৫ ড্রেজারে অবিরাম খনন গড়াইয়ে ফিরছে প্রাণপ্রবাহ

গতবছর এ সময়ে পদ্মার অন্যতম শাখা নদী গড়াই হেঁটে পার পাওয়া যেত। নদীর ঘোড়াঘাট এলাকা দিয়ে দুইপারের লোকজন পাঁয়ে হেটে পারাপার হতো। তবে এবার ভিন্ন চিত্র। নৌকায় পারাপার হতে হচ্ছে। নদীতে পানি প্রবাহ বেড়েছে। ড্রেজিংয়ের ফলে পাল্টে গেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গড়াই নদীর পানি প্রবাহের চিত্র। গত কয়েক বছরের তুলনায় শুস্ক মৌসুমে এবার পানি প্রবাহ স্বাভাবিক থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গড়াইয়ে পানি বৃদ্ধির ফলে সুন্দরবনসহ এ অঞ্চলে নোনা পানির আগ্রাসন বন্ধ হবে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র জানিয়েছে, ‘গড়াই নদীকে সচল রাখতে পরিকল্পিতভাবে ড্রেজিংয়ের সিদ্ধান্ত হয়। সেই মোতাবেক গতবছরের ২৪ অক্টোবর থেকে উৎসমুখ তালবাড়িয়া থেকে শুরু হয় খনন কাজ। আগে দুটি ড্রেজার দিয়ে খনন কাজ চললেও এবারই প্রথম ৫টি ড্রেজার একসঙ্গে খনন চলছে। সকাল ৬টা থেকে শুরু করে রাত ১১টা থেকে ১২টা চলে কাজ।

জানা গেছে, প্রতিবছর বর্ষার পর উৎসমুখে প্রচুর পলি পড়ে পদ্মা থেকে গড়াই নদীতে পানি প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে অক্টোবর-নভেম্বর মাসের দিকে গড়াই নদী শুকিয়ে যায়। এছাড়া বিগত কয়েক বছর অপরিকল্পিত খননে নদী একেবারে সঙ্কুচিত হয়ে আসে। আর খনন কাজেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ আসে। মানিকগঞ্জ ড্রেজার সাব ডিভিশনের বিরুদ্ধে তদন্তে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। এমনকি তেল চুরির সময় ধরা পড়ে তারা। এরপর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নদী পরিদর্শন করে কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে মানিকগঞ্জের পরিবর্তে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ড্রেজার বিভাগকে এ কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়।

ভেড়ামারা ড্রেজার বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, নভেম্বর মাস থেকে তারা তালবাড়িয়াসহ কয়েকটি পয়েন্ট থেকে খনন কাজ শুরু করে। নদীকে পুরোপুরি সচল রাখার স্বাথে এবার পরিকল্পতি খননের ওপর জোর দেয়া হয়। সেই মোতাবেক ৬ কিলোমিটার এলাকা সচল করতে এক দফা খনন কাজ করা হয়। এরপর ডিজাইন অনুযায়ী উৎসমুখ পদ্মায় ৩২০ মিটার চওড়া করে খনন কাজ শুরু হয়, পর্যায়ক্রমে তা ১০ মিটারে এসে শেষ হবে। উৎসমুখ ৩২০ মিটার খননের ফলে এবার পানি প্রবাহ অনেক বেড়ে গেছে। পুরো কাজ শেষ হলে পানি প্রবাহ আরও বাড়বে। নদী যে সঙ্কুচিত হয়ে আসছিল সেটাও আর থাকবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র জানিয়েছে, চলতি বছর ১৯ লাখ ঘট মিটার বালু অপসারণ করা হবে। জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্দেশনা থাকলেও তার আগেই এ কাজ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে জানা গেছে। আর ৩৭ কোটি টাকা বাজেট থাকলেও ২৭ কোটি টাকার মধ্যেই এ কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

গড়াই নদী ড্রেজিং ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী তাজমীর হোসেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৬ কিলোমিটারের মধ্যে সাড়ে ৫ কিলোমিটার কোথাও এক দফা আবার কোথাও দুই দফা খনন কাজ শেষ হয়েছে। গতবছর এ সময় সেখানে নদীতে পানি ছিল না এবার খননের পর চিত্র পাল্টে গেছে। আগের তুলনায় অনেক বেশি চওড়া করে খনন কাজ হচ্ছে। আর নদী থেকে বালু কমপক্ষে ৫০০ থেকে ৬০০ মিটার দূরে দূরে ফেলা হচ্ছে। যাতে বৃষ্টিতে এ বালু নদীতে না আসে। পুরো খননকাজ শেষ হলে নদীর চিত্র অনেকটা বদলে যাবে।’ প্রকৌশলীরা জানান, ‘অনেক স্থানে মাটি ও বালু ফেলার জায়গা নেই। এতে খনন কাজ চালাতে সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে কুষ্টিয়া শহরের জিকে ও রেনউইক এলাকায় জায়গা সঙ্কট রয়েছে। এতে কাজ করা কঠিন হচ্ছে। এখানে বালু ফেলার জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে।

গড়াই ড্রেজিং করে এ বছর বালু উত্তোলন হচ্ছে ১৯ লক্ষ ঘট মিটারের সামন্য কম বা বেশি। প্রতি ফিট বালু ৫০ পয়সা বা ১ টাকা বিক্রি হলেও বালু বিক্রি করেই সরকারের ৩৫ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। যা দিয়ে খনন কাজের টাকা উঠে আসবে। এ বালু টেন্ডারে বিক্রির পক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। এদিকে গড়াই নদী খননের বড় একটি প্রকল্প ফের আসছে। ৩৯ কিলোমিটার খনন ও তীর সংরক্ষণের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘খননের ফলে গড়াই নদী এখন সচল। পরিকল্পতি খননের ফলে এবার চিত্র বদলে গেছে। পানি প্রবাহ ও লেবেল বেড়েছে। এ নদী বাঁচলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জীব-বৈচিত্রসহ পরিবেশ রক্ষা পাবে। তাই নদী খননে কোন অনিয়ম করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পীযুষ কৃষ্ণ কুন্ডুসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা সঙ্গে নিয়ে খনন কাজ পরিদর্শন করেন।

জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন বলেন, গড়াই কুষ্টিয়াসহ আশপাশের জেলার প্রাণ। এ নদীর সঙ্গে সুন্দরবনের মিঠা পানির সম্পর্ক রয়েছে। তাই অতীতে যেসব অনিয়মের অভিযোগ ওঠে তারই প্রেক্ষিত এবার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে নদী তীরে কোন বালি ফেলা যাবে। একটি নিদিষ্ট জোনে বালি ফেলতে হবে। যাতে নদীর পানি প্রবাগ স্বাভাবিক থাকে।’

সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২০ , ২৯ পৌষ ১৪২৬, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

৫ ড্রেজারে অবিরাম খনন গড়াইয়ে ফিরছে প্রাণপ্রবাহ

প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া

image

কুষ্টিয়া: গড়াই নদীতে চলছে খনন কাজ -সংবাদ

গতবছর এ সময়ে পদ্মার অন্যতম শাখা নদী গড়াই হেঁটে পার পাওয়া যেত। নদীর ঘোড়াঘাট এলাকা দিয়ে দুইপারের লোকজন পাঁয়ে হেটে পারাপার হতো। তবে এবার ভিন্ন চিত্র। নৌকায় পারাপার হতে হচ্ছে। নদীতে পানি প্রবাহ বেড়েছে। ড্রেজিংয়ের ফলে পাল্টে গেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গড়াই নদীর পানি প্রবাহের চিত্র। গত কয়েক বছরের তুলনায় শুস্ক মৌসুমে এবার পানি প্রবাহ স্বাভাবিক থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গড়াইয়ে পানি বৃদ্ধির ফলে সুন্দরবনসহ এ অঞ্চলে নোনা পানির আগ্রাসন বন্ধ হবে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র জানিয়েছে, ‘গড়াই নদীকে সচল রাখতে পরিকল্পিতভাবে ড্রেজিংয়ের সিদ্ধান্ত হয়। সেই মোতাবেক গতবছরের ২৪ অক্টোবর থেকে উৎসমুখ তালবাড়িয়া থেকে শুরু হয় খনন কাজ। আগে দুটি ড্রেজার দিয়ে খনন কাজ চললেও এবারই প্রথম ৫টি ড্রেজার একসঙ্গে খনন চলছে। সকাল ৬টা থেকে শুরু করে রাত ১১টা থেকে ১২টা চলে কাজ।

জানা গেছে, প্রতিবছর বর্ষার পর উৎসমুখে প্রচুর পলি পড়ে পদ্মা থেকে গড়াই নদীতে পানি প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে অক্টোবর-নভেম্বর মাসের দিকে গড়াই নদী শুকিয়ে যায়। এছাড়া বিগত কয়েক বছর অপরিকল্পিত খননে নদী একেবারে সঙ্কুচিত হয়ে আসে। আর খনন কাজেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ আসে। মানিকগঞ্জ ড্রেজার সাব ডিভিশনের বিরুদ্ধে তদন্তে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। এমনকি তেল চুরির সময় ধরা পড়ে তারা। এরপর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নদী পরিদর্শন করে কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে মানিকগঞ্জের পরিবর্তে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ড্রেজার বিভাগকে এ কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়।

ভেড়ামারা ড্রেজার বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, নভেম্বর মাস থেকে তারা তালবাড়িয়াসহ কয়েকটি পয়েন্ট থেকে খনন কাজ শুরু করে। নদীকে পুরোপুরি সচল রাখার স্বাথে এবার পরিকল্পতি খননের ওপর জোর দেয়া হয়। সেই মোতাবেক ৬ কিলোমিটার এলাকা সচল করতে এক দফা খনন কাজ করা হয়। এরপর ডিজাইন অনুযায়ী উৎসমুখ পদ্মায় ৩২০ মিটার চওড়া করে খনন কাজ শুরু হয়, পর্যায়ক্রমে তা ১০ মিটারে এসে শেষ হবে। উৎসমুখ ৩২০ মিটার খননের ফলে এবার পানি প্রবাহ অনেক বেড়ে গেছে। পুরো কাজ শেষ হলে পানি প্রবাহ আরও বাড়বে। নদী যে সঙ্কুচিত হয়ে আসছিল সেটাও আর থাকবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র জানিয়েছে, চলতি বছর ১৯ লাখ ঘট মিটার বালু অপসারণ করা হবে। জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্দেশনা থাকলেও তার আগেই এ কাজ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে জানা গেছে। আর ৩৭ কোটি টাকা বাজেট থাকলেও ২৭ কোটি টাকার মধ্যেই এ কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

গড়াই নদী ড্রেজিং ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী তাজমীর হোসেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৬ কিলোমিটারের মধ্যে সাড়ে ৫ কিলোমিটার কোথাও এক দফা আবার কোথাও দুই দফা খনন কাজ শেষ হয়েছে। গতবছর এ সময় সেখানে নদীতে পানি ছিল না এবার খননের পর চিত্র পাল্টে গেছে। আগের তুলনায় অনেক বেশি চওড়া করে খনন কাজ হচ্ছে। আর নদী থেকে বালু কমপক্ষে ৫০০ থেকে ৬০০ মিটার দূরে দূরে ফেলা হচ্ছে। যাতে বৃষ্টিতে এ বালু নদীতে না আসে। পুরো খননকাজ শেষ হলে নদীর চিত্র অনেকটা বদলে যাবে।’ প্রকৌশলীরা জানান, ‘অনেক স্থানে মাটি ও বালু ফেলার জায়গা নেই। এতে খনন কাজ চালাতে সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে কুষ্টিয়া শহরের জিকে ও রেনউইক এলাকায় জায়গা সঙ্কট রয়েছে। এতে কাজ করা কঠিন হচ্ছে। এখানে বালু ফেলার জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে।

গড়াই ড্রেজিং করে এ বছর বালু উত্তোলন হচ্ছে ১৯ লক্ষ ঘট মিটারের সামন্য কম বা বেশি। প্রতি ফিট বালু ৫০ পয়সা বা ১ টাকা বিক্রি হলেও বালু বিক্রি করেই সরকারের ৩৫ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। যা দিয়ে খনন কাজের টাকা উঠে আসবে। এ বালু টেন্ডারে বিক্রির পক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। এদিকে গড়াই নদী খননের বড় একটি প্রকল্প ফের আসছে। ৩৯ কিলোমিটার খনন ও তীর সংরক্ষণের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘খননের ফলে গড়াই নদী এখন সচল। পরিকল্পতি খননের ফলে এবার চিত্র বদলে গেছে। পানি প্রবাহ ও লেবেল বেড়েছে। এ নদী বাঁচলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জীব-বৈচিত্রসহ পরিবেশ রক্ষা পাবে। তাই নদী খননে কোন অনিয়ম করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পীযুষ কৃষ্ণ কুন্ডুসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা সঙ্গে নিয়ে খনন কাজ পরিদর্শন করেন।

জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন বলেন, গড়াই কুষ্টিয়াসহ আশপাশের জেলার প্রাণ। এ নদীর সঙ্গে সুন্দরবনের মিঠা পানির সম্পর্ক রয়েছে। তাই অতীতে যেসব অনিয়মের অভিযোগ ওঠে তারই প্রেক্ষিত এবার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে নদী তীরে কোন বালি ফেলা যাবে। একটি নিদিষ্ট জোনে বালি ফেলতে হবে। যাতে নদীর পানি প্রবাগ স্বাভাবিক থাকে।’