বদলি আতঙ্ক এবং বিএসসি ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিরোধ তুঙ্গে

বদলি আতংক, বিতর্কিত প্রকৌশলীদের সুবিধাজনক স্থানে পদায়ন এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অভ্যন্তরীণ বিরোধে স্থবির হয়ে পড়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি)। এছাড়া বিএসসি নিয়োগ পাওয়া প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের মধ্যে বিরোধও তুঙ্গে। একক কর্তৃত্ব ধরে রাখতে বিএসসি ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের একটি পক্ষকে ব্যাপক চাপে ফেলছেন প্রধান কর্তা। এ নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে ইইডির নিজস্বসহ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) ১৫টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন মন্থর গতিতে এগুচ্ছে। যথাসময়ে প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে উদ্বিগ্ন মাউশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি সাতজন সহকারী প্রকৌশলীকে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা কয়েকজন নির্বাহী প্রকৌশলীকে বদলির একটি প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে ইইডির শীর্ষ কর্মকর্তা। ওই প্রস্তাবনায় আওয়ামীপন্থি কয়েকজন নির্র্বাহী প্রকৌশলীর নাম রয়েছে, যাদের সরিয়ে পছন্দের প্রকৌশলীদের পদায়নের চেষ্টা করছেন শীর্ষ কর্মকর্তা। এই বদলিতে বিতর্কিত কয়েকজন ঠিকাদারের ভূমিকা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

ইতোমধ্যে একজন বিতর্কিত ও আরেকজন বিএনপিপন্থি প্রকৌশলীকে ইইডির প্রধান কার্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে এবং আওয়ামীপন্থি একজনকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে, যা নিয়ে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। আরেকজন প্রকৌশলীকে সংস্থার খুলনা জোনে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ঠিকাদারদের সঙ্গে রফাদফার ভিত্তিতে পঞ্চগড় থেকে বিএনপিপন্থি একজন প্রকৌশলীকে ঢাকা ও আশপাশের জেলায় পদায়নের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা একাধিক নির্বাহী প্রকৌশলী সম্প্রতি বদলি আতংকের বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ ব্যক্তিকে অবহিত করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বদলি আতংকের বিষয়ে জানতে চাইলে ইইডির প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) বুলবুল আখতার কোন মন্তব্য করতে চাননি।

দু’জন নির্বাহী প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের বদলি স্বাভাবিক বিষয়ক। কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই আমাদের মতো সরকার সমর্থক প্রকৌশলীদের দূরে পাটিয়ে বিএনপি-জামায়াত গড়ানার ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রকৌশলীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে (স্থান) বসাবেন, এটা তো মেনে নেয়া যায় না।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, শিক্ষামন্ত্রী ইতোমধ্যে একাধিক সভায় মন্ত্রণালয়ের অধীনন্থ সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের জানিয়েছেন, ‘বদলি নিয়ে বাণিজ্য’-এ জাতীয় শব্দই শুনতে চাই না। যাদের বিরুদ্ধেই এই ধরনের অভিযোগ আসবে, কাউকে রেহাই দেয়া হবে না।’

ইইডি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় ঢাকায় শিক্ষা ভবনে (২য় ব্লক (৯ম তলা), ১৬, আবদুল গণি রোড) অবস্থিত। সারাদেশে ইইডির ৩৮টি জোনাল অফিস রয়েছে। প্রতিটি জোনে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী অফিস প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। প্রধান কার্যালয়সহ জোনাল অফিসগুলোতে (আঞ্চলিক কার্যালয়) একজন প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে বর্তমানে মোট ১১ জন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, ৪২ জন নির্বাহী প্রকৌশলী এবং চার শতাধিক ডিপ্লোমা প্রকৌশলী রয়েছেন।

ভোটে নেতা নির্বাচন না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে ‘শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতি’র সদস্যরা দু’ভাগে বিভক্ত। এর একটি পক্ষ প্রভাবশালী, বদলি ও পদায়নে যাদের কর্তৃত্ব রয়েছে। অপর পক্ষটি দুর্বল, কারণ তারা ইইডি প্রধানের সান্নিধ্য পাচ্ছেন না। মূলত প্রধান কর্মকর্তা একটি পক্ষ্য নেয়ার কারণেই সারাদেশে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে।

এ ব্যাপারে ‘শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘সর্বসম্মতিক্রমেই সমিতির কমিটি গঠন করা হয়। বদলি, পদায়নেও সমিতির কোন ভূমিকা নেই। সরকারিভাবেই সবকিছু হয়।’

বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২০ , ২ মাঘ ১৪২৬, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর

বদলি আতঙ্ক এবং বিএসসি ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিরোধ তুঙ্গে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

বদলি আতংক, বিতর্কিত প্রকৌশলীদের সুবিধাজনক স্থানে পদায়ন এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অভ্যন্তরীণ বিরোধে স্থবির হয়ে পড়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি)। এছাড়া বিএসসি নিয়োগ পাওয়া প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের মধ্যে বিরোধও তুঙ্গে। একক কর্তৃত্ব ধরে রাখতে বিএসসি ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের একটি পক্ষকে ব্যাপক চাপে ফেলছেন প্রধান কর্তা। এ নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে ইইডির নিজস্বসহ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) ১৫টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন মন্থর গতিতে এগুচ্ছে। যথাসময়ে প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে উদ্বিগ্ন মাউশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি সাতজন সহকারী প্রকৌশলীকে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা কয়েকজন নির্বাহী প্রকৌশলীকে বদলির একটি প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে ইইডির শীর্ষ কর্মকর্তা। ওই প্রস্তাবনায় আওয়ামীপন্থি কয়েকজন নির্র্বাহী প্রকৌশলীর নাম রয়েছে, যাদের সরিয়ে পছন্দের প্রকৌশলীদের পদায়নের চেষ্টা করছেন শীর্ষ কর্মকর্তা। এই বদলিতে বিতর্কিত কয়েকজন ঠিকাদারের ভূমিকা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

ইতোমধ্যে একজন বিতর্কিত ও আরেকজন বিএনপিপন্থি প্রকৌশলীকে ইইডির প্রধান কার্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে এবং আওয়ামীপন্থি একজনকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে, যা নিয়ে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। আরেকজন প্রকৌশলীকে সংস্থার খুলনা জোনে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ঠিকাদারদের সঙ্গে রফাদফার ভিত্তিতে পঞ্চগড় থেকে বিএনপিপন্থি একজন প্রকৌশলীকে ঢাকা ও আশপাশের জেলায় পদায়নের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা একাধিক নির্বাহী প্রকৌশলী সম্প্রতি বদলি আতংকের বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ ব্যক্তিকে অবহিত করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বদলি আতংকের বিষয়ে জানতে চাইলে ইইডির প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) বুলবুল আখতার কোন মন্তব্য করতে চাননি।

দু’জন নির্বাহী প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের বদলি স্বাভাবিক বিষয়ক। কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই আমাদের মতো সরকার সমর্থক প্রকৌশলীদের দূরে পাটিয়ে বিএনপি-জামায়াত গড়ানার ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রকৌশলীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে (স্থান) বসাবেন, এটা তো মেনে নেয়া যায় না।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, শিক্ষামন্ত্রী ইতোমধ্যে একাধিক সভায় মন্ত্রণালয়ের অধীনন্থ সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের জানিয়েছেন, ‘বদলি নিয়ে বাণিজ্য’-এ জাতীয় শব্দই শুনতে চাই না। যাদের বিরুদ্ধেই এই ধরনের অভিযোগ আসবে, কাউকে রেহাই দেয়া হবে না।’

ইইডি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় ঢাকায় শিক্ষা ভবনে (২য় ব্লক (৯ম তলা), ১৬, আবদুল গণি রোড) অবস্থিত। সারাদেশে ইইডির ৩৮টি জোনাল অফিস রয়েছে। প্রতিটি জোনে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী অফিস প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। প্রধান কার্যালয়সহ জোনাল অফিসগুলোতে (আঞ্চলিক কার্যালয়) একজন প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে বর্তমানে মোট ১১ জন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, ৪২ জন নির্বাহী প্রকৌশলী এবং চার শতাধিক ডিপ্লোমা প্রকৌশলী রয়েছেন।

ভোটে নেতা নির্বাচন না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে ‘শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতি’র সদস্যরা দু’ভাগে বিভক্ত। এর একটি পক্ষ প্রভাবশালী, বদলি ও পদায়নে যাদের কর্তৃত্ব রয়েছে। অপর পক্ষটি দুর্বল, কারণ তারা ইইডি প্রধানের সান্নিধ্য পাচ্ছেন না। মূলত প্রধান কর্মকর্তা একটি পক্ষ্য নেয়ার কারণেই সারাদেশে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে।

এ ব্যাপারে ‘শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘সর্বসম্মতিক্রমেই সমিতির কমিটি গঠন করা হয়। বদলি, পদায়নেও সমিতির কোন ভূমিকা নেই। সরকারিভাবেই সবকিছু হয়।’