মুজিব শতবর্ষ

মুজিব শাসন আমল : ১৯৭২

১৬ জানুয়ারি

সোনার বাংলায় হাসি ফোটাতে পারলেই শোকের অবসান ঘটবে- তাজউদ্দীন আহমদ

শহীদ আলাউদ্দীন পার্কে স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম শহীদ আলাউদ্দীন স্মরণে শোক সভায় বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বলেন যে, বাংলার দিকে দিকে আজ যে শোকের ছায়া, এই শোকের ছায়ার অবসান হবে সেইদিনই, যেদিন বাংলাদেশের জনগণের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও বাঁচার নিশ্চয়তা বিধান হবে এবং সোনার বাংলায় আবার হাসি ফুটে উঠবে। তাই, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই সোনার বাংলায় আবার হাসি ফুটিয়ে তোলার জন্য বাংলাদেশের জনগণকে স্বাধীনতা সংগ্রামের মতোই এখনও সৈনিকের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করে যেতে হবে। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোন ব্যক্তি বিশেষের সুখের জন্য আসে নাই। বাংলাদেশে প্রত্যেকটি কৃষক, শ্রমিক, মজুর, তাঁতি, কামার, কুমার সমানভাবে এ স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করবে। তিনি বলেন যে, আমাদের সর্বাগ্রে ৩ কোটি গৃহহারা ও ১ কোটি উদ্বাস্তুকে পুনর্বাসিত করতে হবে। বাংলাদেশের পুনর্গঠন এবং সর্বহারা ও উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজন দেশের জনগণের ঐক্য ও দেশে আইনশৃঙ্খলা অক্ষুণ্ন রাখা। তাই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বর্তমানে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সক্রিয় সাহায্য ও সহযোগিতা করতে হবে। বাংলার প্রত্যেকটি মানুষকে জাতি গঠনের কাজে এগিয়ে আসতে হবে। এই শোকসভায় সভাপতিত্ব করেন গাজী গোলাম মোস্তফা এমপিএ। সভায় বক্তৃতা করেন জনাব মিজানুর রহমান চৌধুরী এমএনএ, সমাজসেবা সম্পাদক জনাব ওবায়দুর রহমান এম.এন.এ, জয় বাংলার এডিটর ইনচার্জ জনাব মোহম্মদ উল্লাহ চৌধুরী, মাহফুজুল হক, জনাব ইকবাল।

মুক্তি সংগ্রামে পুলিশবাহিনীর কথাও স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে

২৫ মার্চ কালো রাত্রিতে বর্বর ইয়াহিয়া বাহিনীর নৃশংস হামলার কেন্দ্রস্থল রাজারবাগ পুলিশ লাইনে রোববার ভাবগম্ভীর পরিবেশে এক শোক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে পুলিশ বিভাগের কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন। শোক সমাবেশে ভাষণ দেন পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল জনাব আবদুল খালেক। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশ সরকার স্বাধীনতা সংগ্রামে পুলিশ বাহিনীর আত্মোৎসর্গের উপযুক্ত মর্যাদা। স্বীকৃতি প্রদান করবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পুলিশের পরিবার পরিজনদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে। জাতীয় শোক দিবস পালন উপলক্ষে রোববার এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। জনাব খালেক আরো বলেন যে, স্বাধীনতা সংগ্রামে পুলিশবাহিনীর আত্মদান ও অবদানের কথা দেশে স্বর্ণাক্ষরে অঙ্কিত থাকবে। ইতিপূর্বে, শহীদানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে এক বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

পাকিস্তান-ভারত সংঘর্ষে মার্কিন একমুখো নীতি

নিউইয়র্ক। পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ সম্পর্কে গত ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বিস্তারিত বিবরণ আজ ‘নিউইয়র্ক টাইম’স প্রকাশিত হয়। জ্যাক এন্ডারসন উক্ত বিবরণী পেশ করেন। তিনি গত ৩ ডিসেম্বর বলেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তান-ভারত সংঘর্ষ সম্পর্কিত নীতির সত্যতা প্রকাশ করে নাই। মি. এন্ডারসনের বিবরণীতে প্রকাশ। প্রেসিডেন্ট নিক্সনের জাতীয় নিরপত্তা সংক্রান্ত সহকারী মি. কিসিঞ্জার এইরূপ আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, ভারত পাকিস্তানকে খণ্ড-বিখণ্ড করার উদ্দেশ্যে তার সেনা ও বিমানবাহিনী ধ্বংস করার জন্য বেপরোয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পররাষ্ট্র দফতরের মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কিত আন্ডার সেক্রেটারি জোশেফ সিসকো বলেছিলেন যে, মি. কিসিঞ্জারের ধারণা ভুল বলে তিনি মনে করেন। কিসিঞ্জার বলেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র জর্দানের মাধ্যমে পাকিস্তানের এফ-১০৪ জেট ফাইটার সরবরাহ করতে পারে। প্রতিরক্ষা দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি ডেভিড প্যাকার্ড বলেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রকে পাক-ভারত সমস্যায় জড়িত হওয়ার পূর্বে তার কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। মি. প্যাকার্ড বলেছিলেন, ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে আমাদের কোনো মতে জড়িত হওয়া উচিত নয় এবং এটার বাইরে থাকার পন্থা উদ্ভাবন করা উচিত। কিসিঞ্জার বলেছিলেন, আমরা পাকিস্তানের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ না করলে বর্তমান সমস্যা উদ্ভব হতো না। মি. প্যাকার্ডও তার সঙ্গে ঐক্যমত প্রকাশ করেন। মি. প্যাকার্ড ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের ৩ দিন পর পদত্যাগ করেন, কিন্তু তাকে কিছুদিনের জন্য কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়, তবে তার সঙ্গে পাকিস্তানের প্রতি মার্কিন সমর্থনের কোনো সংশ্রব নাই বলে ‘টাইমস’-এর রিপোর্টে বলা হয়। উক্ত বৈঠকে সিআইএ’র ডিরেক্টর রিচার্ড হেলো জানান, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে এ মর্মে হুঁশিয়ারি করেছে যে, লাদাখ সীমান্তে চীনা হামলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে অনুরূপ ক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়নও যোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানান হয়। তিনি কিসিঞ্জারের বিবৃতি সমর্থন করে বলেন, মিসেস গান্ধী ভারতের স্বার্থে কাশ্মীরের দক্ষিণ সীমান্ত পরিবর্তন এবং পাকিস্তানের সেনা। ও বিমানবাহিনী ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেছেন। পত্রিকায় বলেন, প্রেসিডেন্ট নিক্সন গত ৩ জানুয়ারি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, রাশিয়ার মধ্যস্থতার ভূমিকায় তিনি স্পষ্ট হয়েছেন এবং মিসেস গান্ধীর ওপর যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ প্রয়োগ করলে তার মানে এই হতো যে, পশ্চিম পাকিস্তান দখল হয়ে যেত।

সূত্র : দিনলিপি, বঙ্গবন্ধুর শাসন সময়, ১৯৭২

বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২০ , ৯ মাঘ ১৪২৬, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

মুজিব শতবর্ষ

মুজিব শাসন আমল : ১৯৭২

image

১৬ জানুয়ারি

সোনার বাংলায় হাসি ফোটাতে পারলেই শোকের অবসান ঘটবে- তাজউদ্দীন আহমদ

শহীদ আলাউদ্দীন পার্কে স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম শহীদ আলাউদ্দীন স্মরণে শোক সভায় বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বলেন যে, বাংলার দিকে দিকে আজ যে শোকের ছায়া, এই শোকের ছায়ার অবসান হবে সেইদিনই, যেদিন বাংলাদেশের জনগণের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও বাঁচার নিশ্চয়তা বিধান হবে এবং সোনার বাংলায় আবার হাসি ফুটে উঠবে। তাই, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই সোনার বাংলায় আবার হাসি ফুটিয়ে তোলার জন্য বাংলাদেশের জনগণকে স্বাধীনতা সংগ্রামের মতোই এখনও সৈনিকের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করে যেতে হবে। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোন ব্যক্তি বিশেষের সুখের জন্য আসে নাই। বাংলাদেশে প্রত্যেকটি কৃষক, শ্রমিক, মজুর, তাঁতি, কামার, কুমার সমানভাবে এ স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করবে। তিনি বলেন যে, আমাদের সর্বাগ্রে ৩ কোটি গৃহহারা ও ১ কোটি উদ্বাস্তুকে পুনর্বাসিত করতে হবে। বাংলাদেশের পুনর্গঠন এবং সর্বহারা ও উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজন দেশের জনগণের ঐক্য ও দেশে আইনশৃঙ্খলা অক্ষুণ্ন রাখা। তাই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বর্তমানে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সক্রিয় সাহায্য ও সহযোগিতা করতে হবে। বাংলার প্রত্যেকটি মানুষকে জাতি গঠনের কাজে এগিয়ে আসতে হবে। এই শোকসভায় সভাপতিত্ব করেন গাজী গোলাম মোস্তফা এমপিএ। সভায় বক্তৃতা করেন জনাব মিজানুর রহমান চৌধুরী এমএনএ, সমাজসেবা সম্পাদক জনাব ওবায়দুর রহমান এম.এন.এ, জয় বাংলার এডিটর ইনচার্জ জনাব মোহম্মদ উল্লাহ চৌধুরী, মাহফুজুল হক, জনাব ইকবাল।

মুক্তি সংগ্রামে পুলিশবাহিনীর কথাও স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে

২৫ মার্চ কালো রাত্রিতে বর্বর ইয়াহিয়া বাহিনীর নৃশংস হামলার কেন্দ্রস্থল রাজারবাগ পুলিশ লাইনে রোববার ভাবগম্ভীর পরিবেশে এক শোক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে পুলিশ বিভাগের কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন। শোক সমাবেশে ভাষণ দেন পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল জনাব আবদুল খালেক। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশ সরকার স্বাধীনতা সংগ্রামে পুলিশ বাহিনীর আত্মোৎসর্গের উপযুক্ত মর্যাদা। স্বীকৃতি প্রদান করবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পুলিশের পরিবার পরিজনদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে। জাতীয় শোক দিবস পালন উপলক্ষে রোববার এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। জনাব খালেক আরো বলেন যে, স্বাধীনতা সংগ্রামে পুলিশবাহিনীর আত্মদান ও অবদানের কথা দেশে স্বর্ণাক্ষরে অঙ্কিত থাকবে। ইতিপূর্বে, শহীদানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে এক বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

পাকিস্তান-ভারত সংঘর্ষে মার্কিন একমুখো নীতি

নিউইয়র্ক। পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ সম্পর্কে গত ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বিস্তারিত বিবরণ আজ ‘নিউইয়র্ক টাইম’স প্রকাশিত হয়। জ্যাক এন্ডারসন উক্ত বিবরণী পেশ করেন। তিনি গত ৩ ডিসেম্বর বলেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তান-ভারত সংঘর্ষ সম্পর্কিত নীতির সত্যতা প্রকাশ করে নাই। মি. এন্ডারসনের বিবরণীতে প্রকাশ। প্রেসিডেন্ট নিক্সনের জাতীয় নিরপত্তা সংক্রান্ত সহকারী মি. কিসিঞ্জার এইরূপ আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, ভারত পাকিস্তানকে খণ্ড-বিখণ্ড করার উদ্দেশ্যে তার সেনা ও বিমানবাহিনী ধ্বংস করার জন্য বেপরোয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পররাষ্ট্র দফতরের মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কিত আন্ডার সেক্রেটারি জোশেফ সিসকো বলেছিলেন যে, মি. কিসিঞ্জারের ধারণা ভুল বলে তিনি মনে করেন। কিসিঞ্জার বলেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র জর্দানের মাধ্যমে পাকিস্তানের এফ-১০৪ জেট ফাইটার সরবরাহ করতে পারে। প্রতিরক্ষা দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি ডেভিড প্যাকার্ড বলেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রকে পাক-ভারত সমস্যায় জড়িত হওয়ার পূর্বে তার কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। মি. প্যাকার্ড বলেছিলেন, ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে আমাদের কোনো মতে জড়িত হওয়া উচিত নয় এবং এটার বাইরে থাকার পন্থা উদ্ভাবন করা উচিত। কিসিঞ্জার বলেছিলেন, আমরা পাকিস্তানের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ না করলে বর্তমান সমস্যা উদ্ভব হতো না। মি. প্যাকার্ডও তার সঙ্গে ঐক্যমত প্রকাশ করেন। মি. প্যাকার্ড ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের ৩ দিন পর পদত্যাগ করেন, কিন্তু তাকে কিছুদিনের জন্য কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়, তবে তার সঙ্গে পাকিস্তানের প্রতি মার্কিন সমর্থনের কোনো সংশ্রব নাই বলে ‘টাইমস’-এর রিপোর্টে বলা হয়। উক্ত বৈঠকে সিআইএ’র ডিরেক্টর রিচার্ড হেলো জানান, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে এ মর্মে হুঁশিয়ারি করেছে যে, লাদাখ সীমান্তে চীনা হামলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে অনুরূপ ক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়নও যোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানান হয়। তিনি কিসিঞ্জারের বিবৃতি সমর্থন করে বলেন, মিসেস গান্ধী ভারতের স্বার্থে কাশ্মীরের দক্ষিণ সীমান্ত পরিবর্তন এবং পাকিস্তানের সেনা। ও বিমানবাহিনী ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেছেন। পত্রিকায় বলেন, প্রেসিডেন্ট নিক্সন গত ৩ জানুয়ারি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, রাশিয়ার মধ্যস্থতার ভূমিকায় তিনি স্পষ্ট হয়েছেন এবং মিসেস গান্ধীর ওপর যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ প্রয়োগ করলে তার মানে এই হতো যে, পশ্চিম পাকিস্তান দখল হয়ে যেত।

সূত্র : দিনলিপি, বঙ্গবন্ধুর শাসন সময়, ১৯৭২