পৌষ সংক্রান্তি পালিত হচ্ছে পুরান ঢাকায়

বাংলাদেশের বাংলাবর্ষ গণণা অনুযায়ী গতকাল পৌষ সংক্রান্তিতে ঘুড়ি উৎসব ‘সাকরাইন’ পালিত হয়েছে লক্ষ্মীবাজার, সুত্রাপুর, গেন্ডারিয়াসহ পুরোনো ঢাকার একটি অংশে। আজ পঞ্জিকা অনুসারে সাকরাইন পালিত হবে তাঁতি বাজার, শাঁখারীবাজার, নবাববাড়ীসহ পুরোনো ঢাকার অন্য অংশে। আগে পুরোনো ঢাকায় সব জায়গায় একইদিনে পৌষ সংক্রান্তি পালিত হলেও গত একদশক থেকে আলাদা আলাদা ভাবে পৌষ সংক্রান্তি উৎসবে সাকরাইন পালন করছে পুরোনো ঢাকাবাসী।

ঘুড়ি উৎসব ভিন্ন দিনে পালিত হলেও আগের মতোই ঘুড়ি উৎসবের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে শাঁখারীবাজার। সম্পূর্ণ পুরোনো ঢাকার ঘুড়ি উৎসবের ঘুড়ি, নাটাই, সুতাসহ অন্যান্য উপকরণের প্রায় ৯৫ ভাগ বিক্রি হয় এই এলাকা থেকে। ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন ঘিড়ে ১ মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকে শাঁখারী বাজারের দোকানিরা।

ঢাকার কাকরাইল থেকে আমির হোসেন তার তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে এসেছিলেন স্বজনের বাড়িতে। তিনি জানালেন, এদিন পুরান ঢাকায় থাকা স্বজনের বাসায় দাওয়াত থাকে ঢাকা শহরে থাকা সব আত্মীয়-বন্ধুর। এটি প্রতি বছরের অলিখিত নিয়ম। একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া আর আড্ডা তো চলেই, পাশাপাশি ছেলেমেয়েরা মহা উৎসাহে ঘুড়ি ওড়ায়।

সাকরাইন উপলক্ষ্যে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে সকাল থেকেই মানুষ আসতে শুরু করে। এজন্য পুরোনো ঢাকায় সৃষ্টি হয় যানযট। সকাল থেকেই লক্ষীবাজার, সুত্রাপুর এবং গ্যান্ডারিয়া এলাকার আকাশ ভরে যায় রঙ-বেরঙের ঘুড়িতে। কিশোর, তরুণ এবং বৃদ্ধ সবার অংশগ্রহনে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে পুরান ঢাকার ছাদ। সেসব ঘুড়ির কতই না রূপ! কোনওটা পাখির আদলে তো কোনওটা মুখোশের মতো বিশাল। সারাদিন চলেছে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা। সন্ধ্যার পর শুরু হয় ফানুশ ওড়ানো, আতশবাজি ও আগুন খেলা। রঙিন সব আলোর ঝলকানিতে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পুরান ঢাকার সুত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া থানাধীন এই অংশ।

সাকরাইনে বাড়িতে বাড়িতে থাকে মজার সব খাবারের আয়োজন। পিঠাপুলি, মুড়ি-গুড়, পায়েশ পরিবেশন চলে। পুরান ঢাকার আদি নিবাসী নাঈম সিনহা জানান, সংক্রান্তি শব্দটি থেকেই পুরান ঢাকার এই ‘সাকরাইন’ উৎসব। মূলত ঘুড়ি উৎসব এটি। আগে সারাদিন ঘুড়ি উড়িয়ে সন্ধ্যায় ঘুড়ি-নাটাই ফেলে নতুন মাস শুরু করতো সবাই। ঘুড়ি, ফানুস, মশালসহ নানা আয়োজন থাকে এই উৎসবে। কেউ কেউ ছাদে মেজবানের ব্যবস্থা করে।’

একজন পুরোনো ঢাকাবাসী শুভ্র বর্তমানে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকুরিরত তিনি তার ফেইসবুক পেইজে পৌষ সংক্রান্তিতে ঘুড়ি উৎসব সম্পর্কে লিখেন, জন্মের ঠিক কত বছর পর মানুষ তার বোধ/স্মরণশক্তি লাভ করে তা সঠিকভাবে আমার জানা নেই,দুই কি আড়াই বছর হবে হয়তো ! আর আমার মনে হয় সেই সময় থেকেই খুব খুব খুবই প্রিয় একটা খেলা বা শখ ছিল ঘুড্ডি বা ঘুড়ি ওড়ানো!!

আর সংক্রান্তি/সাকরাইন তো আমার জন্য ঈদের দিন!! শাঁখারি বাজার থেকে কালা গান, বর্ধমান, সরওয়ার সূতা,মাতৃভান্ডার থেকে বোতল চূড়,শিরিষ আর খুনি লাল রঙ। ওহহহহ মাঞ্জা !!! ঘন করে লেদ্দি জাল দিযয়ে সেইটা আবার ঠান্ডা করে রং মেশানো, কঠিন করে চূড় ধরে নাটাইয়ে মারো ঘ্যান্না।

মোটামুটি রাত বারোটা/একটা পর্যন্ত সুতো শুকানো শেষ করে আবার শুরু ঘুড্ডির ধানতারা বান্ধা। ভোরের আলো ফুটবে ফুটবে করছে, লাটাই আর ঘুড্ডি গুলি নিয়ে সোজা ছাদে। চক্ষু দাড় ঘুড্ডিটা বনি করে, বেশী করে সূতা ছেড়ে লম্বা একটা গোত্তা মেরে, আবার একটু সূতা ছেড়ে একটু লোট মারার পর মাথাটা সোজা করে, দুই হাতে একটু থু দিয়ে টান মাম্মা, খিচ্চা টান। তারপর গলা ফাটিয়ে চিৎকা রবাক্কাট্টাআ লোট লোট ডি ডি ভূয়ো ভূয়ো।

নিজেকে আজ ওখড়ানো একটা ঘুড্ডি মনে হচ্ছে!! অনেক ওড়ার শখ ছিল; কিন্তু কঠিনতম বাস্তবতা আমারে উড়তে দেয়না। তোমরা সবাইজেনে রাখ, আমি ঘুড্ডি উড়াইতে অনেক অনেক ভালোবাসি কারণ আমার বাবা আমাকে কখনো কোন খেলনা কিনে দেয় নাই, কিন্তু লাটাই ঘুড্ডি কিনে দিত। আমার বাবার দেয়া খেলনা আমি খেলতে চাই। আমি ঘুড্ডি উড়াইতে চাই।

বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২০ , ১ মাঘ ১৪২৬, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

পৌষ সংক্রান্তি পালিত হচ্ছে পুরান ঢাকায়

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

পৌষ সংক্রান্তি উৎসব উপলক্ষে পুরান ঢাকায় র‌্যালি-সংবাদ

বাংলাদেশের বাংলাবর্ষ গণণা অনুযায়ী গতকাল পৌষ সংক্রান্তিতে ঘুড়ি উৎসব ‘সাকরাইন’ পালিত হয়েছে লক্ষ্মীবাজার, সুত্রাপুর, গেন্ডারিয়াসহ পুরোনো ঢাকার একটি অংশে। আজ পঞ্জিকা অনুসারে সাকরাইন পালিত হবে তাঁতি বাজার, শাঁখারীবাজার, নবাববাড়ীসহ পুরোনো ঢাকার অন্য অংশে। আগে পুরোনো ঢাকায় সব জায়গায় একইদিনে পৌষ সংক্রান্তি পালিত হলেও গত একদশক থেকে আলাদা আলাদা ভাবে পৌষ সংক্রান্তি উৎসবে সাকরাইন পালন করছে পুরোনো ঢাকাবাসী।

ঘুড়ি উৎসব ভিন্ন দিনে পালিত হলেও আগের মতোই ঘুড়ি উৎসবের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে শাঁখারীবাজার। সম্পূর্ণ পুরোনো ঢাকার ঘুড়ি উৎসবের ঘুড়ি, নাটাই, সুতাসহ অন্যান্য উপকরণের প্রায় ৯৫ ভাগ বিক্রি হয় এই এলাকা থেকে। ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন ঘিড়ে ১ মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকে শাঁখারী বাজারের দোকানিরা।

ঢাকার কাকরাইল থেকে আমির হোসেন তার তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে এসেছিলেন স্বজনের বাড়িতে। তিনি জানালেন, এদিন পুরান ঢাকায় থাকা স্বজনের বাসায় দাওয়াত থাকে ঢাকা শহরে থাকা সব আত্মীয়-বন্ধুর। এটি প্রতি বছরের অলিখিত নিয়ম। একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া আর আড্ডা তো চলেই, পাশাপাশি ছেলেমেয়েরা মহা উৎসাহে ঘুড়ি ওড়ায়।

সাকরাইন উপলক্ষ্যে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে সকাল থেকেই মানুষ আসতে শুরু করে। এজন্য পুরোনো ঢাকায় সৃষ্টি হয় যানযট। সকাল থেকেই লক্ষীবাজার, সুত্রাপুর এবং গ্যান্ডারিয়া এলাকার আকাশ ভরে যায় রঙ-বেরঙের ঘুড়িতে। কিশোর, তরুণ এবং বৃদ্ধ সবার অংশগ্রহনে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে পুরান ঢাকার ছাদ। সেসব ঘুড়ির কতই না রূপ! কোনওটা পাখির আদলে তো কোনওটা মুখোশের মতো বিশাল। সারাদিন চলেছে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা। সন্ধ্যার পর শুরু হয় ফানুশ ওড়ানো, আতশবাজি ও আগুন খেলা। রঙিন সব আলোর ঝলকানিতে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পুরান ঢাকার সুত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া থানাধীন এই অংশ।

সাকরাইনে বাড়িতে বাড়িতে থাকে মজার সব খাবারের আয়োজন। পিঠাপুলি, মুড়ি-গুড়, পায়েশ পরিবেশন চলে। পুরান ঢাকার আদি নিবাসী নাঈম সিনহা জানান, সংক্রান্তি শব্দটি থেকেই পুরান ঢাকার এই ‘সাকরাইন’ উৎসব। মূলত ঘুড়ি উৎসব এটি। আগে সারাদিন ঘুড়ি উড়িয়ে সন্ধ্যায় ঘুড়ি-নাটাই ফেলে নতুন মাস শুরু করতো সবাই। ঘুড়ি, ফানুস, মশালসহ নানা আয়োজন থাকে এই উৎসবে। কেউ কেউ ছাদে মেজবানের ব্যবস্থা করে।’

একজন পুরোনো ঢাকাবাসী শুভ্র বর্তমানে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকুরিরত তিনি তার ফেইসবুক পেইজে পৌষ সংক্রান্তিতে ঘুড়ি উৎসব সম্পর্কে লিখেন, জন্মের ঠিক কত বছর পর মানুষ তার বোধ/স্মরণশক্তি লাভ করে তা সঠিকভাবে আমার জানা নেই,দুই কি আড়াই বছর হবে হয়তো ! আর আমার মনে হয় সেই সময় থেকেই খুব খুব খুবই প্রিয় একটা খেলা বা শখ ছিল ঘুড্ডি বা ঘুড়ি ওড়ানো!!

আর সংক্রান্তি/সাকরাইন তো আমার জন্য ঈদের দিন!! শাঁখারি বাজার থেকে কালা গান, বর্ধমান, সরওয়ার সূতা,মাতৃভান্ডার থেকে বোতল চূড়,শিরিষ আর খুনি লাল রঙ। ওহহহহ মাঞ্জা !!! ঘন করে লেদ্দি জাল দিযয়ে সেইটা আবার ঠান্ডা করে রং মেশানো, কঠিন করে চূড় ধরে নাটাইয়ে মারো ঘ্যান্না।

মোটামুটি রাত বারোটা/একটা পর্যন্ত সুতো শুকানো শেষ করে আবার শুরু ঘুড্ডির ধানতারা বান্ধা। ভোরের আলো ফুটবে ফুটবে করছে, লাটাই আর ঘুড্ডি গুলি নিয়ে সোজা ছাদে। চক্ষু দাড় ঘুড্ডিটা বনি করে, বেশী করে সূতা ছেড়ে লম্বা একটা গোত্তা মেরে, আবার একটু সূতা ছেড়ে একটু লোট মারার পর মাথাটা সোজা করে, দুই হাতে একটু থু দিয়ে টান মাম্মা, খিচ্চা টান। তারপর গলা ফাটিয়ে চিৎকা রবাক্কাট্টাআ লোট লোট ডি ডি ভূয়ো ভূয়ো।

নিজেকে আজ ওখড়ানো একটা ঘুড্ডি মনে হচ্ছে!! অনেক ওড়ার শখ ছিল; কিন্তু কঠিনতম বাস্তবতা আমারে উড়তে দেয়না। তোমরা সবাইজেনে রাখ, আমি ঘুড্ডি উড়াইতে অনেক অনেক ভালোবাসি কারণ আমার বাবা আমাকে কখনো কোন খেলনা কিনে দেয় নাই, কিন্তু লাটাই ঘুড্ডি কিনে দিত। আমার বাবার দেয়া খেলনা আমি খেলতে চাই। আমি ঘুড্ডি উড়াইতে চাই।