রংপুর মেডিকেলে শিশু আউটডোরে

চিকিৎসা সেবার নামে চলছে চরম অনিয়ম

দৈনিক দু’শতাধিক রোগীর জন্য মাত্র একজন মেডিকেল অফিসার

উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ চিকিৎসা কেন্দ্র রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসা নিতে দুর দুরান্ত থেকে আসা রোগীদের চিকিৎসা সেবার নামে চলছে চরম অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, হয়রানিসহ নানান অনিয়ম। বিশেষ করে শিশু রোগীদের জন্য মাত্র একজন এমবিবিএস চিকিৎসককে দিয়ে চলছে ৩ থেকে ৪শ’ রোগীর চিকিৎসা। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শিশুদের মায়েদের জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আর ওষুধ দেবার নামে ধরিয়ে দেয়া হয় কমদামি কিছু ট্যাবলেট। এতে করে রোগীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে।

সরেজমিন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউডডোরে বিভিন্ন বিভাগে ঘুরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল নানান অনিয়ম আর হয়রানির অভিযোগ। বর্তমানে শৈত্যপ্রবাহের কারণে রংপুর অঞ্চলে কোল্ড ডায়রিয়া নিউমোনিয়া শ্বাস কষ্ট সর্দি জ্বর ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে শিশুরা এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। সে কারণে রংপুরসহ আশপাশের জেলা থেকে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে তাদের মায়েরা আসছেন হাসপাতালের আউট ডোরে চিকিৎসা নিতে। এখানে প্রথমে এসে লাইন ধরে ১০ টাকা দিয়ে একটি টিকেট নিয়ে শিশু বিভাগের আউট ডোরে লাইন ধরে দাঁড়াতে হয়। সে কারণে সকাল থেকে আসেন অনেকেই তাড়াতাড়ি রোগী দেখাতে। রোগীর স্বজনরা জানান শিশু বিভাগের আউট ডোরে দায়িত্ব পালন করেন একজন নারী চিকিৎসক যিনি শুধু মাত্র এমবিবিএস ডিগ্রিধারী। তাকেই সকাল থেকে দুপুর দুটা পর্যন্ত রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র দিতে হয়। ফলে তার পক্ষেও বিপুল সংখ্যক রোগীদের ভালো মতো দেখে ব্যবস্থাপত্র দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। সরজমিন দেখা গেছে গড়ে শিশু বিভাগে প্রতিদিন দেড় থেকে দুশ’ শিশু আসে মায়েদের সঙ্গে চিকিৎসা নিতে। শীতের কারণে প্রতিদিনই শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে কর্তব্যরত এক কর্মচারী জানান। রংপুর নগরীর সিও বাজার থেকে আসা নাজমা বেগম জানান তার দুই মাস বয়সী শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে তিন দিন ধরে তার পায়খানা কমছে না বাধ্য হয়ে এখানে এসেছেন দু’ঘণ্টা ধরে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন এখনও ডাক্তারের দেখা মেলেনি। তিনি জানান শিশু বিভাগে একজন ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়া কী সম্ভব? কারকথা কে শোনে এসব দেখার যেন কেউ নেই। একই কথা জানালেন তিস্তা নদীর দুর্গম চরাঞ্চল থেকে ৭ মাস বয়সী কন্যাকে নিয়ে আসা কমলা রানী। তিনি জানালেন তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর যদিও ডাক্তারের দেখা মিললো তিনি দু’মিনিট সময় নিয়ে সমস্যা শোনার আগেই ব্যবস্থাপত্র ধরিয়ে দিয়ে বললেন ওষুধ খাওয়ান ভালো হয়ে যাবে। তিনি জানান অথচ তার ছেলের নিউমোনিয়া হয়েছে ঠিক মতো নিঃশ্বাস নিয়ে পারছে না। প্রচ- ক্ষোভের সঙ্গে বললেন এখানে সরকারি হাসপাতালে এসে তার কোন লাভ হলো না।

অপরদিকে রংপুরের গঙ্গাচড়া থেকে আসা মমতাজ বেগম জানালেন তার একমাত্র কন্যা ৪ মাস বয়স ৪ দিন ধরে শ্বাস কষ্ট অনেক আশা নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু ডাক্তার ভালো মতো সমস্যার কথা না শুনেই ওষুধ লিখে দিল। কিন্তু এটিন্টবাইটিক ওষুধ লিখে দিলেও আমাকে বলা হলো বাইরে থেকে কিনে নিয়ে যেতে। তিনি জানান আমরা গরিব মানুষ সরকারি হাসপাতালে যদি চিকিৎসার নামে এ অবস্থা হয় তাহলে আমরা কোথায় যাব?। কুড়িগ্রাম থেকে আসা রানী বেগম জানালেন তার ৩ মাস বয়সী ছেলের জ্বর কমছে না ৫ দিন ধরে এখানে আসার পর যা দেখছি আমার বোধ হয় ডাক্তার দেখাতে দুপুর হয়ে যাবে। তার ওপর একজন মাত্র ডাক্তারের পক্ষে এত শিশুর চিকিৎসা সেবা দেয়া কি সম্ভব?।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল শিশু বিভাগের আউট ডোরে যিনি দায়িত্ব পালন করেছে তিনি একজন মেডিকেল অফিসার তার শিশু রোগ সম্পর্কে কোন ডিগ্রি নেই। অথচ হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপকসহ বিভিন্ন পদ মর্যাদার অনেক চিকিৎসক আছেন তারা কেউই আউট ডোরে আসেননা রোগীও দেখেন না। এ ব্যাপারে দায়িত্বপালন রত চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে তার চেম্বারে গেলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে তিনি কোন কথা বলবেন না।

সার্বিক বিষয়ে জানতে হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান অল্প কিছু দিন হলো এখানে এসেছেন অনেক সমস্যা আছে সবার সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করবেন বলে জানান।

image

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু আউটডোরে শিশু সন্তান কোলে চিকিৎসা প্রত্যাশী মায়েদের ভিড় -সংবাদ

আরও খবর
বৃহত্তর জুমার নামাজ আদায়
কমছে পিয়াজের দাম
বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শে শিশুদের উজ্জীবিত করতে হবে স্পিকার
বাংলাদেশ বিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার
নির্বাচন-পূজা বিষয়টি ইসির অধীনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
মুজিববর্ষ উদযাপনে পৃথিবীর মানুষ জানতে পেরেছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
স্মৃতির আয়নায় বিউটি বোর্ডিং
সাহিত্য ও সংস্কৃতির দুই বাংলার ১৬ গুণী ব্যক্তিকে সম্মাননা দেয়া হবে
নাটক নৃত্য ও ঐতিহ্যবাহী পালাগান আজ
বগুড়ায় জমজমাট পিঠা উৎসব
এশিয়ান টিভির সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ
তারিখ পরিবর্তন না করলে ভোট বর্জন করবে হিন্দু মহাজোট
হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন
গণমাধ্যমে লিখেছিল ভেবেছি অতিরঞ্জিত নিহতের স্বামী
কক্সবাজার শহরের সড়কে পচা দুর্গন্ধ পানি

শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২০ , ৪ মাঘ ১৪২৬, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

রংপুর মেডিকেলে শিশু আউটডোরে

চিকিৎসা সেবার নামে চলছে চরম অনিয়ম

দৈনিক দু’শতাধিক রোগীর জন্য মাত্র একজন মেডিকেল অফিসার

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

image

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু আউটডোরে শিশু সন্তান কোলে চিকিৎসা প্রত্যাশী মায়েদের ভিড় -সংবাদ

উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ চিকিৎসা কেন্দ্র রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসা নিতে দুর দুরান্ত থেকে আসা রোগীদের চিকিৎসা সেবার নামে চলছে চরম অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, হয়রানিসহ নানান অনিয়ম। বিশেষ করে শিশু রোগীদের জন্য মাত্র একজন এমবিবিএস চিকিৎসককে দিয়ে চলছে ৩ থেকে ৪শ’ রোগীর চিকিৎসা। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শিশুদের মায়েদের জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আর ওষুধ দেবার নামে ধরিয়ে দেয়া হয় কমদামি কিছু ট্যাবলেট। এতে করে রোগীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে।

সরেজমিন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউডডোরে বিভিন্ন বিভাগে ঘুরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল নানান অনিয়ম আর হয়রানির অভিযোগ। বর্তমানে শৈত্যপ্রবাহের কারণে রংপুর অঞ্চলে কোল্ড ডায়রিয়া নিউমোনিয়া শ্বাস কষ্ট সর্দি জ্বর ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে শিশুরা এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। সে কারণে রংপুরসহ আশপাশের জেলা থেকে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে তাদের মায়েরা আসছেন হাসপাতালের আউট ডোরে চিকিৎসা নিতে। এখানে প্রথমে এসে লাইন ধরে ১০ টাকা দিয়ে একটি টিকেট নিয়ে শিশু বিভাগের আউট ডোরে লাইন ধরে দাঁড়াতে হয়। সে কারণে সকাল থেকে আসেন অনেকেই তাড়াতাড়ি রোগী দেখাতে। রোগীর স্বজনরা জানান শিশু বিভাগের আউট ডোরে দায়িত্ব পালন করেন একজন নারী চিকিৎসক যিনি শুধু মাত্র এমবিবিএস ডিগ্রিধারী। তাকেই সকাল থেকে দুপুর দুটা পর্যন্ত রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র দিতে হয়। ফলে তার পক্ষেও বিপুল সংখ্যক রোগীদের ভালো মতো দেখে ব্যবস্থাপত্র দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। সরজমিন দেখা গেছে গড়ে শিশু বিভাগে প্রতিদিন দেড় থেকে দুশ’ শিশু আসে মায়েদের সঙ্গে চিকিৎসা নিতে। শীতের কারণে প্রতিদিনই শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে কর্তব্যরত এক কর্মচারী জানান। রংপুর নগরীর সিও বাজার থেকে আসা নাজমা বেগম জানান তার দুই মাস বয়সী শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে তিন দিন ধরে তার পায়খানা কমছে না বাধ্য হয়ে এখানে এসেছেন দু’ঘণ্টা ধরে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন এখনও ডাক্তারের দেখা মেলেনি। তিনি জানান শিশু বিভাগে একজন ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়া কী সম্ভব? কারকথা কে শোনে এসব দেখার যেন কেউ নেই। একই কথা জানালেন তিস্তা নদীর দুর্গম চরাঞ্চল থেকে ৭ মাস বয়সী কন্যাকে নিয়ে আসা কমলা রানী। তিনি জানালেন তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর যদিও ডাক্তারের দেখা মিললো তিনি দু’মিনিট সময় নিয়ে সমস্যা শোনার আগেই ব্যবস্থাপত্র ধরিয়ে দিয়ে বললেন ওষুধ খাওয়ান ভালো হয়ে যাবে। তিনি জানান অথচ তার ছেলের নিউমোনিয়া হয়েছে ঠিক মতো নিঃশ্বাস নিয়ে পারছে না। প্রচ- ক্ষোভের সঙ্গে বললেন এখানে সরকারি হাসপাতালে এসে তার কোন লাভ হলো না।

অপরদিকে রংপুরের গঙ্গাচড়া থেকে আসা মমতাজ বেগম জানালেন তার একমাত্র কন্যা ৪ মাস বয়স ৪ দিন ধরে শ্বাস কষ্ট অনেক আশা নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু ডাক্তার ভালো মতো সমস্যার কথা না শুনেই ওষুধ লিখে দিল। কিন্তু এটিন্টবাইটিক ওষুধ লিখে দিলেও আমাকে বলা হলো বাইরে থেকে কিনে নিয়ে যেতে। তিনি জানান আমরা গরিব মানুষ সরকারি হাসপাতালে যদি চিকিৎসার নামে এ অবস্থা হয় তাহলে আমরা কোথায় যাব?। কুড়িগ্রাম থেকে আসা রানী বেগম জানালেন তার ৩ মাস বয়সী ছেলের জ্বর কমছে না ৫ দিন ধরে এখানে আসার পর যা দেখছি আমার বোধ হয় ডাক্তার দেখাতে দুপুর হয়ে যাবে। তার ওপর একজন মাত্র ডাক্তারের পক্ষে এত শিশুর চিকিৎসা সেবা দেয়া কি সম্ভব?।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল শিশু বিভাগের আউট ডোরে যিনি দায়িত্ব পালন করেছে তিনি একজন মেডিকেল অফিসার তার শিশু রোগ সম্পর্কে কোন ডিগ্রি নেই। অথচ হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপকসহ বিভিন্ন পদ মর্যাদার অনেক চিকিৎসক আছেন তারা কেউই আউট ডোরে আসেননা রোগীও দেখেন না। এ ব্যাপারে দায়িত্বপালন রত চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে তার চেম্বারে গেলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে তিনি কোন কথা বলবেন না।

সার্বিক বিষয়ে জানতে হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান অল্প কিছু দিন হলো এখানে এসেছেন অনেক সমস্যা আছে সবার সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করবেন বলে জানান।