রাজস্ব প্রবৃদ্ধিতে ভ্যাটের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

জ্যাস্টিন গোমেজ

ভ্যাট হলো আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অক্সিজেন। আামদের সন্তানদের নিরাপদে রাখতে, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে আমাদের ভ্যাট দিতে হয়। সরকারের নিজের কোন টাকা নাই, জনগণের টাকাই সরকার উন্নয়নের জন্য কাজ করে। ভ্যাট না দিলে এই উন্নয়ন সম্ভব হবে না। বর্তমানে জিডিপিতে প্রায় ৪ শতাংশ অবদান রাখছে এই ভ্যাট কিংবা মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট)। চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা হচ্ছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভ্যাট থেকেই আদায়ের কথা আছে ৯১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। মোট রাজস্ব আদায় পরিকল্পনার মধ্যে ভ্যাটের অংশই সবচেয়ে বেশি, ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ। ১৯৮৬ সালে বিশ্বব্যাংকের কর সংস্কার মিশনের সুপারিশে প্রথম ভ্যাট ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৯৯০ সালে ভ্যাট আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। ১৯৯১ সালের ১০ জুলাই থেকে সীমিত পরিসরে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন শুরু হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে ওই আইনের বিচ্যুতি হয়। দীর্ঘ ২১ বছর পর ২০১২ সালে নতুন ভ্যাট আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও ব্যবসায়ীদের আপত্তিতে তা দুই বছর পিছিয়ে দেয়া হয়। পরে সকল চড়াই-উতরাই পার করে আমাদের দেশের ভ্যাট ব্যবস্থা বর্তমানের পরিস্থিতিতে উপনীত হয়েছে। আর এ অবস্থায়, অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন ই-বিআইএন করতে একজন ব্যবসায়ীর সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট সময় লাগে। ব্যবসায়ীরা তাদের নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসেই নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন। তাদের সহযোগিতার জন্য ভ্যাট নিবন্ধন সার্ভিস সেন্টার, ভ্রাম্যমাণ মোবাইল ভ্যাটসহ যে কোনো প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের সহযোগিতা করছে। এটা ঠিক যে, ভ্যাট আরোপ করলে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। ফলে অতিরিক্ত দাম দিয়েই পণ্য কিনতে হয় ভোক্তাদের। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে, রাজস্ব আহরণের বড় উৎস হচ্ছে এই ভ্যাট; যা রাষ্ট্রের ব্যয় নির্বাহে সহায়তা করে। একই সঙ্গে অর্থনীতিতে রাখে বড় ভূমিকা। সামাজিক সব খাতে উন্নয়ন ও অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে বিপুল পরিমাণ অর্থের দরকার হয়। আর সেটা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেই মেটানো হয়।

দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে নতুন ভ্যাট আইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ঝামেলামুক্ত ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে এ আইন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। দেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের সারিতে নিয়ে যেতে রাজস্ব আদায় উন্নয়নের অক্সিজেন হিসেবে কাজ করবে। আর তাই তো দিন দিন বড় হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। ফলে বাড়ছে বাজেটের আকার। আর বর্ধিত বাজেট বাস্তবায়নের দরকার হচ্ছে অধিক অর্থের। কিন্তু বিদেশি অর্থের উৎস তুলনামূলক অনেক ছোট হয়ে আসায় এখন বাজেট বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রাখছে অভ্যন্তরীণ উৎসগুলো; যার মধ্যে ভ্যাট অন্যতম। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঘুষ প্রবণতা বন্ধ ও আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে ভ্যাট আদায় করা গেলে এর পরিমাণ বর্তমানের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে যাবে; যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এছাড়াও নতুন আইনটি বাস্তবায়ন অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং ও হয়রানিমূলক হবে। এ আইনে ভ্যাট কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারী হওয়ার সুযোগ বেশি। নতুন ভ্যাট আইনটি মাঠপর্যায়ে কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তা নিয়ে অস্পষ্টতা আছে। প্যাকেজ ভ্যাট প্রথা উঠে যাওয়ার ফলে কিসের ভিত্তিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট মওকুফের সীমা নির্ধারণ করা হবে, তা স্পষ্ট নয়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে হিসাবপত্র রাখার বিষয়টিও শুধু কাগজ-কলমে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকার কম হলে ভ্যাট দিতে হবে না। অথচ কোনো প্রতিষ্ঠানের লেনদেন ৫০ লাখ টাকার কম, সেটি নির্ধারণের বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। এটি জানতে ভ্যাট কর্মকর্তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তদারকি করতে হবে। কিছুদিন পর্যবেক্ষণের পর ভ্যাট কর্মকর্তাদের ঠিক করতে হবে, ওই প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাটের আওতায় কি না। তা না হলে ছোট-বড় সব ব্যবসায়ীর সততার সঙ্গে নিখুঁতভাবে লেনদেনের হিসাব রাখতে হবে। নতুন অর্থবছরে ভ্যাটের আওতা বাড়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

কিছু চাই না। চাই শুধু সরকারের যেসব পরিকল্পনা রয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন দেখতে। বাজেটের মাধ্যমে সমাজের বৈষম্য কমাতে হবে। লিঙ্গবৈষম্য কমাতে হবে। আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। বাজেটের গুণগত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা উচিত। বাজেট বাস্তবায়ন না হওয়ায় কারো চাকরি গেছে বা বরখাস্ত হয়েছে এমন নজির নেই। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) আরো কার্যকর করা দরকার। বাজেট হতে হবে আবাসন খাতবান্ধব। যে বাজেট আবাসন খাতের উন্নয়ন ঘটাবে, তেমন বাজেট দেখতে চাই। কর ও ভ্যাটের হার কমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারকেও আবার রাজস্বের ওপর নির্ভর করতে হয়। তারা কর ও ভ্যাটের নেট বাড়াতে পারছে না। ঘুরে ফিরে কিছু ব্যবসায়ী, কিছু ব্যবসা খাতের ওপর সব কিছু চাপিয়ে দিচ্ছে। সরকারের করদাতা বাড়াতে হবে। নতুন করদাতা পেতে হলে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সরকার যেহেতু চাচ্ছে অপ্রদর্শিত অর্থ ফরমাল চ্যানেলে চলে আসুক, তাহলে সেটাকে সেভাবেই আসার সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু অবৈধ পথে অপ্রদর্শিত আয়ের কথা বলছি না। বৈধ পথে অপ্রদর্শিত আয়ের কথা বলছি। সামগ্রিকভাবে বলা হয়ে থাকে যে বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, আমাদের সম্পদের সবচেয়ে বড় জায়াগাটি হলো সামুদ্রিক সম্পদ। ২০৩০ সাল পর্যন্ত আমরা এখান থেকে যে পরিমাণ সম্পদ অর্জন করব, তাহলে সে সময় বাংলাদেশ যে সম্পদশালী দেশে পৌঁছবে, বিদেশি যেসব দেশ এখানে বিনিয়োগ করবে এবং সামুদ্রিক সম্পদ সব মিলিয়ে বড় একটি সম্পদ সৃষ্টি হবে। তখন শত্রু সৃষ্টি হতে বেশি সময় লাগবে না। সম্পদ থাকলে সেখানে অশুভ দৃষ্টি পড়ে, সেটা আমরা চাই বা না চাই। মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়ার মোট বাজেটে ১২-১৩ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ থাকে। আমাদেরও সেই জায়গায় যেতে হবে। সুতরাং ২০৩০ সালের দিকে রাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর এর নিরাপত্তা দেয়ার মতো সক্ষমতা থাকা উচিত। একই সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে রাষ্ট্রের অন্যান্য সংস্থার সমন্বয়ে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল গঠন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

[লেখক : সাংবাদিক]

justingomes80@gmail.com

সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২০ , ৬ মাঘ ১৪২৬, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

রাজস্ব প্রবৃদ্ধিতে ভ্যাটের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

জ্যাস্টিন গোমেজ

ভ্যাট হলো আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অক্সিজেন। আামদের সন্তানদের নিরাপদে রাখতে, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে আমাদের ভ্যাট দিতে হয়। সরকারের নিজের কোন টাকা নাই, জনগণের টাকাই সরকার উন্নয়নের জন্য কাজ করে। ভ্যাট না দিলে এই উন্নয়ন সম্ভব হবে না। বর্তমানে জিডিপিতে প্রায় ৪ শতাংশ অবদান রাখছে এই ভ্যাট কিংবা মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট)। চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা হচ্ছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভ্যাট থেকেই আদায়ের কথা আছে ৯১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। মোট রাজস্ব আদায় পরিকল্পনার মধ্যে ভ্যাটের অংশই সবচেয়ে বেশি, ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ। ১৯৮৬ সালে বিশ্বব্যাংকের কর সংস্কার মিশনের সুপারিশে প্রথম ভ্যাট ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৯৯০ সালে ভ্যাট আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। ১৯৯১ সালের ১০ জুলাই থেকে সীমিত পরিসরে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন শুরু হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে ওই আইনের বিচ্যুতি হয়। দীর্ঘ ২১ বছর পর ২০১২ সালে নতুন ভ্যাট আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও ব্যবসায়ীদের আপত্তিতে তা দুই বছর পিছিয়ে দেয়া হয়। পরে সকল চড়াই-উতরাই পার করে আমাদের দেশের ভ্যাট ব্যবস্থা বর্তমানের পরিস্থিতিতে উপনীত হয়েছে। আর এ অবস্থায়, অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন ই-বিআইএন করতে একজন ব্যবসায়ীর সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট সময় লাগে। ব্যবসায়ীরা তাদের নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসেই নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন। তাদের সহযোগিতার জন্য ভ্যাট নিবন্ধন সার্ভিস সেন্টার, ভ্রাম্যমাণ মোবাইল ভ্যাটসহ যে কোনো প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের সহযোগিতা করছে। এটা ঠিক যে, ভ্যাট আরোপ করলে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। ফলে অতিরিক্ত দাম দিয়েই পণ্য কিনতে হয় ভোক্তাদের। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে, রাজস্ব আহরণের বড় উৎস হচ্ছে এই ভ্যাট; যা রাষ্ট্রের ব্যয় নির্বাহে সহায়তা করে। একই সঙ্গে অর্থনীতিতে রাখে বড় ভূমিকা। সামাজিক সব খাতে উন্নয়ন ও অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে বিপুল পরিমাণ অর্থের দরকার হয়। আর সেটা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেই মেটানো হয়।

দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে নতুন ভ্যাট আইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ঝামেলামুক্ত ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে এ আইন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। দেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের সারিতে নিয়ে যেতে রাজস্ব আদায় উন্নয়নের অক্সিজেন হিসেবে কাজ করবে। আর তাই তো দিন দিন বড় হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। ফলে বাড়ছে বাজেটের আকার। আর বর্ধিত বাজেট বাস্তবায়নের দরকার হচ্ছে অধিক অর্থের। কিন্তু বিদেশি অর্থের উৎস তুলনামূলক অনেক ছোট হয়ে আসায় এখন বাজেট বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রাখছে অভ্যন্তরীণ উৎসগুলো; যার মধ্যে ভ্যাট অন্যতম। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঘুষ প্রবণতা বন্ধ ও আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে ভ্যাট আদায় করা গেলে এর পরিমাণ বর্তমানের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে যাবে; যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এছাড়াও নতুন আইনটি বাস্তবায়ন অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং ও হয়রানিমূলক হবে। এ আইনে ভ্যাট কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারী হওয়ার সুযোগ বেশি। নতুন ভ্যাট আইনটি মাঠপর্যায়ে কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তা নিয়ে অস্পষ্টতা আছে। প্যাকেজ ভ্যাট প্রথা উঠে যাওয়ার ফলে কিসের ভিত্তিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট মওকুফের সীমা নির্ধারণ করা হবে, তা স্পষ্ট নয়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে হিসাবপত্র রাখার বিষয়টিও শুধু কাগজ-কলমে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকার কম হলে ভ্যাট দিতে হবে না। অথচ কোনো প্রতিষ্ঠানের লেনদেন ৫০ লাখ টাকার কম, সেটি নির্ধারণের বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। এটি জানতে ভ্যাট কর্মকর্তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তদারকি করতে হবে। কিছুদিন পর্যবেক্ষণের পর ভ্যাট কর্মকর্তাদের ঠিক করতে হবে, ওই প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাটের আওতায় কি না। তা না হলে ছোট-বড় সব ব্যবসায়ীর সততার সঙ্গে নিখুঁতভাবে লেনদেনের হিসাব রাখতে হবে। নতুন অর্থবছরে ভ্যাটের আওতা বাড়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

কিছু চাই না। চাই শুধু সরকারের যেসব পরিকল্পনা রয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন দেখতে। বাজেটের মাধ্যমে সমাজের বৈষম্য কমাতে হবে। লিঙ্গবৈষম্য কমাতে হবে। আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। বাজেটের গুণগত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা উচিত। বাজেট বাস্তবায়ন না হওয়ায় কারো চাকরি গেছে বা বরখাস্ত হয়েছে এমন নজির নেই। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) আরো কার্যকর করা দরকার। বাজেট হতে হবে আবাসন খাতবান্ধব। যে বাজেট আবাসন খাতের উন্নয়ন ঘটাবে, তেমন বাজেট দেখতে চাই। কর ও ভ্যাটের হার কমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারকেও আবার রাজস্বের ওপর নির্ভর করতে হয়। তারা কর ও ভ্যাটের নেট বাড়াতে পারছে না। ঘুরে ফিরে কিছু ব্যবসায়ী, কিছু ব্যবসা খাতের ওপর সব কিছু চাপিয়ে দিচ্ছে। সরকারের করদাতা বাড়াতে হবে। নতুন করদাতা পেতে হলে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সরকার যেহেতু চাচ্ছে অপ্রদর্শিত অর্থ ফরমাল চ্যানেলে চলে আসুক, তাহলে সেটাকে সেভাবেই আসার সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু অবৈধ পথে অপ্রদর্শিত আয়ের কথা বলছি না। বৈধ পথে অপ্রদর্শিত আয়ের কথা বলছি। সামগ্রিকভাবে বলা হয়ে থাকে যে বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, আমাদের সম্পদের সবচেয়ে বড় জায়াগাটি হলো সামুদ্রিক সম্পদ। ২০৩০ সাল পর্যন্ত আমরা এখান থেকে যে পরিমাণ সম্পদ অর্জন করব, তাহলে সে সময় বাংলাদেশ যে সম্পদশালী দেশে পৌঁছবে, বিদেশি যেসব দেশ এখানে বিনিয়োগ করবে এবং সামুদ্রিক সম্পদ সব মিলিয়ে বড় একটি সম্পদ সৃষ্টি হবে। তখন শত্রু সৃষ্টি হতে বেশি সময় লাগবে না। সম্পদ থাকলে সেখানে অশুভ দৃষ্টি পড়ে, সেটা আমরা চাই বা না চাই। মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়ার মোট বাজেটে ১২-১৩ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ থাকে। আমাদেরও সেই জায়গায় যেতে হবে। সুতরাং ২০৩০ সালের দিকে রাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর এর নিরাপত্তা দেয়ার মতো সক্ষমতা থাকা উচিত। একই সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে রাষ্ট্রের অন্যান্য সংস্থার সমন্বয়ে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল গঠন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

[লেখক : সাংবাদিক]

justingomes80@gmail.com