গ্রেফতার হয়নি অধিকাংশ আসামি

বনানীর কড়াইল টিএন্ডটি বস্তিতে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল একাটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের অনুমতি ছাড়া বস্তির কোন বাসিন্দা বিদ্যুৎ সংযোগ পেতো না। প্রতি বছর অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ এবং বিদ্যুৎ বিল আদায়ের মাধ্যমে সিন্ডিকেটের আয় ছিল প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। এ সিন্ডিকেটের বাইরে গিয়ে বৈধ সংযোগের ব্যবস্থা করার জন্য বনানীর ১৯নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগ সভাপতি রাকিব হোসেন হামজা আবেদন করেছিলেন ডেসার গুলশান জোন অফিসে। আর এ উদ্যোগই রাকিবের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। আর এ কারণেই খুণ হতে হয় এ ছাত্রলীগ নেতাকে। আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা রাকিব হত্যার ১ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও পুলিশ মাত্র ৩ আসামি ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

প্রায় ১ বছর ২ মাস আগে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর টিএন্ডটি কলোনির রাকিবের বাড়ির সামনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে দৃর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ১ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও এখনও আদালতে মামলাটির চার্যশিট জমা দিতে পারেনি পুলিশ। এমনকি সব আসামিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ন্ত্রণকারী ওই সিন্ডিকেটটি কড়াইল টিএন্ডটি বস্তিতে মাদক ব্যবসা বিশেষ করে ইয়াবা ব্যবসা চালায়। এটারও প্রতিবাদ করে রাকিব। এসবের জের ধরে ওই সিন্ডিকেটের একদল দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্র নিয়ে রাকিবের ওপর হামলে পড়ে। তারা টিএন্ডটি কলোনীতে রাকিবের বাড়ির সামনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের এসআই মনিরুজ্জামান বলেন, বনানী থানায় মামলা তদন্তের সময় প্রধান আসামি শফিকুল ওরফে বোচা সজীবকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়। এর পাশাপাশি আতাউর রহমান বিল্লাল নামে সন্দেহভাজন একজন আসামী গ্রেফতার করে। মামলাটি পরবর্তীতে তদন্তের ভার পড়ে পিবিআইয়ের ওপর। পিবিআই এজাহার নামীয় আসামি জসিমকে গ্রেফতার করে। মামলায় অজ্ঞাত ৭-৮ জন পলাতক আসামি রয়েছে। গ্রেফতারকৃত বোচা সজীব ও জসিম কারাগারে রয়েছে। এরা এখনও হত্যা সংক্রান্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও অজ্ঞাত আসামিদের শনাক্ত করার পর এই মামলার চার্জশিট প্রদান করা হবে।

মামলার বাদী নিহত রাকিবের বাবা আলতাফ হোসেন বলেন, তার ছেলে বিএফ শাহীন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর তেজগাঁও কলেজ থেকে মার্কেটিং বিভাগ থেকে বিবিএ সম্পন্ন করে। পরে সরকারি তিতুমীর কলেজে মার্কেটিং বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হয়। রাকিব আর দশটা ছাত্রলীগ নেতার মত দ্বিগভ্রান্ত ছিল না। পড়াশুনায় মেধাবী রাকিব টিএন্ডটি কলোনীতে মাদকের বিরুদ্ধে অন্দোলন গড়ে তুলেছিল। ২০১৮ সালটা ছিল সারাদেশে ইয়াবার বিরুদ্ধে র‌্যাব ও পুলিশ সাড়াশি অভিযান চালায়। রাকিবও ওই সময় কলোনিতে মাদকের বিরুদ্ধে একাধিক সমাবেশ করেছিল এবং একাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে সহায়তা করেছিল। টিএন্ডটি বস্তিতে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে রাকিব ছিল সোচ্চার। এ কারণে রাকিব বস্তিতে বৈধ বিদ্যুৎ লাইন দেয়ার জন্য আবেদন করেছিল। এটাই ওর জীবনে কাল হয়ে দাঁড়াল। ওই সিন্ডিকেটের বোচা সজীব, জসিমসহ ৭-৮ জন কলোনির বাড়ির সামনে রাকিবকে কুপিয়ে হত্যা করল।

রাকিবের মা মাকসুদা হোসেন বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে গিয়ে আমার মেধাবী সন্তানকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। এখন আমরা বিচার পাচ্ছি না। দেশে বড় বড় হত্যাকাণ্ডের বিচার হচ্ছে। কিন্তু আমার সন্তান হত্যার বিচার হচ্ছে না। ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিরুদ্ধে গুলশান এলাকায় বিদেশিদের কাছ থেকে ছিনতাই করার অভিযোগ রয়েছে। এরা চিহ্নিত সন্ত্রাসী। আমার ছেলেকে কেনইবা হত্যা করল, তা আজও জানতে পারিনি। পুলিশও বিষয়টি স্পষ্ট করছে না।

আরও খবর
সশস্ত্র বাহিনীর ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে হবে
নারী শিক্ষার প্রসারে বাল্যবিবাহ ও মাতৃমৃত্যু হ্রাস পাবে
আজ আখেরি মোনাজাত
ধনীদের অন্যায্য কর ছাড়
যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কম পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বগুড়া-১ আসনের এমপি আবদুল মান্নান আর নেই
প্রতারণার ফাঁদ দেখছে ঐক্যফ্রন্ট
রওশনের ওপর ক্ষুব্ধ রংপুরের জাপা নেতাকর্মীরা
‘শ্রাবণ ট্র্যাজেডি’র মঞ্চায়ন আজ
ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শেষ হচ্ছে আজ
বলিউড অভিনেত্রী শাবানা আজমি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত
শিল্পকলায় জমজমাট বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব
অতিরিক্ত ওজনবাহী ট্রাকে ডুবে গেছে ফেরির পন্টুন
আমতলীতে সন্তানকে পানিতে ফেলে হত্যা করে বাবার দায় স্বীকার

রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২০ , ৫ মাঘ ১৪২৬, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

বনানীর ছাত্রলীগ নেতা রাকিব হত্যা

গ্রেফতার হয়নি অধিকাংশ আসামি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

বনানীর কড়াইল টিএন্ডটি বস্তিতে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল একাটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের অনুমতি ছাড়া বস্তির কোন বাসিন্দা বিদ্যুৎ সংযোগ পেতো না। প্রতি বছর অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ এবং বিদ্যুৎ বিল আদায়ের মাধ্যমে সিন্ডিকেটের আয় ছিল প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। এ সিন্ডিকেটের বাইরে গিয়ে বৈধ সংযোগের ব্যবস্থা করার জন্য বনানীর ১৯নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগ সভাপতি রাকিব হোসেন হামজা আবেদন করেছিলেন ডেসার গুলশান জোন অফিসে। আর এ উদ্যোগই রাকিবের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। আর এ কারণেই খুণ হতে হয় এ ছাত্রলীগ নেতাকে। আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা রাকিব হত্যার ১ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও পুলিশ মাত্র ৩ আসামি ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

প্রায় ১ বছর ২ মাস আগে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর টিএন্ডটি কলোনির রাকিবের বাড়ির সামনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে দৃর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ১ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও এখনও আদালতে মামলাটির চার্যশিট জমা দিতে পারেনি পুলিশ। এমনকি সব আসামিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ন্ত্রণকারী ওই সিন্ডিকেটটি কড়াইল টিএন্ডটি বস্তিতে মাদক ব্যবসা বিশেষ করে ইয়াবা ব্যবসা চালায়। এটারও প্রতিবাদ করে রাকিব। এসবের জের ধরে ওই সিন্ডিকেটের একদল দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্র নিয়ে রাকিবের ওপর হামলে পড়ে। তারা টিএন্ডটি কলোনীতে রাকিবের বাড়ির সামনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের এসআই মনিরুজ্জামান বলেন, বনানী থানায় মামলা তদন্তের সময় প্রধান আসামি শফিকুল ওরফে বোচা সজীবকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়। এর পাশাপাশি আতাউর রহমান বিল্লাল নামে সন্দেহভাজন একজন আসামী গ্রেফতার করে। মামলাটি পরবর্তীতে তদন্তের ভার পড়ে পিবিআইয়ের ওপর। পিবিআই এজাহার নামীয় আসামি জসিমকে গ্রেফতার করে। মামলায় অজ্ঞাত ৭-৮ জন পলাতক আসামি রয়েছে। গ্রেফতারকৃত বোচা সজীব ও জসিম কারাগারে রয়েছে। এরা এখনও হত্যা সংক্রান্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও অজ্ঞাত আসামিদের শনাক্ত করার পর এই মামলার চার্জশিট প্রদান করা হবে।

মামলার বাদী নিহত রাকিবের বাবা আলতাফ হোসেন বলেন, তার ছেলে বিএফ শাহীন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর তেজগাঁও কলেজ থেকে মার্কেটিং বিভাগ থেকে বিবিএ সম্পন্ন করে। পরে সরকারি তিতুমীর কলেজে মার্কেটিং বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হয়। রাকিব আর দশটা ছাত্রলীগ নেতার মত দ্বিগভ্রান্ত ছিল না। পড়াশুনায় মেধাবী রাকিব টিএন্ডটি কলোনীতে মাদকের বিরুদ্ধে অন্দোলন গড়ে তুলেছিল। ২০১৮ সালটা ছিল সারাদেশে ইয়াবার বিরুদ্ধে র‌্যাব ও পুলিশ সাড়াশি অভিযান চালায়। রাকিবও ওই সময় কলোনিতে মাদকের বিরুদ্ধে একাধিক সমাবেশ করেছিল এবং একাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে সহায়তা করেছিল। টিএন্ডটি বস্তিতে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে রাকিব ছিল সোচ্চার। এ কারণে রাকিব বস্তিতে বৈধ বিদ্যুৎ লাইন দেয়ার জন্য আবেদন করেছিল। এটাই ওর জীবনে কাল হয়ে দাঁড়াল। ওই সিন্ডিকেটের বোচা সজীব, জসিমসহ ৭-৮ জন কলোনির বাড়ির সামনে রাকিবকে কুপিয়ে হত্যা করল।

রাকিবের মা মাকসুদা হোসেন বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে গিয়ে আমার মেধাবী সন্তানকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। এখন আমরা বিচার পাচ্ছি না। দেশে বড় বড় হত্যাকাণ্ডের বিচার হচ্ছে। কিন্তু আমার সন্তান হত্যার বিচার হচ্ছে না। ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিরুদ্ধে গুলশান এলাকায় বিদেশিদের কাছ থেকে ছিনতাই করার অভিযোগ রয়েছে। এরা চিহ্নিত সন্ত্রাসী। আমার ছেলেকে কেনইবা হত্যা করল, তা আজও জানতে পারিনি। পুলিশও বিষয়টি স্পষ্ট করছে না।