গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল নাকাই ইউনিয়নের নারী উদ্যোক্তা মীর শারমীন শিমু গড়ে তুলেছেন মেহুলী বুটিক ওয়ান লাইন ব্যবসা। এতে কুঞ্জ নাকাই ও পলাশবাড়ীর হরিনাথপুর ইউনিয়নের তালুক কেয়া বাড়ি গ্রামের ৩০ জন নারী সংসারে ফিরে পেয়েছে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছলতা। সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে তাদের হাতের তৈরি ওয়ান পিচ, থ্রি পিচ, শাড়ি, বেডশিট, রেডিড্রেস, পাঞ্জাবি, ফতুয়া নকশী কাঁথা এসব পণ্য দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে রফতানি করা সম্ভব। মেহুলী বুটিকের কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়া কুঞ্জ নাকাই গ্রামের মোছা. মিশু বেগম (২৫) জানান, নারী উদ্যোক্তা মীর শারমীন শিমু আপা হস্তশিল্পের এই বুটিকের কাজ দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করায় মাসে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা আয় করতে পারছি। দিন দিন এ কাজের চাহিদা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু প্রচার না থাকায় সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তালুক কেয়া বাড়ি গ্রামের সাধনা রানী বলেন, মেহুলী বুটিকের সুতার কাজ করে মাসে ৪ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। এ কাজের আয় থেকে ছেলে মেয়েদের ভালভাবে পড়ালেখা করাতে পারছি। নাকাইহাট ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক দিলীপ কুমার মহন্ত মেহুলী বুটিকের কাজ সম্পর্কে জানালেন, মীর শারমিন শিমু আমার গ্রামের মেয়ে, আমি তাকে ছোট বোন হিসেবে দেখি, তাকে অনেক দিন বলে ছিলাম, রাস্তা, ঘাটে ঘুরে বেড়াও কেন? এ প্রশ্নের কোন উত্তর সে দিত না। পরবর্তীতে জানতে পারি, গ্রামে গ্রামে ঘুরে অসহায় পরিবারের নারীদের এ সমাজে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য নারীদের একত্রিত করে তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মেহুলী বুটিকের কাজ করান। তার এই উদ্যোগ গ্রহণ করায় নারী উদ্যোক্তা হিসেবে সরকারী সহযোগিতা কামনা করছি। মেহুলী বুটিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর শারমিন শিমু বলেন, ছাত্র জীবন থেকেই তার চিন্তা চেতনা ছিল গ্রামের অসহায় নারীদের কি ভাবে স্বাবলম্বী করা যায়। তাই সরকারী, বেসরকারি চাকরির কথা না ভেবে, ২০০৭ সালে (অনার্স) প্রথম বর্ষের ছাত্রী থাকা অবস্থায় তার মাথায় আসে হস্তশিল্পের চেতনার কথা। তিনি আরও জানান, পরিবারের কাজ থেকে হস্তশিল্পের ডিজাইনের কাজ তিনি শিখেন। এর পর নিজে এ কাজটার সঙ্গে গ্রামের নারীদের উদ্বুদ্ধ করতে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেন। মাত্র ৫ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে তার এই ব্যবসার যাত্রা শুরু। বর্তমানে এ ব্যবসা করে মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কাজের অর্ডার আসতে থাকে। কাজ শেষে অর্ডার অনুযায়ী কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঠিকানা অনুযায়ী মেহুলী বুটিকের মালামাল পাঠিয়ে দেন। সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে মেহুলী বুটিক গ্রাম ছেড়ে দেশের বিভিন্ন শহর পেরিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে রফতানি করতে পারলে গ্রামের এসব অসহায় নারী অর্থনৈতিকভাবে আরও স্বাবলম্বী হতে পারত। এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ বর্মণ বলেন, কুঞ্জু নাকাই গ্রামে যে হস্ত শিল্প ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠেছে। আমরা শুনেছি, যে ওখানে বাজারজাত করার সমস্যা রয়েছে, অথবা প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব। আমাদের বিআরডিবি অফিসের মাধ্যমে তাদের আরও ভাল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। যাতে করে তাদের পণ্যের গুণগতমান বৃদ্ধি পায় এবং সেই সঙ্গে বিভিন্ন কোয়ালিটি সম্পর্ণ যে পণ্য রয়েছে, সেগুলো যাতে উৎপাদন করতে পারে। আমাদের উপজেলা প্রশাসনের একটি মার্কেট থাকবে, আমরা ওই সব পণ্য সেখানে ক্রয় করতে পারব।
মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২০ , ৭ মাঘ ১৪২৬, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১
খোকন আহমেদ গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল নাকাই ইউনিয়নের নারী উদ্যোক্তা মীর শারমীন শিমু গড়ে তুলেছেন মেহুলী বুটিক ওয়ান লাইন ব্যবসা। এতে কুঞ্জ নাকাই ও পলাশবাড়ীর হরিনাথপুর ইউনিয়নের তালুক কেয়া বাড়ি গ্রামের ৩০ জন নারী সংসারে ফিরে পেয়েছে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছলতা। সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে তাদের হাতের তৈরি ওয়ান পিচ, থ্রি পিচ, শাড়ি, বেডশিট, রেডিড্রেস, পাঞ্জাবি, ফতুয়া নকশী কাঁথা এসব পণ্য দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে রফতানি করা সম্ভব। মেহুলী বুটিকের কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়া কুঞ্জ নাকাই গ্রামের মোছা. মিশু বেগম (২৫) জানান, নারী উদ্যোক্তা মীর শারমীন শিমু আপা হস্তশিল্পের এই বুটিকের কাজ দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করায় মাসে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা আয় করতে পারছি। দিন দিন এ কাজের চাহিদা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু প্রচার না থাকায় সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তালুক কেয়া বাড়ি গ্রামের সাধনা রানী বলেন, মেহুলী বুটিকের সুতার কাজ করে মাসে ৪ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। এ কাজের আয় থেকে ছেলে মেয়েদের ভালভাবে পড়ালেখা করাতে পারছি। নাকাইহাট ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক দিলীপ কুমার মহন্ত মেহুলী বুটিকের কাজ সম্পর্কে জানালেন, মীর শারমিন শিমু আমার গ্রামের মেয়ে, আমি তাকে ছোট বোন হিসেবে দেখি, তাকে অনেক দিন বলে ছিলাম, রাস্তা, ঘাটে ঘুরে বেড়াও কেন? এ প্রশ্নের কোন উত্তর সে দিত না। পরবর্তীতে জানতে পারি, গ্রামে গ্রামে ঘুরে অসহায় পরিবারের নারীদের এ সমাজে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য নারীদের একত্রিত করে তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মেহুলী বুটিকের কাজ করান। তার এই উদ্যোগ গ্রহণ করায় নারী উদ্যোক্তা হিসেবে সরকারী সহযোগিতা কামনা করছি। মেহুলী বুটিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর শারমিন শিমু বলেন, ছাত্র জীবন থেকেই তার চিন্তা চেতনা ছিল গ্রামের অসহায় নারীদের কি ভাবে স্বাবলম্বী করা যায়। তাই সরকারী, বেসরকারি চাকরির কথা না ভেবে, ২০০৭ সালে (অনার্স) প্রথম বর্ষের ছাত্রী থাকা অবস্থায় তার মাথায় আসে হস্তশিল্পের চেতনার কথা। তিনি আরও জানান, পরিবারের কাজ থেকে হস্তশিল্পের ডিজাইনের কাজ তিনি শিখেন। এর পর নিজে এ কাজটার সঙ্গে গ্রামের নারীদের উদ্বুদ্ধ করতে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেন। মাত্র ৫ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে তার এই ব্যবসার যাত্রা শুরু। বর্তমানে এ ব্যবসা করে মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কাজের অর্ডার আসতে থাকে। কাজ শেষে অর্ডার অনুযায়ী কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঠিকানা অনুযায়ী মেহুলী বুটিকের মালামাল পাঠিয়ে দেন। সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে মেহুলী বুটিক গ্রাম ছেড়ে দেশের বিভিন্ন শহর পেরিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে রফতানি করতে পারলে গ্রামের এসব অসহায় নারী অর্থনৈতিকভাবে আরও স্বাবলম্বী হতে পারত। এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ বর্মণ বলেন, কুঞ্জু নাকাই গ্রামে যে হস্ত শিল্প ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠেছে। আমরা শুনেছি, যে ওখানে বাজারজাত করার সমস্যা রয়েছে, অথবা প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব। আমাদের বিআরডিবি অফিসের মাধ্যমে তাদের আরও ভাল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। যাতে করে তাদের পণ্যের গুণগতমান বৃদ্ধি পায় এবং সেই সঙ্গে বিভিন্ন কোয়ালিটি সম্পর্ণ যে পণ্য রয়েছে, সেগুলো যাতে উৎপাদন করতে পারে। আমাদের উপজেলা প্রশাসনের একটি মার্কেট থাকবে, আমরা ওই সব পণ্য সেখানে ক্রয় করতে পারব।