বন্ধের আহ্বান
বৈষম্য নিরসনে ধনী ব্যক্তি ও কোম্পানির প্রতি অন্যায্য কর ছাড় বন্ধ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাউথ এশিয়ান অ্যালায়েন্স ফর প্রভার্টি ইরাডিকেশন (স্যাপি)। একইসঙ্গে স্যাপির পক্ষ থেকে দেশীয় কর রাজস্ব সচল ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করাসহ ৮ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বৈষম্যহীন দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে সবাই ঐক্যবদ্ধ হই’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক ও স্যাপির সদস্য সচিব রোকেয়া কবীরের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ মতামত তুলে ধরেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এমএম আকাশ। বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)’র সাবেক সভাপতি ডা. রশিদ-ই-মাহবুব, আইইডি’র নির্বাহী পরিচালক নূমান আহম্মেদ খান, ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মুশতাক আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তানজিম উদ্দীন খান, অক্সফামের ম্যানেজার মঞ্জুর রশিদ, শিশু সংগঠক ডা. লেলিন চৌধুরী প্রমুখ।
অর্থনীতিবিদ এমএম আকাশ সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়াসহ বাংলাদেশের বৈষম্য ও অসমতা পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, মাত্র তিনশ’ জন ধনীর আয় বিশ্বের অর্ধেক জনগোষ্ঠির সমান। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পরিসিথতি ভয়াবহ, লজ্জাকর ও অশ্লীল। দেশে বিপদজনক মাত্রায় অসমতা বাড়ছে। জাতীয় সংসদেও এর প্রতিফলন দেখা যায়। আশির দশক পর্যন্তও সংসদে আইনজীবী, শিক্ষকসহ মধ্যবিত্তদের আধিক্য ছিল। কিন্তু এখন ৬০ শতাংশ সংসদ সদস্যই ব্যবসায়ী। এই অবস্থার পরিবর্তনে জনগণের জন্য জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, সামাজিক অসমতা ভয়াবহতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। আদিবাসী, দরিদ্র কৃষক, প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে অধিকারহীন করে রাখা হয়েছে। তারা নানাভাবে নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। যে কারণে তারা কথা বলতেও ভয় পান। দেশে শোষণ-বঞ্চনা বাড়ছে। আগে যারা এমন বঞ্চনার বিরুদ্ধে কথা বলতেন, তারাও নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছেন। যেটা আরও ভয়াবহ। কারণ এ সব বৈষম্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি।
মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর সূচনা বক্তব্যে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বিশ্বের মনীষীরা দারিদ্র্য ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধও বৈষম্যের বিরুদ্ধে হয়েছিল। তাই রাষ্ট্র-সরকার ও নাগরকি সমাজ সবাইকে বৈষম্যের বিরুদ্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
বৈষম্য ও দারিদ্র্য নিরসনে স্যাপির সুপারিশে বলা হয়, নারীদের জন্য বৈষম্য ও শোষণমূলক নয় এমন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু। জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নূন্যতম মজুরি বৃদ্ধি, নূন্যতম মজুরি আইন বাস্তবায়ন এবং লিঙ্গ বৈষম্যমূলক বেতন পরিহার করতে হবে। জলবায়ু বিপর্যয় রোধ ও জীবাশ্ম জ্বালানির অযৌক্তিক প্রভাব দূর করতে হবে। নারী ও ক্ষুদ্র কৃষকদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও লিঙ্গ নির্বিশেষে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। বিগত ৩০ বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় বৈষম্য চরমভাবে বেড়েই চলেছে। কিন্তু এটি কোন দুর্ঘটনা নয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালীরা এমন ধরনের অর্থনৈতিক ধ্যান-ধারণা ও ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। যেখানে বাজার ও অর্থের একচ্ছত্র আধিপত্য। বৈষম্য নিরসনে আধিপত্য প্রতিহত করতে হবে।
রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২০ , ৫ মাঘ ১৪২৬, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১
বন্ধের আহ্বান
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
বৈষম্য নিরসনে ধনী ব্যক্তি ও কোম্পানির প্রতি অন্যায্য কর ছাড় বন্ধ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাউথ এশিয়ান অ্যালায়েন্স ফর প্রভার্টি ইরাডিকেশন (স্যাপি)। একইসঙ্গে স্যাপির পক্ষ থেকে দেশীয় কর রাজস্ব সচল ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করাসহ ৮ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বৈষম্যহীন দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে সবাই ঐক্যবদ্ধ হই’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক ও স্যাপির সদস্য সচিব রোকেয়া কবীরের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ মতামত তুলে ধরেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এমএম আকাশ। বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)’র সাবেক সভাপতি ডা. রশিদ-ই-মাহবুব, আইইডি’র নির্বাহী পরিচালক নূমান আহম্মেদ খান, ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মুশতাক আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তানজিম উদ্দীন খান, অক্সফামের ম্যানেজার মঞ্জুর রশিদ, শিশু সংগঠক ডা. লেলিন চৌধুরী প্রমুখ।
অর্থনীতিবিদ এমএম আকাশ সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়াসহ বাংলাদেশের বৈষম্য ও অসমতা পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, মাত্র তিনশ’ জন ধনীর আয় বিশ্বের অর্ধেক জনগোষ্ঠির সমান। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পরিসিথতি ভয়াবহ, লজ্জাকর ও অশ্লীল। দেশে বিপদজনক মাত্রায় অসমতা বাড়ছে। জাতীয় সংসদেও এর প্রতিফলন দেখা যায়। আশির দশক পর্যন্তও সংসদে আইনজীবী, শিক্ষকসহ মধ্যবিত্তদের আধিক্য ছিল। কিন্তু এখন ৬০ শতাংশ সংসদ সদস্যই ব্যবসায়ী। এই অবস্থার পরিবর্তনে জনগণের জন্য জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, সামাজিক অসমতা ভয়াবহতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। আদিবাসী, দরিদ্র কৃষক, প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে অধিকারহীন করে রাখা হয়েছে। তারা নানাভাবে নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। যে কারণে তারা কথা বলতেও ভয় পান। দেশে শোষণ-বঞ্চনা বাড়ছে। আগে যারা এমন বঞ্চনার বিরুদ্ধে কথা বলতেন, তারাও নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছেন। যেটা আরও ভয়াবহ। কারণ এ সব বৈষম্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি।
মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর সূচনা বক্তব্যে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বিশ্বের মনীষীরা দারিদ্র্য ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধও বৈষম্যের বিরুদ্ধে হয়েছিল। তাই রাষ্ট্র-সরকার ও নাগরকি সমাজ সবাইকে বৈষম্যের বিরুদ্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
বৈষম্য ও দারিদ্র্য নিরসনে স্যাপির সুপারিশে বলা হয়, নারীদের জন্য বৈষম্য ও শোষণমূলক নয় এমন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু। জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নূন্যতম মজুরি বৃদ্ধি, নূন্যতম মজুরি আইন বাস্তবায়ন এবং লিঙ্গ বৈষম্যমূলক বেতন পরিহার করতে হবে। জলবায়ু বিপর্যয় রোধ ও জীবাশ্ম জ্বালানির অযৌক্তিক প্রভাব দূর করতে হবে। নারী ও ক্ষুদ্র কৃষকদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও লিঙ্গ নির্বিশেষে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। বিগত ৩০ বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় বৈষম্য চরমভাবে বেড়েই চলেছে। কিন্তু এটি কোন দুর্ঘটনা নয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালীরা এমন ধরনের অর্থনৈতিক ধ্যান-ধারণা ও ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। যেখানে বাজার ও অর্থের একচ্ছত্র আধিপত্য। বৈষম্য নিরসনে আধিপত্য প্রতিহত করতে হবে।