মেট্রোরেল দিয়াবাড়ি থেকে কমলাপুর

চল্লিশ শতাংশ অগ্রগতি লাল সবুজ নমুনা ট্রেন ঢাকায় পৌঁছেছে

রাজধানীর উত্তরা-মতিঝিল পর্যন্ত পুরোধমে চলছে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৪০ শতাংশ। ইতোমধ্যে ঢাকায় আনা হয়েছে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) বা মেট্রোরেলের নমুনা ট্রেন (মকআপ)। আগামী মার্চে রাজধানীর উত্তরায় দিয়াবাড়ি এমআরটি তথ্য ও প্রদর্শনী কেন্দ্রে স্থাপন করা হবে ট্র্রেনটি। এর মাধ্যমে মেট্রোরেলের টিকিট কাঁটা, ট্রেনে চড়া, দাঁড়ানো, নামা, ট্রেনের ভেতরে এবং স্টেশনের নির্দেশিকাগুলো কেমন থাকবে-এসব বিষয়ে মানুষকে ধারণা দেয়া হবে। চলতি বছরের ১৫ জুন জাপান থেকে ঢাকায় আনা হবে মেট্রোরেলে প্রথম সেট। একটি ট্রেনের ৬টি করে কোচ থাকবে। প্রতি ৪ মিনিট পরপর ১ হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে মেট্রোরেল। ঘণ্টায় প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হবে। রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে সময় লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট। দেশের প্রথম মেট্রোরেল বা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি-৬) ২০২১ সালের ডিসেম্বরে খুলে দেয়া হবে। প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল)।

প্রকল্প সূত্র জানায়, প্রথমিকভাবে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। পরে তা কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিট ১৬ কিলোমিটার বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণ কাজ চলছে। আর কমলাপুর অংশের ফিজিরিলিটি স্টাডি করা হচ্ছে। প্রকল্পের আয়তন বৃদ্ধি করা হলেও ব্যয় বৃদ্ধি হবে না। নির্ধারিত ব্যয়ে বর্ধিত অংশের কাজ শেষ করা হবে। বর্তমানে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ চলচে। গত ১ জানুয়ারি শুরু হয়েছে রেলপাত বসানোর কাজ। উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত রেল পাত বসানোর কাজ চলছে। এমআরটি-৬ প্রকল্পটি আটটি প্যাকেজে ভাগ করে পরিচালনা করা হচ্ছে। ১ নম্বর প্যাকেজের আওতায় দিয়াবাড়ী এলাকায় ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের অক্টোবরে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে এর কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। ডিপো এলাকার পূর্ত কাজ করা হচ্ছে প্যাকেজ-২ এর আওতায়। এর মধ্যে ডিপোতে ট্রেন রাখার স্থান, ট্রেন মেরামত ও মালামালের গুদাম, প্রধান ওয়ার্কশপসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। এই প্যাকেজের অগ্রগতি ৬০ শতাংশ। উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট (উড়ালপথ) এবং ৯টি স্টেশন নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে ৩ ও ৪ প্যাকেজে। এই প্যাকেজ দুটির অগ্রগতি ৫৭ শতাংশ। আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৯৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট (উড়লপথ) ও তিনটি স্টেশন নির্মাণ হচ্ছে প্যাকেজ পাঁচের আওতায়। এই প্যাকেজের অগ্রগতি ২৩ দশমিক ৪৩ ভাগ। এ অংশের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট। কারওয়ানবাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৪ দশমিক ৯২২ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৪টি স্টেশন নির্মাণ হচ্ছে প্যাকেজ ছয়ের আওতায়। এই কাজের অগ্রগতি ২৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এছাড়া মেট্রোরেলের বিদ্যুৎ পরিচালনা ও যান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে প্যাকেজ সাতের আওতায়। এই প্যাকেজের অগ্রগতি ২১ দশমিক ৮২ শতাংশ। রেলের কোচ এবং ডিপোর যন্ত্রপাতি সংগ্রহের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে প্যাকেজ ৮-এর অধীনে। এই প্যাকেজের অগ্রগতি ১৭ দশমিক ৬১ শতাংশ। বর্ধিত অংশসহ দিয়াবাড়ী-কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল পুরো অংশ ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর খুলে দেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানায়।

এ বিষয়ে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, আশা করছি ২০২১ সালে বিজয়ের মাসে ইনশাআল্লাহ এমআরটি লাইন-৬, তরুণ প্রজন্মের ড্রিম প্রজেক্ট, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রায়োরিটি প্রজেক্ট, মেগা প্রকল্প, ফার্স্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট, মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হবে, বিজয়ের মাসে উদ্বোধন হবে- এটাই আমাদের নববর্ষের প্রত্যাশা। মেট্রোরেল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠার চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করবেন বলে বলেছিলেন। আমরা এরপরও ২০২১ এ চলে গেছি। আমাদের আরও কিছু আনুষঙ্গিক কাজ আছে সেসব শেষ করার জন্য সর্বশেষ টার্গেট দিয়েছি ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। এর মধ্যে আমার মনে হয় কাজ সম্পন্ন হবে। তবে তারা যে টার্গেট দিয়েছে তা ঠিক থাকেনি এমন কোন ঘটনা এর আগে অন্য কোন প্রকল্পে ঘটেনি। এমআরটি লাইন ৬ মেট্রোরেল প্রকল্পের সাড়ে ৮ কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান। রাজধানী ঢাকার যানজটের চিরচেনা দৃশ্য ২০৩০ সালে বদলে যাবে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সব মিলিয়ে ২০৩০ সালে ছয়টি মেট্রোরেলের পৌনে ২০০ কিলোমিটারের সব কাজ শেষ হল ঢাকায় যানজটমুক্ত অনিন্দ্য সুন্দর এক দৃশ্যপট আমরা দেখতে পাব। ঢাকা শহরে যান চলাচলের চিত্রই পাল্টে যাবে।

সরেজমিনে প্রকল্প এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, কারওয়ানবাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এই অংশের কাজ কিছুটা ধীরগতিতে চলছে। তবে উত্তরা-আগারগাঁও পর্যন্ত ভায়াগাক্ট (উড়ালপথ) ও রেলওয়ে পাত বসানো কাজ চলছে পুরোধমে। দিয়াবাড়ীতে ডিপো থেকে উড়ালপথে ট্রেন ওঠার পথ তৈরির কাজ চলছে। পাথর-বালুর মিশ্রণে সাববেইজ-এর কাজ শেষ। সাব বেইজের ওপর থাকবে পাথর, পাথরের ওপর স্পিার আর পাত বসানো হয়েছে। মেট্রোরেল পরিচালনা করা হবে ডিপো থেকে। সেখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। ডিপোর ছাউনির জন্য ইস্পাতের কাঠামো তৈরি হয়ে গেছে। এখানে রেলের টেস্ট ট্র্যাক বেড, কোচ আনলোডিং এরিয়া, জ্যাক পিট, বগি টার্ন টেবল, বগি ওয়াশ পান্টসহ অন্য অংশের ভিত্তি নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা, জলাধার, প্রশাসনিক ভবন, মসজিদ, মেডিকেল সেন্টারসহ অন্য স্থাপনাও নির্মাণ হচ্ছে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, লাল-সবুজ রঙে হবে মেট্রোরেলের কোচ। ইতোমধ্যে রেলের কোচ, ইঞ্জিন ও সেট তৈরির কাজ করছে জাপানের প্রতিষ্ঠান কাওয়াসাকি মিতসুবিশি করপোরেশন (কেএমসি)। চূড়ান্ত করা হয়েছে মেট্রোরেলের লোকোমোটিভ ডিজাইন। ঢাকায় আনা হয়েছে মেট্রোরেলের নমুনা ট্রেন মকআপ বা রেপ্লিকা। বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে মেট্রোরেল। প্রতিটি ট্রেনেস্টেইনলেস স্টিলের তৈরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছয়টি বগি থাকবে। বগির উভয়পাশে চারটি দরজা থাকবে। ট্রেনে সিটের ধরন হবে লম্বালম্বি এবং প্রতি ট্রেনে ২টি হুইল চেয়ার থাকবে। এ ছাড়া থাকবে স্মার্টকার্ড টিকিটিং পদ্ধতি। রাস্তার মাঝ বরাবর ওপর দিয়ে মোট ২৪ জোড়া মেট্রোরেল চলাচল করবে ঢাকায়। উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে শুরু হয়ে মিরপুর-ফার্মগেট দিয়ে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত যাবে এই মেট্রোরেল। সময় লাগবে ৪০ মিনিটেরও কম। মোট ১৭টি স্টেশন হবে মেট্রোরেলের। এগুলো হবে- উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর-১০ নম্বর, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও কমলাপুর। মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দিচ্ছে জাইকা। বাকি পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা দিচ্ছে সরকার। ২০১২ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) এ প্রকল্প অনুমোদন পায়।

এ বিষয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক সংবাদকে বলেন, মেট্রোরেল নমুনা ট্রেন মকআপ গত ২৬ নভেম্বর ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। এটি আগামী মার্চে রাজধানী দিয়াবাড়ীতে এমআরটি তথ্য ও প্রদর্শনী কেন্দ্রে স্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে মট্রোরেল সম্পর্কে মানুষকে ধারণা দেয়া হবে। গত ১ জানুয়ারি থেকে উত্তরা-আগারগাঁও অংশে রেলওয়ে ট্র্যাক বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। ২০১৬ সালে ২৬ জুন এ প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ভালো। ৮টি প্যাকেছে প্রকল্পের কাজ চলছে। আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমলাপুরের বর্ধিত অংশসহ পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

image
আরও খবর
শীতাচ্ছন্ন নগরীতে নির্বাচনী উত্তাপ
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হত্যা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্বেগ প্রকাশ
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এন্টি র‌্যাগিং কমিটি গঠনের নির্দেশ
মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা
চট্টগ্রাম-৮ আসনে আজ উপনির্বাচন
মিজান ও বাছিরের বিরুদ্ধে চার্জশিট
সাঈদ খোকন আ’লীগ কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেলেন
মৃদু শৈত্যপ্রবাহ
প্রচারে মন্ত্রী-এমপিদের প্রয়োজন নেই দুই প্রার্থীই যথেষ্ট কাদের
মেয়রদের ক্ষমতা ও কাজের পরিধি বাড়াতে হবে
তুইতো মুচি, তোর লেখাপড়া শিখে কি লাভ
ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন গ্রেফতার
ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ
ক্ষণগণনা

সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২০ , ২৯ পৌষ ১৪২৬, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

মেট্রোরেল দিয়াবাড়ি থেকে কমলাপুর

চল্লিশ শতাংশ অগ্রগতি লাল সবুজ নমুনা ট্রেন ঢাকায় পৌঁছেছে

মাহমুদ আকাশ

image

রাজধানীর উত্তরা-মতিঝিল পর্যন্ত পুরোধমে চলছে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৪০ শতাংশ। ইতোমধ্যে ঢাকায় আনা হয়েছে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) বা মেট্রোরেলের নমুনা ট্রেন (মকআপ)। আগামী মার্চে রাজধানীর উত্তরায় দিয়াবাড়ি এমআরটি তথ্য ও প্রদর্শনী কেন্দ্রে স্থাপন করা হবে ট্র্রেনটি। এর মাধ্যমে মেট্রোরেলের টিকিট কাঁটা, ট্রেনে চড়া, দাঁড়ানো, নামা, ট্রেনের ভেতরে এবং স্টেশনের নির্দেশিকাগুলো কেমন থাকবে-এসব বিষয়ে মানুষকে ধারণা দেয়া হবে। চলতি বছরের ১৫ জুন জাপান থেকে ঢাকায় আনা হবে মেট্রোরেলে প্রথম সেট। একটি ট্রেনের ৬টি করে কোচ থাকবে। প্রতি ৪ মিনিট পরপর ১ হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে মেট্রোরেল। ঘণ্টায় প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হবে। রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে সময় লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট। দেশের প্রথম মেট্রোরেল বা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি-৬) ২০২১ সালের ডিসেম্বরে খুলে দেয়া হবে। প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল)।

প্রকল্প সূত্র জানায়, প্রথমিকভাবে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। পরে তা কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিট ১৬ কিলোমিটার বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণ কাজ চলছে। আর কমলাপুর অংশের ফিজিরিলিটি স্টাডি করা হচ্ছে। প্রকল্পের আয়তন বৃদ্ধি করা হলেও ব্যয় বৃদ্ধি হবে না। নির্ধারিত ব্যয়ে বর্ধিত অংশের কাজ শেষ করা হবে। বর্তমানে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ চলচে। গত ১ জানুয়ারি শুরু হয়েছে রেলপাত বসানোর কাজ। উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত রেল পাত বসানোর কাজ চলছে। এমআরটি-৬ প্রকল্পটি আটটি প্যাকেজে ভাগ করে পরিচালনা করা হচ্ছে। ১ নম্বর প্যাকেজের আওতায় দিয়াবাড়ী এলাকায় ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের অক্টোবরে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে এর কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। ডিপো এলাকার পূর্ত কাজ করা হচ্ছে প্যাকেজ-২ এর আওতায়। এর মধ্যে ডিপোতে ট্রেন রাখার স্থান, ট্রেন মেরামত ও মালামালের গুদাম, প্রধান ওয়ার্কশপসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। এই প্যাকেজের অগ্রগতি ৬০ শতাংশ। উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট (উড়ালপথ) এবং ৯টি স্টেশন নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে ৩ ও ৪ প্যাকেজে। এই প্যাকেজ দুটির অগ্রগতি ৫৭ শতাংশ। আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৯৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট (উড়লপথ) ও তিনটি স্টেশন নির্মাণ হচ্ছে প্যাকেজ পাঁচের আওতায়। এই প্যাকেজের অগ্রগতি ২৩ দশমিক ৪৩ ভাগ। এ অংশের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট। কারওয়ানবাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৪ দশমিক ৯২২ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৪টি স্টেশন নির্মাণ হচ্ছে প্যাকেজ ছয়ের আওতায়। এই কাজের অগ্রগতি ২৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এছাড়া মেট্রোরেলের বিদ্যুৎ পরিচালনা ও যান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে প্যাকেজ সাতের আওতায়। এই প্যাকেজের অগ্রগতি ২১ দশমিক ৮২ শতাংশ। রেলের কোচ এবং ডিপোর যন্ত্রপাতি সংগ্রহের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে প্যাকেজ ৮-এর অধীনে। এই প্যাকেজের অগ্রগতি ১৭ দশমিক ৬১ শতাংশ। বর্ধিত অংশসহ দিয়াবাড়ী-কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল পুরো অংশ ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর খুলে দেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানায়।

এ বিষয়ে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, আশা করছি ২০২১ সালে বিজয়ের মাসে ইনশাআল্লাহ এমআরটি লাইন-৬, তরুণ প্রজন্মের ড্রিম প্রজেক্ট, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রায়োরিটি প্রজেক্ট, মেগা প্রকল্প, ফার্স্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট, মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হবে, বিজয়ের মাসে উদ্বোধন হবে- এটাই আমাদের নববর্ষের প্রত্যাশা। মেট্রোরেল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠার চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করবেন বলে বলেছিলেন। আমরা এরপরও ২০২১ এ চলে গেছি। আমাদের আরও কিছু আনুষঙ্গিক কাজ আছে সেসব শেষ করার জন্য সর্বশেষ টার্গেট দিয়েছি ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। এর মধ্যে আমার মনে হয় কাজ সম্পন্ন হবে। তবে তারা যে টার্গেট দিয়েছে তা ঠিক থাকেনি এমন কোন ঘটনা এর আগে অন্য কোন প্রকল্পে ঘটেনি। এমআরটি লাইন ৬ মেট্রোরেল প্রকল্পের সাড়ে ৮ কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান। রাজধানী ঢাকার যানজটের চিরচেনা দৃশ্য ২০৩০ সালে বদলে যাবে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সব মিলিয়ে ২০৩০ সালে ছয়টি মেট্রোরেলের পৌনে ২০০ কিলোমিটারের সব কাজ শেষ হল ঢাকায় যানজটমুক্ত অনিন্দ্য সুন্দর এক দৃশ্যপট আমরা দেখতে পাব। ঢাকা শহরে যান চলাচলের চিত্রই পাল্টে যাবে।

সরেজমিনে প্রকল্প এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, কারওয়ানবাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এই অংশের কাজ কিছুটা ধীরগতিতে চলছে। তবে উত্তরা-আগারগাঁও পর্যন্ত ভায়াগাক্ট (উড়ালপথ) ও রেলওয়ে পাত বসানো কাজ চলছে পুরোধমে। দিয়াবাড়ীতে ডিপো থেকে উড়ালপথে ট্রেন ওঠার পথ তৈরির কাজ চলছে। পাথর-বালুর মিশ্রণে সাববেইজ-এর কাজ শেষ। সাব বেইজের ওপর থাকবে পাথর, পাথরের ওপর স্পিার আর পাত বসানো হয়েছে। মেট্রোরেল পরিচালনা করা হবে ডিপো থেকে। সেখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। ডিপোর ছাউনির জন্য ইস্পাতের কাঠামো তৈরি হয়ে গেছে। এখানে রেলের টেস্ট ট্র্যাক বেড, কোচ আনলোডিং এরিয়া, জ্যাক পিট, বগি টার্ন টেবল, বগি ওয়াশ পান্টসহ অন্য অংশের ভিত্তি নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা, জলাধার, প্রশাসনিক ভবন, মসজিদ, মেডিকেল সেন্টারসহ অন্য স্থাপনাও নির্মাণ হচ্ছে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, লাল-সবুজ রঙে হবে মেট্রোরেলের কোচ। ইতোমধ্যে রেলের কোচ, ইঞ্জিন ও সেট তৈরির কাজ করছে জাপানের প্রতিষ্ঠান কাওয়াসাকি মিতসুবিশি করপোরেশন (কেএমসি)। চূড়ান্ত করা হয়েছে মেট্রোরেলের লোকোমোটিভ ডিজাইন। ঢাকায় আনা হয়েছে মেট্রোরেলের নমুনা ট্রেন মকআপ বা রেপ্লিকা। বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে মেট্রোরেল। প্রতিটি ট্রেনেস্টেইনলেস স্টিলের তৈরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছয়টি বগি থাকবে। বগির উভয়পাশে চারটি দরজা থাকবে। ট্রেনে সিটের ধরন হবে লম্বালম্বি এবং প্রতি ট্রেনে ২টি হুইল চেয়ার থাকবে। এ ছাড়া থাকবে স্মার্টকার্ড টিকিটিং পদ্ধতি। রাস্তার মাঝ বরাবর ওপর দিয়ে মোট ২৪ জোড়া মেট্রোরেল চলাচল করবে ঢাকায়। উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে শুরু হয়ে মিরপুর-ফার্মগেট দিয়ে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত যাবে এই মেট্রোরেল। সময় লাগবে ৪০ মিনিটেরও কম। মোট ১৭টি স্টেশন হবে মেট্রোরেলের। এগুলো হবে- উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর-১০ নম্বর, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও কমলাপুর। মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দিচ্ছে জাইকা। বাকি পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা দিচ্ছে সরকার। ২০১২ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) এ প্রকল্প অনুমোদন পায়।

এ বিষয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক সংবাদকে বলেন, মেট্রোরেল নমুনা ট্রেন মকআপ গত ২৬ নভেম্বর ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। এটি আগামী মার্চে রাজধানী দিয়াবাড়ীতে এমআরটি তথ্য ও প্রদর্শনী কেন্দ্রে স্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে মট্রোরেল সম্পর্কে মানুষকে ধারণা দেয়া হবে। গত ১ জানুয়ারি থেকে উত্তরা-আগারগাঁও অংশে রেলওয়ে ট্র্যাক বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। ২০১৬ সালে ২৬ জুন এ প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ভালো। ৮টি প্যাকেছে প্রকল্পের কাজ চলছে। আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমলাপুরের বর্ধিত অংশসহ পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।