সংসদে সর্বসম্মত শোক প্রস্তাব

ছাত্রলীগের দুঃসময়ে মান্নান দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের মৃত্যুতে সংসদে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেছেন, ছাত্রলীগের খুব খারাপ সময়ে মান্নানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। সে সময় (১৯৮২) অনেকেই ছাত্রলীগ ছেড়ে চলে গিয়েছিল। সে কারণে ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করা খুব দরকার ছিল এবং তার সেই সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রে মান্নান অত্যন্ত দক্ষ ছিল, মেধাবী ছিল। যখন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছিল, তখন প্রতিটি লিফলেট থেকে শুরু করে বিবৃতি লেখা, আমি নিজে বসে থেকে ওকে দিয়ে লেখাতাম। যখন যে কাজ দিয়েছি প্রত্যেকটা কাজ দক্ষতার সঙ্গে করেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যতে আমরা যখন থাকব না, আমার হাতে গড়া ছাত্রনেতারা, যারা আগামীতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেবে, আমার চোখের সামনে ওরা চলে যায়, সেটা সত্যিই খুব দুঃখজনক। ইউনুস মারা গেল, মান্নানের মৃত্যু, বাগেরহাটের মোজাম্মেল হক সাহেবের মৃত্যু, বাপ্পা মারা গেল। এটা আসলে দলের জন্য তো বটেই, দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

গতকাল বিকেলে একাদশ সংসদের ৬ষ্ঠ অধিবেশনে বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের মৃত্যুতে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এর আগে বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। স্পিকার সংসদে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করলে এর ওপর আলোচনায় সরকারি ও বিরোধীদলের সদস্যরাও আলোচনায় অংশ নেন। পরে শোক প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।

প্রয়াত আবদুল মান্নানের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মৃত্যুর দুই দিন আগে সে আমার সঙ্গে অনেক কথা বলল। আমাদের সেন্ট্রাল কমিটিতে নানক আসছে ও আসতে পারেনি। বোধহয় তার মনে একটু দুঃখ ছিল। আমি বললাম আমি তো তোমাদের কাউকে ফেলে দেইনি। তুমি আওয়ামী লীগে ছিলে এবং তোমাকে আমি নমিনেশন দিয়েছি, সংসদ সদস্য হয়েছ। কথা বলার সময় দেখলাম তার শরীরটা একটু খারাপ। আমি ওকে বললাম তোমার শরীর মনে হয় ভালো না, তুমি একটু ভালোভাবে চিকিৎসা করো। ঠিক তারপরই সে হাসপাতালে ভর্তি। আমি প্রতিদিন একবার ডাক্তার সৌরভের সঙ্গে কথা বলতাম। যেদিন মারা গেল তার আগের দিন রাত ৯টার সময় ডাক্তার সৌরভের সঙ্গে কথা বললাম। ওইদিনই ডাক্তার বললেন আপা তার শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ। আমরা কিছু করতে পারবো বলে মনে হয় না। আমি তাকে বিদেশে পাঠানোর কথা বললে ডাক্তার বললেন, সে অবস্থা নেই। পরদিন সকাল বেলায় মৃত্যুর খবর।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মনে একটা কষ্ট নিয়ে আজ দাঁড়াতে হলো। পরপর তিনজন সংসদ সদস্য আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। আমি ১৯৮১ সালে ফিরে আসার পর মান্নানকে ছাত্রনেতা হিসেবে পেয়েছিলাম। ১৯৮৩ সালে তাকে ছাত্রলীগের সভাপতি করি। ছাত্রলীগের সভাপতি করার একটা ঘটনা আছে। যাদের ছাত্রলীগের সভাপতি করা হতো আমি তাদের ইন্টারভিউ নিতাম, একা একা। সংসদ নেতা বলেন, অনেকের ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে যখন বলেছি, যদি তোমাকে আমি না বানাই, তাহলে তুমি কী করবে? অনেকে হাউমাউ করে কেঁদে দিত। মান্নান বলেছিল, না বানালে কিছু করার নেই, আমি আপনার সঙ্গে রাজনীতি করে যাব। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম তাকেই বানাবো। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, পরবর্তীতে তাকে আওয়ামী লীগে নিয়ে আসি, আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল। বগুড়ার মতো জায়গায় ওকে নমিনেশন দিলাম। খুব কঠিন জায়গা ছিল। সেখানে থেকে সে জিতে আসলো, পর পর তিনবার সেখান থেকে সংসদ সদস্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রজীবন থেকে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়াবিরোধী আন্দোলনে মান্নান বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। বিভিন্ন সময়ে বহু ছাত্রনেতা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। একটা বৈরী পরিবেশে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি এবং ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আজকে আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু এই সমস্ত ছাত্র নেতারা দুঃসময়ে বিশেষ করে পচাত্তরের পর বিরাট অবদান রেখে গেছেন। ?

আবদুল মান্নানের মৃত্যুতে

সংসদে সর্বসম্মতভাবে

শোক প্রস্তাব গৃহীত

একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নানের মৃত্যুতে সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী গতকাল সংসদ অধিবেশনে এ শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

আবদুল মান্নান গত শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না... রাজেউন)। তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। তিনি ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোয়নে বগুড়া -১ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি দশম জাতীয় সংসদ ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আবদুল মান্নান ছাত্র জীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (বাকসু) সহসভাপতির (ভিপি) দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

শোক প্রস্তাবের ওপর অনুষ্ঠিত আলোচনায় অংশ নেন, কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সরকারি দলের সদস্য আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তোফায়েল আহমেদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, উপাধক্ষ্য আবদুস শহীদ, মহিউদ্দিন খান আলমগীর এবি তাজুল ইসলাম, শাজাহান খান, নজরুল ইসলাম বাবু, মসলেম উদ্দিন, আনোয়ারুল আবেদিন খান, মৃণাল কান্তি দাস, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা ও জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর আহমেদ।

আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, আবদুল মান্নানের যেমনি সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল, তেমনি তার ক্ষুরধার লেখনী ছিল। তার লেখনী এবং বিভিন্ন কর্মকাণ্ড আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই তার সঙ্গে আমার পরিচয়। তিনি একজন প্রতিভাবান রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। চরম দুঃসময়ে তিনি ছাত্রলীগের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তিনি রাজপথে সক্রিয় ছিলেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, বয়সে অনেক ছোট হলেও কাজের মাধ্যমে আবদুল মান্নান আমাদের পাশে স্থান করে নিয়েছিলেন। সে কৃষকের ঘর থেকে ওঠে আসা সন্তান। শেখ হাসিনার পরামর্শে এবং সহযোগিতায় তিনি ছাত্রলীগকে কঠিন সময়ে নেতৃত্ব দিয়ে সংগঠিত করে রেখেছিলেন। কোন বিপর্যয় ও কষাঘাতে কখনো মাথানত করেননি বলেই তিনি রাজনীতিতে সঠিক স্থান করে নিয়েছিলেন। কৃষক ও দেশের জন্য যখনই আমরা কাজ করবো, তখনই মান্নানকে স্মরণে রাখবো।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, জিয়াউর রহমানের মতো সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আবদুল মান্নান রাজনীতি করেছেন। অনেক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান ছাত্র নেতা এবং জন নেতা হিসাবে সফল ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসাবে আজীবন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জনগণের সেবায় আজীবন নিবেদিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ৭৫ পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার পাশে থেকে যে ক’জন আন্দোলন সংগ্রাম করে গেছেন এর মধ্যে আবদুল মান্নান ছিলেন অন্যতম।

গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তিনি ছিলেন সব সময় অবিচল।

বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, তিনি নিরহংকারী মেধাবি নেতা ছিলেন। আজীবন তার প্রতি জনগণের দেয়া দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করে গেছেন।

আলোচনা শেষে সংসদ সদস্য মরহুম আবদুল মান্নানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং তার আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সরকারি দলের সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী। এরপর সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ী সংসদের বৈঠক আজকের মতো মুলতবি করা হয়।

image
আরও খবর
মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণ কামনায় শেষ বিশ্ব ইজতেমা
নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসের অপকৌশল : ফখরুল
ভাড়া পায় অ্যালামনাই-ব্যাংক খেলাবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা
শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ৪ আসামির জামিন বাতিল
সমৃদ্ধির জন্য শিক্ষিত জনগণ বেশি কার্যকর : কৃষিমন্ত্রী
নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সুলতান মেলায় আন্তর্জাতিক আর্টক্যাম্প শুরু
শরিয়তপুর ফেনী ও নওগাঁ জেলার পরিবেশনা আজ
এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসায় পূর্ণ সহায়তা দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
প্রথম আলো সম্পাদকসহ ৬ জনকে গ্রেফতার না করার নির্দেশ
আদালতে ৩৬ লাখ মামলা বিচারাধীন
সব জেলায় চক্ষু সেবা কেন্দ্র হবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী
ভৈরব নদে কয়লাবোঝাই কার্গোডুবি
সাবেক কাস্টমস কর্মকর্তা শফিকুলের ৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ

সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২০ , ৬ মাঘ ১৪২৬, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

সংসদে সর্বসম্মত শোক প্রস্তাব

ছাত্রলীগের দুঃসময়ে মান্নান দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের মৃত্যুতে সংসদে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেছেন, ছাত্রলীগের খুব খারাপ সময়ে মান্নানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। সে সময় (১৯৮২) অনেকেই ছাত্রলীগ ছেড়ে চলে গিয়েছিল। সে কারণে ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করা খুব দরকার ছিল এবং তার সেই সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রে মান্নান অত্যন্ত দক্ষ ছিল, মেধাবী ছিল। যখন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছিল, তখন প্রতিটি লিফলেট থেকে শুরু করে বিবৃতি লেখা, আমি নিজে বসে থেকে ওকে দিয়ে লেখাতাম। যখন যে কাজ দিয়েছি প্রত্যেকটা কাজ দক্ষতার সঙ্গে করেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যতে আমরা যখন থাকব না, আমার হাতে গড়া ছাত্রনেতারা, যারা আগামীতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেবে, আমার চোখের সামনে ওরা চলে যায়, সেটা সত্যিই খুব দুঃখজনক। ইউনুস মারা গেল, মান্নানের মৃত্যু, বাগেরহাটের মোজাম্মেল হক সাহেবের মৃত্যু, বাপ্পা মারা গেল। এটা আসলে দলের জন্য তো বটেই, দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

গতকাল বিকেলে একাদশ সংসদের ৬ষ্ঠ অধিবেশনে বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের মৃত্যুতে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এর আগে বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। স্পিকার সংসদে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করলে এর ওপর আলোচনায় সরকারি ও বিরোধীদলের সদস্যরাও আলোচনায় অংশ নেন। পরে শোক প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।

প্রয়াত আবদুল মান্নানের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মৃত্যুর দুই দিন আগে সে আমার সঙ্গে অনেক কথা বলল। আমাদের সেন্ট্রাল কমিটিতে নানক আসছে ও আসতে পারেনি। বোধহয় তার মনে একটু দুঃখ ছিল। আমি বললাম আমি তো তোমাদের কাউকে ফেলে দেইনি। তুমি আওয়ামী লীগে ছিলে এবং তোমাকে আমি নমিনেশন দিয়েছি, সংসদ সদস্য হয়েছ। কথা বলার সময় দেখলাম তার শরীরটা একটু খারাপ। আমি ওকে বললাম তোমার শরীর মনে হয় ভালো না, তুমি একটু ভালোভাবে চিকিৎসা করো। ঠিক তারপরই সে হাসপাতালে ভর্তি। আমি প্রতিদিন একবার ডাক্তার সৌরভের সঙ্গে কথা বলতাম। যেদিন মারা গেল তার আগের দিন রাত ৯টার সময় ডাক্তার সৌরভের সঙ্গে কথা বললাম। ওইদিনই ডাক্তার বললেন আপা তার শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ। আমরা কিছু করতে পারবো বলে মনে হয় না। আমি তাকে বিদেশে পাঠানোর কথা বললে ডাক্তার বললেন, সে অবস্থা নেই। পরদিন সকাল বেলায় মৃত্যুর খবর।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মনে একটা কষ্ট নিয়ে আজ দাঁড়াতে হলো। পরপর তিনজন সংসদ সদস্য আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। আমি ১৯৮১ সালে ফিরে আসার পর মান্নানকে ছাত্রনেতা হিসেবে পেয়েছিলাম। ১৯৮৩ সালে তাকে ছাত্রলীগের সভাপতি করি। ছাত্রলীগের সভাপতি করার একটা ঘটনা আছে। যাদের ছাত্রলীগের সভাপতি করা হতো আমি তাদের ইন্টারভিউ নিতাম, একা একা। সংসদ নেতা বলেন, অনেকের ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে যখন বলেছি, যদি তোমাকে আমি না বানাই, তাহলে তুমি কী করবে? অনেকে হাউমাউ করে কেঁদে দিত। মান্নান বলেছিল, না বানালে কিছু করার নেই, আমি আপনার সঙ্গে রাজনীতি করে যাব। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম তাকেই বানাবো। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, পরবর্তীতে তাকে আওয়ামী লীগে নিয়ে আসি, আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল। বগুড়ার মতো জায়গায় ওকে নমিনেশন দিলাম। খুব কঠিন জায়গা ছিল। সেখানে থেকে সে জিতে আসলো, পর পর তিনবার সেখান থেকে সংসদ সদস্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রজীবন থেকে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়াবিরোধী আন্দোলনে মান্নান বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। বিভিন্ন সময়ে বহু ছাত্রনেতা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। একটা বৈরী পরিবেশে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি এবং ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আজকে আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু এই সমস্ত ছাত্র নেতারা দুঃসময়ে বিশেষ করে পচাত্তরের পর বিরাট অবদান রেখে গেছেন। ?

আবদুল মান্নানের মৃত্যুতে

সংসদে সর্বসম্মতভাবে

শোক প্রস্তাব গৃহীত

একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নানের মৃত্যুতে সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী গতকাল সংসদ অধিবেশনে এ শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

আবদুল মান্নান গত শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না... রাজেউন)। তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। তিনি ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোয়নে বগুড়া -১ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি দশম জাতীয় সংসদ ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আবদুল মান্নান ছাত্র জীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (বাকসু) সহসভাপতির (ভিপি) দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

শোক প্রস্তাবের ওপর অনুষ্ঠিত আলোচনায় অংশ নেন, কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সরকারি দলের সদস্য আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তোফায়েল আহমেদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, উপাধক্ষ্য আবদুস শহীদ, মহিউদ্দিন খান আলমগীর এবি তাজুল ইসলাম, শাজাহান খান, নজরুল ইসলাম বাবু, মসলেম উদ্দিন, আনোয়ারুল আবেদিন খান, মৃণাল কান্তি দাস, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা ও জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর আহমেদ।

আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, আবদুল মান্নানের যেমনি সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল, তেমনি তার ক্ষুরধার লেখনী ছিল। তার লেখনী এবং বিভিন্ন কর্মকাণ্ড আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই তার সঙ্গে আমার পরিচয়। তিনি একজন প্রতিভাবান রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। চরম দুঃসময়ে তিনি ছাত্রলীগের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তিনি রাজপথে সক্রিয় ছিলেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, বয়সে অনেক ছোট হলেও কাজের মাধ্যমে আবদুল মান্নান আমাদের পাশে স্থান করে নিয়েছিলেন। সে কৃষকের ঘর থেকে ওঠে আসা সন্তান। শেখ হাসিনার পরামর্শে এবং সহযোগিতায় তিনি ছাত্রলীগকে কঠিন সময়ে নেতৃত্ব দিয়ে সংগঠিত করে রেখেছিলেন। কোন বিপর্যয় ও কষাঘাতে কখনো মাথানত করেননি বলেই তিনি রাজনীতিতে সঠিক স্থান করে নিয়েছিলেন। কৃষক ও দেশের জন্য যখনই আমরা কাজ করবো, তখনই মান্নানকে স্মরণে রাখবো।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, জিয়াউর রহমানের মতো সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আবদুল মান্নান রাজনীতি করেছেন। অনেক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান ছাত্র নেতা এবং জন নেতা হিসাবে সফল ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসাবে আজীবন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জনগণের সেবায় আজীবন নিবেদিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ৭৫ পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার পাশে থেকে যে ক’জন আন্দোলন সংগ্রাম করে গেছেন এর মধ্যে আবদুল মান্নান ছিলেন অন্যতম।

গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তিনি ছিলেন সব সময় অবিচল।

বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, তিনি নিরহংকারী মেধাবি নেতা ছিলেন। আজীবন তার প্রতি জনগণের দেয়া দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করে গেছেন।

আলোচনা শেষে সংসদ সদস্য মরহুম আবদুল মান্নানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং তার আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সরকারি দলের সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী। এরপর সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ী সংসদের বৈঠক আজকের মতো মুলতবি করা হয়।