শীতের তীব্রতা কাল থেকে কমবে
রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ অঞ্চলেই কমেছে তাপমাত্রা। পাশাপাশি কুয়াশাঢাকা আকাশে দেখা মেলেনি সূর্যের। দেশের কয়েকটি অঞ্চলের ওপর দিয়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ফলে ঢাকাসহ সারাদেশেই বেড়েছে শীতের তীব্রতা। শীতের দাপট উত্তরবঙ্গে একটু বেশি। তবে আগামীকালের মধ্যে তাপমাত্রা বাড়ার পাশাপাশি শীতের প্রকোপ কমবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক সংবাদকে বলেন, ঈশ্বরদী, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় ও কুষ্টিয়া অঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহ নেই। এই শৈত্যপ্রবাহ ২/১ দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। তখন তাপমাত্রা বাড়বে। শীতের দাপটও কমবে।
গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল রাজারহাটে ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় ছিল ১৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪ দশমিক ১ এবং দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ঈশ্বরদীতে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রোববার রাজশাহী বিভাগের ইশ্বরদীতে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রংপুর বিভাগের তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হবে তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে হলে। ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে হলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি হলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়।
শনিবারের মতো গতকালও ঢাকার আকাশে সূর্যের দেখা মেলেনি। হিম বাতাসের সঙ্গে কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে তীব্র শীত অনুভূত হয়েছে। রাতে তাপমাত্রা আরও কমে যায়। এর ফলে ছিন্নমূল ও দিনমজুর মানুষদের বেশ কষ্ট পোহাতে হয়।
আবহাওয়া অফিস জানায়, সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে, তা দেশের কোথাও কোথাও বিকেল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। আগামী ৭২ ঘণ্টার শেষের দিকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়ার সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল ও তৎসংগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আবহাওয়া অধিদফতর আগেই চলতি মাসেই সারাদেশে দুটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ও একটি মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল। এরমধ্যে দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে এক দফায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। এছাড়া বছরের শুরুতেই বৃষ্টিও হয়েছে রাজধানীসহ দেশের অনেক অঞ্চলে। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, জানুয়ারির মাঝামাঝিতে বইতে পারে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ। আর শেষের দিকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কুড়িগ্রামে শীত জেঁকে বসেছে
কুড়িগ্রামে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে। টানা শীতের কারণে হাসপাতালগুলোতে শিশু ও বয়স্ক রোগীদের ভিড় বেড়ে গেছে। শীতের প্রকোপে বোরো বীজতলা ও আলু ক্ষেতে ক্ষতির শঙ্কা দিয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মোস্তাফিজার রহমান প্রধান জানান, চলতি বছর জেলায় ৫ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে বীজতলা লাগানোর টার্গেট নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত হয় ৫ হাজার ৯৯৪ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও আলুর টার্গেট ছিল ৫ হাজার ৬৮৮ হেক্টর জমিতে এখন পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ৬ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে। টানা শীতের কারণে কিছু কিছু এলাকায় বোরো ও আলু ক্ষেতের কিছুটা ক্ষতি হলেও দিনে রোদের কারণে ক্ষতিটা পুষিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়াও সার্বক্ষণিকভাবে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম জেনালের হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার পুলক কুমার সরকার জানান, রোববার ৩৭ জন ডায়েরিয়া রোগীর মধ্যে ৩৬ জনই শিশু। প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, আরও কয়েকদিন আবহাওয়া এমন থাকবে। রোববার কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জেলা প্রশাসক মোসা. সুলতানা পারভীন জানান, শীত মোকাবিলা করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫৯ হাজার ১৪ পিস কম্বল বিতরণের পর আরও ২ হাজার কম্বল পাওয়া গেছে। এছাড়াও কম্বল কেনার জন্য ১০ লক্ষ টাকা, শিশুদের পোশাক কেনার জন্য ৩ লক্ষ টাকা এবং শিশুখাদ্যের জন্য আরও ১ লক্ষ টাকা পাওয়া গেছে।
সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২০ , ২৯ পৌষ ১৪২৬, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১
শীতের তীব্রতা কাল থেকে কমবে
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ অঞ্চলেই কমেছে তাপমাত্রা। পাশাপাশি কুয়াশাঢাকা আকাশে দেখা মেলেনি সূর্যের। দেশের কয়েকটি অঞ্চলের ওপর দিয়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ফলে ঢাকাসহ সারাদেশেই বেড়েছে শীতের তীব্রতা। শীতের দাপট উত্তরবঙ্গে একটু বেশি। তবে আগামীকালের মধ্যে তাপমাত্রা বাড়ার পাশাপাশি শীতের প্রকোপ কমবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক সংবাদকে বলেন, ঈশ্বরদী, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় ও কুষ্টিয়া অঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহ নেই। এই শৈত্যপ্রবাহ ২/১ দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। তখন তাপমাত্রা বাড়বে। শীতের দাপটও কমবে।
গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল রাজারহাটে ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় ছিল ১৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪ দশমিক ১ এবং দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ঈশ্বরদীতে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রোববার রাজশাহী বিভাগের ইশ্বরদীতে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রংপুর বিভাগের তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হবে তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে হলে। ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে হলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি হলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়।
শনিবারের মতো গতকালও ঢাকার আকাশে সূর্যের দেখা মেলেনি। হিম বাতাসের সঙ্গে কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে তীব্র শীত অনুভূত হয়েছে। রাতে তাপমাত্রা আরও কমে যায়। এর ফলে ছিন্নমূল ও দিনমজুর মানুষদের বেশ কষ্ট পোহাতে হয়।
আবহাওয়া অফিস জানায়, সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে, তা দেশের কোথাও কোথাও বিকেল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। আগামী ৭২ ঘণ্টার শেষের দিকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়ার সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল ও তৎসংগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আবহাওয়া অধিদফতর আগেই চলতি মাসেই সারাদেশে দুটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ও একটি মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল। এরমধ্যে দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে এক দফায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। এছাড়া বছরের শুরুতেই বৃষ্টিও হয়েছে রাজধানীসহ দেশের অনেক অঞ্চলে। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, জানুয়ারির মাঝামাঝিতে বইতে পারে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ। আর শেষের দিকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কুড়িগ্রামে শীত জেঁকে বসেছে
কুড়িগ্রামে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে। টানা শীতের কারণে হাসপাতালগুলোতে শিশু ও বয়স্ক রোগীদের ভিড় বেড়ে গেছে। শীতের প্রকোপে বোরো বীজতলা ও আলু ক্ষেতে ক্ষতির শঙ্কা দিয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মোস্তাফিজার রহমান প্রধান জানান, চলতি বছর জেলায় ৫ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে বীজতলা লাগানোর টার্গেট নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত হয় ৫ হাজার ৯৯৪ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও আলুর টার্গেট ছিল ৫ হাজার ৬৮৮ হেক্টর জমিতে এখন পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ৬ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে। টানা শীতের কারণে কিছু কিছু এলাকায় বোরো ও আলু ক্ষেতের কিছুটা ক্ষতি হলেও দিনে রোদের কারণে ক্ষতিটা পুষিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়াও সার্বক্ষণিকভাবে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম জেনালের হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার পুলক কুমার সরকার জানান, রোববার ৩৭ জন ডায়েরিয়া রোগীর মধ্যে ৩৬ জনই শিশু। প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, আরও কয়েকদিন আবহাওয়া এমন থাকবে। রোববার কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জেলা প্রশাসক মোসা. সুলতানা পারভীন জানান, শীত মোকাবিলা করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫৯ হাজার ১৪ পিস কম্বল বিতরণের পর আরও ২ হাজার কম্বল পাওয়া গেছে। এছাড়াও কম্বল কেনার জন্য ১০ লক্ষ টাকা, শিশুদের পোশাক কেনার জন্য ৩ লক্ষ টাকা এবং শিশুখাদ্যের জন্য আরও ১ লক্ষ টাকা পাওয়া গেছে।