মুজিব শতবর্ষ

১২ জানুয়ারি

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতির উদ্দেশে বঙ্গবন্ধুর প্রথম বাণী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুধবার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীরূপে শপথ গ্রহণের স্বল্পক্ষণ পরেই জাতির উদ্দেশে উচ্চারিত তাঁর প্রথম বাণীতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতার চরণ আবৃত্তি করেন। গতকাল সন্ধ্যায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ঘরোয়া বৈঠকে বাংলাদেশ বার্তা সংস্থার প্রতিনিধির এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর কবিগুরুর কবিতার নিম্নোক্ত স্তবকটি বাংলাদেশের জনগণকে উপহার দেন। ‘স্যার, আজকের দিনে জাতিকে আপনি কী বাণী শুনাবেন? বিএসএস প্রতিনিধির এই প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু তার চোখেমুখে স্বভাবসুলভ উদার হাসি মেখে সঙ্গে সঙ্গে আবৃতি করতে শুরু করেন, উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই ওরে ভয় নাই; নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’ সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে বঙ্গবন্ধু আরো বলেন, বাঙালি জাতি তার নৈতিক মূল্যবোধ ও গুণাবলি দ্বারা বিশ্ববাসীর কাছে স্বীয় মহানুভবতা প্রমাণ করবে। তিনি বলেন, যাবতীয় মূল্যবোধ ও আদর্শের ক্ষেত্রে একটি মহান জাতি হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য আমাদের সকলকে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান যে, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের দপ্তর শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে।

বঙ্গবন্ধু ও তার দল সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করবেন

সমাজতন্ত্রী আন্তর্জাতিক নেতার আশাবাদ সমাজতন্ত্রী আন্তর্জাতিকের সেক্রেটারি জেনারেল মিস্টার হান্স জেনিৎস এই মর্মে আশা প্রকাশ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর ও তার দল বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক সমাজের কাঠামোর মধ্যে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকে নিশ্চিত করতে পারবেন। মঙ্গলবার এনা পরিবেশিত খবরে জানা যায় যে, সমাজতান্ত্রিক আন্তর্জাতিক নেতা মিস্টার হান্স জেনিৎস পাঁচ দিনব্যাপী বাংলাদেশ সফরের শেষপাদে ঐ দিন অপরাহ্নে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তৃতা করছিলেন। তিনি বলেন, তার সংগঠন আন্তরিকভাবে এই কামনা করে যে, সহযোগিতা ও পারস্পরিক মতামত বিনিময়ের জন্য বিশ্বের অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দলের সাথে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক গড়ে তুলবে।

সমাজতন্ত্রী নেতা উল্লেখ করেন যে, পাকিস্তানের কারাগার হতে শেখ সাহেবের মুক্তি বাংলাদেশের স্বাধীন সত্তাকে পূর্ণাঙ্গ করেছে। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানে বিলম্ব করা অন্যান্য রাষ্ট্রের উচিত হবে না। বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব গ্রহণ করার জন্য তিনি বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দন জানান। গণতান্ত্রিক আদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শেখ সাহেবের শত-সহস্র অনুগামীর আত্মদানের জন্য মি. হান্স জেনিৎস তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এক প্রশ্নের জবাবে সমাজতন্ত্রী নেতা বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, তার সংগঠনের সাথে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠতম সম্পর্ক গড়ে উঠবে। মি. হান্স জেনিৎস জানান যে, ভিয়েতনামে সমাজতন্ত্রী আন্তর্জাতিকের পরবর্তী কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে তাতে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আলোচনা হবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন যে, সমাজতন্ত্রী আন্তর্জাতিকের ‘পরবর্তী কমরেড’ হবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তিনি এই মর্মে অভিমত প্রকাশ করেন যে, গণসমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার ফলে সমাজতন্ত্রের কেন্দ্র ইউরোপ হতে এশিয়ায় স্থানান্তরিত হয়েছে।

১৩ জানুয়ারি

বঙ্গবন্ধু-জে. অরোরা আলোচনা

ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার লে. জেনারেল, জে. এস. অরোরা বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তাঁর ধানমন্ডীস্থ বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন। পাকিস্তানের জিন্দাখানা হতে গণমানুষের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির পর তার সাথে সম্মিলিত বাহিনীর অধিনায়ক জেনারেল অরোরার এটাই প্রথম সাক্ষাৎ। জেনারেল অরোরা বঙ্গবন্ধুর সাথে প্রায় এক ঘণ্টাকাল আলোচনা করেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে তার সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎকার বলে তিনি পরে সাংবাদিকদের জানান।

তিন সপ্তাহে মাইন বিস্ফোরণে ৯৬ জন নিহত

পার্বতীপুর। বিগত তিন সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাইন বিস্ফোরণে প্রায় ৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের অধিকাংশই কৃষক। বাংলাদেশ সরকারের জনৈক মুখপাত্র জানান যে, পাকিস্তানি সৈন্যদের রেখে যাওয়া মাইন বিস্ফোরণে কুষ্টিয়া ও কুমিল্লাতেই ৬৫ জন নিহত হয়। অন্যদের মৃত্যু হয় দিনাজপুর, রংপুর ও যশোরে। এছাড়া মাঠে চরার সময়ে প্রায় ১২১টি গবাদি পশু নিহত হয়েছে। জানা যায়, সরকার অবিস্ফোরিত মাইনগুলি খুঁজে বের করার জন্য মুক্তিবাহিনীকে তলব করেছেন।

সূত্র : দিনলিপি, বঙ্গবন্ধুর শাসন সময়, ১৯৭২

সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২০ , ২৯ পৌষ ১৪২৬, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

মুজিব শতবর্ষ

image

১২ জানুয়ারি

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতির উদ্দেশে বঙ্গবন্ধুর প্রথম বাণী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুধবার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীরূপে শপথ গ্রহণের স্বল্পক্ষণ পরেই জাতির উদ্দেশে উচ্চারিত তাঁর প্রথম বাণীতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতার চরণ আবৃত্তি করেন। গতকাল সন্ধ্যায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ঘরোয়া বৈঠকে বাংলাদেশ বার্তা সংস্থার প্রতিনিধির এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর কবিগুরুর কবিতার নিম্নোক্ত স্তবকটি বাংলাদেশের জনগণকে উপহার দেন। ‘স্যার, আজকের দিনে জাতিকে আপনি কী বাণী শুনাবেন? বিএসএস প্রতিনিধির এই প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু তার চোখেমুখে স্বভাবসুলভ উদার হাসি মেখে সঙ্গে সঙ্গে আবৃতি করতে শুরু করেন, উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই ওরে ভয় নাই; নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’ সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে বঙ্গবন্ধু আরো বলেন, বাঙালি জাতি তার নৈতিক মূল্যবোধ ও গুণাবলি দ্বারা বিশ্ববাসীর কাছে স্বীয় মহানুভবতা প্রমাণ করবে। তিনি বলেন, যাবতীয় মূল্যবোধ ও আদর্শের ক্ষেত্রে একটি মহান জাতি হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য আমাদের সকলকে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান যে, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের দপ্তর শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে।

বঙ্গবন্ধু ও তার দল সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করবেন

সমাজতন্ত্রী আন্তর্জাতিক নেতার আশাবাদ সমাজতন্ত্রী আন্তর্জাতিকের সেক্রেটারি জেনারেল মিস্টার হান্স জেনিৎস এই মর্মে আশা প্রকাশ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর ও তার দল বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক সমাজের কাঠামোর মধ্যে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকে নিশ্চিত করতে পারবেন। মঙ্গলবার এনা পরিবেশিত খবরে জানা যায় যে, সমাজতান্ত্রিক আন্তর্জাতিক নেতা মিস্টার হান্স জেনিৎস পাঁচ দিনব্যাপী বাংলাদেশ সফরের শেষপাদে ঐ দিন অপরাহ্নে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তৃতা করছিলেন। তিনি বলেন, তার সংগঠন আন্তরিকভাবে এই কামনা করে যে, সহযোগিতা ও পারস্পরিক মতামত বিনিময়ের জন্য বিশ্বের অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দলের সাথে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক গড়ে তুলবে।

সমাজতন্ত্রী নেতা উল্লেখ করেন যে, পাকিস্তানের কারাগার হতে শেখ সাহেবের মুক্তি বাংলাদেশের স্বাধীন সত্তাকে পূর্ণাঙ্গ করেছে। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানে বিলম্ব করা অন্যান্য রাষ্ট্রের উচিত হবে না। বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব গ্রহণ করার জন্য তিনি বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দন জানান। গণতান্ত্রিক আদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শেখ সাহেবের শত-সহস্র অনুগামীর আত্মদানের জন্য মি. হান্স জেনিৎস তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এক প্রশ্নের জবাবে সমাজতন্ত্রী নেতা বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, তার সংগঠনের সাথে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠতম সম্পর্ক গড়ে উঠবে। মি. হান্স জেনিৎস জানান যে, ভিয়েতনামে সমাজতন্ত্রী আন্তর্জাতিকের পরবর্তী কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে তাতে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আলোচনা হবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন যে, সমাজতন্ত্রী আন্তর্জাতিকের ‘পরবর্তী কমরেড’ হবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তিনি এই মর্মে অভিমত প্রকাশ করেন যে, গণসমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার ফলে সমাজতন্ত্রের কেন্দ্র ইউরোপ হতে এশিয়ায় স্থানান্তরিত হয়েছে।

১৩ জানুয়ারি

বঙ্গবন্ধু-জে. অরোরা আলোচনা

ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার লে. জেনারেল, জে. এস. অরোরা বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তাঁর ধানমন্ডীস্থ বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন। পাকিস্তানের জিন্দাখানা হতে গণমানুষের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির পর তার সাথে সম্মিলিত বাহিনীর অধিনায়ক জেনারেল অরোরার এটাই প্রথম সাক্ষাৎ। জেনারেল অরোরা বঙ্গবন্ধুর সাথে প্রায় এক ঘণ্টাকাল আলোচনা করেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে তার সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎকার বলে তিনি পরে সাংবাদিকদের জানান।

তিন সপ্তাহে মাইন বিস্ফোরণে ৯৬ জন নিহত

পার্বতীপুর। বিগত তিন সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাইন বিস্ফোরণে প্রায় ৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের অধিকাংশই কৃষক। বাংলাদেশ সরকারের জনৈক মুখপাত্র জানান যে, পাকিস্তানি সৈন্যদের রেখে যাওয়া মাইন বিস্ফোরণে কুষ্টিয়া ও কুমিল্লাতেই ৬৫ জন নিহত হয়। অন্যদের মৃত্যু হয় দিনাজপুর, রংপুর ও যশোরে। এছাড়া মাঠে চরার সময়ে প্রায় ১২১টি গবাদি পশু নিহত হয়েছে। জানা যায়, সরকার অবিস্ফোরিত মাইনগুলি খুঁজে বের করার জন্য মুক্তিবাহিনীকে তলব করেছেন।

সূত্র : দিনলিপি, বঙ্গবন্ধুর শাসন সময়, ১৯৭২