মেয়রদের ক্ষমতা ও কাজের পরিধি বাড়াতে হবে

ঢাকায় নাগরিক সেবা দিতে ৭টি মন্ত্রণালয় ও দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে সমন্বয়হীনতার বিষয়টি তুলে ধরে স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ মোবাশ্বের হোসেন বলেছেন, মেয়ররাও মন্ত্রণালয়গুলোর চাপে থাকেন। এজন্য মেয়রদের ক্ষমতা ও কাজের পরিধি বাড়ানোর পক্ষে মতো দিয়েছেন তিনি। গতকাল সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘নিরাপদ, নারীবান্ধব ঢাকা মহানগর গড়ে তোলার লক্ষ্যে নারী কাউন্সিলরদের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন। এছাড়া মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রেখা চৌধুরী সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম। সভাপতিত্ব করেন ফওজিয়া মোসলেম। এতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কয়েকজন নারী কাউন্সিলর অংশগ্রহণ করেন।

মোবাশ্বের হোসেন বলেন, একজন মেয়রের কী ক্ষমতা আছে? ঢাকা শহরের মেয়র ৩০ লাখ ভোটারের ভোটে নির্বাচিত হন। তারা দুইজন মেয়র ১৬ জন এমপির সমান ভোট নিয়ে নির্বাচিত হন। কিন্তু মেয়র মাত্র তিনটি কাজ করতে পারেন। ইলেকট্রিক পোলের বাল্ব বদলাতে পারেন, কিন্তু পোলটি এক ইঞ্চি নড়াতে বা সরাতে পারেন না। আরেকটা কাজ হচ্ছে তিনি রাস্তা পরিষ্কার করতে পারেন। তিন নম্বর কাজ হচ্ছে, উনি ট্যাক্স কালেক্ট করবেন। ৭টি মন্ত্রণালয় ঢাকা সিটি করপোরেশনে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকা শহরে জনগণের সেবা দেয়ার জন্য ৭টি মন্ত্রণালয় পাগলের মতো কাজ করে। তাদের প্রায় ৫৪টা প্রতিষ্ঠান আছে। সাত মন্ত্রণালয়ের প্রত্যেক মন্ত্রী মনে করেন, এখানে আমিই সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাশালী। সাত মন্ত্রণালয়ের প্রেসারের কারণে নিষ্পেষিত হয় মেয়র।

স্থপতি মোবাশ্বের বলেন, ঢাকা শহরের মেয়রের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতাশালী মফস্বলের মেয়র বা চেয়ারম্যান। কারণ মফস্বলের মেয়র বাড়ির প্লান পাস করা, পানির সংযোগ দেন। কিন্তু ঢাকার মেয়রের এই ক্ষমতা নেই। এখন মেয়রকে ক্ষমতায়ন করতে হবে। মেয়রকে ক্ষমতায়ন করার প্রথম ধাপ হচ্ছে ওই ৭টি মন্ত্রণালয়ের ওপরে মেয়রকে ঝাঁপির মতো থাকতে হবে। তা না হলে আপনাকে তারা কিছু দেবে না। মন্ত্রীদের কথা বাদই দিলাম, এইসব মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, উনারা কিছুতেই ক্ষমতা হাতছাড়া করতে চায় না। ঢাকা নগরীর উন্নয়নে পুরুষ কাউন্সিলরদের মতো নির্বাচিত নারী কাউন্সিলরদেরও সমান সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বক্তারা বলেন, বর্তমানে ঢাকা শহরে মোট জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ যা বিশ্বের জনবহুল শহরের মধ্যে ১১তম এবং বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ নগর। এই শহরের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, ধনী-দরিদ্র, প্রান্তিক, প্রতিবন্ধী ও ভাসমান মানুষের বাস। কিন্তু বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে এই বিপুল জনসংখ্যা মারত্মক ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে। বিশেষ করে নারীরা। তাই উন্নয়নশীল ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ হিসেবে নানা সূচকে এগিয়ে আসা দেশের রাজধানী সামগ্রিক উন্নয়নে একটি পরিকল্পিত, উন্নত, আধুনিক, নিরাপদ নারী বান্ধব নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২০ , ২৯ পৌষ ১৪২৬, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

মেয়রদের ক্ষমতা ও কাজের পরিধি বাড়াতে হবে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

ঢাকায় নাগরিক সেবা দিতে ৭টি মন্ত্রণালয় ও দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে সমন্বয়হীনতার বিষয়টি তুলে ধরে স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ মোবাশ্বের হোসেন বলেছেন, মেয়ররাও মন্ত্রণালয়গুলোর চাপে থাকেন। এজন্য মেয়রদের ক্ষমতা ও কাজের পরিধি বাড়ানোর পক্ষে মতো দিয়েছেন তিনি। গতকাল সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘নিরাপদ, নারীবান্ধব ঢাকা মহানগর গড়ে তোলার লক্ষ্যে নারী কাউন্সিলরদের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন। এছাড়া মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রেখা চৌধুরী সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম। সভাপতিত্ব করেন ফওজিয়া মোসলেম। এতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কয়েকজন নারী কাউন্সিলর অংশগ্রহণ করেন।

মোবাশ্বের হোসেন বলেন, একজন মেয়রের কী ক্ষমতা আছে? ঢাকা শহরের মেয়র ৩০ লাখ ভোটারের ভোটে নির্বাচিত হন। তারা দুইজন মেয়র ১৬ জন এমপির সমান ভোট নিয়ে নির্বাচিত হন। কিন্তু মেয়র মাত্র তিনটি কাজ করতে পারেন। ইলেকট্রিক পোলের বাল্ব বদলাতে পারেন, কিন্তু পোলটি এক ইঞ্চি নড়াতে বা সরাতে পারেন না। আরেকটা কাজ হচ্ছে তিনি রাস্তা পরিষ্কার করতে পারেন। তিন নম্বর কাজ হচ্ছে, উনি ট্যাক্স কালেক্ট করবেন। ৭টি মন্ত্রণালয় ঢাকা সিটি করপোরেশনে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকা শহরে জনগণের সেবা দেয়ার জন্য ৭টি মন্ত্রণালয় পাগলের মতো কাজ করে। তাদের প্রায় ৫৪টা প্রতিষ্ঠান আছে। সাত মন্ত্রণালয়ের প্রত্যেক মন্ত্রী মনে করেন, এখানে আমিই সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাশালী। সাত মন্ত্রণালয়ের প্রেসারের কারণে নিষ্পেষিত হয় মেয়র।

স্থপতি মোবাশ্বের বলেন, ঢাকা শহরের মেয়রের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতাশালী মফস্বলের মেয়র বা চেয়ারম্যান। কারণ মফস্বলের মেয়র বাড়ির প্লান পাস করা, পানির সংযোগ দেন। কিন্তু ঢাকার মেয়রের এই ক্ষমতা নেই। এখন মেয়রকে ক্ষমতায়ন করতে হবে। মেয়রকে ক্ষমতায়ন করার প্রথম ধাপ হচ্ছে ওই ৭টি মন্ত্রণালয়ের ওপরে মেয়রকে ঝাঁপির মতো থাকতে হবে। তা না হলে আপনাকে তারা কিছু দেবে না। মন্ত্রীদের কথা বাদই দিলাম, এইসব মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, উনারা কিছুতেই ক্ষমতা হাতছাড়া করতে চায় না। ঢাকা নগরীর উন্নয়নে পুরুষ কাউন্সিলরদের মতো নির্বাচিত নারী কাউন্সিলরদেরও সমান সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বক্তারা বলেন, বর্তমানে ঢাকা শহরে মোট জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ যা বিশ্বের জনবহুল শহরের মধ্যে ১১তম এবং বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ নগর। এই শহরের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, ধনী-দরিদ্র, প্রান্তিক, প্রতিবন্ধী ও ভাসমান মানুষের বাস। কিন্তু বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে এই বিপুল জনসংখ্যা মারত্মক ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে। বিশেষ করে নারীরা। তাই উন্নয়নশীল ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ হিসেবে নানা সূচকে এগিয়ে আসা দেশের রাজধানী সামগ্রিক উন্নয়নে একটি পরিকল্পিত, উন্নত, আধুনিক, নিরাপদ নারী বান্ধব নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।