বাজার হারাচ্ছে পোশাক খাত

রপ্তানি কমেছে বন্ধ হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানা সমন্বিত নীতি সহায়তার দাবি উদ্যোক্তাদের

প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বিদেশের বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত। অন্যদিকে প্রতিযোগী দেশগুলো বাংলাদেশের চেয়ে ভালো করছে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছে, এ খাতে চীনের বিপুল বিনিয়োগ বাংলাদেশ না পেয়ে সেটা পাচ্ছে ভিয়েতনাম, মায়ানমার ও পাকিস্তানে। শুধু বিদেশেই সমস্যায় রয়েছে তা নয়। দেশেও নানা সংকটে রয়েছে পোশাক খাত। বিজিএমইএ’র পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সদ্য শেষ হওয়া বছর ৫৯টি ছোট ও মাঝারি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ২৯ হাজার গার্মেন্ট শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। উদ্যোক্তাদের দাবি, ব্যবসার খরচ বাড়ায় সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি তৈরি পোশাক কারখানাগুলো।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর সময়কালে দেশে মোট রপ্তানি আয় ছিল এক হাজার ৫৭৭ কোটি ডলার। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় একশ’ ২৯ কোটি ডলার কম। মোট রপ্তানি আয়ের ৮৩ ভাগ অর্থাৎ এক হাজার ৩৮৮ কোটি ৬৯ লাখ ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। তবে এই আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় একশ’ ৯ কোটি ডলার কম। তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বহুমুখী জটিল সমস্যার জালে আটকে যাচ্ছে এই খাতের প্রবৃদ্ধি। প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ হার, ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার মান বেশি, অপর্যাপ্ত বন্দর সুবিধা, পণ্য পৌঁছাতে বেশি সময় লাগা, উদোক্তাদের বাজার সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব, জটিল কর ব্যবস্থার মতো সমস্যায় বেশি সংকটে পড়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোশাক কারখানা মালিকরা।

যুক্তরাষ্ট্রের অটেক্সার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় একক বাজার যুক্তরাষ্ট্রে। গত নয় মাসে চীনের রপ্তানি কমেছে এক দশমিক এক শতাংশ। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, তৈরি পোশাক খাতে চীনের বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসার কথা থাকলেও তা চলে যাচ্ছে প্রতিযোগী অন্য দেশগুলোতে। যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে গেছে ভিয়েতনাম। এই খাতের অবস্থা ফেরাতে সমন্বিত নীতি সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করেন তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা।

শুধু চীন বা যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র সমস্যা নয়। বর্তমানে ইউরোপেও পোশাক রপ্তানি কমেছে বাংলদেশের। প্রধান পণ্য তৈরি পোশাক রপ্ততানিতে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। নতুন-পুরোনো এবং ছোট-বড় সব বাজারেই রপ্তানি কমছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বাজার ২৮ জাতির জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) কমেছে বেশি হারে। ইইউ জোটে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৭ শতাংশ।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবি এবং বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ইইউতে রপ্তানি কম হয়েছে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭১ কোটি ডলার। এ সময় ৯৮২ কোটি ডলারের পোশাক গেছে ওই জোটে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল এক হাজার ৫৩ কোটি ডলার। গত ছয় মাসে রপ্তানি আয়ের ৬১ দশমিক ৩০ শতাংশ এসেছে ইইউ থেকে। আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৬১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

প্রধান বাজারে রপ্তানির এই দশায় চিন্তিত উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, জরুরি তৎপরতা শুরু না করা গেলে রপ্তানি আরও বেশিহারে কমে যাবে। নিট পোশাক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনামের সঙ্গে ইইউ মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং দেশে নতুন কাঠামোয় মজুরি বৃদ্ধিসহ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে অন্য প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না তারা। তিনি জানান, গত ৫ বছরে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। এ সময় পোশাকের দর কমেছে গড়ে ৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা মন্দা এখনও পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি বিশ্ব অর্থনীতি। ফলে চাহিদা কমছে বিশ্বব্যাপী। এ অবস্থা থেকে রপ্তানি খাতকে সুরক্ষায় প্রতিযোগী সব দেশই স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন করছে দফায় দফায়। এফটিএ করছে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে। দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ নেই।

ইইউ জোটের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পোশাক নেয় জার্মানি। বছরে কমবেশি ৬০০ কোটি ডলারের পোশাক যায় দেশটিতে। গেল ছয় মাসে এ দেশটিতে রপ্তানি কমেছে সাড়ে ১০ শতাংশ। ২৬৫ কোটি ডলারের পোশাক গেছে জার্মানিতে। আগের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২৯৬ কোটি ডলার।

দ্বিতীয় প্রধান বাজার যুক্তরাজ্য। দেশটিতে আলোচ্য সময়ে রপ্তানি কমেছে ১ শতাংশের বেশি। রপ্তানি হয়েছে ১৮৫ কোটি ডলারের পোশাক। আগের একই সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৮৭ কোটি ডলার। জোটে তৃতীয় প্রধান আমদানিকারক দেশ স্পেন। দেশটিতে রপ্তানি কমেছে ২ শতাংশের মতো। রপ্তানি হয়েছে ১২১ কোটি ডলারের পোশাক। আগের একই সময়ে ছিল ১২৩ কাটি ডলার।

রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২০ , ১২ মাঘ ১৪২৬, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

বাজার হারাচ্ছে পোশাক খাত

রপ্তানি কমেছে বন্ধ হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানা সমন্বিত নীতি সহায়তার দাবি উদ্যোক্তাদের

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বিদেশের বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত। অন্যদিকে প্রতিযোগী দেশগুলো বাংলাদেশের চেয়ে ভালো করছে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছে, এ খাতে চীনের বিপুল বিনিয়োগ বাংলাদেশ না পেয়ে সেটা পাচ্ছে ভিয়েতনাম, মায়ানমার ও পাকিস্তানে। শুধু বিদেশেই সমস্যায় রয়েছে তা নয়। দেশেও নানা সংকটে রয়েছে পোশাক খাত। বিজিএমইএ’র পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সদ্য শেষ হওয়া বছর ৫৯টি ছোট ও মাঝারি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ২৯ হাজার গার্মেন্ট শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। উদ্যোক্তাদের দাবি, ব্যবসার খরচ বাড়ায় সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি তৈরি পোশাক কারখানাগুলো।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর সময়কালে দেশে মোট রপ্তানি আয় ছিল এক হাজার ৫৭৭ কোটি ডলার। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় একশ’ ২৯ কোটি ডলার কম। মোট রপ্তানি আয়ের ৮৩ ভাগ অর্থাৎ এক হাজার ৩৮৮ কোটি ৬৯ লাখ ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। তবে এই আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় একশ’ ৯ কোটি ডলার কম। তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বহুমুখী জটিল সমস্যার জালে আটকে যাচ্ছে এই খাতের প্রবৃদ্ধি। প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ হার, ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার মান বেশি, অপর্যাপ্ত বন্দর সুবিধা, পণ্য পৌঁছাতে বেশি সময় লাগা, উদোক্তাদের বাজার সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব, জটিল কর ব্যবস্থার মতো সমস্যায় বেশি সংকটে পড়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোশাক কারখানা মালিকরা।

যুক্তরাষ্ট্রের অটেক্সার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় একক বাজার যুক্তরাষ্ট্রে। গত নয় মাসে চীনের রপ্তানি কমেছে এক দশমিক এক শতাংশ। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, তৈরি পোশাক খাতে চীনের বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসার কথা থাকলেও তা চলে যাচ্ছে প্রতিযোগী অন্য দেশগুলোতে। যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে গেছে ভিয়েতনাম। এই খাতের অবস্থা ফেরাতে সমন্বিত নীতি সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করেন তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা।

শুধু চীন বা যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র সমস্যা নয়। বর্তমানে ইউরোপেও পোশাক রপ্তানি কমেছে বাংলদেশের। প্রধান পণ্য তৈরি পোশাক রপ্ততানিতে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। নতুন-পুরোনো এবং ছোট-বড় সব বাজারেই রপ্তানি কমছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বাজার ২৮ জাতির জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) কমেছে বেশি হারে। ইইউ জোটে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৭ শতাংশ।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবি এবং বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ইইউতে রপ্তানি কম হয়েছে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭১ কোটি ডলার। এ সময় ৯৮২ কোটি ডলারের পোশাক গেছে ওই জোটে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল এক হাজার ৫৩ কোটি ডলার। গত ছয় মাসে রপ্তানি আয়ের ৬১ দশমিক ৩০ শতাংশ এসেছে ইইউ থেকে। আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৬১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

প্রধান বাজারে রপ্তানির এই দশায় চিন্তিত উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, জরুরি তৎপরতা শুরু না করা গেলে রপ্তানি আরও বেশিহারে কমে যাবে। নিট পোশাক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনামের সঙ্গে ইইউ মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং দেশে নতুন কাঠামোয় মজুরি বৃদ্ধিসহ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে অন্য প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না তারা। তিনি জানান, গত ৫ বছরে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। এ সময় পোশাকের দর কমেছে গড়ে ৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা মন্দা এখনও পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি বিশ্ব অর্থনীতি। ফলে চাহিদা কমছে বিশ্বব্যাপী। এ অবস্থা থেকে রপ্তানি খাতকে সুরক্ষায় প্রতিযোগী সব দেশই স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন করছে দফায় দফায়। এফটিএ করছে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে। দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ নেই।

ইইউ জোটের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পোশাক নেয় জার্মানি। বছরে কমবেশি ৬০০ কোটি ডলারের পোশাক যায় দেশটিতে। গেল ছয় মাসে এ দেশটিতে রপ্তানি কমেছে সাড়ে ১০ শতাংশ। ২৬৫ কোটি ডলারের পোশাক গেছে জার্মানিতে। আগের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২৯৬ কোটি ডলার।

দ্বিতীয় প্রধান বাজার যুক্তরাজ্য। দেশটিতে আলোচ্য সময়ে রপ্তানি কমেছে ১ শতাংশের বেশি। রপ্তানি হয়েছে ১৮৫ কোটি ডলারের পোশাক। আগের একই সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৮৭ কোটি ডলার। জোটে তৃতীয় প্রধান আমদানিকারক দেশ স্পেন। দেশটিতে রপ্তানি কমেছে ২ শতাংশের মতো। রপ্তানি হয়েছে ১২১ কোটি ডলারের পোশাক। আগের একই সময়ে ছিল ১২৩ কাটি ডলার।