মুজিববর্ষ হোক জাতির জনকের আদর্শ বাস্তবায়নের অভিযাত্রা

নিতাই চন্দ্র রায়

২০২০ সাল বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি বছর। বছরটিতে উদযাপিত হতে যাচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক, স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। সারা পৃথিবীর বাংলা ভাষাভাষী মানুষ এই দিনটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। প্রহর গুনছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের। আমরা গর্বিত কারণ, জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকীর মতো আলোকোজ্জ্বল একটি অনুষ্ঠান দেখার সৌভাগ্য হবে আমাদের। এ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিখ্যাত নেতাদের মুখ থেকে নিঃসৃত জাতির জনকের কর্মময় জীবন এবং তার আদর্শের প্রাসঙ্গিতার কথা শোনার সৌভাগ্য হবে। আমরা ইতিহাসের কাছে কৃতজ্ঞ কারণ, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ রেডিওতে শুনেছি নিজ কানে। শুনেছি ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’-এর মতো অমর বাণী। আমরা ইতিহাসের সাক্ষী এ জন্য যে, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন ও ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলী প্রত্যক্ষ করার দুর্লভ সুযোগ পাই। আমি জাতির জনককে দেখেছি ময়মনসিংহের সার্কিট হাউসের জনসভায়। খুব নিকট থেকে দেখেছি ফুলবাড়িয়া উপজেলার ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত এলাকায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। দেখেছি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময় অঝোর ধারায় কান্নারত অবস্থায়। বলতে শুনেছি, কবিগুরু তুমি দেখে যাও তোমার বাণী আজ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তুমি বলেছিলে, ‘সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি।’ বাঙালি আজ মানুষ হয়েছে। বাঙালি আজ স্বাধীন হয়েছে। আবার বত্রিশ নম্বরের সিঁড়িতে পড়ে থাকা গুলিবিদ্ধ জাতির জনকের ছবি দেখে বৃষ্টির মতো কেঁদেছি। চোখের জলের বন্যায় বুক ভাসিয়েছি। ছন্দে ছড়ায় উচ্চারণ করেছি- বলতো দেখি/চোখের জলে পাথর গলে/কার ছবিটি দৃশ্যমান? রক্তে ভেজা একটি গোলাপ/শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯২০ সালে ১৭ মার্চ তদানীন্ত ফরিদপুর জেলার গোপালপুর মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে বাঙালির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান। মাতার নাম সাহেরা খাতুন। বাল্যকাল থেকেই তিনি ছিলেন প্রতিবাদী, বন্ধুবৎসল ও গরিব-দুঃখী মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। বাঙলার ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সময় এবং কলকাতা ও আাসামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় তার মধ্যে যে মানব সেবা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার উন্মেষ ঘটে,তা তিনি লালন করেছেন আজীবন। তিনিও চন্ডিদাসের মতো বিশ্বাস করতেন- সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।

২০২০ সালের ১৭ মার্চ হবে তার জন্মের শতবার্ষিকী। আগামী ১৭ মার্চ বর্ণাঢ্য উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এই মহান নেতার জন্মশতবার্ষিকী; বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের শুভসূচনা হবে। ইতিমধ্যে ২০২০-২১ সালকে মুজিববর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্র্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবাষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানমালা চলতে থাকবে যুগপৎভাবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা- এই উৎযাপন শুধু আনুষ্ঠানিকতা সর্বস্ব নয়, এই উদযাপনের লক্ষ্য জাতির জীবনে নতুন জীবনী শক্তি সঞ্চারিত করা; স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে জাতিকে নতুন মন্ত্রে দীক্ষিত করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া। আমরাও তার কথার সাথে সহমত পোষণ করি। মুজিববর্ষ হোক বাঙালির এগিয়ে যাওয়ার দীপ্ত অঙ্গীকার। বাংলার কৃষক-শ্রমিক ও মেহনতী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জাতির জনকের লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়নের উদ্বোধন। বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিল্প-সাহিত্য এবং অসাম্প্রদায়িত চেতনাকে আরও শানিত করার প্রত্যয়। জাতীয় চার নীতির আলোকে আগামী দিনের উন্নয়নের পথনকশা।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে মুজিব বর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, ভারতে কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধী, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, আরব আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্স শেখ মুহাম্মদ বিন যায়েদ আল-নাহিয়ান, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ, ভুটানের রাজা জিগমে ওয়াংচুক, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন এবং ওআইসির সেক্রেটারি জেনারেলসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এ ধরনের অনুষ্ঠান উপমহাদেশে এটাই প্রথম।

বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চায়। পৃথিবীতে দিনদিন ধনী-গরিবের বৈষম্য বাড়ছে। ধর্ম নিয়ে চলছে হানাহানি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কারণে অশান্তির আগুন জ্বলছে সারা পৃথিবীতে। গণতন্ত্রের নামে নানা দেশে চলছে কতৃত্ববাদী শাসন। পুঁজিবাদের প্রচন্ড প্রতাপে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে শ্রমজীবী মানুষের জীবন। এমনই এক প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী। বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নন, মহাত্মা গান্ধী, আব্রাহাম লিংকন, জর্জ ওয়াশিংটন, নেলসন ম্যান্ডেলার মতো সারা বিশ্বের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের নেতা।

সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মুজিবর্ষ উদযাপনের নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আমারা যদি জাতির জনকের জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে তা দেশ ও জাতির কল্যাণের কাজে লাগাতে পারি, বিশ্ব শান্তিও সমৃদ্ধির কাজে লাগাতে পারি, তা হলে সেটাই হবে বঙ্গবন্ধু প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন। জন্মশতবার্ষিকীর নানা কর্মসূচির মাধ্যমে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক, বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বর্ণাঢ্য জীবনী জাতির সামনে তুলে ধরা হবে। এতে নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদান, বাঙালি জাতির জন্য অপরিসীম ত্যাগ, মানুষের প্রতি সুগভীর ভালোবাসা এবং মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্বদানসহ তার রাজনৈতিক কর্মকা- সম্পর্কে সম্মক জ্ঞান লাভ করতে পারবে। গত ১০ জানুয়ারি, তেজগাঁওয়ের জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রতীকী বিমান অবতরণের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আবহ সৃষ্টি করে জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা শুরুর উদ্বোধন করেন জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে দেশের বাইরে বাংলাদেশের অনেক মিশনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল তৈরি করছে সরকার, যার মধ্যে পাকিস্তান মিশনের ম্যুরালটি হবে সবচেয়ে বড়। পাকিস্তানে বড় ম্যুরাল তৈরির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে- দেশটির জনগণ তাদের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছে , আগামী ১০ বছরে পাকিস্তানকে সুইজারল্যান্ড বানানোর দরকার নেই, বাংলাদেশের মতো হতে পারলেই তারা মহাখুশি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবাষিকী উদযাপনে বাংলাদেশের ৭৭টি মিশনে ২৬১টি অনুষ্ঠানের আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। বড় বড় ১২টি মিশনে চিত্রকলা প্রদর্শনী হবে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে মুজিবাদর্শ তুলে ধরা ছাড়াও সরকার চায় এ সময় বিশ্বব্যাপী এমন এক নতুন বাংলাদেশের ব্রান্ডিং করতে, যে বাংলাদেশ হবে অপার সম্ভাবনা ও সুযোগ-সুবিধার এক গতিশীল অর্থনীতির দেশ ও বিনিয়োগের নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ স্থান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে জার্মানি, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার চালু করেছে, এছাড়া যুক্তরাজ্যের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বঙ্গবন্ধু সেন্টারও স্থাপন করেছে।

বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শ অনুসরণের কারণে বাংলাদেশ আজ তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বিশ্বের বিস্ময়। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশ। চাল উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ। মাছ ও সবজি উৎপাদনে তৃতীয়। আলু উৎপাদনে সপ্তম এবং আম উৎপাদনে অষ্টম। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের ৫টি দেশের একটি এখন বাংলাদেশ। ওয়াল্ড ইকোনোমিক ফোরাম বলছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলো থেকে এগিয়ে যাবে। ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের ২৩তম স্থান দখল করবে। ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১.৫ শতাংশ বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০.৫ শতাংশে। ২০১৮ সালে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বপ্লোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান দিয়েছে। ২০০৫-০৬ সালে বাংলাদেশের বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার কোটি । ২০১৯-২০ অর্থবছরে যা সাড়ে আটগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ৫ লাখ ২৩২ হাজার ১৯০ কোটি টাকয় দাঁড়িয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৭২৩ কোটি টাকায়। বাজেটের ৯০ ভাগই এখন বাস্তবায়ন হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়ণে। দেশের সরকারি বেসরকারি খাতে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ১৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প কারখানা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে যেখানে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫.৫ শতাংশ, সেখানে গত অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.১৫, এটা বাংলাদেশের জন্য এক বিশাল অর্জন।

বাংলাদেশ মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছে। পাবনার রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করছে। বিশ্বব্যাংকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করছে । যানজট নিরসনে রাজধানীতে মেট্রোরেলের নির্মাণ করছে। চট্রগ্রামে কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ করছে। এসব অভাবনীয় অর্জন সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শের সঠিক বাস্তবায়নের কারণে।

দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুত সুবিধা পৌঁছে গেছে। ৯৭ ভাগ মানুষ উন্নত স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় এসেছে। মাথাপিছু বার্ষিক গড় আয় ১ হাজার ৯০৯ ডলারে উন্নীত হয়েছে। মানুষের গড় আয়ু, স্বাস্থ্য, শিক্ষা দারিদ্র্য বিমোচন, শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, জেন্ডার বৈষম্য হ্রাস প্রভৃতি সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ শুধু উপমহাদেশের দেশগুলিকে নয়, পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশগুলোকে পেছেনে ফেলে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। এসবের মূলে রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবন সংগ্রাম এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব, বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতি প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা।

বঙ্গবন্ধু ঘুষ-দুর্নীতিকে চরমভাবে ঘৃণা করতেন। তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাস্তবায়ন করতে হলে চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুধু অব্যাহত নয়, বেগবান করতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোনো দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি জাতির জনকের আদর্শের উত্তরাধিকারী হতে পারে না। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে মদ ও জুযা খেলা নিষিদ্ধ করেছিলেন। তাই ক্যাসিনোসহ বিদেশে অর্থ পাচারের অবৈধ কাজের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধু তার সারাটা জীবন গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছেন, জেল খেটেছেন বহু বছর। প্রকৃত প্রস্তাবে স্বাধীনতা যুদ্ধটাও সংগঠিত হয়েছিল মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্যই- তাই যে কোনো ত্যাগের বিনিময়েই দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। উন্নয়নের সাথে সাথে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং নদ-নদী, খালবিলসহ প্রাকৃতিক জলাশয় সুরক্ষায় সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। নদী দখল ও দূষণের ব্যাপারে কাউকে কোনো রকম ছাড় দেয়া যাবে না। কারণ নদী না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। বাঁচবে না বাংলাদেশের চির সবুজ প্রকৃতি। সার্থক হবে না স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি মুজিববর্ষ উদযাপনের মহৎ উদ্দেশ্য।

[লেখক : সাবেক মহাব্যস্থাপক (কৃষি), নর্থবেঙ্গল সুগার মিলস্ লি.]

netairoy18@yahoo.com

সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২০ , ২৯ পৌষ ১৪২৬, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

মুজিববর্ষ হোক জাতির জনকের আদর্শ বাস্তবায়নের অভিযাত্রা

নিতাই চন্দ্র রায়

image

২০২০ সাল বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি বছর। বছরটিতে উদযাপিত হতে যাচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক, স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। সারা পৃথিবীর বাংলা ভাষাভাষী মানুষ এই দিনটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। প্রহর গুনছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের। আমরা গর্বিত কারণ, জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকীর মতো আলোকোজ্জ্বল একটি অনুষ্ঠান দেখার সৌভাগ্য হবে আমাদের। এ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিখ্যাত নেতাদের মুখ থেকে নিঃসৃত জাতির জনকের কর্মময় জীবন এবং তার আদর্শের প্রাসঙ্গিতার কথা শোনার সৌভাগ্য হবে। আমরা ইতিহাসের কাছে কৃতজ্ঞ কারণ, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ রেডিওতে শুনেছি নিজ কানে। শুনেছি ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’-এর মতো অমর বাণী। আমরা ইতিহাসের সাক্ষী এ জন্য যে, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন ও ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলী প্রত্যক্ষ করার দুর্লভ সুযোগ পাই। আমি জাতির জনককে দেখেছি ময়মনসিংহের সার্কিট হাউসের জনসভায়। খুব নিকট থেকে দেখেছি ফুলবাড়িয়া উপজেলার ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত এলাকায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। দেখেছি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময় অঝোর ধারায় কান্নারত অবস্থায়। বলতে শুনেছি, কবিগুরু তুমি দেখে যাও তোমার বাণী আজ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তুমি বলেছিলে, ‘সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি।’ বাঙালি আজ মানুষ হয়েছে। বাঙালি আজ স্বাধীন হয়েছে। আবার বত্রিশ নম্বরের সিঁড়িতে পড়ে থাকা গুলিবিদ্ধ জাতির জনকের ছবি দেখে বৃষ্টির মতো কেঁদেছি। চোখের জলের বন্যায় বুক ভাসিয়েছি। ছন্দে ছড়ায় উচ্চারণ করেছি- বলতো দেখি/চোখের জলে পাথর গলে/কার ছবিটি দৃশ্যমান? রক্তে ভেজা একটি গোলাপ/শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯২০ সালে ১৭ মার্চ তদানীন্ত ফরিদপুর জেলার গোপালপুর মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে বাঙালির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান। মাতার নাম সাহেরা খাতুন। বাল্যকাল থেকেই তিনি ছিলেন প্রতিবাদী, বন্ধুবৎসল ও গরিব-দুঃখী মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। বাঙলার ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সময় এবং কলকাতা ও আাসামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় তার মধ্যে যে মানব সেবা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার উন্মেষ ঘটে,তা তিনি লালন করেছেন আজীবন। তিনিও চন্ডিদাসের মতো বিশ্বাস করতেন- সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।

২০২০ সালের ১৭ মার্চ হবে তার জন্মের শতবার্ষিকী। আগামী ১৭ মার্চ বর্ণাঢ্য উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এই মহান নেতার জন্মশতবার্ষিকী; বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের শুভসূচনা হবে। ইতিমধ্যে ২০২০-২১ সালকে মুজিববর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্র্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবাষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানমালা চলতে থাকবে যুগপৎভাবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা- এই উৎযাপন শুধু আনুষ্ঠানিকতা সর্বস্ব নয়, এই উদযাপনের লক্ষ্য জাতির জীবনে নতুন জীবনী শক্তি সঞ্চারিত করা; স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে জাতিকে নতুন মন্ত্রে দীক্ষিত করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া। আমরাও তার কথার সাথে সহমত পোষণ করি। মুজিববর্ষ হোক বাঙালির এগিয়ে যাওয়ার দীপ্ত অঙ্গীকার। বাংলার কৃষক-শ্রমিক ও মেহনতী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জাতির জনকের লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়নের উদ্বোধন। বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিল্প-সাহিত্য এবং অসাম্প্রদায়িত চেতনাকে আরও শানিত করার প্রত্যয়। জাতীয় চার নীতির আলোকে আগামী দিনের উন্নয়নের পথনকশা।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে মুজিব বর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, ভারতে কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধী, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, আরব আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্স শেখ মুহাম্মদ বিন যায়েদ আল-নাহিয়ান, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ, ভুটানের রাজা জিগমে ওয়াংচুক, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন এবং ওআইসির সেক্রেটারি জেনারেলসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এ ধরনের অনুষ্ঠান উপমহাদেশে এটাই প্রথম।

বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চায়। পৃথিবীতে দিনদিন ধনী-গরিবের বৈষম্য বাড়ছে। ধর্ম নিয়ে চলছে হানাহানি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কারণে অশান্তির আগুন জ্বলছে সারা পৃথিবীতে। গণতন্ত্রের নামে নানা দেশে চলছে কতৃত্ববাদী শাসন। পুঁজিবাদের প্রচন্ড প্রতাপে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে শ্রমজীবী মানুষের জীবন। এমনই এক প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী। বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নন, মহাত্মা গান্ধী, আব্রাহাম লিংকন, জর্জ ওয়াশিংটন, নেলসন ম্যান্ডেলার মতো সারা বিশ্বের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের নেতা।

সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মুজিবর্ষ উদযাপনের নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আমারা যদি জাতির জনকের জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে তা দেশ ও জাতির কল্যাণের কাজে লাগাতে পারি, বিশ্ব শান্তিও সমৃদ্ধির কাজে লাগাতে পারি, তা হলে সেটাই হবে বঙ্গবন্ধু প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন। জন্মশতবার্ষিকীর নানা কর্মসূচির মাধ্যমে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক, বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বর্ণাঢ্য জীবনী জাতির সামনে তুলে ধরা হবে। এতে নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদান, বাঙালি জাতির জন্য অপরিসীম ত্যাগ, মানুষের প্রতি সুগভীর ভালোবাসা এবং মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্বদানসহ তার রাজনৈতিক কর্মকা- সম্পর্কে সম্মক জ্ঞান লাভ করতে পারবে। গত ১০ জানুয়ারি, তেজগাঁওয়ের জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রতীকী বিমান অবতরণের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আবহ সৃষ্টি করে জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা শুরুর উদ্বোধন করেন জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে দেশের বাইরে বাংলাদেশের অনেক মিশনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল তৈরি করছে সরকার, যার মধ্যে পাকিস্তান মিশনের ম্যুরালটি হবে সবচেয়ে বড়। পাকিস্তানে বড় ম্যুরাল তৈরির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে- দেশটির জনগণ তাদের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছে , আগামী ১০ বছরে পাকিস্তানকে সুইজারল্যান্ড বানানোর দরকার নেই, বাংলাদেশের মতো হতে পারলেই তারা মহাখুশি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবাষিকী উদযাপনে বাংলাদেশের ৭৭টি মিশনে ২৬১টি অনুষ্ঠানের আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। বড় বড় ১২টি মিশনে চিত্রকলা প্রদর্শনী হবে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে মুজিবাদর্শ তুলে ধরা ছাড়াও সরকার চায় এ সময় বিশ্বব্যাপী এমন এক নতুন বাংলাদেশের ব্রান্ডিং করতে, যে বাংলাদেশ হবে অপার সম্ভাবনা ও সুযোগ-সুবিধার এক গতিশীল অর্থনীতির দেশ ও বিনিয়োগের নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ স্থান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে জার্মানি, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার চালু করেছে, এছাড়া যুক্তরাজ্যের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বঙ্গবন্ধু সেন্টারও স্থাপন করেছে।

বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শ অনুসরণের কারণে বাংলাদেশ আজ তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বিশ্বের বিস্ময়। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশ। চাল উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ। মাছ ও সবজি উৎপাদনে তৃতীয়। আলু উৎপাদনে সপ্তম এবং আম উৎপাদনে অষ্টম। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের ৫টি দেশের একটি এখন বাংলাদেশ। ওয়াল্ড ইকোনোমিক ফোরাম বলছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলো থেকে এগিয়ে যাবে। ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের ২৩তম স্থান দখল করবে। ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১.৫ শতাংশ বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০.৫ শতাংশে। ২০১৮ সালে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বপ্লোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান দিয়েছে। ২০০৫-০৬ সালে বাংলাদেশের বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার কোটি । ২০১৯-২০ অর্থবছরে যা সাড়ে আটগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ৫ লাখ ২৩২ হাজার ১৯০ কোটি টাকয় দাঁড়িয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৭২৩ কোটি টাকায়। বাজেটের ৯০ ভাগই এখন বাস্তবায়ন হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়ণে। দেশের সরকারি বেসরকারি খাতে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ১৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প কারখানা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে যেখানে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫.৫ শতাংশ, সেখানে গত অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.১৫, এটা বাংলাদেশের জন্য এক বিশাল অর্জন।

বাংলাদেশ মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছে। পাবনার রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করছে। বিশ্বব্যাংকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করছে । যানজট নিরসনে রাজধানীতে মেট্রোরেলের নির্মাণ করছে। চট্রগ্রামে কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ করছে। এসব অভাবনীয় অর্জন সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শের সঠিক বাস্তবায়নের কারণে।

দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুত সুবিধা পৌঁছে গেছে। ৯৭ ভাগ মানুষ উন্নত স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় এসেছে। মাথাপিছু বার্ষিক গড় আয় ১ হাজার ৯০৯ ডলারে উন্নীত হয়েছে। মানুষের গড় আয়ু, স্বাস্থ্য, শিক্ষা দারিদ্র্য বিমোচন, শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, জেন্ডার বৈষম্য হ্রাস প্রভৃতি সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ শুধু উপমহাদেশের দেশগুলিকে নয়, পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশগুলোকে পেছেনে ফেলে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। এসবের মূলে রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবন সংগ্রাম এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব, বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতি প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা।

বঙ্গবন্ধু ঘুষ-দুর্নীতিকে চরমভাবে ঘৃণা করতেন। তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাস্তবায়ন করতে হলে চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুধু অব্যাহত নয়, বেগবান করতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোনো দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি জাতির জনকের আদর্শের উত্তরাধিকারী হতে পারে না। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে মদ ও জুযা খেলা নিষিদ্ধ করেছিলেন। তাই ক্যাসিনোসহ বিদেশে অর্থ পাচারের অবৈধ কাজের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধু তার সারাটা জীবন গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছেন, জেল খেটেছেন বহু বছর। প্রকৃত প্রস্তাবে স্বাধীনতা যুদ্ধটাও সংগঠিত হয়েছিল মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্যই- তাই যে কোনো ত্যাগের বিনিময়েই দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। উন্নয়নের সাথে সাথে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং নদ-নদী, খালবিলসহ প্রাকৃতিক জলাশয় সুরক্ষায় সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। নদী দখল ও দূষণের ব্যাপারে কাউকে কোনো রকম ছাড় দেয়া যাবে না। কারণ নদী না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। বাঁচবে না বাংলাদেশের চির সবুজ প্রকৃতি। সার্থক হবে না স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি মুজিববর্ষ উদযাপনের মহৎ উদ্দেশ্য।

[লেখক : সাবেক মহাব্যস্থাপক (কৃষি), নর্থবেঙ্গল সুগার মিলস্ লি.]

netairoy18@yahoo.com