গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু

শেখ মুজিবের নয়াদিল্লি যাত্রা

পূর্ব পাকিস্তানের শিল্প ও বাণিজ্য সচিব শেখ মুজিবুর রহমান বিমানযোগে অদ্য (সোমবার) কলিকাতার পথে দিল্লি রওয়ানা হইবেন। আগামী ১৬ জানুয়ারি হইতে নয়াদিল্লিতে পাক-ভারত বাণিজ্য চুক্তি সম্পর্কে আলোচনা শুরু হইবে। তিনি তাহাতে পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের সদস্যরূপে যোগদান করিবেন। তিনি সম্ভবত আগামী ২৪শে জানুয়ারি ঢাকা প্রত্যাবর্তন করিবেন।

দৈনিক সংবাদ : ১৪ জানুয়ারি ১৯৫৭

ন্যায়সঙ্গত সুবিধাভোগে শ্রমিক শ্রেণীর জন্মগত অধিকার রহিয়াছে

শিল্পপতি সমাবেশে শেখ মুজিবের বক্তৃতা, শ্রমিকদের প্রতি ন্যায়বিচার প্রদর্শনের আহ্বান

পূর্ব পাকিস্তানের বাণিজ্য, শিল্প ও শ্রমমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান গতকল্য (শুক্রবার) ইউনাইটেড চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের বার্ষিক ভোজসভার প্রধান অতিথির ভাষণ দান প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের নিকট তাহাদের শ্রমিকদের প্রতি ন্যায়বিচার প্রদর্শনের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন যে, অর্থনৈতিক দিক হইতে বিবেচনা সাপেক্ষে সময়ে সময়ে পরিবর্তনের ভিত্তিতে ন্যায়সঙ্গত সুবিধা ও আরামভোগে শ্রমিক শ্রেণীর, জন্মগত অধিকার রহিয়াছে।

এপিপি’র উক্ত খবরে প্রকাশ, তিনি আরও বলেন যে, বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি স্বস্তিবাচক মনোভাব সংক্রমণের সময় আসিয়াছে। পারস্পরিক স্বার্থের জন্যই একে অন্যের সহিত সহযোগিতার প্রয়ােজন রহিয়াছে। যত শীঘ্র এর সত্যটি উপলব্ধি হইবে ততই মঙ্গল।

যে সকল কারণে এযাবত এই প্রদেশের শিল্প প্রগতি বিঘ্নিত হইয়াছে তা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, এই অনগ্রসরতা রাতারাতি কাটাইয়া উঠা যাইবে না, পশ্চিম পাকিস্তানের অধিকতর উন্নয়নের ফলে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে যে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়াছে প্রাপ্তব্য সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার পরিকল্পনার মাধ্যমেই তাহা বিদুরিত করা যাইতে পারে।

প্রদেশের শিল্পায়নের মাধ্যমে জনগণের ভাগ্যোন্নয়ন প্রচেষ্টায় সরকারের সহিত সহযােগিতা করিবার জন্য তিনি শিল্পপতিদের নিকট আবেদন জানান। দুর্নীতির মূলোৎপাটনের জন্যও তিনি তাহাদের নিকট আহ্বান জানান।

দৈনিক সংবাদ : ২৬ জানুয়ারি ১৯৫৭

৭ ফেব্রুয়ারি কাগমারীতে আওয়ামী লীগ কাউন্সিল অধিবেশন

পররাষ্ট্র ও অভ্যন্তরীণ নীতি সম্পর্কে সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্ভাবনা

স্টাফ রিপোর্টার

আগামী ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি সন্তোষ-কাগমারীতে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হইবে। নানাবিধ কারণে এই কাউন্সিল অধিবেশন পূর্ব পাকিস্তান তথা সারা পাকিস্তানের পক্ষে সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্মেলনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে আলোচনা হইবে। উক্ত আলোচনার ফলাফল পাকিস্তানের পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করিবে। এতদ্ব্যতীত এশিয়া-আফ্রিকার মুক্তি সাধন, পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন এবং ২১-দফা দাবি আদায়ের জন্য ব্যাপক গণঐক্যের কর্মসূচি গৃহীত হইবে। এই অধিবেশন সম্পর্কে চট্টগ্রাম হইতে প্রেরিত একটি ঘোষণায় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী জানাইয়াছেন যে, আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে সন্তোষ-কাগমারীতে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রাদেশিক কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ৭ এবং ৮ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ কাউন্সিলও ৯, ১০ এবং ১১ ফেব্রুয়ারি সাংস্কৃতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হইবে। এতদ উপলক্ষে প্রচারিত একটি আবেদন মওলানা সাহেব পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন, ঐতিহাসিক ২১ দফা দাবী আদায় ব্যাপক জন-ঐক্য সাম্রাজ্যবাদের কবল হইতে দক্ষিণ আফ্রিকার মুক্তি এশিয়া আফ্রিকার মুক্তিসাধন এবং পূর্ব বাংলার ৬০ হাজার গ্রামে আওয়ামী লীগ সংগঠন গড়ার কর্মসূচি ‘দেশের ডাক’ রূপে অভিহিত করেন। টাঙ্গাইল হইতে প্রচারিত অপর একটি আবেদনে মাওলানা সাহেব দেশের বহুবিধ সমস্যা সমাধানের উপায় উদ্ভাবনের জন্য কাগমারী সম্মেলন আহূত হইয়াছে বলিয়া মন্তব্য করেন। পাক-ভারতীয় উপমহাদেশের যে সমস্যাটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক কর্মীদের ব্রত করিয়াছে পূর্ব পকিস্তান আওয়ামী লীগকে বর্তমানে উহারই মোকাবেলা করিতে হইবে। শাসনভার গ্রহণের পর সরকার গঠনকারি রাজনৈতিক দলই সরকার পরিচালনা করিবে না কি সরকারি নেতৃত্বই তাহার রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে পরিচালিত করতে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগকে বর্তমানে এই সমস্যার সুরাহা করিতে হইবে। আওয়ামী লীগ মহল মনে করেন যে, তাহারা এই সমস্যাটির সন্তোষজনকভাবে সমাধান করিতে সমর্থ হইবেন। জানা গিয়াছে যে, কর্মী সম্মেলনে সরকার ও আওয়ামী লীগের মধ্যে উচ্চতর পারস্পরিক সহযোগিতা ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রশ্নাদি আলোচনা হইবে। পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান গতকল্য (বৃহস্পতিবার) জনগণের জ্ঞাতার্থে কাগমারী সম্মেলনের কর্মসূচী প্রকাশ করেন। কাউন্সিল অধিবেশনে উত্থাপনের জন্য ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রস্তাবাদি প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ অফিসে দাখিল করা যাইবে বলিয়া জনাব রহমানের ঘোষণায় জানা যায়। প্রকাশ, ১ ফেব্রুয়ারি হইতে কাগমারীতে প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ অফিস চালু করা হইবে। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সভ্য এবং সম্মেলনে যোগদানকারী কর্মীদের যাতায়াতের জন্য বিশেষ কনসেশনের ব্যবস্থা করা হইয়াছে।

দৈনিক সংবাদ : ২৭ জানুয়ারি ১৯৫৭।

মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২০ , ৩০ পৌষ ১৪২৬, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু

শেখ মুজিবের নয়াদিল্লি যাত্রা

পূর্ব পাকিস্তানের শিল্প ও বাণিজ্য সচিব শেখ মুজিবুর রহমান বিমানযোগে অদ্য (সোমবার) কলিকাতার পথে দিল্লি রওয়ানা হইবেন। আগামী ১৬ জানুয়ারি হইতে নয়াদিল্লিতে পাক-ভারত বাণিজ্য চুক্তি সম্পর্কে আলোচনা শুরু হইবে। তিনি তাহাতে পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের সদস্যরূপে যোগদান করিবেন। তিনি সম্ভবত আগামী ২৪শে জানুয়ারি ঢাকা প্রত্যাবর্তন করিবেন।

দৈনিক সংবাদ : ১৪ জানুয়ারি ১৯৫৭

ন্যায়সঙ্গত সুবিধাভোগে শ্রমিক শ্রেণীর জন্মগত অধিকার রহিয়াছে

শিল্পপতি সমাবেশে শেখ মুজিবের বক্তৃতা, শ্রমিকদের প্রতি ন্যায়বিচার প্রদর্শনের আহ্বান

পূর্ব পাকিস্তানের বাণিজ্য, শিল্প ও শ্রমমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান গতকল্য (শুক্রবার) ইউনাইটেড চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের বার্ষিক ভোজসভার প্রধান অতিথির ভাষণ দান প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের নিকট তাহাদের শ্রমিকদের প্রতি ন্যায়বিচার প্রদর্শনের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন যে, অর্থনৈতিক দিক হইতে বিবেচনা সাপেক্ষে সময়ে সময়ে পরিবর্তনের ভিত্তিতে ন্যায়সঙ্গত সুবিধা ও আরামভোগে শ্রমিক শ্রেণীর, জন্মগত অধিকার রহিয়াছে।

এপিপি’র উক্ত খবরে প্রকাশ, তিনি আরও বলেন যে, বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি স্বস্তিবাচক মনোভাব সংক্রমণের সময় আসিয়াছে। পারস্পরিক স্বার্থের জন্যই একে অন্যের সহিত সহযোগিতার প্রয়ােজন রহিয়াছে। যত শীঘ্র এর সত্যটি উপলব্ধি হইবে ততই মঙ্গল।

যে সকল কারণে এযাবত এই প্রদেশের শিল্প প্রগতি বিঘ্নিত হইয়াছে তা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, এই অনগ্রসরতা রাতারাতি কাটাইয়া উঠা যাইবে না, পশ্চিম পাকিস্তানের অধিকতর উন্নয়নের ফলে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে যে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়াছে প্রাপ্তব্য সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার পরিকল্পনার মাধ্যমেই তাহা বিদুরিত করা যাইতে পারে।

প্রদেশের শিল্পায়নের মাধ্যমে জনগণের ভাগ্যোন্নয়ন প্রচেষ্টায় সরকারের সহিত সহযােগিতা করিবার জন্য তিনি শিল্পপতিদের নিকট আবেদন জানান। দুর্নীতির মূলোৎপাটনের জন্যও তিনি তাহাদের নিকট আহ্বান জানান।

দৈনিক সংবাদ : ২৬ জানুয়ারি ১৯৫৭

৭ ফেব্রুয়ারি কাগমারীতে আওয়ামী লীগ কাউন্সিল অধিবেশন

পররাষ্ট্র ও অভ্যন্তরীণ নীতি সম্পর্কে সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্ভাবনা

স্টাফ রিপোর্টার

আগামী ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি সন্তোষ-কাগমারীতে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হইবে। নানাবিধ কারণে এই কাউন্সিল অধিবেশন পূর্ব পাকিস্তান তথা সারা পাকিস্তানের পক্ষে সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্মেলনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে আলোচনা হইবে। উক্ত আলোচনার ফলাফল পাকিস্তানের পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করিবে। এতদ্ব্যতীত এশিয়া-আফ্রিকার মুক্তি সাধন, পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন এবং ২১-দফা দাবি আদায়ের জন্য ব্যাপক গণঐক্যের কর্মসূচি গৃহীত হইবে। এই অধিবেশন সম্পর্কে চট্টগ্রাম হইতে প্রেরিত একটি ঘোষণায় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী জানাইয়াছেন যে, আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে সন্তোষ-কাগমারীতে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রাদেশিক কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ৭ এবং ৮ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ কাউন্সিলও ৯, ১০ এবং ১১ ফেব্রুয়ারি সাংস্কৃতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হইবে। এতদ উপলক্ষে প্রচারিত একটি আবেদন মওলানা সাহেব পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন, ঐতিহাসিক ২১ দফা দাবী আদায় ব্যাপক জন-ঐক্য সাম্রাজ্যবাদের কবল হইতে দক্ষিণ আফ্রিকার মুক্তি এশিয়া আফ্রিকার মুক্তিসাধন এবং পূর্ব বাংলার ৬০ হাজার গ্রামে আওয়ামী লীগ সংগঠন গড়ার কর্মসূচি ‘দেশের ডাক’ রূপে অভিহিত করেন। টাঙ্গাইল হইতে প্রচারিত অপর একটি আবেদনে মাওলানা সাহেব দেশের বহুবিধ সমস্যা সমাধানের উপায় উদ্ভাবনের জন্য কাগমারী সম্মেলন আহূত হইয়াছে বলিয়া মন্তব্য করেন। পাক-ভারতীয় উপমহাদেশের যে সমস্যাটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক কর্মীদের ব্রত করিয়াছে পূর্ব পকিস্তান আওয়ামী লীগকে বর্তমানে উহারই মোকাবেলা করিতে হইবে। শাসনভার গ্রহণের পর সরকার গঠনকারি রাজনৈতিক দলই সরকার পরিচালনা করিবে না কি সরকারি নেতৃত্বই তাহার রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে পরিচালিত করতে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগকে বর্তমানে এই সমস্যার সুরাহা করিতে হইবে। আওয়ামী লীগ মহল মনে করেন যে, তাহারা এই সমস্যাটির সন্তোষজনকভাবে সমাধান করিতে সমর্থ হইবেন। জানা গিয়াছে যে, কর্মী সম্মেলনে সরকার ও আওয়ামী লীগের মধ্যে উচ্চতর পারস্পরিক সহযোগিতা ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রশ্নাদি আলোচনা হইবে। পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান গতকল্য (বৃহস্পতিবার) জনগণের জ্ঞাতার্থে কাগমারী সম্মেলনের কর্মসূচী প্রকাশ করেন। কাউন্সিল অধিবেশনে উত্থাপনের জন্য ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রস্তাবাদি প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ অফিসে দাখিল করা যাইবে বলিয়া জনাব রহমানের ঘোষণায় জানা যায়। প্রকাশ, ১ ফেব্রুয়ারি হইতে কাগমারীতে প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ অফিস চালু করা হইবে। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সভ্য এবং সম্মেলনে যোগদানকারী কর্মীদের যাতায়াতের জন্য বিশেষ কনসেশনের ব্যবস্থা করা হইয়াছে।

দৈনিক সংবাদ : ২৭ জানুয়ারি ১৯৫৭।