নিজ জেলায় অবহেলিত বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন’র স্মৃতি স্থাপনাগুলো

দেশের ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠদের একজন নোয়াখালীর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৮ বছর শেষ হলেও তিনি নিজ জেলায় আজও অবহেলিত। এই বীরের নামে ঘোষিত গ্রাম, সড়ক, ম্মৃতি জাদুঘর, ম্মৃতি স্তম্ভ, গণ-গ্রন্থাগার, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্মৃতি স্থাপনাগুলো বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত। প্রশাসনের সুদৃষ্টি না থাকায় দিন দিন এর শ্রী হারাচ্ছে ওইসব স্থাপনাগুলো। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এই বীরের যথাযথ মূল্যায়ন দাবি করেছে। জানা গেছে, ১৯৩৪ সালের ১০ ডিসেম্বর নোয়াখালীর তৎকালীন বেগমগঞ্জ উপজেলার সোনাইমুড়ীর দেওটি ইউনিয়নের বাগপাঁচড়া গ্রামে রুহুল আমিনের জন্ম। তিনি ছিলেন নৌ বাহিনীর ক্যাপ্টেন। মুক্তিযুদ্ধের গোটা সময় তিনি জীবন বাজি রেখে লড়েছেন শত্রুদের বিরুদ্ধে। চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র ৬ দিন পূর্বে ১০ ডিসেম্বর খুলনার রুপসায় শত্রুদের গুলিতে ও বোমার আঘাতে শাহাদাত বরণ করেন তিনি। তার সম্মানে সরকার নোয়াখালীর বাগপাচড়া গ্রামকে রুহুল আমিন নগর, সোনাইমুড়ী পৌরসভার উদ্যেগে রুহুল আমিন নগর, গ্রামমুখী সড়ককে নুরুল আমিন সড়ক নাম করন, নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও রুহুল আমিনের কর্মজীবন তুলে ধরতে ম্মৃতি জাদুঘর, গণ-গ্রস্থাগার, ম্মৃতি স্তম্ভ, চৌমুহনী চৌরাস্তায় রুহুল আমিন ম্মৃতি স্কয়ারসহ এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু যে লক্ষ্য নিয়ে এই কার্যক্রমগুলো হাতে নেয়া হয়েছে সঠিকভাবে তত্ত্বাবধান না করায় ও প্রশাসনের সুদৃষ্টি না থাকায় তা আজ ভেস্তে যেতে বসেছে। স্থাপনাগুলো বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত। এলাকাবাসীর অভিযোগ ম্মৃতি জাদুঘর এর দারোয়ানের বেতন না দেয়ায় তিনি চলে গেছেন। ফলে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর বর্তমানে বন্ধ। অন্যান্য স্থাপনাগুলোও পরিচর্যা করা হয় না। লাইব্রেরিতে নতুন নতুন বই সরবরাহ বন্ধের পাশাপাশি পত্রিকা দেয়া বন্ধ রয়েছে গত ছয় বছর ধরে। এতে হতাশ এলাকাবাসী। রুহুল আমিন নগরের বাসিন্ধা আক্তার হোসেন জানান, আমরা আগেই ভাল ছিলাম। বীরশ্রেষ্ঠর নামে গ্রাম দেয়ার পর আমরা আরও অবহেলিত হচ্ছি। আমাদের এখানে তেমন কোন উন্নয়ন নেই। গ্রামটির প্রধান সড়কের বর্তমানে বেহাল দশা। এই বীরকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। এদিকে নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে থাকার ঘর করে দেয়ায় খুশি হলেও আরও সরকারী সাহায্য বাড়ানোর দাবি জানিয়ে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সন্তান শওকত আলী বলেন, সরকার যে সহযোগিতা আমাদের করছে তা অপ্রতুল। বর্তমান যুগে সামান্য সহযোগিতায় চলা যায় না। বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নামের স্থাপনাগুলো বেহাল অবস্থার কারণে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝেও চরম হতাশা ও অসন্তোষ প্রকাশ করে মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, কোন দরকার ছিল না উনার নামে এতকিছু করার। নাম দিয়ে কি হবে যদি জনগণ উপকার না পায়। একজন বীরশ্রেষ্ঠকে আমরা সম্মান না করতে পারি, কিন্তু নাম দিয়ে তা বাস্তবায়ন না করে অপমান করার অধিকার কারও নেই, বিষয়টি সরকারকে বুঝতে হবে। তবে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন জাদুঘর ও গ্রন্থাগারসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যার কথা স্বীকার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়ে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস বলেন, বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে। আশা করি দ্রুত সমস্যাগুলোর সমাধান হবে। বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের প্রতি যথাযথ সম্মান, স্থাপনাগুলো সঠিক রক্ষণাবেক্ষণসহ খুলনার রূপসা নদীর পাড় থেকে সমাধি সরিয়ে নোয়াখালীর তার নিজ গ্রামে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমনটাই প্রত্যাশা নোয়াখালীবাসীর।

image
আরও খবর
শেখ হাসিনা সেতুতে দুই বছরেই ঢালাই উঠে গর্ত ! দুর্ঘটনার আশঙ্কা
ফুলবাড়ীতে গৃহবধূর অশ্লীল ভিডিও গ্রেফতার ১
১৪ বছর পর মামলার রায়
নোয়াখালীতে নকল বৈদ্যুতিক তার বিক্রি : দণ্ডিত ৪
টঙ্গীতে যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা
বাঁশখালীতে দুর্বৃত্তদের হামলায় নব-নির্মিত ভবন ভাঙচুর
বিকাশে প্রতারণা ২৪ হাজার হারিয়ে মাদ্রাসাছাত্রের আত্মহত্যা
সখীপুরে বাউল শিল্পীর মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন
ফাতরার বনাঞ্চলে বিলুপ্তপ্রায় জন্তু দেখতে পর্যটকদের ভিড়
মধুপুরে আকাশি গ্রন্থাগার বিজ্ঞান ক্লাবের বৃত্তি প্রদান
ভালুকায় যুবককে থানায় আটকে জমি দখল
ঘাটাইলে কমলা চাষে অভাবিত সাফল্য

সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২০ , ৬ মাঘ ১৪২৬, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

নিজ জেলায় অবহেলিত বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন’র স্মৃতি স্থাপনাগুলো

মোস্তফা মহসিন, বেগমগঞ্জ(নোয়াখালী)

image

দেশের ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠদের একজন নোয়াখালীর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৮ বছর শেষ হলেও তিনি নিজ জেলায় আজও অবহেলিত। এই বীরের নামে ঘোষিত গ্রাম, সড়ক, ম্মৃতি জাদুঘর, ম্মৃতি স্তম্ভ, গণ-গ্রন্থাগার, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্মৃতি স্থাপনাগুলো বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত। প্রশাসনের সুদৃষ্টি না থাকায় দিন দিন এর শ্রী হারাচ্ছে ওইসব স্থাপনাগুলো। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এই বীরের যথাযথ মূল্যায়ন দাবি করেছে। জানা গেছে, ১৯৩৪ সালের ১০ ডিসেম্বর নোয়াখালীর তৎকালীন বেগমগঞ্জ উপজেলার সোনাইমুড়ীর দেওটি ইউনিয়নের বাগপাঁচড়া গ্রামে রুহুল আমিনের জন্ম। তিনি ছিলেন নৌ বাহিনীর ক্যাপ্টেন। মুক্তিযুদ্ধের গোটা সময় তিনি জীবন বাজি রেখে লড়েছেন শত্রুদের বিরুদ্ধে। চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র ৬ দিন পূর্বে ১০ ডিসেম্বর খুলনার রুপসায় শত্রুদের গুলিতে ও বোমার আঘাতে শাহাদাত বরণ করেন তিনি। তার সম্মানে সরকার নোয়াখালীর বাগপাচড়া গ্রামকে রুহুল আমিন নগর, সোনাইমুড়ী পৌরসভার উদ্যেগে রুহুল আমিন নগর, গ্রামমুখী সড়ককে নুরুল আমিন সড়ক নাম করন, নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও রুহুল আমিনের কর্মজীবন তুলে ধরতে ম্মৃতি জাদুঘর, গণ-গ্রস্থাগার, ম্মৃতি স্তম্ভ, চৌমুহনী চৌরাস্তায় রুহুল আমিন ম্মৃতি স্কয়ারসহ এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু যে লক্ষ্য নিয়ে এই কার্যক্রমগুলো হাতে নেয়া হয়েছে সঠিকভাবে তত্ত্বাবধান না করায় ও প্রশাসনের সুদৃষ্টি না থাকায় তা আজ ভেস্তে যেতে বসেছে। স্থাপনাগুলো বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত। এলাকাবাসীর অভিযোগ ম্মৃতি জাদুঘর এর দারোয়ানের বেতন না দেয়ায় তিনি চলে গেছেন। ফলে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর বর্তমানে বন্ধ। অন্যান্য স্থাপনাগুলোও পরিচর্যা করা হয় না। লাইব্রেরিতে নতুন নতুন বই সরবরাহ বন্ধের পাশাপাশি পত্রিকা দেয়া বন্ধ রয়েছে গত ছয় বছর ধরে। এতে হতাশ এলাকাবাসী। রুহুল আমিন নগরের বাসিন্ধা আক্তার হোসেন জানান, আমরা আগেই ভাল ছিলাম। বীরশ্রেষ্ঠর নামে গ্রাম দেয়ার পর আমরা আরও অবহেলিত হচ্ছি। আমাদের এখানে তেমন কোন উন্নয়ন নেই। গ্রামটির প্রধান সড়কের বর্তমানে বেহাল দশা। এই বীরকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। এদিকে নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে থাকার ঘর করে দেয়ায় খুশি হলেও আরও সরকারী সাহায্য বাড়ানোর দাবি জানিয়ে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সন্তান শওকত আলী বলেন, সরকার যে সহযোগিতা আমাদের করছে তা অপ্রতুল। বর্তমান যুগে সামান্য সহযোগিতায় চলা যায় না। বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নামের স্থাপনাগুলো বেহাল অবস্থার কারণে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝেও চরম হতাশা ও অসন্তোষ প্রকাশ করে মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, কোন দরকার ছিল না উনার নামে এতকিছু করার। নাম দিয়ে কি হবে যদি জনগণ উপকার না পায়। একজন বীরশ্রেষ্ঠকে আমরা সম্মান না করতে পারি, কিন্তু নাম দিয়ে তা বাস্তবায়ন না করে অপমান করার অধিকার কারও নেই, বিষয়টি সরকারকে বুঝতে হবে। তবে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন জাদুঘর ও গ্রন্থাগারসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যার কথা স্বীকার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়ে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস বলেন, বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে। আশা করি দ্রুত সমস্যাগুলোর সমাধান হবে। বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের প্রতি যথাযথ সম্মান, স্থাপনাগুলো সঠিক রক্ষণাবেক্ষণসহ খুলনার রূপসা নদীর পাড় থেকে সমাধি সরিয়ে নোয়াখালীর তার নিজ গ্রামে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমনটাই প্রত্যাশা নোয়াখালীবাসীর।