নিরাপত্তাই হোক প্রতিশ্রুতি

প্রায় সাড়ে ৪০০ বছরের পুরনো আমাদের রাজধানী ঢাকা। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকারের আমলে নাগরিক জীবনের প্রয়োজন এবং চাহিদার সঙ্গে তাল মিলয়ে এই শহরকে বারংবার সাজানো হয়েছে নুতন আঙ্গিকে। গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিকতার ছোয়ায়। প্রশাসনিক জটিলতা হ্রাস ও কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ভেঙে ঢাকার দুই প্রান্তকে নিয়ে গঠিত হয়েছে দুটো আলাদা সিটি করপোরেশন। সেই ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে আসন্ন ৩০ জানুয়ারি। অথচ এই একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে এসেও যে প্রশ্নটা নাগরিক জীবনকে বারংবার উদ্বিগ্নতায় ভাসাচ্ছে সেটি হচ্ছে ‘আমরা কি আদৌ নিরাপদ?’

একটা সময় ছিল যখন রাজধানীর মোড়ে মোড়ে ছিল ছিনতাইকারীদের উৎপাত। ফার্মগেট, মালিবাগ, গুলিস্তান, মোহাম্মদপুর প্রভৃতি এলাকায় সন্ধ্যার পরের যাতায়াতটি ছিল অনিরাপদ এবং আতঙ্কের নাম। যুগের পরিক্রমায় সেই দিন ঘুচে গেছে অনেকখানিই। কিন্তু ইদানিংকালে যেসকল নিরাপত্তার প্রশ্ন বেশি মাথাচাড়া দিয়েছে সেটি হচ্ছে নারীর নিরাপত্তা। আজকাল বিভিন্ন মহল্লার রাস্তাঘাটে দেখতে পাওয়া যায় বখাটে ছেলেপেলেদের দৌরাত্ম্য। কর্মক্ষেত্র কিংবা শিক্ষাক্ষেত্রে আসা-যাওয়ার পথে উত্তক্তকরণ, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য কিংবা অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি যেন কোনভাবেই থামানো সম্ভব হচ্ছে না।

একটা সময় ছিল যখন বাঙালি পরিবারে ঘড়ের বাইরে বেড়িয়ে নারীদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ কিংবা উচ্চশিক্ষা লাভে দেখা যেত অনাগ্রহ। অথচ কালের বিবর্তনে বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় এমন অগণিত নারীর বসবাস যারা কিনা কর্মসূত্রে অথবা উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে ঢাকায় বসবাসরত। এসব নারীদের কেউবা চাকরিজীবী কেউ ছাত্রী। অর্থাৎ বেশিরভাগই তরুণ প্রজন্মের অংশ, যারা কিনা দেশের জন্য উৎপাদনশীল অর্থনীতিতে সবচাইতে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। এই ভূমিকাটি রাখতে হলে নিশ্চিত করতে হবে তাদের নিরাপত্তা।

কিছুদিন আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়, এক্ষেত্রে ধর্ষককে আটক ও তাকে বিচারের অধীনে আনায় পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার। অথচ এইসব ভূমিকা যদি সেইসব ধর্ষনের আগে নেওয়া যেত, তবে হয়ত এইরকম অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেত। তাছাড়া এই ধর্ষণের ঘটনাটি মিডিয়ার সামনে এসেছিল বলে আজ আমাদের এতটা উদ্বিগ্নতা, অথচ যেসকল ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে অথচ আড়ালেই রয়ে যাচ্ছে সেসব না আমরা জানতে পারছি, না তার ব্যপারে কোন কথা বলতে পারছি। শুধু তাই নয় গত কয়েক বছর যাবৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নগরীতে লোকাল-বাসে শ্লীলতাহানির ঘটনা চোখে পড়ার মতো। এসব ক্ষেত্রে নারীদের লোকাল-বাসে যাতায়াত আরেক নতুন আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। এসব ক্ষেত্রে সামাজিক সচেতনতা ঠিক যতটা জরুরি, ঠিক ততটাই জরুরি নাগরিক নিরাপত্তা।

শুধুমাত্র নারীর নিরাপত্তাই নয়, সর্বোপরি নিশ্চিত করতে হবে নাগরিক জীবনের নিরাপত্তা। বনানীর বহুতল ভবনের সেই অগ্নিকাণ্ডের মতো আরও কোন দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা আর দেখতে চাই না। আমরা চাই না নিষ্পাপ শিশুরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আবারো রাস্তায় নামুক। দেখতে চাই না সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত স্বজনদের আহাজারি। তাই আসন্ন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নাগরিক নিরাপত্তাই হোক প্রতিশ্রুতি। এসব নিরাপত্তার দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

আমিনুল ইসলাম আশিক

শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২০ , ১১ মাঘ ১৪২৬, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

নিরাপত্তাই হোক প্রতিশ্রুতি

প্রায় সাড়ে ৪০০ বছরের পুরনো আমাদের রাজধানী ঢাকা। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকারের আমলে নাগরিক জীবনের প্রয়োজন এবং চাহিদার সঙ্গে তাল মিলয়ে এই শহরকে বারংবার সাজানো হয়েছে নুতন আঙ্গিকে। গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিকতার ছোয়ায়। প্রশাসনিক জটিলতা হ্রাস ও কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ভেঙে ঢাকার দুই প্রান্তকে নিয়ে গঠিত হয়েছে দুটো আলাদা সিটি করপোরেশন। সেই ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে আসন্ন ৩০ জানুয়ারি। অথচ এই একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে এসেও যে প্রশ্নটা নাগরিক জীবনকে বারংবার উদ্বিগ্নতায় ভাসাচ্ছে সেটি হচ্ছে ‘আমরা কি আদৌ নিরাপদ?’

একটা সময় ছিল যখন রাজধানীর মোড়ে মোড়ে ছিল ছিনতাইকারীদের উৎপাত। ফার্মগেট, মালিবাগ, গুলিস্তান, মোহাম্মদপুর প্রভৃতি এলাকায় সন্ধ্যার পরের যাতায়াতটি ছিল অনিরাপদ এবং আতঙ্কের নাম। যুগের পরিক্রমায় সেই দিন ঘুচে গেছে অনেকখানিই। কিন্তু ইদানিংকালে যেসকল নিরাপত্তার প্রশ্ন বেশি মাথাচাড়া দিয়েছে সেটি হচ্ছে নারীর নিরাপত্তা। আজকাল বিভিন্ন মহল্লার রাস্তাঘাটে দেখতে পাওয়া যায় বখাটে ছেলেপেলেদের দৌরাত্ম্য। কর্মক্ষেত্র কিংবা শিক্ষাক্ষেত্রে আসা-যাওয়ার পথে উত্তক্তকরণ, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য কিংবা অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি যেন কোনভাবেই থামানো সম্ভব হচ্ছে না।

একটা সময় ছিল যখন বাঙালি পরিবারে ঘড়ের বাইরে বেড়িয়ে নারীদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ কিংবা উচ্চশিক্ষা লাভে দেখা যেত অনাগ্রহ। অথচ কালের বিবর্তনে বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় এমন অগণিত নারীর বসবাস যারা কিনা কর্মসূত্রে অথবা উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে ঢাকায় বসবাসরত। এসব নারীদের কেউবা চাকরিজীবী কেউ ছাত্রী। অর্থাৎ বেশিরভাগই তরুণ প্রজন্মের অংশ, যারা কিনা দেশের জন্য উৎপাদনশীল অর্থনীতিতে সবচাইতে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। এই ভূমিকাটি রাখতে হলে নিশ্চিত করতে হবে তাদের নিরাপত্তা।

কিছুদিন আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়, এক্ষেত্রে ধর্ষককে আটক ও তাকে বিচারের অধীনে আনায় পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার। অথচ এইসব ভূমিকা যদি সেইসব ধর্ষনের আগে নেওয়া যেত, তবে হয়ত এইরকম অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেত। তাছাড়া এই ধর্ষণের ঘটনাটি মিডিয়ার সামনে এসেছিল বলে আজ আমাদের এতটা উদ্বিগ্নতা, অথচ যেসকল ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে অথচ আড়ালেই রয়ে যাচ্ছে সেসব না আমরা জানতে পারছি, না তার ব্যপারে কোন কথা বলতে পারছি। শুধু তাই নয় গত কয়েক বছর যাবৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নগরীতে লোকাল-বাসে শ্লীলতাহানির ঘটনা চোখে পড়ার মতো। এসব ক্ষেত্রে নারীদের লোকাল-বাসে যাতায়াত আরেক নতুন আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। এসব ক্ষেত্রে সামাজিক সচেতনতা ঠিক যতটা জরুরি, ঠিক ততটাই জরুরি নাগরিক নিরাপত্তা।

শুধুমাত্র নারীর নিরাপত্তাই নয়, সর্বোপরি নিশ্চিত করতে হবে নাগরিক জীবনের নিরাপত্তা। বনানীর বহুতল ভবনের সেই অগ্নিকাণ্ডের মতো আরও কোন দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা আর দেখতে চাই না। আমরা চাই না নিষ্পাপ শিশুরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আবারো রাস্তায় নামুক। দেখতে চাই না সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত স্বজনদের আহাজারি। তাই আসন্ন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নাগরিক নিরাপত্তাই হোক প্রতিশ্রুতি। এসব নিরাপত্তার দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

আমিনুল ইসলাম আশিক