাটারার আরেক কিশোরী, ১ জানুয়ারি সবুজবাগের এক কিশোরী, ১ জানুয়ারি ও ৯ জানুয়ারি রামপুরায় ২ তরুণী ও ৫ জানুয়ারি কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন।

গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ধর্ষণের শিকার ঢাবি শিক্ষার্থী বাদে অন্যরা হাসপাতালে ভর্তি আছে। এই ৬ জনের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ২ জনের ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তবে এরা একাধিক ব্যক্তি দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে ডিএনএ নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হবে।

তিনি আরও বলেন, এটা সামাজিক অবক্ষয়। শিশু, প্রতিবন্ধীরা এর শিকার হচ্ছে বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশু সঠিক বিচার পাচ্ছে না। প্রয়োজনীয় পুলিশি সহায়তা না পাওয়ায় ভিকটিমদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার আতঙ্ক তাড়া করছে। আসামিরাও উৎসাহী হচ্ছে। জনগণ, সমাজ, মানবাধিকারকর্মী সবাইকে একসঙ্গে তা সমাধানে কাজ করতে হবে। নারী ও শিশু নির্যাতনকারী অপরাধী যেন কোনভাবেই শাস্তির আওতার বাইরে না থাকে সে বিষয়ে সোচ্চার হতে হবে।

রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২০ , ২৮ পৌষ ১৪২৬, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

রাজধানীতে

এগার দিনে ৬ শিশু কিশোরী ও তরুণী ধর্র্ষণ

ঢাকা মেডিকেল ওসিসিতে ভর্তি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

চলতি বছর শুরুর পর থেকে একের পর এক গণধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত গত ১১ দিনে শুধু রাজধানীতেই ধর্ষণের শিকার হয়ে ৬ শিশু, কিশোরী ও তরুণী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সর্বশেষ ১২ বছরের এক কিশোরীকে গণধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোরের বিরুদ্ধে গত শুক্রবার গভীর রাতে রাজধানীর ভাটারা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া রামপুরায় ২ তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে মুশফিকুল আলম (৩৮) নামে এক বাবুর্চিকে এবং কামরাঙ্গীরচরে বান্ধবীর সহযোগিতায় কিশোরীকে গণধর্ষণের ঘটনায় পলাতক আসামি রতনকে সাভার এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। ধর্ষণের শিকার হয় কিশোরী ও তরুণীদের ঢামেক হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে।

ভাটারায় ধর্ষণের শিকার কিশোরীর বড় বোন জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে একটি ছেলে বাসার সামনে থেকে ওই কিশোরীকে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। পরে তার হাত পা বেঁধে জোরপূর্বক ১৫/১৬ বছরের ৪ কিশোর মিলে ধর্ষণ করে। শুক্রবার ভোরে ভাটারা ফাঁসেরটেক এলাকার রাস্তায় তাকে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে ঢামেকের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়। ভাটারা থানার এসআই মো. জুয়েল জানান, এ ঘটনায় স্থানীয় হালিমের ছেলে ও অজ্ঞাতনামা ৩ জনসহ মোট ৪ কিশোরের বিরুদ্ধে শুক্রবার রাতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে।

রামপুরা থানার এসআই আক্তারুজ্জামান মুন্সি জানান, রামপুরায় দুই তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে মুশফিকুল আলম নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই ২ তরুণী রামপুরা আবদুল্লাহবাগ এলাকার একটি ম্যাসে থাকেন। তাদের একজন নিরাপত্তাকর্মী ও আরেকজন একটি দোকানে চাকরি করেন। তাদের ম্যাচে রান্না করতো মুশফিকুল। সেই সুবাদে গত ১ জানুয়ারি এক তরুণীকে ও ৯ জানুয়ারি আরেক তরুণীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে সে। এ ঘটনায় ওই দুই তরুণী বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে থানায় মামলা করলে মুশফিকুলকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করেছে। গতকাল ভোরে ওই দুই তরুণীকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানান এসআই।

এদিকে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কামরাঙ্গীরচরে বান্ধবীর সহায়তায় কিশোরীকে গণধর্ষণের ঘটনায় রতন নামে এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গতকাল সকালে ঢাকার সাভার থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে এ ঘটনায় সহায়তাকারী বান্ধবী স্বপ্নাসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

র‌্যাবের লালবাগ ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মো. আনিসুজ্জামান জানান, প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় বন্ধুদের নিয়ে রতন ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে। ওই কিশোরী এখন ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাকে পরীক্ষা করে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে বলে ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

গত ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত রাজধানীতে ৬ জন ধর্ষণের শিকার হয়ে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন। এদের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব রসূলপুরে এক কিশোরী, একইদিন রাতে ভাটারার আরেক কিশোরী, ১ জানুয়ারি সবুজবাগের এক কিশোরী, ১ জানুয়ারি ও ৯ জানুয়ারি রামপুরায় ২ তরুণী ও ৫ জানুয়ারি কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন।

গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ধর্ষণের শিকার ঢাবি শিক্ষার্থী বাদে অন্যরা হাসপাতালে ভর্তি আছে। এই ৬ জনের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ২ জনের ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তবে এরা একাধিক ব্যক্তি দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে ডিএনএ নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হবে।

তিনি আরও বলেন, এটা সামাজিক অবক্ষয়। শিশু, প্রতিবন্ধীরা এর শিকার হচ্ছে বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশু সঠিক বিচার পাচ্ছে না। প্রয়োজনীয় পুলিশি সহায়তা না পাওয়ায় ভিকটিমদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার আতঙ্ক তাড়া করছে। আসামিরাও উৎসাহী হচ্ছে। জনগণ, সমাজ, মানবাধিকারকর্মী সবাইকে একসঙ্গে তা সমাধানে কাজ করতে হবে। নারী ও শিশু নির্যাতনকারী অপরাধী যেন কোনভাবেই শাস্তির আওতার বাইরে না থাকে সে বিষয়ে সোচ্চার হতে হবে।