৩০ বছর আগে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে ছিনতাইয়ের ঘটনায় সগিরা মোর্শেদ সালাম খুনকে তখনকার গণমাধ্যমে পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে বলা হলেও তা বিশ্বাস করতে পারেননি নিহতের স্বামী আবদুস সালাম চৌধুরী। ওই ঘটনায় নিজের ভাই ও ভাবিসহ চারজনকে আসামি করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়ার পর গতকাল তিনি এ প্রতিক্রিয়া জানান। আবদুস সালাম বলেন, আমার স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আমার ভাই, ভাইয়ের বউ, এভাবে স্বজনরা জড়িত, তা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি। বুঝব কীভাবে? ভাইদের মধ্যে কখনও টাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়নি। আড়াই মাস আগে যখন ১৬৪ জবানবন্দি দিল, তখনই বুঝলাম তারা জড়িত। সত্যিই ভাবতে কষ্ট ও অবাক লাগে। এই সাংসারিক তুচ্ছ ঘটনায় একটি খুনের মত ঘটনা ঘটতে পারে। ওই সময় একটি পত্রিকার এক প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, একবার লিখেছিল,এটি ছিনতাই নয়, পারিবারিক কোন্দলে হত্যাকাণ্ড। ভাবতাম পত্রিকায় অতিরঞ্জিত লিখেছে। কিন্তু এখন বুঝলাম সেইদিন পত্রিকায় সঠিক লিখেছিল। এই প্রসঙ্গে হত্যার ঘটনায় ভাড়াটে খুনি হিসেবে সম্প্রতি পিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার মারুফ রেজার মামা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদুল হাসান তাদের বাসায় পুলিশ নিয়ে এসে যেসব কথা বলেছিলেন তার মধ্যে সন্দেহজনক ইঙ্গিত ছিল বলে এখন মনে করছেন তিনি।
আবদুস সালাম বলেন, আমার স্ত্রী খুনের দুইদিন পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাসায় এসে আমার ছোট মেয়েকে কোলে নিয়ে তখনকার রমনা থানার ওসি রফিককে বলেছিল, রফিক তুমি আসামিদের ধরতে পারবে না? রফিক জি স্যার বলেছিল তিন বার। তিন বার জি স্যার বলার পেছনে যে অন্য কিছু লুকিয়ে ছিল তা সেদিন বুঝতে না পারলেও আজ বুঝতে পারছি। যে সময় মাহমুদুল হাসান আমার বাসায়, তখন তার ভাগ্নে মারুফ রেজাকে বিদেশ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
সগিরা মোর্শেদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে তার ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী (৭০), হাসানের স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিন (৬৪), শাহিনের ভাই আনাছ মাহমুদ রেজওয়ান (৫৯) ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাগ্নে মারুফ রেজার (৫৯) বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পিবিআই। এর আগে ধানমন্ডিতে পিবিআই সদরদফতরে সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, এরা সবাই হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বড় জায়ের ঈর্ষার কারণে খুন হয়েছিলেন সগিরা মোর্শেদ। তাকে খুন করতে ২৫ হাজার টাকায় আসামি মারুফ রেজাকে ভাড়া করা হয়। ওই সময়ে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকার খবর দেখিয়ে বনজ কুমার বলেন, আপনাদের বড় ভাইয়েরা সগিরা মোর্শেদ হত্যাকাণ্ডকে একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলেছিল। আপনাদের বড় ভাইয়ের লেখা আজ সত্যি হলো। ৩১ বছর পর আমরা (পিবিআই) প্রমাণ করেছি যে, সগিরা মোর্শেদ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার।
যেভাবে হত্যা করা হয় সগিরা মোর্শেদকে
আসামিদের জবানবন্দি অনুযায়ী, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই বিকালে স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে রিকশায় করে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে যাওয়ার সময় সগিরা মোর্শেদের পথ আটকান মোটরসাইকেল আরোহী মারুফ ও রেজওয়ান। হাতব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার পর তার হাতের বালা নিতে উদ্যত হলে রেজওয়ানকে চিনে ফেলার কথা বলেন সগিরা, তারপরই তার বুকে গুলি চালিয়ে দেন মারুফ। এখনকার আবাসন ব্যবসায়ী বেইলি রোডের বাসিন্দা মারুফ রেজা ওই সময়ই গ্রেফতার হলেও ক্ষমকার জোরে তার নাম বাদ দিয়ে মন্টু নামে একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ।
শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২০ , ৪ মাঘ ১৪২৬, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
৩০ বছর আগে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে ছিনতাইয়ের ঘটনায় সগিরা মোর্শেদ সালাম খুনকে তখনকার গণমাধ্যমে পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে বলা হলেও তা বিশ্বাস করতে পারেননি নিহতের স্বামী আবদুস সালাম চৌধুরী। ওই ঘটনায় নিজের ভাই ও ভাবিসহ চারজনকে আসামি করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়ার পর গতকাল তিনি এ প্রতিক্রিয়া জানান। আবদুস সালাম বলেন, আমার স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আমার ভাই, ভাইয়ের বউ, এভাবে স্বজনরা জড়িত, তা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি। বুঝব কীভাবে? ভাইদের মধ্যে কখনও টাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়নি। আড়াই মাস আগে যখন ১৬৪ জবানবন্দি দিল, তখনই বুঝলাম তারা জড়িত। সত্যিই ভাবতে কষ্ট ও অবাক লাগে। এই সাংসারিক তুচ্ছ ঘটনায় একটি খুনের মত ঘটনা ঘটতে পারে। ওই সময় একটি পত্রিকার এক প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, একবার লিখেছিল,এটি ছিনতাই নয়, পারিবারিক কোন্দলে হত্যাকাণ্ড। ভাবতাম পত্রিকায় অতিরঞ্জিত লিখেছে। কিন্তু এখন বুঝলাম সেইদিন পত্রিকায় সঠিক লিখেছিল। এই প্রসঙ্গে হত্যার ঘটনায় ভাড়াটে খুনি হিসেবে সম্প্রতি পিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার মারুফ রেজার মামা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদুল হাসান তাদের বাসায় পুলিশ নিয়ে এসে যেসব কথা বলেছিলেন তার মধ্যে সন্দেহজনক ইঙ্গিত ছিল বলে এখন মনে করছেন তিনি।
আবদুস সালাম বলেন, আমার স্ত্রী খুনের দুইদিন পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাসায় এসে আমার ছোট মেয়েকে কোলে নিয়ে তখনকার রমনা থানার ওসি রফিককে বলেছিল, রফিক তুমি আসামিদের ধরতে পারবে না? রফিক জি স্যার বলেছিল তিন বার। তিন বার জি স্যার বলার পেছনে যে অন্য কিছু লুকিয়ে ছিল তা সেদিন বুঝতে না পারলেও আজ বুঝতে পারছি। যে সময় মাহমুদুল হাসান আমার বাসায়, তখন তার ভাগ্নে মারুফ রেজাকে বিদেশ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
সগিরা মোর্শেদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে তার ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী (৭০), হাসানের স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিন (৬৪), শাহিনের ভাই আনাছ মাহমুদ রেজওয়ান (৫৯) ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাগ্নে মারুফ রেজার (৫৯) বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পিবিআই। এর আগে ধানমন্ডিতে পিবিআই সদরদফতরে সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, এরা সবাই হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বড় জায়ের ঈর্ষার কারণে খুন হয়েছিলেন সগিরা মোর্শেদ। তাকে খুন করতে ২৫ হাজার টাকায় আসামি মারুফ রেজাকে ভাড়া করা হয়। ওই সময়ে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকার খবর দেখিয়ে বনজ কুমার বলেন, আপনাদের বড় ভাইয়েরা সগিরা মোর্শেদ হত্যাকাণ্ডকে একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলেছিল। আপনাদের বড় ভাইয়ের লেখা আজ সত্যি হলো। ৩১ বছর পর আমরা (পিবিআই) প্রমাণ করেছি যে, সগিরা মোর্শেদ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার।
যেভাবে হত্যা করা হয় সগিরা মোর্শেদকে
আসামিদের জবানবন্দি অনুযায়ী, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই বিকালে স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে রিকশায় করে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে যাওয়ার সময় সগিরা মোর্শেদের পথ আটকান মোটরসাইকেল আরোহী মারুফ ও রেজওয়ান। হাতব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার পর তার হাতের বালা নিতে উদ্যত হলে রেজওয়ানকে চিনে ফেলার কথা বলেন সগিরা, তারপরই তার বুকে গুলি চালিয়ে দেন মারুফ। এখনকার আবাসন ব্যবসায়ী বেইলি রোডের বাসিন্দা মারুফ রেজা ওই সময়ই গ্রেফতার হলেও ক্ষমকার জোরে তার নাম বাদ দিয়ে মন্টু নামে একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ।