শেষ ওভার পর্যন্ত লড়ে হারল বাংলাদেশ

এক যুগ পর পাকিস্তান সফরে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ২০০৮ সালের শেষ সফরে দলে থাকা তামিম ইকবাল এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ছাড়া অন্য কারোরই কন্ডিশন সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। দলে যেমন ছিলেন না মুশফিকুর রহিমের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, তেমনি পাঁচ কোচিং স্টাফকেও রাখা হয় সফরের বাইরে। তার ওপরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার কড়াকড়ি। মাঠে দর্শকও নেই। সব মিলিয়ে অনেকটা দমবন্ধ পরিবেশই ছিল লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে। চলতি সফরের প্রথম পর্যায়ে তিন ম্যাচ টি-২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করে ১৪১ রান করা বাংলাদেশ দল পাঁচ উইকেটের পরাজয় বরণ করলেও লড়াই করেছে একেবারে শেষ ওভার পর্যন্ত। টাইগারদের হারাতে পাকিস্তান দলকে খেলতে হয়েছে ১৯.৩ ওভার। পাকিস্তানের ইনিংসে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ফিল্ডাররা বেশ কয়েকবার ক্যাচ না ছাড়লে কি হতো বলা মুস্কিল। তারপরও একেবারেই অপরিচিত কন্ডিশনে এ রকম লড়াই নিঃসন্দেহে প্রেরণার উৎস হবে টাইগারদের। সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে আজ একই ভেন্যুতে দ্বিতীয় ম্যাচে কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশকে দেখার আশা করছেন ভক্তরা।

ইনিংস উদ্বোধনে তামিমের সঙ্গী কে হবেন, তা নিয়ে পরীক্ষা চালাতে গিয়ে নাঈমকে বাছাই করাটা সম্ভবত প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অতিমাত্রায় ডট বল খেলার একটা প্রবণতা এমনিতেই আছে নাঈমের মধ্যে। আর তামিম ছিলেন খোলসের মধ্যে। দুই ওপেনারের কখনও ওডিআই এবং কখনও টেস্ট স্টাইলে ব্যাটিংয়ের কারণে শুরু থেকেই মন্থর ছিল টাইগারদের রানের চাকা।

উদ্বোধনী জুটিতে ৭১ রান আসলেও ততক্ষণে খরচ হয়ে যায় ১১ ওভার। পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে ওঠে মাত্র ৩৫ রান, দশ ওভার শেষে যা কি না কেবল ৬২ রান। টি-২০ ম্যাচের ইনিংসের অর্ধেক পথ ওভারপ্রতি ছয়ের সামান্য বেশি রান নিয়ে আসলে স্কোর বড় করা খুব সহজ হয় না। রানের চাকায় গতি আনার তাগিদে একাদশ ওভারের শেষ বলটাকে ডিপ স্কোয়ার লেগে ঠেলে দুই রান নিতে গিয়ে রানআউট হয়ে অনেকটাই আত্মহত্যা করেন তামিম। থামেন ৩৪ বলে ৩৯ রানে। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা লিটন দাসের ওপরও চেপে বসে রানআউটের ভুত। ১৩ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১২ রান করা লিটন কাটা পড়েন তামিমের মতোই। শাদাব খানের করা সেই ওভারে লিটন ফেরার আগে নাঈমের সঙ্গে ২১ রানের জুটি গড়েন। লিটন ফেরার পরপরই শাদাব খানকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ইফতেখারের তালুবন্দী হয়ে ফেরেন ৪১ বলে ৩ চার ২ ছক্কায় বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করা নাঈম। ৯৮ রানে তৃতীয় উইকেট হারানো টাইগারদের হয়ে বেশিক্ষণ ক্রিজে টেকেননি বিপিএলে ভালো করা আফিফ হোসেন। হারিস রউফের বলে স্ট্যাম্প খোয়ান মাত্র ৯ রানে। ১৯তম ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদিকে হাঁকাতে গিয়ে বোল্ড হন ৫ বলে ১ বাউন্ডারিতে ৭ রান করা সৌম্য সরকার। বাংলাদেশ থামে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৪১ রানে।

টি-২০তে দেড়শ’র কম পুজি নিয়ে অপরিচিত কন্ডিশনে জয়ের আশা করা যায়না। তারপরও বাংলাদেশের বোলাররা শুরুতে সাধ্যমত চেষ্টা করেছিলেন।

চ্যালেঞ্জিং স্কোর ছুড়ে না দিতে পারার আফসোস নিয়ে বোলিং করতে নামা বাংলাদেশ শুরুটা খারাপ করেনি। স্কোরবোর্ডে রান জমা হওয়ার আগেই বাবর আজমকে উইকেটকিপারের গ্লাভসে বল জমা দিতে বাধ্য করেন শফিউল ইসলাম।

ধীরগতির পিচে শুরুর ধাক্কা কাটাতে পারছিল না সিরিজের স্বাগতিক দল। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের বিনা উইকেটে তোলা ৩৫ রানের বিপরীতে পাকিস্তানের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ৩৬ রান। বাবর আজমের পর ফেরানো গিয়েছিল অভিজ্ঞ মোহাম্মদ হাফিজকেও (১৭)। দ্বাদশ ওভার শেষেও পাকিস্তানের রান রেট ছিল সাতের নিচে। ওই ওভারের পঞ্চম বলে ওপেনার আহসান আলেক (৩৬) বদলি ফিল্ডার নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন আমিনুল। এক কথায় তখনও ম্যাচটা বাংলাদেশের হাত থেকে ফস্কে যায়নি। তখন পাকিস্তানের দরকার ছিল ৪৮ বলে ৬০ রান। ধীরে ধীরে এই চাপ সরিয়ে দলকে সিরিজে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নেন অভিজ্ঞ শোয়েব মালিক। দিন কয়েক আগেই বিপিএল খেলে যাওয়া পাকিস্তানের এই পুরানো সৈনিক বাংলাদেশের বোলারদের চেনা থাকার সুবিধাটা পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে খেললেন ম্যাচ জেতানো ৫৮ রানের অপরাজিত ইনিংস। ক্রিজে থেকে অবশ্য অপরপ্রান্তে শফিউলের শিকার হতে দেখেছেন ইফতেখার আহমেদকে (১৬) শোয়েবকে ক্রিজে রেখে আল আমিনের শিকারে পরিণত হয়েছেন ইমাদ ওয়াসিম (৬)। এই আউটগুলোর মানসিক চাপ সামলে দলকে জয়ের স্বাদ দিয়েছেন শোয়েব মালিক। ফলে হয়েছেন ম্যাচসেরাও।

শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২০ , ১১ মাঘ ১৪২৬, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

শেষ ওভার পর্যন্ত লড়ে হারল বাংলাদেশ

বিশেষ প্রতিনিধি

image

এক যুগ পর পাকিস্তান সফরে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ২০০৮ সালের শেষ সফরে দলে থাকা তামিম ইকবাল এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ছাড়া অন্য কারোরই কন্ডিশন সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। দলে যেমন ছিলেন না মুশফিকুর রহিমের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, তেমনি পাঁচ কোচিং স্টাফকেও রাখা হয় সফরের বাইরে। তার ওপরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার কড়াকড়ি। মাঠে দর্শকও নেই। সব মিলিয়ে অনেকটা দমবন্ধ পরিবেশই ছিল লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে। চলতি সফরের প্রথম পর্যায়ে তিন ম্যাচ টি-২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করে ১৪১ রান করা বাংলাদেশ দল পাঁচ উইকেটের পরাজয় বরণ করলেও লড়াই করেছে একেবারে শেষ ওভার পর্যন্ত। টাইগারদের হারাতে পাকিস্তান দলকে খেলতে হয়েছে ১৯.৩ ওভার। পাকিস্তানের ইনিংসে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ফিল্ডাররা বেশ কয়েকবার ক্যাচ না ছাড়লে কি হতো বলা মুস্কিল। তারপরও একেবারেই অপরিচিত কন্ডিশনে এ রকম লড়াই নিঃসন্দেহে প্রেরণার উৎস হবে টাইগারদের। সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে আজ একই ভেন্যুতে দ্বিতীয় ম্যাচে কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশকে দেখার আশা করছেন ভক্তরা।

ইনিংস উদ্বোধনে তামিমের সঙ্গী কে হবেন, তা নিয়ে পরীক্ষা চালাতে গিয়ে নাঈমকে বাছাই করাটা সম্ভবত প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অতিমাত্রায় ডট বল খেলার একটা প্রবণতা এমনিতেই আছে নাঈমের মধ্যে। আর তামিম ছিলেন খোলসের মধ্যে। দুই ওপেনারের কখনও ওডিআই এবং কখনও টেস্ট স্টাইলে ব্যাটিংয়ের কারণে শুরু থেকেই মন্থর ছিল টাইগারদের রানের চাকা।

উদ্বোধনী জুটিতে ৭১ রান আসলেও ততক্ষণে খরচ হয়ে যায় ১১ ওভার। পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে ওঠে মাত্র ৩৫ রান, দশ ওভার শেষে যা কি না কেবল ৬২ রান। টি-২০ ম্যাচের ইনিংসের অর্ধেক পথ ওভারপ্রতি ছয়ের সামান্য বেশি রান নিয়ে আসলে স্কোর বড় করা খুব সহজ হয় না। রানের চাকায় গতি আনার তাগিদে একাদশ ওভারের শেষ বলটাকে ডিপ স্কোয়ার লেগে ঠেলে দুই রান নিতে গিয়ে রানআউট হয়ে অনেকটাই আত্মহত্যা করেন তামিম। থামেন ৩৪ বলে ৩৯ রানে। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা লিটন দাসের ওপরও চেপে বসে রানআউটের ভুত। ১৩ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১২ রান করা লিটন কাটা পড়েন তামিমের মতোই। শাদাব খানের করা সেই ওভারে লিটন ফেরার আগে নাঈমের সঙ্গে ২১ রানের জুটি গড়েন। লিটন ফেরার পরপরই শাদাব খানকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ইফতেখারের তালুবন্দী হয়ে ফেরেন ৪১ বলে ৩ চার ২ ছক্কায় বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করা নাঈম। ৯৮ রানে তৃতীয় উইকেট হারানো টাইগারদের হয়ে বেশিক্ষণ ক্রিজে টেকেননি বিপিএলে ভালো করা আফিফ হোসেন। হারিস রউফের বলে স্ট্যাম্প খোয়ান মাত্র ৯ রানে। ১৯তম ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদিকে হাঁকাতে গিয়ে বোল্ড হন ৫ বলে ১ বাউন্ডারিতে ৭ রান করা সৌম্য সরকার। বাংলাদেশ থামে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৪১ রানে।

টি-২০তে দেড়শ’র কম পুজি নিয়ে অপরিচিত কন্ডিশনে জয়ের আশা করা যায়না। তারপরও বাংলাদেশের বোলাররা শুরুতে সাধ্যমত চেষ্টা করেছিলেন।

চ্যালেঞ্জিং স্কোর ছুড়ে না দিতে পারার আফসোস নিয়ে বোলিং করতে নামা বাংলাদেশ শুরুটা খারাপ করেনি। স্কোরবোর্ডে রান জমা হওয়ার আগেই বাবর আজমকে উইকেটকিপারের গ্লাভসে বল জমা দিতে বাধ্য করেন শফিউল ইসলাম।

ধীরগতির পিচে শুরুর ধাক্কা কাটাতে পারছিল না সিরিজের স্বাগতিক দল। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের বিনা উইকেটে তোলা ৩৫ রানের বিপরীতে পাকিস্তানের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ৩৬ রান। বাবর আজমের পর ফেরানো গিয়েছিল অভিজ্ঞ মোহাম্মদ হাফিজকেও (১৭)। দ্বাদশ ওভার শেষেও পাকিস্তানের রান রেট ছিল সাতের নিচে। ওই ওভারের পঞ্চম বলে ওপেনার আহসান আলেক (৩৬) বদলি ফিল্ডার নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন আমিনুল। এক কথায় তখনও ম্যাচটা বাংলাদেশের হাত থেকে ফস্কে যায়নি। তখন পাকিস্তানের দরকার ছিল ৪৮ বলে ৬০ রান। ধীরে ধীরে এই চাপ সরিয়ে দলকে সিরিজে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নেন অভিজ্ঞ শোয়েব মালিক। দিন কয়েক আগেই বিপিএল খেলে যাওয়া পাকিস্তানের এই পুরানো সৈনিক বাংলাদেশের বোলারদের চেনা থাকার সুবিধাটা পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে খেললেন ম্যাচ জেতানো ৫৮ রানের অপরাজিত ইনিংস। ক্রিজে থেকে অবশ্য অপরপ্রান্তে শফিউলের শিকার হতে দেখেছেন ইফতেখার আহমেদকে (১৬) শোয়েবকে ক্রিজে রেখে আল আমিনের শিকারে পরিণত হয়েছেন ইমাদ ওয়াসিম (৬)। এই আউটগুলোর মানসিক চাপ সামলে দলকে জয়ের স্বাদ দিয়েছেন শোয়েব মালিক। ফলে হয়েছেন ম্যাচসেরাও।