আইসিজের অন্তর্বর্তী আদেশ ২৩ জানুয়ারি

রোহিঙ্গাদের গণহত্যার অভিযোগে মায়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার করা মামলায় মায়ানমারের বিরুদ্ধে কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত ২৩ জানুয়ারি জানাবে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)। গাম্বিয়ার বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত সোমবার এক টুইটে এ কথা জানায়। তবে এ বিষয়ে আইসিজের পক্ষ থেকে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, মায়ানমার থেকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে প্রায় ৭ লাখ ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশ আশ্রয় নিয়েছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত ১১ নভেম্বর মায়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে গাম্বিয়া। গত মাসে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে মায়ানমারের বিরুদ্ধে এই মামলার দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে নিজের দেশের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন দেশটির ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি। সেখানে তিনি মায়ানমার সেনাদের গণহত্যার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, এই মামলার শুনানির অধিকার নেই আন্তর্জাতিক আদালতের। ওই সময় গাম্বিয়ার পক্ষ থেকেও আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার তথ্য প্রমাণ উত্থাপন করা হয় এবং সেখানে গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।

দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শোনার পর আইসিজের ১৭ সদস্যের বিচারক প্যানেল বিষয়টি আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে। আইসিজের বিচারক প্যানেলের প্রধান আবদুলকাভি আহমেদ ইউসুফ গত ১৩ ডিসেম্বর বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব’ এ মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন তারা।

আইসিজেতে গাম্বিয়ার করা এ মামলায় গণহত্যা প্রতিরোধ ও এর শাস্তি বিধানে ১৯৮৪ সালে স্বাক্ষরিত কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়েছে মায়ানমারের বিরুদ্ধে। ১৯৫৬ সালে ওই ‘জেনোসাইড কনভেনশনে’ সই করেছিল মায়ানমার; গাম্বিয়াও এ কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ। এই কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো শুধু গণহত্যা থেকে বিরতই থাকবে না, এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ এবং এমন অপরাধের জন্য শাস্তি বিধান করতেও অঙ্গীকারাবদ্ধ।

ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত এক দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের অভিযোগ তুলতে পারে। এ আদালত কোন ব্যক্তি বিশেষকে সাজা দিতে পারে না, যেমনটি পারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। আইসিসি আলাদাভাবে রোহিঙ্গা গণহত্যার ঘটনা তদন্ত করছে।

আইসিজেতে মামলা হলে আদালতের সিদ্ধান্ত মানার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে সদস্য দেশগুলোর ওপর। আর সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার কোন সুযোগ নেই। তবে সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য করার কোন ক্ষমতা নেই এ আদালতের। সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করারও বহু উদাহরণ রয়েছে।

গাম্বিয়া রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার স্বার্থে অন্তরবতীকালীন পদক্ষেপ নেয়ার যে আর্জি জানিয়েছে, সেখানে গণহত্যার আলামত সংরক্ষণের বিষয়েও আদেশ চাওয়া হয়েছে।

মায়ানমার গণহত্যা চালিয়েছে কি না সে বিষয়ে রায় দিতে হলে আদালতে এটা প্রমাণ হতে হবে যে, রাষ্ট্রটি রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে আংশিক কিংবা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই কাজ করেছে।

তবে সেটা যদি প্রমাণও হয় তবুও অং সান সু চি কিংবা মায়ানমারের জেনারেলদের গ্রেপ্তার করা কিংবা তাদের বিচার করার মত পদক্ষেপ নিতে পারবে না আইসিজে। মায়ানমারকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত রায় দিলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো পদক্ষেপ আসতে পারে। তাতে মায়ানমার বিশ্বে ভাবমূর্তি সংকট এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের ১৫ বিচারকের সঙ্গে প্যানেলে গাম্বিয়া ও মায়ানমারের মনোনীত দুই বিচারকও আছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।

বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২০ , ২ মাঘ ১৪২৬, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

রোহিঙ্গা গণহত্যা

আইসিজের অন্তর্বর্তী আদেশ ২৩ জানুয়ারি

সংবাদ ডেস্ক |

রোহিঙ্গাদের গণহত্যার অভিযোগে মায়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার করা মামলায় মায়ানমারের বিরুদ্ধে কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত ২৩ জানুয়ারি জানাবে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)। গাম্বিয়ার বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত সোমবার এক টুইটে এ কথা জানায়। তবে এ বিষয়ে আইসিজের পক্ষ থেকে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, মায়ানমার থেকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে প্রায় ৭ লাখ ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশ আশ্রয় নিয়েছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত ১১ নভেম্বর মায়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে গাম্বিয়া। গত মাসে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগে মায়ানমারের বিরুদ্ধে এই মামলার দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে নিজের দেশের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন দেশটির ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি। সেখানে তিনি মায়ানমার সেনাদের গণহত্যার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, এই মামলার শুনানির অধিকার নেই আন্তর্জাতিক আদালতের। ওই সময় গাম্বিয়ার পক্ষ থেকেও আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার তথ্য প্রমাণ উত্থাপন করা হয় এবং সেখানে গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।

দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শোনার পর আইসিজের ১৭ সদস্যের বিচারক প্যানেল বিষয়টি আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে। আইসিজের বিচারক প্যানেলের প্রধান আবদুলকাভি আহমেদ ইউসুফ গত ১৩ ডিসেম্বর বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব’ এ মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন তারা।

আইসিজেতে গাম্বিয়ার করা এ মামলায় গণহত্যা প্রতিরোধ ও এর শাস্তি বিধানে ১৯৮৪ সালে স্বাক্ষরিত কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়েছে মায়ানমারের বিরুদ্ধে। ১৯৫৬ সালে ওই ‘জেনোসাইড কনভেনশনে’ সই করেছিল মায়ানমার; গাম্বিয়াও এ কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ। এই কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো শুধু গণহত্যা থেকে বিরতই থাকবে না, এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ এবং এমন অপরাধের জন্য শাস্তি বিধান করতেও অঙ্গীকারাবদ্ধ।

ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত এক দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের অভিযোগ তুলতে পারে। এ আদালত কোন ব্যক্তি বিশেষকে সাজা দিতে পারে না, যেমনটি পারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। আইসিসি আলাদাভাবে রোহিঙ্গা গণহত্যার ঘটনা তদন্ত করছে।

আইসিজেতে মামলা হলে আদালতের সিদ্ধান্ত মানার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে সদস্য দেশগুলোর ওপর। আর সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার কোন সুযোগ নেই। তবে সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য করার কোন ক্ষমতা নেই এ আদালতের। সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করারও বহু উদাহরণ রয়েছে।

গাম্বিয়া রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার স্বার্থে অন্তরবতীকালীন পদক্ষেপ নেয়ার যে আর্জি জানিয়েছে, সেখানে গণহত্যার আলামত সংরক্ষণের বিষয়েও আদেশ চাওয়া হয়েছে।

মায়ানমার গণহত্যা চালিয়েছে কি না সে বিষয়ে রায় দিতে হলে আদালতে এটা প্রমাণ হতে হবে যে, রাষ্ট্রটি রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে আংশিক কিংবা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই কাজ করেছে।

তবে সেটা যদি প্রমাণও হয় তবুও অং সান সু চি কিংবা মায়ানমারের জেনারেলদের গ্রেপ্তার করা কিংবা তাদের বিচার করার মত পদক্ষেপ নিতে পারবে না আইসিজে। মায়ানমারকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত রায় দিলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো পদক্ষেপ আসতে পারে। তাতে মায়ানমার বিশ্বে ভাবমূর্তি সংকট এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের ১৫ বিচারকের সঙ্গে প্যানেলে গাম্বিয়া ও মায়ানমারের মনোনীত দুই বিচারকও আছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।