ঢাকার সমস্যা সমাধানে নগর সরকার ও নগরীয় কৃষি

নিতাই চন্দ্র রায়

যানজট, জলাবদ্ধতা, বাতাস ও শব্দদূষণে দূষিত আমাদের রাজধানী ঢাকা শহর। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর নগর। বায়ু দূষণের কারণে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী। অ্যাডিস মশার কারণে ডেঙ্গুরোগের প্রাদুর্ভাব নগরবাসীর জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। জাতীয় ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অমান্য করে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন। ঘটছে রানা প্লাজার মতো দুর্ঘটনা। বাড়ছে অগ্নিকা-ের ঝুঁকি। খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত উদ্যানের অভাবে আমাদের ভবিষ্যত স্বপ্ন, শিশুরা কাটাচ্ছে গৃহবন্দী জীবন। তাদের চিত্তবিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। নারী ও শিশুদের জন্যও নিরাপদ নয় ঢাকা নগরী। ধনী দরিদ্রের বৈষম্য বাড়ছে লাগামহীনভাবে। ধনীর সুউচ্চ বহুতল ভবনের পাশে বাড়ছে জীর্ণ বস্তির সংখ্যা। নগর দারিদ্র্য দূরীকরণেও নেই কোনো বাস্তব উদ্যোগ। অসহনীয় যানজটের কারণে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে কত লাখ কর্মঘণ্টা। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে কত মানুষ। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে না উঠার কারণে আবর্জনার দুর্গন্ধে অসহনীয় নগরবাসীর জীবন। বর্ষায় সামান্য বৃষ্টিতেই চরম জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ভোগের সীমা থাকে না তখন নগরবাসীর। ঢাকার চারপাশে চারটি নদী শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু- এ ধরনের নিসর্গ নগর পৃথিবীতে সত্যই বিরল। আমরা শিল্প বর্জ্য, পয়োবর্জ্য ও গৃহস্থালি বর্জ্য ফেলে নদীগুলোর পানি নষ্ট করে ফেলছি। দখল ও দূষণে নদীগুলো মৃতপ্রায়। পুকুর-ডোবা, খাল-বিল ও নদী-নালাসহ প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো ভরাট করে ও নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করে আমরা নিজেরা নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনছি। ঢাকাকে ইট, পাথর ও লোহা, কাঁচ ও এলোমিনিয়ামের তপ্ত দ্বীপে পরিণত করছি। এসব কারণে ঢাকা দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। ভূগর্ভস্থ পানির অতিব্যবহারে পানির স্তর ক্রমাগত নিচে চলে যাচ্ছে। দেখা দিচ্ছে সুপেয় পানির সংকট। আবাসন, শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগের অভাবও নগরীর বড় সমস্যা।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা মোতাবেক আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা বহু প্রতীক্ষিত ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনের মধ্যে ঢাকা সিটি কপোরেশনের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিএনপি, জাতীয় পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও ন্যাশনাল পিপল পার্টিসহ বেশ ক’টি রাজনৈতিক দলের অংশ গ্রহণে নির্বাচনকে ঘিরে রাজধানীতে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। দিচ্ছেন নানারকম প্রতিশ্রুতি। প্রতিশ্রুতির পুষ্প বৃষ্টিতে ভাসছে ঢাকা। আওয়ামী লীগ মনোনীত ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। তিনি পুরাতন ঢাকাকে আধুনিক হিসেবে গড়ে তুলতে চান। দায়িত্ব গ্রহণের তিন মাসের মধ্যে আধুনিক ঢাকা গড়তে মহাপরিকল্পনা করার চেষ্টা করবেন তিনি। পরিকল্পনায় প্রাধান্য পাবে পাঁচটি বিষয়। সেবা সংস্থারগুলোর মধ্যে থাকা সমন্বয়হীনতার মতোই সিটি করপোরেশনে থাকা সব অব্যবস্থাপনাই দূর করবেন নির্বাচিত হলে এই মেয়র প্রার্থী। ‘ঐতিহ্যের সঙ্গে, সমৃদ্ধির পথে, আমাদের ঢাকা’ স্লোগানকে সামনে রেখে নির্বাচনী মাঠে লড়ছেন তিনি। বিএনপি মনোনিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন একটি বাসযোগ্য ও দূষণমুক্ত নগরী উপহার দিতে চান। দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই মশা নিধনের কাজ শুরু করতে চান এই মেয়র প্রার্থী। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক যানজট ও জলাবদ্ধতা নিরসনে নিবেন দীর্র্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা। বাবার রেখে যাওয়া কাজগুলো আরও জোরালো করার মাধ্যমে ঢাকাকে তিলোত্তমা রূপ দিতে চান তিনি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ঢাকাকে পরিকল্পিত আলোকোজ্জ্বল নগর হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন। মেয়র নির্বাচিত হয়ে মানবিক ঢাকা গড়তে চান তিনি। ঢাকা শহরের সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ যানজট ও জলজট। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তার বাস্তব অভিজ্ঞতা তিনি কাজে লাগাতে চান নির্বাচিত হয়ে। নগরে নারীরা যাতে অবাধে চলাচল করতে পারে সেজন্য পুরো শহরে প্রায় ৪৮ হাজার এলইডি লাইট লাগানোর পরিকল্পনা আছে তার। ঢাকা উত্তরের বিএনপি মনোনিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল দুর্নীতি দমনসহ ১২টি সমস্যা দূর করারর প্রতিশ্রুতি দেন ভোটারদের। রংপুরে জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাস্তে মার্কা নিয়ে প্রচারে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন কমিউনিস্ট পার্টির মেয়র প্রার্থী ডা. আহাম্মদ সাজেদুল হক রুবেল । ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে জোরেশোরে প্রচারণা চালাচ্ছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আব্দুর রহমান। তার প্রতীক হাতপাখা। তিনি ঢাকার ৪০০ বছরের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা উত্তর সিটি ককরপোরেন নির্বাচন প্রার্থী অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ দুর্নীতি ও দূষণমুক্ত ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থীগণ যানজট জলাবদ্ধতা মুক্ত, দূষণ মুক্ত, পরিকল্পিত বাসযোগ্য মানবিক নগর গড়ার যেসব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তা বিদ্যমান সিটি করপোরেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে পূরণ করা কোনো অবস্থাতেই সম্ভব হবে না। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে স্বশাসিত, স্বনির্ভর ও গণতান্ত্রিক নগর সরকার ও নগরীয় কৃষি ব্যবস্থার মাধ্যমে নগরবাসীদের সমস্যাগুলো সমাধান করে পরিবেশবান্ধব পরিকল্পিত নগর গড়ে তোলা হয়েছে। একারণে ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন নগর সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন। তাদের সেই দাবি আজও পূরণ হয়নি এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরের সমস্যাগুলিরও সমাধান হয়নি। নগর সরকার গঠন করতে হলে প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা কাউন্সিলর নাগরিকদের ভোটে সরাসরি নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচিত কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে নগর সংসদ গঠিত হবে। নগর সংসদের কাজ হবে অনেকটা জাতীয় সংসদের মতো বিধানিক। নগর সংসদে যেসব বিধিবিধান,উপবিধি প্রণয়ন এবং সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে নগর নির্বাহী বিভাগ তা বাস্তবায়ন করবে। মেয়র নগর নির্বাহিক বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন। তিনি জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। নগর সংসদে বার্ষিক বাজেট উত্থাপিত ও অনুমোদিত হবে। নগরের ছোটখাটো ঝগড়া বিবাদ ও অপারাধের বিচার করার জন্য নগরীয় বিচার বিভাগ গঠন করতে হবে।নগর নির্বাহী বিভাগ, নগর সংসদও নগর বিচার বিভাগের সমন্বয়ে গঠিতহবে নগর সরকার। নগর সরকারের ময়োদ হবে ৫ বছর।এছাড়া নগরবাসীদের অভিযোগ অনুযোগের মীমাংসাার জন্য প্রতিটি নগরে এজন ন্যায়পাল থাকবেন। ন্যায়পাল কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত হবেন। পুলিশসহ নগরের সকল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠগুলো নগর সরকারের অধীনে কাজ করবে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়োগ, পদোন্নতি এবং চাকুরি থেকে অব্যাহতির সকল ক্ষমতা থাকবে নগর সরকারের হাতে। অপরদিকে নগরবাসীর খাদ্য, পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং নগরগুলোকে সবুজ পরিবেশবান্ধবভাবে গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি নগরে নগর সরকারে অধীনে নগরীয় কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। নগর ও নগরের আশেপাশে নগরবাসীর জন্য প্রয়োজনী খাদ্যশস্য, শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম উৎপাদন করতে হবে। নগরের প্রতিটি বসতবাড়িতে মাশরুমের চাষ, চৌবাচ্চায় মাছ চাষ, খাঁচায় মুরগি পালনের মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নগরের আবর্জনা থেকে উৎপাদিত জৈব সার নগরীয় কৃষিকাজে ব্যবহার করতে হবে। মিলকারখানার তরল বর্জ্য পরিশোধন করে সেচ ও মাছ চাষের কাজে ব্যবহার করতে হবে। নগর সবুজায়নের জন্য প্রতিটি অফিস আদালত, মিলকারখানার পতিত জায়গায় , জলাশয়ের ধারে এবং রাস্তার সড়ক দ্বীপে ফল , ফুল, ওষুধি ও শোভাবর্ধনকারী গাছ লাগাতে হবে। ছাদ বাগান তৈরি কাজে নগরবাসীকে উৎসাহিতকরতে হবে। এজন্য ট্যাক্স মওকুফের মতো প্রণোদনা প্রদান করা যেতে পারে।

বর্তমানে পৃথিবীর শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি লোক নগরে বসবাস করে। পৃথিবীতে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যের শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ এখন নগরে উৎপাতি হচ্ছে জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পৃথিবীতে প্রায় ৮০ কোটি লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নগরীয় খাদ্য উৎপাদনের সাথে জড়িত এবং ২০ কোটি নগরবাসী বিক্রির জন্য খাদ্য উৎপাদন করে। ভিয়েতনামের হেনয়ে বসবাসকারী লোকজন তাদের প্রয়োজনের শতকরা ৮৪ ভাগ টাটকা শাকসবজি, ৫০ ভাগ মাছ-মাংস এবং ৪০ ভাগ ডিম নগরের নিজস্ব খামারে উৎপাদন করে। চীনে সাংহাইয়ের চাহিদার শতকরা ৬০ ভাগ শাকসবজি, ১০০ ভাগ দুধ, ৯০ ভাগ ডিম এবং ৫০ ভাগ মাংস উৎপাদিত হয় নগরীয় কৃষির মাধ্যমে। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের পরিত্যক্ত স্থানগুলোতে পারিকালচার প্রকল্পের মাধ্যমে বছরে ১ হাজার ৬৫০ টন ফল, সবজি, মাশরুম, সাত টন মাছ, ১২ লাখ ফুল, ১৩ লাখ গাছ এবং প্রচুর মধু, জাফরান এবং স্পিরুলিনার মতো শৈবাল উৎপাদিত হচ্ছে। জাপানের শতকরা ২৫ ভাগ লোক নগরীয় কৃষির সাথে জড়িত। প্রচলিত কৃষির চেয়ে নগরীয় কৃষিতে শতকরা ৩ ভাগ বেশি উৎপাদন হচ্ছে সেখানে। জাপানের পাহাড়ী কৃষির তুলনায় নগরীয় কৃষি দ্বিগুণ লাভজনক। জাপানের রাজধানী টোকিওতে নগরীয় কৃষির মাধ্যমে উৎপাদিত শাকসবজি নগরের ৭ লাখ মানুষের প্রয়োজন মিটায়। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৫ কোটি লোক নগরে বসবাস করে। ঢাকা শহরে বাস করে ১ কোটি ৮০ লাখ লোক। যত দিন যাচ্ছে নগরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে নিরাপদ খাদ্যের চাহিদা।ভবিষ্যতে দূরবর্তী স্থান থেকে খাদ্যশস্য, শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ এনে ঢাকাবাসীর খাদ্য খাদ্য চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে না। সম্ভব হবে না ভেজাল মুক্ত নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা। তাই নগরবাসীর জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য নগর ও তার আশেপাশেই উৎপাদনের জন্য বিদেশের মতো করে নয়, আমাদের মাটি ও আবহাওয়া, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিটি নগরে একরূপ নগর সরকারের মাধ্যমে নগরীয় কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা না করে নগরগুলোকে বাসযোগ্য করা যাবে না। গড়া যাবে না পরিবেশবান্ধব ও পরিকল্পিত মানবিক নগর।

[লেখক : সাবেক মহাব্যস্থাপক (কৃষি), নর্থবেঙ্গল সুগার মিলস্ লিমিটেড, গোপালপুর , নাটোর]

netairoy18@yahoo.com

শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২০ , ৩ মাঘ ১৪২৬, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

ঢাকার সমস্যা সমাধানে নগর সরকার ও নগরীয় কৃষি

নিতাই চন্দ্র রায়

যানজট, জলাবদ্ধতা, বাতাস ও শব্দদূষণে দূষিত আমাদের রাজধানী ঢাকা শহর। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর নগর। বায়ু দূষণের কারণে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী। অ্যাডিস মশার কারণে ডেঙ্গুরোগের প্রাদুর্ভাব নগরবাসীর জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। জাতীয় ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অমান্য করে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন। ঘটছে রানা প্লাজার মতো দুর্ঘটনা। বাড়ছে অগ্নিকা-ের ঝুঁকি। খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত উদ্যানের অভাবে আমাদের ভবিষ্যত স্বপ্ন, শিশুরা কাটাচ্ছে গৃহবন্দী জীবন। তাদের চিত্তবিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। নারী ও শিশুদের জন্যও নিরাপদ নয় ঢাকা নগরী। ধনী দরিদ্রের বৈষম্য বাড়ছে লাগামহীনভাবে। ধনীর সুউচ্চ বহুতল ভবনের পাশে বাড়ছে জীর্ণ বস্তির সংখ্যা। নগর দারিদ্র্য দূরীকরণেও নেই কোনো বাস্তব উদ্যোগ। অসহনীয় যানজটের কারণে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে কত লাখ কর্মঘণ্টা। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে কত মানুষ। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে না উঠার কারণে আবর্জনার দুর্গন্ধে অসহনীয় নগরবাসীর জীবন। বর্ষায় সামান্য বৃষ্টিতেই চরম জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ভোগের সীমা থাকে না তখন নগরবাসীর। ঢাকার চারপাশে চারটি নদী শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু- এ ধরনের নিসর্গ নগর পৃথিবীতে সত্যই বিরল। আমরা শিল্প বর্জ্য, পয়োবর্জ্য ও গৃহস্থালি বর্জ্য ফেলে নদীগুলোর পানি নষ্ট করে ফেলছি। দখল ও দূষণে নদীগুলো মৃতপ্রায়। পুকুর-ডোবা, খাল-বিল ও নদী-নালাসহ প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো ভরাট করে ও নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করে আমরা নিজেরা নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনছি। ঢাকাকে ইট, পাথর ও লোহা, কাঁচ ও এলোমিনিয়ামের তপ্ত দ্বীপে পরিণত করছি। এসব কারণে ঢাকা দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। ভূগর্ভস্থ পানির অতিব্যবহারে পানির স্তর ক্রমাগত নিচে চলে যাচ্ছে। দেখা দিচ্ছে সুপেয় পানির সংকট। আবাসন, শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগের অভাবও নগরীর বড় সমস্যা।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা মোতাবেক আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা বহু প্রতীক্ষিত ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনের মধ্যে ঢাকা সিটি কপোরেশনের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিএনপি, জাতীয় পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও ন্যাশনাল পিপল পার্টিসহ বেশ ক’টি রাজনৈতিক দলের অংশ গ্রহণে নির্বাচনকে ঘিরে রাজধানীতে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। দিচ্ছেন নানারকম প্রতিশ্রুতি। প্রতিশ্রুতির পুষ্প বৃষ্টিতে ভাসছে ঢাকা। আওয়ামী লীগ মনোনীত ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। তিনি পুরাতন ঢাকাকে আধুনিক হিসেবে গড়ে তুলতে চান। দায়িত্ব গ্রহণের তিন মাসের মধ্যে আধুনিক ঢাকা গড়তে মহাপরিকল্পনা করার চেষ্টা করবেন তিনি। পরিকল্পনায় প্রাধান্য পাবে পাঁচটি বিষয়। সেবা সংস্থারগুলোর মধ্যে থাকা সমন্বয়হীনতার মতোই সিটি করপোরেশনে থাকা সব অব্যবস্থাপনাই দূর করবেন নির্বাচিত হলে এই মেয়র প্রার্থী। ‘ঐতিহ্যের সঙ্গে, সমৃদ্ধির পথে, আমাদের ঢাকা’ স্লোগানকে সামনে রেখে নির্বাচনী মাঠে লড়ছেন তিনি। বিএনপি মনোনিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন একটি বাসযোগ্য ও দূষণমুক্ত নগরী উপহার দিতে চান। দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই মশা নিধনের কাজ শুরু করতে চান এই মেয়র প্রার্থী। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক যানজট ও জলাবদ্ধতা নিরসনে নিবেন দীর্র্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা। বাবার রেখে যাওয়া কাজগুলো আরও জোরালো করার মাধ্যমে ঢাকাকে তিলোত্তমা রূপ দিতে চান তিনি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ঢাকাকে পরিকল্পিত আলোকোজ্জ্বল নগর হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন। মেয়র নির্বাচিত হয়ে মানবিক ঢাকা গড়তে চান তিনি। ঢাকা শহরের সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ যানজট ও জলজট। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তার বাস্তব অভিজ্ঞতা তিনি কাজে লাগাতে চান নির্বাচিত হয়ে। নগরে নারীরা যাতে অবাধে চলাচল করতে পারে সেজন্য পুরো শহরে প্রায় ৪৮ হাজার এলইডি লাইট লাগানোর পরিকল্পনা আছে তার। ঢাকা উত্তরের বিএনপি মনোনিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল দুর্নীতি দমনসহ ১২টি সমস্যা দূর করারর প্রতিশ্রুতি দেন ভোটারদের। রংপুরে জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাস্তে মার্কা নিয়ে প্রচারে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন কমিউনিস্ট পার্টির মেয়র প্রার্থী ডা. আহাম্মদ সাজেদুল হক রুবেল । ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে জোরেশোরে প্রচারণা চালাচ্ছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আব্দুর রহমান। তার প্রতীক হাতপাখা। তিনি ঢাকার ৪০০ বছরের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা উত্তর সিটি ককরপোরেন নির্বাচন প্রার্থী অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ দুর্নীতি ও দূষণমুক্ত ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থীগণ যানজট জলাবদ্ধতা মুক্ত, দূষণ মুক্ত, পরিকল্পিত বাসযোগ্য মানবিক নগর গড়ার যেসব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তা বিদ্যমান সিটি করপোরেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে পূরণ করা কোনো অবস্থাতেই সম্ভব হবে না। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে স্বশাসিত, স্বনির্ভর ও গণতান্ত্রিক নগর সরকার ও নগরীয় কৃষি ব্যবস্থার মাধ্যমে নগরবাসীদের সমস্যাগুলো সমাধান করে পরিবেশবান্ধব পরিকল্পিত নগর গড়ে তোলা হয়েছে। একারণে ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন নগর সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন। তাদের সেই দাবি আজও পূরণ হয়নি এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরের সমস্যাগুলিরও সমাধান হয়নি। নগর সরকার গঠন করতে হলে প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা কাউন্সিলর নাগরিকদের ভোটে সরাসরি নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচিত কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে নগর সংসদ গঠিত হবে। নগর সংসদের কাজ হবে অনেকটা জাতীয় সংসদের মতো বিধানিক। নগর সংসদে যেসব বিধিবিধান,উপবিধি প্রণয়ন এবং সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে নগর নির্বাহী বিভাগ তা বাস্তবায়ন করবে। মেয়র নগর নির্বাহিক বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন। তিনি জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। নগর সংসদে বার্ষিক বাজেট উত্থাপিত ও অনুমোদিত হবে। নগরের ছোটখাটো ঝগড়া বিবাদ ও অপারাধের বিচার করার জন্য নগরীয় বিচার বিভাগ গঠন করতে হবে।নগর নির্বাহী বিভাগ, নগর সংসদও নগর বিচার বিভাগের সমন্বয়ে গঠিতহবে নগর সরকার। নগর সরকারের ময়োদ হবে ৫ বছর।এছাড়া নগরবাসীদের অভিযোগ অনুযোগের মীমাংসাার জন্য প্রতিটি নগরে এজন ন্যায়পাল থাকবেন। ন্যায়পাল কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত হবেন। পুলিশসহ নগরের সকল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠগুলো নগর সরকারের অধীনে কাজ করবে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়োগ, পদোন্নতি এবং চাকুরি থেকে অব্যাহতির সকল ক্ষমতা থাকবে নগর সরকারের হাতে। অপরদিকে নগরবাসীর খাদ্য, পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং নগরগুলোকে সবুজ পরিবেশবান্ধবভাবে গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি নগরে নগর সরকারে অধীনে নগরীয় কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। নগর ও নগরের আশেপাশে নগরবাসীর জন্য প্রয়োজনী খাদ্যশস্য, শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম উৎপাদন করতে হবে। নগরের প্রতিটি বসতবাড়িতে মাশরুমের চাষ, চৌবাচ্চায় মাছ চাষ, খাঁচায় মুরগি পালনের মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নগরের আবর্জনা থেকে উৎপাদিত জৈব সার নগরীয় কৃষিকাজে ব্যবহার করতে হবে। মিলকারখানার তরল বর্জ্য পরিশোধন করে সেচ ও মাছ চাষের কাজে ব্যবহার করতে হবে। নগর সবুজায়নের জন্য প্রতিটি অফিস আদালত, মিলকারখানার পতিত জায়গায় , জলাশয়ের ধারে এবং রাস্তার সড়ক দ্বীপে ফল , ফুল, ওষুধি ও শোভাবর্ধনকারী গাছ লাগাতে হবে। ছাদ বাগান তৈরি কাজে নগরবাসীকে উৎসাহিতকরতে হবে। এজন্য ট্যাক্স মওকুফের মতো প্রণোদনা প্রদান করা যেতে পারে।

বর্তমানে পৃথিবীর শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি লোক নগরে বসবাস করে। পৃথিবীতে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যের শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ এখন নগরে উৎপাতি হচ্ছে জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পৃথিবীতে প্রায় ৮০ কোটি লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নগরীয় খাদ্য উৎপাদনের সাথে জড়িত এবং ২০ কোটি নগরবাসী বিক্রির জন্য খাদ্য উৎপাদন করে। ভিয়েতনামের হেনয়ে বসবাসকারী লোকজন তাদের প্রয়োজনের শতকরা ৮৪ ভাগ টাটকা শাকসবজি, ৫০ ভাগ মাছ-মাংস এবং ৪০ ভাগ ডিম নগরের নিজস্ব খামারে উৎপাদন করে। চীনে সাংহাইয়ের চাহিদার শতকরা ৬০ ভাগ শাকসবজি, ১০০ ভাগ দুধ, ৯০ ভাগ ডিম এবং ৫০ ভাগ মাংস উৎপাদিত হয় নগরীয় কৃষির মাধ্যমে। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের পরিত্যক্ত স্থানগুলোতে পারিকালচার প্রকল্পের মাধ্যমে বছরে ১ হাজার ৬৫০ টন ফল, সবজি, মাশরুম, সাত টন মাছ, ১২ লাখ ফুল, ১৩ লাখ গাছ এবং প্রচুর মধু, জাফরান এবং স্পিরুলিনার মতো শৈবাল উৎপাদিত হচ্ছে। জাপানের শতকরা ২৫ ভাগ লোক নগরীয় কৃষির সাথে জড়িত। প্রচলিত কৃষির চেয়ে নগরীয় কৃষিতে শতকরা ৩ ভাগ বেশি উৎপাদন হচ্ছে সেখানে। জাপানের পাহাড়ী কৃষির তুলনায় নগরীয় কৃষি দ্বিগুণ লাভজনক। জাপানের রাজধানী টোকিওতে নগরীয় কৃষির মাধ্যমে উৎপাদিত শাকসবজি নগরের ৭ লাখ মানুষের প্রয়োজন মিটায়। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৫ কোটি লোক নগরে বসবাস করে। ঢাকা শহরে বাস করে ১ কোটি ৮০ লাখ লোক। যত দিন যাচ্ছে নগরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে নিরাপদ খাদ্যের চাহিদা।ভবিষ্যতে দূরবর্তী স্থান থেকে খাদ্যশস্য, শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ এনে ঢাকাবাসীর খাদ্য খাদ্য চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে না। সম্ভব হবে না ভেজাল মুক্ত নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা। তাই নগরবাসীর জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য নগর ও তার আশেপাশেই উৎপাদনের জন্য বিদেশের মতো করে নয়, আমাদের মাটি ও আবহাওয়া, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিটি নগরে একরূপ নগর সরকারের মাধ্যমে নগরীয় কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা না করে নগরগুলোকে বাসযোগ্য করা যাবে না। গড়া যাবে না পরিবেশবান্ধব ও পরিকল্পিত মানবিক নগর।

[লেখক : সাবেক মহাব্যস্থাপক (কৃষি), নর্থবেঙ্গল সুগার মিলস্ লিমিটেড, গোপালপুর , নাটোর]

netairoy18@yahoo.com