ঢাবির ৬৭ শিক্ষার্থী স্থায়ী বহিষ্কার

১২১ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকা, অস্ত্র ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের (ঢাবি) ১২১ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ৬৩ জন এবং অস্ত্র ও মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৪ জনসহ মোট ৬৭ জনকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে ৯ জন ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১৩ জনকে সাময়িক এবং সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় দু’জনকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এর বাইরে ডিবি উপ-কমিটির সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় বিভিন্ন সময়ে অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে ৩১ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে অ্যাকাডেমিক সাজা দেয়া হয়েছে। গতকাল সকালে ঢাবির শৃঙ্খলা বোর্ডের (ডিবি) বৈঠকে এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির অভিযোগে ৬৩ জনকে বিশ^বিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে ৯ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদেরকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দেয়ার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হবে। অস্ত্র ও মাদক মামলায় মুহসীন হলের চারজনকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। ছিনতাইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় ১৩ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হবে। এছাড়া, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে বিশ^বিদ্যালয়ে কর্মরত এক সাংবাদিকের সঙ্গে অসদাচরণের দায়ে দু’জনকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্যদিকে, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে ৩১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। আগামী সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত পাস হবে বলে জানান প্রক্টর।

প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছরের ২৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭ জন শিক্ষার্থীসহ ১২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন এবং পাবলিক পরীক্ষা আইনে পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দেয়া হয়। পরবর্তীতে তাদের কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না সে বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট সভা। ৮৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৫ জনকে আগেই আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। নতুন করে ৬৩জনসহ জালিয়াতির ঘটনায় এ নিয়ে ৭৮ জন শিক্ষার্থী আজীবন বহিষ্কৃত হলেন।

এর আগে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হওয়া মুহসীন হল ছাত্রলীগের চার নেতাকেও স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে ডিবির সভায়। গত বছরের ৮ অক্টোবর রাতে ঢাবির মুহসীন হলের ১২১ নম্বর কক্ষ থেকে পিস্তল, বঁটি, সিসি ক্যামেরা, হাতুড়ি, লাঠিসহ আটক করা হয় দুই ছাত্রলীগ নেতাকে। অন্য দুই নেতা ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন- শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির ক্রীড়া বিষয়ক উপ-সম্পাদক হাসিবুর রহমান তুষার, দর্শন বিভাগের ১ম বর্ষের (২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ) ছাত্র ও ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী অর্থ বিষয়ক উপ-সম্পাদক আবু বকর আলিফ, পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও হল শাখা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক উপ-সম্পাদক মো. ইফতেখার ইসলাম তুষার এবং বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র ও হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ইমরান হোসেন (ইমরান ফরহাদ ইমু)।

গতকাল দুপুরে প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, জালিয়াতদের আমরা ছাড় দেব না। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদার প্রশ্ন। কিছুদিন আগে অস্ত্র ও মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের চার শিক্ষার্থীকে হল প্রশাসন আজীবন বহিষ্কার করে এবং অধিকতর শাস্তির সুপারিশ করে ডিবিতে পাঠায়। তাদের কর্মকা- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ হওয়ায় আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।

বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২০ , ১ মাঘ ১৪২৬, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

প্রশ্নফাঁস-জালিয়াতি

ঢাবির ৬৭ শিক্ষার্থী স্থায়ী বহিষ্কার

১২১ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

প্রতিনিধি, ঢাবি

ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকা, অস্ত্র ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের (ঢাবি) ১২১ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ৬৩ জন এবং অস্ত্র ও মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৪ জনসহ মোট ৬৭ জনকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে ৯ জন ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১৩ জনকে সাময়িক এবং সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় দু’জনকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এর বাইরে ডিবি উপ-কমিটির সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় বিভিন্ন সময়ে অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে ৩১ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে অ্যাকাডেমিক সাজা দেয়া হয়েছে। গতকাল সকালে ঢাবির শৃঙ্খলা বোর্ডের (ডিবি) বৈঠকে এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির অভিযোগে ৬৩ জনকে বিশ^বিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে ৯ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদেরকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দেয়ার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হবে। অস্ত্র ও মাদক মামলায় মুহসীন হলের চারজনকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। ছিনতাইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় ১৩ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হবে। এছাড়া, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে বিশ^বিদ্যালয়ে কর্মরত এক সাংবাদিকের সঙ্গে অসদাচরণের দায়ে দু’জনকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্যদিকে, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে ৩১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। আগামী সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত পাস হবে বলে জানান প্রক্টর।

প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছরের ২৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭ জন শিক্ষার্থীসহ ১২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন এবং পাবলিক পরীক্ষা আইনে পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দেয়া হয়। পরবর্তীতে তাদের কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না সে বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট সভা। ৮৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৫ জনকে আগেই আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। নতুন করে ৬৩জনসহ জালিয়াতির ঘটনায় এ নিয়ে ৭৮ জন শিক্ষার্থী আজীবন বহিষ্কৃত হলেন।

এর আগে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হওয়া মুহসীন হল ছাত্রলীগের চার নেতাকেও স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে ডিবির সভায়। গত বছরের ৮ অক্টোবর রাতে ঢাবির মুহসীন হলের ১২১ নম্বর কক্ষ থেকে পিস্তল, বঁটি, সিসি ক্যামেরা, হাতুড়ি, লাঠিসহ আটক করা হয় দুই ছাত্রলীগ নেতাকে। অন্য দুই নেতা ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন- শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির ক্রীড়া বিষয়ক উপ-সম্পাদক হাসিবুর রহমান তুষার, দর্শন বিভাগের ১ম বর্ষের (২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ) ছাত্র ও ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী অর্থ বিষয়ক উপ-সম্পাদক আবু বকর আলিফ, পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও হল শাখা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক উপ-সম্পাদক মো. ইফতেখার ইসলাম তুষার এবং বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র ও হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ইমরান হোসেন (ইমরান ফরহাদ ইমু)।

গতকাল দুপুরে প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, জালিয়াতদের আমরা ছাড় দেব না। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদার প্রশ্ন। কিছুদিন আগে অস্ত্র ও মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের চার শিক্ষার্থীকে হল প্রশাসন আজীবন বহিষ্কার করে এবং অধিকতর শাস্তির সুপারিশ করে ডিবিতে পাঠায়। তাদের কর্মকা- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ হওয়ায় আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।