বৈরী আবহাওয়া : চাঁদপুরে ফসল উৎপাদন ব্যাহত

গত প্রায় দুই পক্ষকাল ধরে কয়েকটি শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশার কারণে শীতকালীন ফসল অনেকটা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বার বার ফসল নষ্ট হবার কারণে দিশেহারা কৃষক। ইতোমধ্যে আলু, টমেটো, সরিষা, করলাসহ শীতকালীন সবজি অনেকখানি নষ্ট হয়ে গেছে। তবে উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, এই মুহূর্তে ছত্রাক নাশক ছিটানো আর নষ্ট হয়ে যাওয়া আলুর জমিতে বিকল্প ফসল হিসেবে ভুট্টা চাষ করলে হয়ত কৃষকের ক্ষতি যৎসামান্য কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরের চেয়ে চলিত বছর আলুসহ অন্য সকল শীতকালীন সবজি চাষে অনেকটাই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে কৃষকরা। গত কয়েকবছর ধরে হাজীগঞ্জে ১২ থেকে ১৪শ’ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হতো। কিন্তু চলিত বছর ৬ থেকে ৭শ’ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হচ্ছে। আলু, সরিষা, করলাসহ অন্য সকল ফসলের জমিতে এই ছত্রাকনাশক দেয়া ছাড়া বিকল্প কোন ব্যবস্থা আপাতত নেই।

আলুর জমি তৈরির জন্য যে সার দেয়া হয়েছে সেই সার দিয়েই ভুট্টা চাষ করলে এ ক্ষেত্রে ফের সারের তেমন একটা প্রয়োজন নেই। এক কথায় আলুর জমি নষ্ট হয়ে গেলে ওই জমিতে ভুট্টা চাষ করলে আলুর ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। হাজীগঞ্জের বাকিলা ইউনিয়নের বেশ ক’জন কৃষকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, কৃষিতে একবার কিংবা দুইবার ক্ষতি হলে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব, কিন্তু বারবার ক্ষতি হলে ফসল না করাই ভাল। বাকিলা ইউনিয়নের সন্না পশ্চিম মাঠের কৃষক স্থানীয় হাওলাদার বাড়ির মৃত জুনাব আলীর ছেলে মফিজ জানান, বাবা ছেলে মিলে আমরা অন্যের ১শ’ ২০ শতাংশ জমিতে বর্গায় আলু চাষ করেছি। ঘন কুয়াশা আর বৃষ্টির কারণে আলুর জমির অনেক ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

একই মাঠের কৃষক মৃত হামিদ আলীর ছেলে আ. রব আলুর জমির পাশে সরিষা করেছেন। সরিষা গাছ এক থেকে দেড় ইঞ্চি বড় হওয়ার পরেই আবহাওয়ার কারণে তা নষ্ট হয়ে গেছে। পরে বাধ্য হয়ে সেই জমি মাড়িয়ে (ভেঙ্গে) ফের সরিষা বুনতে হয়েছে।

একই মাঠের কৃষক আ. রব হাওলাদারের ছেলে খোরশেদ আলম করলার বীজ রোপণ করেছেন। কিন্তু বৈরি আবহাওয়ার কারণে লম্বা লম্বা করলা গাছগুলো হলুদ আকার ধারণ করেছে।

উপজেলার কালচোঁ উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়ন এবং ১২নং দ্বাদশগ্রাম ইউনিয়ন মিলিয়ে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ ‘খোদাই বিল’। এই বিলের ফসল নিয়ে কালচোঁ উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান পলাশ জানান, অন্যবারের চেয়ে এবারে খোদাই বিলে আলুসহ শীতকালীন অন্য সকল ফসলের অর্ধেকটাই বৈরী আবহাওয়ার কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। এই ক্ষতি কৃষকরা কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারবে না।

বাকিলা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (শ্রীপুর ব্লক) জাহাঙ্গীর আলম জানান, বৈরী আবহাওয়া বিশেষ করে শৈত্যপ্রবাহের কারণে আলু, করলা, টমেটোসহ যে সকল ফসলের ক্ষতি হয়েছে তাতে প্রাথমিকভাবে ছত্রাকনাশক দেয়া ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। তবে ক্ষতির পরিমাণটা প্রাথমিকভাবে প্রায় ২০ ভাগ হবে। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বিশেষ করে এই বৈরী আবহাওয়ার কারণে বোরো ধানের বীজতলার বেশ ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যে যারা বোরো ধান রোপণ করেছেন, শৈত্যপ্রবাহের কারণে যাদের গাছ হলদেটে হয়ে গেছে সেই ধানের আঁটি সরিয়ে নতুন আঁটি দিয়ে দিলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়ন মনি সূত্র ধর বলেন, বৃষ্টি আর শৈত্যপ্রবাহের কারণে মোট কৃষি জমির প্রায় ৫০ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছে, তবে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ শতাংশ হবে।

শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২০ , ৩ মাঘ ১৪২৬, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

বৈরী আবহাওয়া : চাঁদপুরে ফসল উৎপাদন ব্যাহত

শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর

গত প্রায় দুই পক্ষকাল ধরে কয়েকটি শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশার কারণে শীতকালীন ফসল অনেকটা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বার বার ফসল নষ্ট হবার কারণে দিশেহারা কৃষক। ইতোমধ্যে আলু, টমেটো, সরিষা, করলাসহ শীতকালীন সবজি অনেকখানি নষ্ট হয়ে গেছে। তবে উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, এই মুহূর্তে ছত্রাক নাশক ছিটানো আর নষ্ট হয়ে যাওয়া আলুর জমিতে বিকল্প ফসল হিসেবে ভুট্টা চাষ করলে হয়ত কৃষকের ক্ষতি যৎসামান্য কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরের চেয়ে চলিত বছর আলুসহ অন্য সকল শীতকালীন সবজি চাষে অনেকটাই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে কৃষকরা। গত কয়েকবছর ধরে হাজীগঞ্জে ১২ থেকে ১৪শ’ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হতো। কিন্তু চলিত বছর ৬ থেকে ৭শ’ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হচ্ছে। আলু, সরিষা, করলাসহ অন্য সকল ফসলের জমিতে এই ছত্রাকনাশক দেয়া ছাড়া বিকল্প কোন ব্যবস্থা আপাতত নেই।

আলুর জমি তৈরির জন্য যে সার দেয়া হয়েছে সেই সার দিয়েই ভুট্টা চাষ করলে এ ক্ষেত্রে ফের সারের তেমন একটা প্রয়োজন নেই। এক কথায় আলুর জমি নষ্ট হয়ে গেলে ওই জমিতে ভুট্টা চাষ করলে আলুর ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। হাজীগঞ্জের বাকিলা ইউনিয়নের বেশ ক’জন কৃষকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, কৃষিতে একবার কিংবা দুইবার ক্ষতি হলে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব, কিন্তু বারবার ক্ষতি হলে ফসল না করাই ভাল। বাকিলা ইউনিয়নের সন্না পশ্চিম মাঠের কৃষক স্থানীয় হাওলাদার বাড়ির মৃত জুনাব আলীর ছেলে মফিজ জানান, বাবা ছেলে মিলে আমরা অন্যের ১শ’ ২০ শতাংশ জমিতে বর্গায় আলু চাষ করেছি। ঘন কুয়াশা আর বৃষ্টির কারণে আলুর জমির অনেক ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

একই মাঠের কৃষক মৃত হামিদ আলীর ছেলে আ. রব আলুর জমির পাশে সরিষা করেছেন। সরিষা গাছ এক থেকে দেড় ইঞ্চি বড় হওয়ার পরেই আবহাওয়ার কারণে তা নষ্ট হয়ে গেছে। পরে বাধ্য হয়ে সেই জমি মাড়িয়ে (ভেঙ্গে) ফের সরিষা বুনতে হয়েছে।

একই মাঠের কৃষক আ. রব হাওলাদারের ছেলে খোরশেদ আলম করলার বীজ রোপণ করেছেন। কিন্তু বৈরি আবহাওয়ার কারণে লম্বা লম্বা করলা গাছগুলো হলুদ আকার ধারণ করেছে।

উপজেলার কালচোঁ উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়ন এবং ১২নং দ্বাদশগ্রাম ইউনিয়ন মিলিয়ে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ ‘খোদাই বিল’। এই বিলের ফসল নিয়ে কালচোঁ উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান পলাশ জানান, অন্যবারের চেয়ে এবারে খোদাই বিলে আলুসহ শীতকালীন অন্য সকল ফসলের অর্ধেকটাই বৈরী আবহাওয়ার কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। এই ক্ষতি কৃষকরা কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারবে না।

বাকিলা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (শ্রীপুর ব্লক) জাহাঙ্গীর আলম জানান, বৈরী আবহাওয়া বিশেষ করে শৈত্যপ্রবাহের কারণে আলু, করলা, টমেটোসহ যে সকল ফসলের ক্ষতি হয়েছে তাতে প্রাথমিকভাবে ছত্রাকনাশক দেয়া ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। তবে ক্ষতির পরিমাণটা প্রাথমিকভাবে প্রায় ২০ ভাগ হবে। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বিশেষ করে এই বৈরী আবহাওয়ার কারণে বোরো ধানের বীজতলার বেশ ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যে যারা বোরো ধান রোপণ করেছেন, শৈত্যপ্রবাহের কারণে যাদের গাছ হলদেটে হয়ে গেছে সেই ধানের আঁটি সরিয়ে নতুন আঁটি দিয়ে দিলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়ন মনি সূত্র ধর বলেন, বৃষ্টি আর শৈত্যপ্রবাহের কারণে মোট কৃষি জমির প্রায় ৫০ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছে, তবে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ শতাংশ হবে।