ইটভাটায় বিবর্ণ বাংলাদেশ

দৌলতপুরে অবৈধ ২৬ ইটভাটা অবাধে পুড়ছে কাঠ : হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ২৬টি অবৈধ স্থায়ী বা অস্থায়ী চিমনির ইটভাটাতে অবাধে পুড়ানো হচ্ছে জ্বালানি হিসেবে কাঠ। সরকারি ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন না মেনে, যত্রতত্রভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটাতে দেদার পোড়ানো হচ্ছে কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি কাঠ বা কাঠের গুঁড়ি। এর ফলে উজাড় হচ্ছে সবুজ বৃক্ষ। উপজেলার বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকাধীন বনাঞ্চল থেকে গাছ কিনে এসব অসাধু ভাটা মালিকরা জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার করছেন।

এসব ইট ভাটাগুলো থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় দূষিত হয়ে পড়ছে চারপাশের পরিবেশ। এতে একদিকে যেমন উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চলের সবুজ বৃক্ষ অপরদিকে এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ছে হুমকির মুখে। দৌলতপুর উপজেলার অতি নিকটে হাসপাতাল রোডের সরকারী শেখ ফজিলাতুনেছা মুজিব মহিলা কলেজ সংলগ্ন স্থানে গড়ে ওঠা ৪টি ইটভাটা, উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন মানিকদিয়াড় গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির আঙিনা ও ফসলের ক্ষেতে গড়ে তোলা হয়েছে ৮টি ইটভাটিসহ উপজেলার কল্যাণপুর, ডাংমড়কা, রিফায়েতপুর, চকদৌলতপুর, ঝাউদিয়া, সংগ্রামপুর, বড়গাংদিয়া, বোয়ালিয়া, স্বরূপপুর ও প্রাগপুর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা ২৬টি ইটভাটিতে হাজার হাজার টন গাছের গুঁড়ির স্তুপ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এসব ইটভাটির চুল্লিগুলিতে ১২০ ফুট উচু স্থায়ী চিমনির পরিবর্তে কোন কোন ভাটায় মাত্র ২৫ থেকে ৩০ ফুট উঁচু ড্রাম চিমনি ব্যবহার করে পোড়ানো হচ্ছে বনাঞ্চলের সবুজ বৃক্ষ।

স্বরূপপুর, মানিকদিয়াড় ও সাদীপুর এলাকার ইটভাটিসহ সব ইটভাটিতে অবাধে কাঠ পোড়ানো হলেও প্রশাসন রয়েছে নীরব। উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন লতিফ মোড়ে প্রতিদিন প্রকাশ্যেই শত শত ট্রাকভর্তি জ্বালানি কাঠ ওজন দেওয়া হচ্ছে। আর এসব নিষিদ্ধ ইটভাটাতে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে সেইসব মাটি দিয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে ইট। প্রতিটি ইটভাটিতে এক রাউন্ড ইট পোড়াতে সময় লাগে ১২-১৫ দিন।

সে হিসেবে একটি মৌসুমে প্রায় ১০ থেকে ১২ রাউন্ড ইট পোড়ানো সম্ভব। এক রাউন্ড ইট পোড়াতে ১০ থেকে ১২ হাজার মন জ্বালানি কাঠের প্রয়োজন হয়। সে অনুযায়ী প্রতিটি ইটভাটাতে এক মৌসুমে (১) এক লাখ মণ জ্বালানি হিসেবে সবুজ বৃক্ষ বা কাঠ পোড়ানো হলে ২৬টি ইটভাটাতে ২৬ লক্ষ মনেরও বেশী কাঠ পুড়ানো হয়। এছাড়াও ইটভাটাগুলো সরকারি নিয়ম নীতি না মেনে যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মত উর্বর ফসলী জমি, স্কুলের আঙিনা, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আশপাশ ও জনবসতি এলাকায় গড়ে উঠায় ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় শিশুদের শ্বাসকষ্ট ও স্বাস্থ্যহানি ঘটছে, পরিবেশ হচ্ছে বিপর্যস্ত। সেই সাথে আবাদি জমি ক্রমাগত হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি জমির উর্বর শক্তি হারাচ্ছে।

এদিকে কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অবৈধ এসব ইটভাটাতে প্রশাসনের অভিযান চললেও দৌলতপুরে এর উল্টো চিত্র। দৌলতপুরের ইটভাটা মালিকদের দম্ভোক্তি রয়েছে তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রতিটি ইটভাটাতে কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে কাঠ জ্বালায় এমন কথা বিভিন্ন মহলে প্রচার রয়েছে।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার বলেছেন, গত নবেম্বর মাসে অবৈধ এসব ইটভাটাতে অভিযান চালানো হয়েছে। আগামী দু’এক দিনের মধ্যে আরো অভিযান চালানো হবে।

এদিকে বিগত বছরগুলোতে জ্বালানি কাঠ পোড়ানোর দায়ে অবৈধ ইটভাটা মালিকদের অর্থদণ্ডের পাশাপশি সতর্ক করা হলেও ভাটা মালিকরা তা না মেনে অবাধে সবুজ বৃক্ষ উজাড় করে কাঠ পুড়িয়ে যাচ্ছেন।

বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২০ , ৮ মাঘ ১৪২৬, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

ইটভাটায় বিবর্ণ বাংলাদেশ

দৌলতপুরে অবৈধ ২৬ ইটভাটা অবাধে পুড়ছে কাঠ : হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

প্রতিনিধি দৌলতপুর (কুষ্টিয়া)

image

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) : ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য স্তূপ করে রাখা কাঠ -সংবাদ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ২৬টি অবৈধ স্থায়ী বা অস্থায়ী চিমনির ইটভাটাতে অবাধে পুড়ানো হচ্ছে জ্বালানি হিসেবে কাঠ। সরকারি ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন না মেনে, যত্রতত্রভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটাতে দেদার পোড়ানো হচ্ছে কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি কাঠ বা কাঠের গুঁড়ি। এর ফলে উজাড় হচ্ছে সবুজ বৃক্ষ। উপজেলার বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকাধীন বনাঞ্চল থেকে গাছ কিনে এসব অসাধু ভাটা মালিকরা জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার করছেন।

এসব ইট ভাটাগুলো থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় দূষিত হয়ে পড়ছে চারপাশের পরিবেশ। এতে একদিকে যেমন উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চলের সবুজ বৃক্ষ অপরদিকে এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ছে হুমকির মুখে। দৌলতপুর উপজেলার অতি নিকটে হাসপাতাল রোডের সরকারী শেখ ফজিলাতুনেছা মুজিব মহিলা কলেজ সংলগ্ন স্থানে গড়ে ওঠা ৪টি ইটভাটা, উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন মানিকদিয়াড় গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির আঙিনা ও ফসলের ক্ষেতে গড়ে তোলা হয়েছে ৮টি ইটভাটিসহ উপজেলার কল্যাণপুর, ডাংমড়কা, রিফায়েতপুর, চকদৌলতপুর, ঝাউদিয়া, সংগ্রামপুর, বড়গাংদিয়া, বোয়ালিয়া, স্বরূপপুর ও প্রাগপুর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা ২৬টি ইটভাটিতে হাজার হাজার টন গাছের গুঁড়ির স্তুপ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এসব ইটভাটির চুল্লিগুলিতে ১২০ ফুট উচু স্থায়ী চিমনির পরিবর্তে কোন কোন ভাটায় মাত্র ২৫ থেকে ৩০ ফুট উঁচু ড্রাম চিমনি ব্যবহার করে পোড়ানো হচ্ছে বনাঞ্চলের সবুজ বৃক্ষ।

স্বরূপপুর, মানিকদিয়াড় ও সাদীপুর এলাকার ইটভাটিসহ সব ইটভাটিতে অবাধে কাঠ পোড়ানো হলেও প্রশাসন রয়েছে নীরব। উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন লতিফ মোড়ে প্রতিদিন প্রকাশ্যেই শত শত ট্রাকভর্তি জ্বালানি কাঠ ওজন দেওয়া হচ্ছে। আর এসব নিষিদ্ধ ইটভাটাতে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে সেইসব মাটি দিয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে ইট। প্রতিটি ইটভাটিতে এক রাউন্ড ইট পোড়াতে সময় লাগে ১২-১৫ দিন।

সে হিসেবে একটি মৌসুমে প্রায় ১০ থেকে ১২ রাউন্ড ইট পোড়ানো সম্ভব। এক রাউন্ড ইট পোড়াতে ১০ থেকে ১২ হাজার মন জ্বালানি কাঠের প্রয়োজন হয়। সে অনুযায়ী প্রতিটি ইটভাটাতে এক মৌসুমে (১) এক লাখ মণ জ্বালানি হিসেবে সবুজ বৃক্ষ বা কাঠ পোড়ানো হলে ২৬টি ইটভাটাতে ২৬ লক্ষ মনেরও বেশী কাঠ পুড়ানো হয়। এছাড়াও ইটভাটাগুলো সরকারি নিয়ম নীতি না মেনে যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মত উর্বর ফসলী জমি, স্কুলের আঙিনা, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আশপাশ ও জনবসতি এলাকায় গড়ে উঠায় ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় শিশুদের শ্বাসকষ্ট ও স্বাস্থ্যহানি ঘটছে, পরিবেশ হচ্ছে বিপর্যস্ত। সেই সাথে আবাদি জমি ক্রমাগত হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি জমির উর্বর শক্তি হারাচ্ছে।

এদিকে কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অবৈধ এসব ইটভাটাতে প্রশাসনের অভিযান চললেও দৌলতপুরে এর উল্টো চিত্র। দৌলতপুরের ইটভাটা মালিকদের দম্ভোক্তি রয়েছে তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রতিটি ইটভাটাতে কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে কাঠ জ্বালায় এমন কথা বিভিন্ন মহলে প্রচার রয়েছে।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার বলেছেন, গত নবেম্বর মাসে অবৈধ এসব ইটভাটাতে অভিযান চালানো হয়েছে। আগামী দু’এক দিনের মধ্যে আরো অভিযান চালানো হবে।

এদিকে বিগত বছরগুলোতে জ্বালানি কাঠ পোড়ানোর দায়ে অবৈধ ইটভাটা মালিকদের অর্থদণ্ডের পাশাপশি সতর্ক করা হলেও ভাটা মালিকরা তা না মেনে অবাধে সবুজ বৃক্ষ উজাড় করে কাঠ পুড়িয়ে যাচ্ছেন।