গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু

প্রকৃত আওয়ামী লীগের অপমৃত্যু ঘটিয়াছে

দিনাজপুর, ৫ আগস্ট। আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট কর্মী ও প্রভাবশালী সদস্য জনাব মইনুদ্দীন আহমদ বিশ্বাস আওয়ামী লীগের সহিত সব সম্পর্ক ছিন্ন করিয়া নবগঠিত পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগদান করিয়াছেন। সংবাদপত্রে প্রকাশ, এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। আওয়ামী লীগের বিগত ঢাকা কাউন্সিল অধিবেশনে আমি যোগদান করিয়াছিলাম। ওই কাউন্সিল অধিবেশনে সব অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ আমি সচক্ষে দেখিয়াছি। ওই কাউন্সিলে গৃহীত দেশ এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্তসমূহের প্রতিবাদে সমগ্র প্রদেশের সৎ এবং প্রকৃত গণতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ কর্মীগণ দলে দলে যখন আওয়ামী লীগ হইতে পদত্যাগ করিয়া চলিয়া যাইতেছিলেন সেই সময়ে আমি আওয়ামী লীগ হইতে আমার সমর্থন প্রত্যাহার করি নাই। কারণ ভাবিয়াছিলাম যে-আওয়ামী লীগের নেতৃবর্গবিশেষ করিয়া সোহরাওয়ার্দী-মুজিবর-আতাউর রহমান-তাহাদের অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপসমূহ এবং তাহাদের নেতৃত্বে যে আওয়ামী লীগের আদর্শচ্যুতি ঘটিতেছে। তাহা উপলব্ধি করিতে পারিবেন এবং আওয়ামী লীগকে পুনরায় সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ বিরোধী সংগ্রামী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা সম্ভব হইবে। কিন্তু আমার এই ধারণা যে কতদূর ভ্রান্তিপূর্ণ ছিল তাহা আমি বুঝিতে পারিলাম পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত গুণ্ডামী হইতে। পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত গুণ্ডামী আমি সচক্ষে দেখিয়াছি। দেখিলাম আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংগৃহীত কতিপয় ভাড়াটিয়া গুণ্ডা ও সোহরাওয়ার্দীর সমর্থক। আউয়াল উপচক্রটি ফ্যাসিস্ট কায়দায় ডাণ্ডাবাজি শুরু করিয়া জনগণের প্রতিরোধের নিকট টিকিতে পারিল না- সেই সময় সরকার কর্তৃক ঘোষিত হইল ১৪৪ ধারা। পাকিস্তানি শাসকবর্গের ঐতিহ্য রহিয়াছে জনগণের বাক স্বাধীনতাকে পিষিয়া মারিবার। কিন্তু গণতন্ত্রের বক্তৃতায় সমৃদ্ধ শেখ মুজিবর রহমান সাহেবের দলেরও যে এই অল্পদিনে বিগত সরকারি দলগুলো তথা মুসলিম লীগ সরকারের ঐতিহ্যের প্রতি আকৃষ্ট হইবেন তাহা ভাবিতে পারি নাই। যে আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হইয়া আওয়ামী লীগের জন্য স্বার্থত্যাগ করিয়াছিলাম। আজ এ কথা পরিষ্কার যে, আওয়ামী লীগের সে আদর্শকে কতিপয় ক্ষমতা লোভী স্বার্থসর্বস্ব নেতা হত্যা করিয়াছেন। যে আওয়ামী লীগের প্রতি দেশের সর্বশ্রেণীর জনসাধারণ বিগত কয়েক বৎসর ধরিয়া সমর্থন জোগাইয়া আসিয়াছিলেন সেই প্রকৃত আওয়ামী লীগের অপমৃত্যু ঘটিয়াছে। তাই আজ এই ভুয়া আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠানের সদস্য বা সমর্থক হিসাবে আত্ম পরিচয় দিয়া জনগণের ধিক্কার কুড়াইতে চাই না। কিন্তু বিশেষ কোন ব্যক্তি, উপদল বা রাজনৈতিক দলের মৃত্যু ঘটিলে বা কোন রাজনৈতিক দল জনগণের প্রতি প্রদত্ত ওয়াদাসমূহের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিলেও-দেশ ও জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের দুর্বার স্রোতকে ঠেকাইয়া রাখা যায় না। তাই পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে নতুন করিয়া গড়িয়া উঠিয়াছে পাকিস্তানের উভয় অংশের মজলুম জনগণের সাচ্চা গণতান্ত্রিক কর্মীদের নিয়া “পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি।” আমি বিশ্বাস করি এই নবগঠিত দল পাকিস্তানকে গড়িয়া তুলিবে একটি সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসাবে। তাই আমি আওয়ামী লীগের সহিত সব সম্পর্ক ছিন্ন করিয়া এই নবগঠিত পার্টিতে যোগদান করিলাম। ক্ষমতায় থাকার পর হইতে আওয়ামী লীগ দল যা কিছু অন্যায় বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছে সেই সবকিছুর জবাব হইতেছে নবগঠিত পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে আমার এই যোগদান। আমার বিশ্বাস আজও যেসব সহকর্মী ভ্রান্ত বিশ্বাসে আওয়ামী লীগে রহিয়া গিয়াছেন তাহারাও অচিরে আওয়ামী লীগের সহিত সম্পর্ক ছিন্ন করিয়া পল্টনের ময়দানে অনুষ্ঠিত বর্বর গুণ্ডামীর বলিষ্ঠ জবাব দিবেন এবং পাকিস্তানের জনগণের আশা বাস্তবে রূপ দিবার জন্য নবগঠিত পার্টিতে যোগদান করিবেন। পরিশেষে পূর্ব পাকিস্তানের সংগ্রামী ছাত্র সমাজের নিকট আমার আবেদন, ছাত্রসমাজ যেন অচিরে আউয়াল মোমিন তালুকদারের সব অপকীর্তির জবাবস্বরূপ বলিষ্ঠ ছাত্র ঐক্য গড়িয়া তুলিয়া ব্যক্তিস্বাধীনতা তথা গণতন্ত্রের পতাকাকে ঊর্ধ্বে তুলিয়া ধরুন।

সংবাদ : ১১ আগস্ট ১৯৫৭

কেএসপিকে লইয়া ক্ষয়িষ্ণু আওয়ামী লীগের শক্তি বৃদ্ধির সব চেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত

একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বলিয়া কৃষক শ্রমিক পালামেন্টারি পার্টির দাবি অবিলম্বে প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন আহ্বানের প্রস্তাব : মন্ত্রী লীগ মহলে নৈরাশ্যের কালছায়া

কৃষক শ্রমিক পার্টিকে কোয়ালিশনে সংযুক্ত করিয়া আওয়ামী লীগের শক্তি বৃদ্ধির প্রচেষ্টা গতকল্য (রবিবার) ব্যর্থতায় পর্যবসিত হইয়াছে। কে, এস, পি গতকল্যকার সভায় কোয়ালিশনের প্রস্তাবকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। উক্ত পার্টির সভায় গৃহীত সর্বসম্মত প্রস্তাবে বলা হইয়াছে যে, কে, এস, পি পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বিধায় প্রদেশে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোয়ালিশনের প্রশ্নই উঠতে পারে না। কে, এস, পির সঙ্গে কোয়ালিশন গঠনের চরম ব্যর্থতায় আওয়ামী লীগ মহলে নৈরাশ্যের কালো ছায়া নামিয়া আসিতেছে। ইহার ফলে আওয়ামী লীগ শক্তি বৃদ্ধির পরিবর্তে কোয়ালিশন সরকারের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সন্দিহান হইয়া পড়িয়াছে। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠিত হইবার ফলে আওয়ামী লীগের যে শক্তি হ্রাস পাইয়াছে তাহা পুনরুদ্ধারের জন্য কিছুদিন যাবত কে, এস, পিকে কোয়ালিশনে গ্রহণ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করিতেছিল। জনাব আতাউর রহমান সম্প্রতি চট্টগ্রামে কে, এস, পির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোয়ালিশনের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন। নিজের ক্ষযিষ্ণু পার্টির ম্রিয়মাণ সদস্যদের মনে শক্তি সঞ্চয়ের জন্য আওয়ামী নেতৃবৃন্দ স্বল্পকাল যাবত কোয়ালিশনের নিয়মিত প্রচারকার্য চালাইয়া আসিতেছিলেন শুধু তাহাই নহে। প্রধানমন্ত্রী জনাব সোহরাওয়ার্দীর ঢাকা আগমনও কোয়ালিশন গঠনের প্রস্তাবের মূলে। কারণ কেন্দ্রে ক্ষুদ্রতম দলের নেতা হিসাবে তাহার প্রধানমন্ত্রিত্বের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে রহিয়াছে। কে, এস, পি-র গতকল্যকার পার্লামেন্টারি পার্টির সভায় অপর এক প্রস্তাবে অবিলম্বে প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন আহ্বানের দাবি জানান হইয়াছে। গত সন্ধ্যায় জনাব আবু হোসেন সরকারের সভাপতিত্বে পার্টির সভা বসে। ৪৪ মিনিট সভার কার্য চলার পর উপরোক্ত দুটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। প্রকাশ ডা. খান সাহেবের মারফত কে এস পি কোয়ালিশনে যোগদানের জন্য যে সময় শর্তারোপ করিয়াছেন, তাহা আওয়ামী লীগ পার্টি গ্রহণযোগ্য মনে করে নাই। কিন্তু আওয়ামী লীগ কোয়ালিশনে কে, এস, পি-কে যোগদানের গতকল্য ৫টার সময় আওয়ামী লীগের মতামত কে, এস, পি-কে জানান। কিন্তু কে, এস, পি বর্তমান অবস্থায় অধিকাংশ সদস্যের মতামতের মূল্য দিয়া আওয়ামী লীগের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তাহারা কে, এস, পি-কে পরিষদে “একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল” দল বলিয়া দাবি করেন। সেই জন্যই প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রিত্বের পদ কে, এস, পি’র হওয়া উচিত বলিয়া তাঁহারা মনে করেন। আগামী পরিষদ অধিবেশনেই দলগুলির প্রকৃত শক্তির পরিচয় পাওয়া যাইবে। মুজিবরের প্রতিক্রিয়া। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান কে-এস পি কর্তৃক কোয়ালিশনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হইবার পর বলেন যে, আওয়ামী লীগ কখনো কে, এস, পির নিকট কোয়ালিশনের প্রস্তাব করেন নাই। কে এস পির সদস্যগণই কোয়ালিশনের কথা পাড়িয়া ছিলেন। তিনি আরও বলেন যে, কে, এস, পির অধিকাংশ সদস্যই দায়স্বরূপ-তাহারা সমপদ নহেন। তাহাদের কোন কোন নেতা বিনাশর্তে কোয়ালিশনের উদ্দেশ্যে জনাব সোহরাওয়ার্দীর নিকট করাচি পর্যন্ত গিয়াছিলেন। তাহার মতে আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র বা তোষামোদ করিয়া কাজ বাগানোতে বিশ্বাস করে না। আলোচনা অগ্রসর হইতেছে গতকল্য (রবিবার) পরিষদ কমিটি রুমে প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রী জনাব আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন পার্লামেন্টারি পার্টির এক সভা অনুষ্ঠিত হইয়াছে। চারি ঘণ্টাকালব্যাপী স্থানীয় উক্ত সভায় দলীয় নেতা আতাউর রহমানের প্রতি আস্থা জ্ঞাপন করা হয়। এবং কোয়ালিশন পার্লামেন্টারি পার্টির সভা অদ্য সকাল। পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়। অদ্যকার সভায়ও সোহরাওয়ার্দী যযাগদান করিবেন বলিয়া জানা গিয়াছে। গতকল্য আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন পার্লামেন্টারি পার্টির সভায় প্রধানমন্ত্রী জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রায় দুই ঘণ্টা ধরিয়া তাহার বিদেশ ভ্রমণ এবং কেন্দ্র ও প্রদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর বক্তৃতা করেন। সভা শেষে সাংবাদিকগণ আওয়ামী লীগ কে, এস, পি কোয়ালিশন সম্পর্কে প্রশ্ন করিলে জনাব সোহরাওয়ার্দী কোন জওয়াব দিতে অস্বীকার করেন। সাংবাদিকগণ এই সম্পর্কে তাহাকে চাপ দিলে তিনি বলেন যে, আলোচনা অগ্রসর হইতেছে। সভাপতির নেতৃত্বে কতিপয় ভাড়াটিয়া ছাত্র ও গুণ্ডা হৈ চৈ করিতে করিতে মঞ্চের। দিকে অগ্রসর হয়। যে কয়জন লোক মঞ্চের দিকে হাঙ্গামার জন্য অগ্রসর হয়, পুলিশের সংখ্যা ছিল তাহাদের অনেক বেশি। কিন্তু পুলিশ বাধাদানের পরিবর্তে গুণ্ডাদলকে আলগাইয়া রাখে যাহাতে শ্রোতাবৃন্দ ও সভার উদ্যোক্তাদের হাত হইতে তাহারা রক্ষা পায়। কিন্তু পুলিশের সাহায্য সত্ত্বেও গুণ্ডাদলের হামলা প্রতিরুদ্ধ হওয়া অবশেষে ময়দানের এক কোনায় দাঁড়াইয়া মঞ্চের দিকে তাহারা প্রস্তর নিক্ষেপ করিতে থাকে। জনাব অলি আহাদ এই সময়ে বক্তৃতা করিতেছিলেন। গুণ্ডাদের হামলা বারবার প্রতিরুদ্ধ হইতে দেখিয়া এস ডি ও রাস্তার ওপর মোটর গাড়িতে দাঁড়াইয়া মাইকযোগে কি যে ঘোষণা করিতে থাকেন। এমন সময় তিনি আসিয়া বলেন যে ১৪৪ ধারা জারি হইয়াছে, আপনারা সভার কাজ বন্ধ রাখুন। গুণ্ডামির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও মওলানা ভাসানির নেতৃত্বে আস্থা প্রকাশক কয়েকটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাশ করিবার পর সভার কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তখনও গুণ্ডার দল প্রস্তর নিক্ষেপ করিয়া চলে। আর অন্য দিকে পুলিশ নীরব দর্শকের ন্যায় দাঁড়াইয়া থাকে। পুলিশের হাবভাব দেখিয়া সবার মনে হইতেছিল তাহারা যেন গুণ্ডার দলকে পাল্টা আক্রমণের হাত হইতে রক্ষা করিবার জন্য তথায় রহিয়াছেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় ধরিয়া এইরূপ চলিতে থাকে। ইতোমধ্যে আমি, মিসেস সেলিনা বানু এবং আরও কয়েকজন প্রস্তরের আঘাতে আহত হই। এমন সময় পাবনার এক কুখ্যাত গুণ্ডা ও দুষ্কৃতকারী, যাহার বিরুদ্ধে এখনও অনেকগুলো ফৌজদারি মামলা ঝুলিয়া রহিয়াছে এবং পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির ভৃত্য বলিয়া কথিত জনৈক ব্যক্তিকে মাতালবস্থায় মঞ্চের দিকে ছাড়িয়া দেওয়া হয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হইতেছিল নেশার ঝেকে তাহাদের মাথায় খুন চাপিয়াছে। মঞ্চের ওপর উঠিয়া অতিথিবর্গ ও সভার উদ্যোক্তাগণকে আক্রমণ করাই ছিল তাহাদের উদ্দেশ্য। পরে জানা গেল তাহাদের কোমরে ছোরা লুকানো ছিল। মাতাল দুইজনকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ খুব ভালো করিয়া চেনেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাহারা তাহাদিগকে গ্রেফতার তো করেনই নাই উপরন্তু বারবার তাহাদিগকে রক্ষা করিয়া চলিতেছিলেন। জনাব মাহমুদ আলী উপসংহারে বলেন যে, জনাব সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে আওয়ামী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক শক্তি ধ্বংস করিবার প্রয়াস পাইতেছেন। তাহারা পাকিস্তানে ফ্যাসিজম চালু করিবার অপচেষ্টায় মাতিয়াছেন। কিন্তু জনাব সোহরাওয়ার্দীকে বলিয়া দিতে চাই যে, দেশে ফ্যাসিজমের উৎপত্তির দিন শেষ হইয়া গিয়াছে। দেশের জাগ্রত জনস্রোতের যুপকাষ্ঠে পাকিস্তানের ফ্যাসিস্ট শক্তির মৃত্যু আজ অবধারিত।

সংবাদ : ১২ আগস্ট ১৯৫৭

বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২০ , ৮ মাঘ ১৪২৬, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু

প্রকৃত আওয়ামী লীগের অপমৃত্যু ঘটিয়াছে

দিনাজপুর, ৫ আগস্ট। আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট কর্মী ও প্রভাবশালী সদস্য জনাব মইনুদ্দীন আহমদ বিশ্বাস আওয়ামী লীগের সহিত সব সম্পর্ক ছিন্ন করিয়া নবগঠিত পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগদান করিয়াছেন। সংবাদপত্রে প্রকাশ, এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। আওয়ামী লীগের বিগত ঢাকা কাউন্সিল অধিবেশনে আমি যোগদান করিয়াছিলাম। ওই কাউন্সিল অধিবেশনে সব অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ আমি সচক্ষে দেখিয়াছি। ওই কাউন্সিলে গৃহীত দেশ এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্তসমূহের প্রতিবাদে সমগ্র প্রদেশের সৎ এবং প্রকৃত গণতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ কর্মীগণ দলে দলে যখন আওয়ামী লীগ হইতে পদত্যাগ করিয়া চলিয়া যাইতেছিলেন সেই সময়ে আমি আওয়ামী লীগ হইতে আমার সমর্থন প্রত্যাহার করি নাই। কারণ ভাবিয়াছিলাম যে-আওয়ামী লীগের নেতৃবর্গবিশেষ করিয়া সোহরাওয়ার্দী-মুজিবর-আতাউর রহমান-তাহাদের অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপসমূহ এবং তাহাদের নেতৃত্বে যে আওয়ামী লীগের আদর্শচ্যুতি ঘটিতেছে। তাহা উপলব্ধি করিতে পারিবেন এবং আওয়ামী লীগকে পুনরায় সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ বিরোধী সংগ্রামী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা সম্ভব হইবে। কিন্তু আমার এই ধারণা যে কতদূর ভ্রান্তিপূর্ণ ছিল তাহা আমি বুঝিতে পারিলাম পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত গুণ্ডামী হইতে। পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত গুণ্ডামী আমি সচক্ষে দেখিয়াছি। দেখিলাম আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংগৃহীত কতিপয় ভাড়াটিয়া গুণ্ডা ও সোহরাওয়ার্দীর সমর্থক। আউয়াল উপচক্রটি ফ্যাসিস্ট কায়দায় ডাণ্ডাবাজি শুরু করিয়া জনগণের প্রতিরোধের নিকট টিকিতে পারিল না- সেই সময় সরকার কর্তৃক ঘোষিত হইল ১৪৪ ধারা। পাকিস্তানি শাসকবর্গের ঐতিহ্য রহিয়াছে জনগণের বাক স্বাধীনতাকে পিষিয়া মারিবার। কিন্তু গণতন্ত্রের বক্তৃতায় সমৃদ্ধ শেখ মুজিবর রহমান সাহেবের দলেরও যে এই অল্পদিনে বিগত সরকারি দলগুলো তথা মুসলিম লীগ সরকারের ঐতিহ্যের প্রতি আকৃষ্ট হইবেন তাহা ভাবিতে পারি নাই। যে আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হইয়া আওয়ামী লীগের জন্য স্বার্থত্যাগ করিয়াছিলাম। আজ এ কথা পরিষ্কার যে, আওয়ামী লীগের সে আদর্শকে কতিপয় ক্ষমতা লোভী স্বার্থসর্বস্ব নেতা হত্যা করিয়াছেন। যে আওয়ামী লীগের প্রতি দেশের সর্বশ্রেণীর জনসাধারণ বিগত কয়েক বৎসর ধরিয়া সমর্থন জোগাইয়া আসিয়াছিলেন সেই প্রকৃত আওয়ামী লীগের অপমৃত্যু ঘটিয়াছে। তাই আজ এই ভুয়া আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠানের সদস্য বা সমর্থক হিসাবে আত্ম পরিচয় দিয়া জনগণের ধিক্কার কুড়াইতে চাই না। কিন্তু বিশেষ কোন ব্যক্তি, উপদল বা রাজনৈতিক দলের মৃত্যু ঘটিলে বা কোন রাজনৈতিক দল জনগণের প্রতি প্রদত্ত ওয়াদাসমূহের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিলেও-দেশ ও জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের দুর্বার স্রোতকে ঠেকাইয়া রাখা যায় না। তাই পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে নতুন করিয়া গড়িয়া উঠিয়াছে পাকিস্তানের উভয় অংশের মজলুম জনগণের সাচ্চা গণতান্ত্রিক কর্মীদের নিয়া “পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি।” আমি বিশ্বাস করি এই নবগঠিত দল পাকিস্তানকে গড়িয়া তুলিবে একটি সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসাবে। তাই আমি আওয়ামী লীগের সহিত সব সম্পর্ক ছিন্ন করিয়া এই নবগঠিত পার্টিতে যোগদান করিলাম। ক্ষমতায় থাকার পর হইতে আওয়ামী লীগ দল যা কিছু অন্যায় বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছে সেই সবকিছুর জবাব হইতেছে নবগঠিত পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে আমার এই যোগদান। আমার বিশ্বাস আজও যেসব সহকর্মী ভ্রান্ত বিশ্বাসে আওয়ামী লীগে রহিয়া গিয়াছেন তাহারাও অচিরে আওয়ামী লীগের সহিত সম্পর্ক ছিন্ন করিয়া পল্টনের ময়দানে অনুষ্ঠিত বর্বর গুণ্ডামীর বলিষ্ঠ জবাব দিবেন এবং পাকিস্তানের জনগণের আশা বাস্তবে রূপ দিবার জন্য নবগঠিত পার্টিতে যোগদান করিবেন। পরিশেষে পূর্ব পাকিস্তানের সংগ্রামী ছাত্র সমাজের নিকট আমার আবেদন, ছাত্রসমাজ যেন অচিরে আউয়াল মোমিন তালুকদারের সব অপকীর্তির জবাবস্বরূপ বলিষ্ঠ ছাত্র ঐক্য গড়িয়া তুলিয়া ব্যক্তিস্বাধীনতা তথা গণতন্ত্রের পতাকাকে ঊর্ধ্বে তুলিয়া ধরুন।

সংবাদ : ১১ আগস্ট ১৯৫৭

কেএসপিকে লইয়া ক্ষয়িষ্ণু আওয়ামী লীগের শক্তি বৃদ্ধির সব চেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত

একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বলিয়া কৃষক শ্রমিক পালামেন্টারি পার্টির দাবি অবিলম্বে প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন আহ্বানের প্রস্তাব : মন্ত্রী লীগ মহলে নৈরাশ্যের কালছায়া

কৃষক শ্রমিক পার্টিকে কোয়ালিশনে সংযুক্ত করিয়া আওয়ামী লীগের শক্তি বৃদ্ধির প্রচেষ্টা গতকল্য (রবিবার) ব্যর্থতায় পর্যবসিত হইয়াছে। কে, এস, পি গতকল্যকার সভায় কোয়ালিশনের প্রস্তাবকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন। উক্ত পার্টির সভায় গৃহীত সর্বসম্মত প্রস্তাবে বলা হইয়াছে যে, কে, এস, পি পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বিধায় প্রদেশে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোয়ালিশনের প্রশ্নই উঠতে পারে না। কে, এস, পির সঙ্গে কোয়ালিশন গঠনের চরম ব্যর্থতায় আওয়ামী লীগ মহলে নৈরাশ্যের কালো ছায়া নামিয়া আসিতেছে। ইহার ফলে আওয়ামী লীগ শক্তি বৃদ্ধির পরিবর্তে কোয়ালিশন সরকারের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সন্দিহান হইয়া পড়িয়াছে। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠিত হইবার ফলে আওয়ামী লীগের যে শক্তি হ্রাস পাইয়াছে তাহা পুনরুদ্ধারের জন্য কিছুদিন যাবত কে, এস, পিকে কোয়ালিশনে গ্রহণ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করিতেছিল। জনাব আতাউর রহমান সম্প্রতি চট্টগ্রামে কে, এস, পির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোয়ালিশনের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন। নিজের ক্ষযিষ্ণু পার্টির ম্রিয়মাণ সদস্যদের মনে শক্তি সঞ্চয়ের জন্য আওয়ামী নেতৃবৃন্দ স্বল্পকাল যাবত কোয়ালিশনের নিয়মিত প্রচারকার্য চালাইয়া আসিতেছিলেন শুধু তাহাই নহে। প্রধানমন্ত্রী জনাব সোহরাওয়ার্দীর ঢাকা আগমনও কোয়ালিশন গঠনের প্রস্তাবের মূলে। কারণ কেন্দ্রে ক্ষুদ্রতম দলের নেতা হিসাবে তাহার প্রধানমন্ত্রিত্বের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে রহিয়াছে। কে, এস, পি-র গতকল্যকার পার্লামেন্টারি পার্টির সভায় অপর এক প্রস্তাবে অবিলম্বে প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন আহ্বানের দাবি জানান হইয়াছে। গত সন্ধ্যায় জনাব আবু হোসেন সরকারের সভাপতিত্বে পার্টির সভা বসে। ৪৪ মিনিট সভার কার্য চলার পর উপরোক্ত দুটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। প্রকাশ ডা. খান সাহেবের মারফত কে এস পি কোয়ালিশনে যোগদানের জন্য যে সময় শর্তারোপ করিয়াছেন, তাহা আওয়ামী লীগ পার্টি গ্রহণযোগ্য মনে করে নাই। কিন্তু আওয়ামী লীগ কোয়ালিশনে কে, এস, পি-কে যোগদানের গতকল্য ৫টার সময় আওয়ামী লীগের মতামত কে, এস, পি-কে জানান। কিন্তু কে, এস, পি বর্তমান অবস্থায় অধিকাংশ সদস্যের মতামতের মূল্য দিয়া আওয়ামী লীগের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তাহারা কে, এস, পি-কে পরিষদে “একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল” দল বলিয়া দাবি করেন। সেই জন্যই প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রিত্বের পদ কে, এস, পি’র হওয়া উচিত বলিয়া তাঁহারা মনে করেন। আগামী পরিষদ অধিবেশনেই দলগুলির প্রকৃত শক্তির পরিচয় পাওয়া যাইবে। মুজিবরের প্রতিক্রিয়া। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান কে-এস পি কর্তৃক কোয়ালিশনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হইবার পর বলেন যে, আওয়ামী লীগ কখনো কে, এস, পির নিকট কোয়ালিশনের প্রস্তাব করেন নাই। কে এস পির সদস্যগণই কোয়ালিশনের কথা পাড়িয়া ছিলেন। তিনি আরও বলেন যে, কে, এস, পির অধিকাংশ সদস্যই দায়স্বরূপ-তাহারা সমপদ নহেন। তাহাদের কোন কোন নেতা বিনাশর্তে কোয়ালিশনের উদ্দেশ্যে জনাব সোহরাওয়ার্দীর নিকট করাচি পর্যন্ত গিয়াছিলেন। তাহার মতে আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র বা তোষামোদ করিয়া কাজ বাগানোতে বিশ্বাস করে না। আলোচনা অগ্রসর হইতেছে গতকল্য (রবিবার) পরিষদ কমিটি রুমে প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রী জনাব আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন পার্লামেন্টারি পার্টির এক সভা অনুষ্ঠিত হইয়াছে। চারি ঘণ্টাকালব্যাপী স্থানীয় উক্ত সভায় দলীয় নেতা আতাউর রহমানের প্রতি আস্থা জ্ঞাপন করা হয়। এবং কোয়ালিশন পার্লামেন্টারি পার্টির সভা অদ্য সকাল। পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়। অদ্যকার সভায়ও সোহরাওয়ার্দী যযাগদান করিবেন বলিয়া জানা গিয়াছে। গতকল্য আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন পার্লামেন্টারি পার্টির সভায় প্রধানমন্ত্রী জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রায় দুই ঘণ্টা ধরিয়া তাহার বিদেশ ভ্রমণ এবং কেন্দ্র ও প্রদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর বক্তৃতা করেন। সভা শেষে সাংবাদিকগণ আওয়ামী লীগ কে, এস, পি কোয়ালিশন সম্পর্কে প্রশ্ন করিলে জনাব সোহরাওয়ার্দী কোন জওয়াব দিতে অস্বীকার করেন। সাংবাদিকগণ এই সম্পর্কে তাহাকে চাপ দিলে তিনি বলেন যে, আলোচনা অগ্রসর হইতেছে। সভাপতির নেতৃত্বে কতিপয় ভাড়াটিয়া ছাত্র ও গুণ্ডা হৈ চৈ করিতে করিতে মঞ্চের। দিকে অগ্রসর হয়। যে কয়জন লোক মঞ্চের দিকে হাঙ্গামার জন্য অগ্রসর হয়, পুলিশের সংখ্যা ছিল তাহাদের অনেক বেশি। কিন্তু পুলিশ বাধাদানের পরিবর্তে গুণ্ডাদলকে আলগাইয়া রাখে যাহাতে শ্রোতাবৃন্দ ও সভার উদ্যোক্তাদের হাত হইতে তাহারা রক্ষা পায়। কিন্তু পুলিশের সাহায্য সত্ত্বেও গুণ্ডাদলের হামলা প্রতিরুদ্ধ হওয়া অবশেষে ময়দানের এক কোনায় দাঁড়াইয়া মঞ্চের দিকে তাহারা প্রস্তর নিক্ষেপ করিতে থাকে। জনাব অলি আহাদ এই সময়ে বক্তৃতা করিতেছিলেন। গুণ্ডাদের হামলা বারবার প্রতিরুদ্ধ হইতে দেখিয়া এস ডি ও রাস্তার ওপর মোটর গাড়িতে দাঁড়াইয়া মাইকযোগে কি যে ঘোষণা করিতে থাকেন। এমন সময় তিনি আসিয়া বলেন যে ১৪৪ ধারা জারি হইয়াছে, আপনারা সভার কাজ বন্ধ রাখুন। গুণ্ডামির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও মওলানা ভাসানির নেতৃত্বে আস্থা প্রকাশক কয়েকটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাশ করিবার পর সভার কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তখনও গুণ্ডার দল প্রস্তর নিক্ষেপ করিয়া চলে। আর অন্য দিকে পুলিশ নীরব দর্শকের ন্যায় দাঁড়াইয়া থাকে। পুলিশের হাবভাব দেখিয়া সবার মনে হইতেছিল তাহারা যেন গুণ্ডার দলকে পাল্টা আক্রমণের হাত হইতে রক্ষা করিবার জন্য তথায় রহিয়াছেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় ধরিয়া এইরূপ চলিতে থাকে। ইতোমধ্যে আমি, মিসেস সেলিনা বানু এবং আরও কয়েকজন প্রস্তরের আঘাতে আহত হই। এমন সময় পাবনার এক কুখ্যাত গুণ্ডা ও দুষ্কৃতকারী, যাহার বিরুদ্ধে এখনও অনেকগুলো ফৌজদারি মামলা ঝুলিয়া রহিয়াছে এবং পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির ভৃত্য বলিয়া কথিত জনৈক ব্যক্তিকে মাতালবস্থায় মঞ্চের দিকে ছাড়িয়া দেওয়া হয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হইতেছিল নেশার ঝেকে তাহাদের মাথায় খুন চাপিয়াছে। মঞ্চের ওপর উঠিয়া অতিথিবর্গ ও সভার উদ্যোক্তাগণকে আক্রমণ করাই ছিল তাহাদের উদ্দেশ্য। পরে জানা গেল তাহাদের কোমরে ছোরা লুকানো ছিল। মাতাল দুইজনকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ খুব ভালো করিয়া চেনেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাহারা তাহাদিগকে গ্রেফতার তো করেনই নাই উপরন্তু বারবার তাহাদিগকে রক্ষা করিয়া চলিতেছিলেন। জনাব মাহমুদ আলী উপসংহারে বলেন যে, জনাব সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে আওয়ামী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক শক্তি ধ্বংস করিবার প্রয়াস পাইতেছেন। তাহারা পাকিস্তানে ফ্যাসিজম চালু করিবার অপচেষ্টায় মাতিয়াছেন। কিন্তু জনাব সোহরাওয়ার্দীকে বলিয়া দিতে চাই যে, দেশে ফ্যাসিজমের উৎপত্তির দিন শেষ হইয়া গিয়াছে। দেশের জাগ্রত জনস্রোতের যুপকাষ্ঠে পাকিস্তানের ফ্যাসিস্ট শক্তির মৃত্যু আজ অবধারিত।

সংবাদ : ১২ আগস্ট ১৯৫৭