এসএসসি পরীক্ষার্থী কমেছে সাড়ে ৮৭ হাজার

অংশ নিচ্ছে ২০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৭৯ জন, পরীক্ষা শুরু ১ ফেব্রুয়ারি, এক মাস সব কোচিং সেন্টার বন্ধ

এসএসসি ও সমপর্র্যায়ের পরীক্ষায় এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। এবার সারাদেশে এই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে মোট ২০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৭৯ জন শিক্ষাথী; যা গতবারের চেয়ে ৮৭ হাজার ৫৫৪ জন কম। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। পরীক্ষা শুরুর সাতদিন আগ থেকে এবারও একমাস দেশের সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার সিন্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

গতকাল সচিবালয়ে পরীক্ষা সংক্রান্ত জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘২০১৭ সালে যারা জেএসসি পাস করেছে তারা এবার পরীক্ষা দিচ্ছে। এর সঙ্গে কিছু অনিয়মিত শিক্ষার্থী আছে। ২০১৭ সালে জেএসসিতে পাসের হার কম ছিল এজন্য এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কম।’

আগামী ১ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি এসএসসির তত্ত্বীয় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সারাদেশের তিন হাজার ৫১২টি কেন্দ্রে ২৮ হাজার ৮৮৪টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এসএসসি ও সমপর্যায়ের পরীক্ষায় অংশ নেবে। বিগত বছরের ন্যায় এবারও বহু নির্বাচনী (এমসিকিউ) অংশের উত্তর আগে দিতে হবে। পরে নেয়া হবে সৃজনশীল/রচনামূলক অংশের পরীক্ষা। মন্ত্রী জানান, নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার এসএসসিতে ১৬ লাখ ৩৫ হাজার ২৪০ জন পরীক্ষায় অংশ নেবে। এর মধ্যে সাত লাখ ৯১ হাজার ৯১৮ জন ছাত্র এবং আট লাখ ৪৩ হাজার ৩২২ জন ছাত্রী। আর মাদ্রাসার দাখিলে এবার দুই লাখ ৮১ হাজার ২৫৪ জন এবং এসএসসি ভোকেশনালে এক লাখ ৩১ হাজার ২৮৫ জন এই পরীক্ষায় অংশ নেবে।

এবার ১৬ লাখ ৮১ হাজার ৬৮৮ জন নিয়মিত পরীক্ষার্থীর সঙ্গে তিন লাখ ৬১ হাজার ৩২৫ জন অনিয়মিত এবং দুই লাখ ৮২ হাজার ৫৯৪ জন বিশেষ পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশের আটটি কেন্দ্রে ৩৪২ শিক্ষার্থী এসএসসিতে অংশ নেবে বলে জানান দীপু মনি।

পরীক্ষা শুরু ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘অনিবার্য কারণে কোন পরীক্ষার্থীকে ওই সময়ের পরে প্রবেশ করতে দিলে তাদের নাম, রোল, প্রবেশের সময়, দেরি হওয়ার কারণসহ সব তথ্য রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করে সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা বোর্ডে পাঠাতে হবে। পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে এমএমএসের মাধ্যমে প্রশ্নের সেট কোড জানিয়ে দেয়া হবে। কেন্দ্র সচিব ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে ঢুকতে পারবেন না। শুধু কেন্দ্র সচিব ক্যামেরাবিহীন একটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন।’

এবার বাংলা দ্বিতীয়পত্র, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র ছাড়া সব বিষয়ের পরীক্ষা সৃজনশীল পদ্ধতিতে হবে বলে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী স্ক্রাইব (শ্রুতি লেখক) সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। এ ধরনের পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় দেয়া হবে। আর অটিস্টিক পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় বেশি দেয়ার পাশাপাশি শিক্ষক, অভিভাবক বা সাহায্যকারীর বিশেষ সহায়তায় পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে।’

মন্ত্রী জানান, নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা এবং ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়ের ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রাপ্ত নম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রকে সরবরাহ করবে। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বরের সঙ্গে ধারাবাহিক মূল্যায়নে পাওয়া নম্বর অনলাইনে বোর্ডে পাঠাবে।

তিনি প্রশ্ন ফাঁস রোধে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সব মহলকে প্রশ্ন ফাঁসের গুজবে কান না দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানাব কোনভাবেই কেউ যেন প্রশ্ন ফাঁসের গুজবে কান না দেন। কিছু প্রতারক চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব রটনা করে, মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে।’

সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে :

পরীক্ষা শুরুর সাত দিন আগ থেকে শেষ পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আসন্ন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সুষ্ঠু, সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আগামী ২৫ জানুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।’

প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে গতবছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সময় কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল সরকার। ওই সময় বলা হয়, বিভিন্ন কোচিং সেন্টারকে কেন্দ্র করে প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতচক্র সক্রিয়। এ কারণেই পরীক্ষার মাসে এসব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখতে হবে।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ ছাড়াও জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির সদস্যরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২০ , ৩ মাঘ ১৪২৬, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

এসএসসি পরীক্ষার্থী কমেছে সাড়ে ৮৭ হাজার

অংশ নিচ্ছে ২০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৭৯ জন, পরীক্ষা শুরু ১ ফেব্রুয়ারি, এক মাস সব কোচিং সেন্টার বন্ধ

এসএসসি ও সমপর্র্যায়ের পরীক্ষায় এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। এবার সারাদেশে এই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে মোট ২০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৭৯ জন শিক্ষাথী; যা গতবারের চেয়ে ৮৭ হাজার ৫৫৪ জন কম। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। পরীক্ষা শুরুর সাতদিন আগ থেকে এবারও একমাস দেশের সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার সিন্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

গতকাল সচিবালয়ে পরীক্ষা সংক্রান্ত জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘২০১৭ সালে যারা জেএসসি পাস করেছে তারা এবার পরীক্ষা দিচ্ছে। এর সঙ্গে কিছু অনিয়মিত শিক্ষার্থী আছে। ২০১৭ সালে জেএসসিতে পাসের হার কম ছিল এজন্য এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কম।’

আগামী ১ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি এসএসসির তত্ত্বীয় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সারাদেশের তিন হাজার ৫১২টি কেন্দ্রে ২৮ হাজার ৮৮৪টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এসএসসি ও সমপর্যায়ের পরীক্ষায় অংশ নেবে। বিগত বছরের ন্যায় এবারও বহু নির্বাচনী (এমসিকিউ) অংশের উত্তর আগে দিতে হবে। পরে নেয়া হবে সৃজনশীল/রচনামূলক অংশের পরীক্ষা। মন্ত্রী জানান, নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার এসএসসিতে ১৬ লাখ ৩৫ হাজার ২৪০ জন পরীক্ষায় অংশ নেবে। এর মধ্যে সাত লাখ ৯১ হাজার ৯১৮ জন ছাত্র এবং আট লাখ ৪৩ হাজার ৩২২ জন ছাত্রী। আর মাদ্রাসার দাখিলে এবার দুই লাখ ৮১ হাজার ২৫৪ জন এবং এসএসসি ভোকেশনালে এক লাখ ৩১ হাজার ২৮৫ জন এই পরীক্ষায় অংশ নেবে।

এবার ১৬ লাখ ৮১ হাজার ৬৮৮ জন নিয়মিত পরীক্ষার্থীর সঙ্গে তিন লাখ ৬১ হাজার ৩২৫ জন অনিয়মিত এবং দুই লাখ ৮২ হাজার ৫৯৪ জন বিশেষ পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশের আটটি কেন্দ্রে ৩৪২ শিক্ষার্থী এসএসসিতে অংশ নেবে বলে জানান দীপু মনি।

পরীক্ষা শুরু ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘অনিবার্য কারণে কোন পরীক্ষার্থীকে ওই সময়ের পরে প্রবেশ করতে দিলে তাদের নাম, রোল, প্রবেশের সময়, দেরি হওয়ার কারণসহ সব তথ্য রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করে সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা বোর্ডে পাঠাতে হবে। পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে এমএমএসের মাধ্যমে প্রশ্নের সেট কোড জানিয়ে দেয়া হবে। কেন্দ্র সচিব ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে ঢুকতে পারবেন না। শুধু কেন্দ্র সচিব ক্যামেরাবিহীন একটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন।’

এবার বাংলা দ্বিতীয়পত্র, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র ছাড়া সব বিষয়ের পরীক্ষা সৃজনশীল পদ্ধতিতে হবে বলে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী স্ক্রাইব (শ্রুতি লেখক) সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। এ ধরনের পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় দেয়া হবে। আর অটিস্টিক পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় বেশি দেয়ার পাশাপাশি শিক্ষক, অভিভাবক বা সাহায্যকারীর বিশেষ সহায়তায় পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে।’

মন্ত্রী জানান, নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা এবং ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়ের ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রাপ্ত নম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রকে সরবরাহ করবে। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বরের সঙ্গে ধারাবাহিক মূল্যায়নে পাওয়া নম্বর অনলাইনে বোর্ডে পাঠাবে।

তিনি প্রশ্ন ফাঁস রোধে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সব মহলকে প্রশ্ন ফাঁসের গুজবে কান না দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানাব কোনভাবেই কেউ যেন প্রশ্ন ফাঁসের গুজবে কান না দেন। কিছু প্রতারক চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব রটনা করে, মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে।’

সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে :

পরীক্ষা শুরুর সাত দিন আগ থেকে শেষ পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আসন্ন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সুষ্ঠু, সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আগামী ২৫ জানুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।’

প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে গতবছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সময় কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল সরকার। ওই সময় বলা হয়, বিভিন্ন কোচিং সেন্টারকে কেন্দ্র করে প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতচক্র সক্রিয়। এ কারণেই পরীক্ষার মাসে এসব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখতে হবে।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ ছাড়াও জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির সদস্যরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।